কেন আমাদের ওয়ায়েয/বক্তাদের কথায় আমরা প্রভাবিত হই না?

কেন আমাদের ওয়ায়েয/বক্তাদের কথায় আমরা প্রভাবিত হই না?
.
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও সংস্কারক ইসমাঈল শহীদ (রাহ.) একবার দিল্লীর জামে মসজিদে কয়েক ঘণ্টা যাবত বয়ান করলেন। তাঁর বয়ান ছিল হৃদয়গ্রাহী। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামছিলেন। হঠাৎ একজন গ্রাম্য লোক দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এল। সে ইসমাঈল শহীদকে না চিনতে পেরে তাঁকেই জিজ্ঞেস করল, "মৌলভী ইসমাঈলের ওয়াজ কি শেষ?" তিনি বললেন, "হ্যাঁ ভাই, শেষ হয়ে গেছে।"
.
সে বলল, "ইন্নালিল্লাহ! আমি তো দূর থেকে ওয়াজ শুনতেই এসেছি।" এবার তিনি বললেন, "ভাই, আমিই ইসমাঈল, আপনি আমার সামনে বসুন; আপনাকে ওয়াজ শুনাচ্ছি।"
.
এরপর তিনি পাক্কা ২ ঘণ্টা শুধু এই এক ব্যক্তিকেই ওয়াজ শুনালেন! উপস্থিত লোকজন এসব দেখে বিস্মিত হয়ে পড়েন।
.
[ঘটনাটি মুফতি তাকী উসমানি (দা.বা.) তাঁর পিতা মুফতি শফি (রাহ.) থেকে শুনেছেন। সূত্র: "তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়" লেখক মাওলানা আবদুল মালেক, ২৮৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য]
.
এবার বর্তমানের ওয়াজ মাহফিলগুলোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। বক্তারা তাঁদের নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করার জন্য কৃত্রিম সুর দিয়ে, বিভিন্ন গান গেয়ে ও অতি প্রাঞ্জল ভাষায় ওয়াজ করেন। বেশি দর্শক-শ্রোতা যখন মাঠে থাকে তখন কে আগে ওয়াজ করবেন তা নিয়ে বক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়! আমাদের অনলাইনেও (বিশেষত ফেইসবুকে) চলছে শো-অফের (লোকদেখানো) মহড়া। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বাটনগুলো আমাদের ইখলাস কেড়ে নিচ্ছে।
.
এত এত ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, এত এত দ্বীনি লেখালেখি হচ্ছে, অথচ মানুষের কেন সেই পরিমাণে হেদায়াত নসিব হচ্ছে না? কেন মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি হচ্ছে না? এর অন্যতম কারণ হলো, বক্তা ও লেখকদের ইখলাসের অভাব। ইখলাস মানে, যে-কোনো কাজ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা; তাতে লোকদেখানো কিছু না থাকা। আজকাল কোনো কোনো বক্তা ও লেখক এমন বিষয়েও কথা বলেন, যেগুলোর উপর নিজেরাই আমল করেন না; তাহলে কীভাবে শ্রোতা ও পাঠকের উপর প্রভাব পড়বে? অবশ্যই এখানে রুহানি (আত্মিক) একটি ব্যাপার আছে। ইসমাঈল শহীদের মত মুত্তাকি, ইখলাসওয়ালা আলিমের আজ বড়ই অভাব, যিনি একজন শ্রোতাকে ২ ঘণ্টা ওয়াজ শুনিয়েছেন শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য (ওয়াল্লাহু আ'লাম)।
.
অতএব, যার কাছ থেকে দ্বীনের ইলম (জ্ঞান) নিব, তাঁর ব্যাপারেও যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। যে-কেউ দ্বীনের কথা বললেই তাঁকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যাবে না। আলেম বাছাইয়ে কয়েকটি দিক লক্ষ রাখতে হবে। এক. আলিমের দ্বীনের গভীর জ্ঞান থাকা; দুই. সমাজ জীবনের হাল-হাকিকত সম্পর্কেও মোটামুটি সচেতন থাকা; তিন. তাকওয়া-আল্লাহ্ভীতি থাকা; চার. নির্লোভ, নিরহংকারী হওয়া; পাঁচ. দুনিয়াবি জীবনে আসক্তি না থাকা; ছয়. যে-কোনো মাসয়ালা শ্রেষ্ঠ তিন যুগের (সাহাবি, তাবি'ঈ, তাবে-তাবে'ঈ) মনীষীদের মতামতের আলোকে দেওয়া; সাত. শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক না থাকা, হাদিয়া-তোহফায় আসক্ত না হওয়া; আট. হক্ব কথা বলতে দ্বিধা না করা ইত্যাদি।
.
সায়্যিদ কুতুব শহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, "আমাদের কথাগুলো তখনই থাকবে প্রাণবন্ত, যখন নিজেরা এগুলোর উপর থাকব অটল-অবিচল।"





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.