মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----১০

আসসালামু আলাইকুম,
মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----১০
গত পর্বের হাদিসগুলো থেকে যা শিখলামঃ
এক. দেখা গেল এক হাদীসে শত করা নিরানব্বই জন জাহান্নামী হবে বলা হয়েছে। আবার অন্য হাদীসটিতে এক হাজারে নয় শত নিরা নব্বই জনের কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটি সঠিক। এর উত্তর হলো দুটোই সঠিক। যেখানে একশ জনে নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে উম্মতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে যে সকল মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছে তাদের একশ জনের একজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। আর যেখানে এক হাজারে নয় শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে তাদের হাজারে একজন মুক্তি পাবে।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ সর্বশেষে অর্ধেক হবে তার অনুসারীদের মধ্য থেকে যে কথা বলেছেন সেটা হল তার আশা-আকাংখা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এ আশা পূরণ করবেন বলে হাদীসে এসেছে।
তিন. উম্মতে মুহাম্মাদীর ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল এ হাদীস দিয়ে। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তারা জান্নাত বাসীদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক বেশী হবে।
চার. যখন জাহান্নামী আর জান্নাতীদের বাছাই করা হবে তখনকার অবস্থার ভয়াবহতার একটি চিত্র এ হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে।
আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে বলেছেন :
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ ﴿59﴾أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ﴿60﴾ وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ ﴿61﴾ وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيرًا أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ ﴿62﴾ هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ﴿63﴾ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿64﴾ (سورة يس)
আর [বলা হবে] হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ। আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫৯-৬৪)
পাঁচ. ভাল কোন কিছু শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত।
কেয়ামতের দিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসারঃ
কেয়ামতের দিন মুসলিমগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য সমবেত হবে। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মেশকের চেয়ে এর সুঘ্রাণ তীব্র আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে এ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।
হাদীসে এসেছে___
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ترد علي أمتي الحوض ، وأنا أذود الناس عنه ؛ كما يذود الرجل إبل الرجل عن إبله ، قالوا : يا نبي الله ! أتعرفنا ؟ قال : نعم ، لكم سيما ليست لأحد غيركم ، تردون علي غرا محجلين من آثار الوضوء . وليصدن عني طائفة منكم ، فلا يصلون ، فأقول : يا رب ! هؤلاء من أصحابي ؟ ! فيجيبني ملك فيقول : وهل تدري ما أحدثوا بعدك ؟ !
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: হাউজে কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফেরেশতা উত্তর দেবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে? (বর্ণনায়: মুসলিম)
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. উম্মতের সকল মানুষ হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য ভীর করবে।
দুই. অজুর আলামত দেখে মুসলমানদের চেনা যাবে।
তিন. অজুর ফজিলত।
চার. মুসলমানদের একটি অংশকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। কারণ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গত হওয়ার পর ইসলামে নতুন বিষয়ের প্রচলন করেছে বা তাতে লিপ্ত হয়েছে।
পাঁচ. ইসলামে বিদআত প্রচলন ও তার অনুসরণ একটি মহা-পাপ।
হাদীসে এসেছে
عن أسماء بنت أبي بكر رضي الله عنهما قالت : قال النبي صلى الله عليه وسلم: إني على الحوض حتى أنظر من يرد علي منكم ، وسيؤخذ ناس دوني ، فأقول : يا رب مني ومن أمتي ، فيقال : هل شعرت ما عملوا بعدك ، والله ما برحوا يرجعون على أعقابهم .
আবু বকর রা. এর মেয়ে আসমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি হাউজে কাউসারে থাকব আর দেখব তোমাদের কে কে আসছে। কিন্তু কিছু মানুষকে আমার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভূ! এরা আমার অনুসারী, আমার উম্মতের অংশ। আমাকে বলা হবে, আপনি কি জানেন, আপনার পরে এরা কি কাজ করেছে? আল্লাহর শপথ! তারা পিছনে ফিরে যাবে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)
হাউজে কাউসারে মুসলিম উম্মাহ কখন সমবেত হবে? এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা পুলসিরাতের পূর্বে হবে। আবার কেহ কেহ বলেছেন এটা হিসাব-কিতাব, মিযান ও পুলসিরাতের পরে হবে।
আমি মনে করি প্রথম মতটি অধিকতর সঠিক। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সাক্ষাতের ওয়াদা করেছেন হাউজে কাউসারে কাছে। যেমন হাদীসে এসেছে___
عن عبد الله بن زيد بن عاصم رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال للأنصار: إنكم ستلقون بعدي أثرة ، فاصبروا حتى تلقوني على الحوض .
আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ ইবনে আসেম রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন: আমার পরে তোমরা অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে শাসকদের অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। তোমরা তখন ধৈর্য ধারণ করবে হাউজে কাউসারে আমার কাছে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত।
হাদীসে এসেছে___
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: حوضي مسيرة شهر ، ماؤه أبيض من اللبن ، وريحه أطيب من المسك ، وكيزانه كنجوم السماء ، من شرب منها فلا يظمأ أبدا
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটি দিয়ে বুঝা যায় কেয়ামত সংঘটনের পর পরই জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারণ হওয়ার আগে হাউজে কাউসারে সমবেত হওয়ার বিষয়টি চলে আসবে।

ইনশাআল্লাহ চলবে..............।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.