মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----১২

আসসালামু আলাইকুম,

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-১২


উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব হবে সর্বপ্রথমঃ


কেয়ামতের এ দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী মুসলিমদের বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। সকল পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখে মুসলিম জাতির হিসাব-নিকাশ বিচার ফয়সালা করে দিবেন। যদিও মুসলিম জাতি দুনিয়াতে আভির্ভাবের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর পরে এসেছে কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের নিষ্পত্তি আগে করা হবে। এটি উম্মতের এক বিশাল সম্মান ও পুরস্কার।
হাদীসে এসেছে : عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: نحن الآخرون ونحن السابقون يوم القيامة . بيد أن كل أمة أوتيت الكتاب من قبلنا . وأوتيناه من بعدهم . ثم هذا اليوم الذي كتبه الله علينا . هدانا الله له . فالناس لنا فيه تبع . اليهود غدا . والنصارى بعد غد .
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথে দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:


এক. মুসলিম জাতির মর্যাদা। ইহুদী ও খৃষ্টানদের চেয়ে মুসলমানদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী। বর্তমানে ইহুদী খৃষ্টানেরা তো কাফের বা অবিশ্বাসী। তাদের চেয়ে মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ এতে কোন সন্দেহ নেই। আর ইসলামপূর্ব যুগের ইহুদী খৃষ্টানেরা যারা কাফের ছিল না, তাদের চেয়েও মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ। এটি এ হাদীস দিয়েও প্রমাণিত হল।
দুই. জুমার দিনের ফজিলত জানা গেল। মুলত হাদীসটি জুমার দিনে ফজিলত সম্পর্কিত। উদ্দেশ্য হল সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন নির্বাচনে ইহুদী ও খৃষ্টানেরা যেমন আমাদের পিছনে পড়ে গেছে তেমনি কেয়ামত দিবসেও তারা আমাদের পিছনে থাকবে। ইহুদীরা শুক্রবারের পরের দিন সাপ্তাহিক প্রার্থনা করে থাকে। আর খৃষ্টানের শুক্রবারের দুদিন পর সাপ্তাহিক প্রার্থনা পালন করে থাকে।
আবু হুরাইরা ও হুযাইফা রা. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে : أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: نحن الآخرون من أهل الدنيا والأولون يوم القيامة المقضي لهم قبل الخلائق . নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পৃথিবীতে বসবাসকারী জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের আগমন সর্বশেষে আর কেয়ামতের দিনে আমাদের ফয়সালা করা হবে সকল সৃষ্টি জীবের পূর্বে। (বর্ণনায়: মুসলিম)
হাদীসে আরো এসেছে : عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: نحن آخر الأمم وأول من يحاسب يقال أين الأمة الأمية ونبيها فنحن الآخرون الأولون. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা হলাম জাতিসমূহের সর্বশেষ। কিন্তু কেয়ামতে আমাদের হিসাব সর্ব প্রথম করা হবে। তখন বলা হবে: উম্মী (আসল) জাতি ও তাদের নবী কোথায়? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ (মর্যাদায়) প্রথম। (বর্ণনায় : ইবনে মাজা, আল-বানী রহ. সহীহ আল জামে গ্রন্থে হাদীসটি-কে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন)

হিসাব-নিকাশের প্রকৃতিঃ


আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন সেদিন কম-বেশী, ছোট-বড় সকল কাজ-কর্ম, কথা ও বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ (سورة الأنبياء : 1)
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ১) আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ ﴿25﴾ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُمْ ﴿26﴾ (سورة الغاشية)
নিশ্চয় আমারই নিকট তাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর নিশ্চয় তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্বে। (সূরা আল গাশিয়া, আয়াত ২৫-২৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন: فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ ﴿6﴾ فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ ﴿7﴾ (سورة الأعراف)
সুতরাং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং অবশ্যই আমি রাসূলদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। অতঃপর অবশ্যই আমি তাদের নিকট জেনে- শুনে বর্ণনা করব। আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৬-৭) وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ ﴿22﴾ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿23﴾ وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ بَاسِرَةٌ ﴿24﴾ تَظُنُّ أَنْ يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ ﴿25﴾ (سورة القيامة)
সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী। আর সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে বিবর্ণ-বিষন্ন। তারা ধারণা করবে যে, এক বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত করা হবে। (সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত ২২-২৫)
ইনশাআল্লাহ চলবে..........।






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.