আজওয়া খেজুর

এক আপুর ঘটনা অবলম্বনে.....




গত বছর হজ্জ শেষ করে বেশ কিছু আজওয়া খেজুর সাথে নিয়ে আসলাম। যথাসম্ভব আত্নীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবদের দিয়ে আমি একটা জার ভর্তি করে নিজের জন্য রেখে দিলাম খুব যত্ন করে। ঐ খেজুর নিয়ে আমি মিশর যাই। তারপর আমেরিকা, সাথে আমার সেই আজওয়া খেজুর।
একদিন এক বাসায় বেড়াতে গেলাম। সে বাসার আন্টি রান্না করতে করতে গল্প করছিলেন। তার পাশেই কিচেনে বসে ছিলাম। এক পর্যায়ে হজ্জের প্রসঙ্গ, তারপর আন্টি আজওয়া খেজুর নিয়ে বলতে গিয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে গেলেন। তিনি খুব শুনেছেন কিন্তু আজ অবধি খেতে পাননি। এক পর্যায়ে কাঁদছেন, যদি হজ্জে যেতে পারতেন, যেতেন যদি মদীনা। ইচ্ছেমত যদি আজওয়া খেতে পারতেন।
সেদিনের মত আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাসায় ফিরে ফ্রীজ খুলে আমার আজওয়া খেজুরের জারটা হাতে নিয়ে বসে আছি। আন্টির কান্না ভেঁজা মুখ আর তার আফসোসটা মন থেকে সরছে না। আন্টিকে দিতে ইচ্ছে করছে, আবার তিন দেশ বয়ে বেড়ানো নিজের জন্য রেখে দেওয়া এত প্রিয় জিনিসটা দেই কি করে।
পরদিন সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে সোজা আন্টির বাসায়। হ্যান্ড ব্যাগ খুলে আজওয়া জারটা আন্টির হাতে দিয়ে বললাম ‘পুরোটাই আপনার’। কিছু অনুভুতি বলে বুঝানো যায় না। আমি বুঝাতে পারবো না তারপর সেখানে কি আবেগঘন মুহূর্ত হলো।
একটা চরম উপলব্ধি বাসায় ফিরলাম। খুব যত্ন করে তিন দেশ বয়ে সুদুর আমেরিকাতে নিয়ে যাওয়া আজওয়ার জারটা আসলে আমার না; আমাকে দিয়ে আল্লাহ সুবহানুওয়াতায়ালা সেটা যার জন্য বরাদ্দ তার হাতে পৌছে দিয়েছেন।
রিজিক যেটা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা আসবেই, সাত সমুদ্র তোর নদী পেরিয়েও।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এর সপ্তাহ খানেক পর আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ওমরা করে ফিরল। আমি দেখা করতে গেলাম। বিদায় নেয়ার সময় বন্ধু বললো "তোর জন্য খুব দামী গিফ্ট আছে"।
সারাটা রাস্তা ঝাপসা চোখে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছি। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিঁজে যাচ্ছে বারবার। ঠিক এক জার আজওয়া নিয়ে বাসায় ফিরেছি, যেমনটা দিয়েছিলাম আন্টিকে।


    




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.