রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনি (ধারাবাহিক পর্ব-৯)
◾নবুওয়াত লাভের পূর্বকালীন সংক্ষিপ্ত চরিত্র এবং ◾নবুয়াত প্রাপ্তি
নবুওয়াত লাভের পূর্বকালীন সংক্ষিপ্ত চরিত্র
বিভিন্ন মানুষের জীবনের বিভিন্ন স্তরে ভিন্ন ভিন্নভাবে যে সকল সদগুণাবলির বিকাশ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে সে সবগুলোর চরম উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অস্তিত্বের সবটুকু জুড়ে। তিনি ছিলেন চিন্তা-চেতনার যথার্থতা, পারদর্শিতা এবং ন্যায় পরায়ণতার এক জ্বলন্ত প্রতীক।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিল সুষমামন্ডিত দেহ সৌষ্ঠব, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, যাবতীয় জ্ঞানের পরিপূর্ণতা এবং উদ্দেশ্য সাধনে সাফল্য লাভের নিশ্চয়তা। তিনি দীর্ঘ সময় যাবৎ নীরবতা অবলম্বনের মাধ্যমে নিরবছিন্ন ধ্যান ও অনুসন্ধান কাজে রত থাকতে এবং বিষয়ের খুঁটিনাটি সম্পর্কে সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে ন্যায় ও সত্যের উদঘাটন করতে সক্ষম হতেন। তিনি তাঁর সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি বিবেচনা এবং নির্ভুল নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার দ্বারা মানব সমাজের প্রকৃত অবস্থা, দল বা গোত্র সমূহের গতিবিধি ও মন-মানসিকতা, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো অনুধাবনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হতেন। যার ফলে শত অন্যায়, অশ্লীলতা এবং অনাচার পরিবেষ্টিত সমাজে বসবাস করেও তিনি ছিলেন সবকিছুর উর্ধ্বে, সবকিছু থেকে মুক্ত ও পবিত্র। শরাবপায়ীদের সাথে বসবাস করেও কোনদিন তিনি শরাব স্পর্শ করেন নি, দেবদেবীর আস্তানায় যবেহকৃত পশুর গোশত্ তিনি কখনো খাননি এবং মূর্তির নামে অনুষ্ঠি কোন প্রকার খেলাধূলায় তিনি কখনো অংশ গ্রহণ করেননি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিল সুষমামন্ডিত দেহ সৌষ্ঠব, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, যাবতীয় জ্ঞানের পরিপূর্ণতা এবং উদ্দেশ্য সাধনে সাফল্য লাভের নিশ্চয়তা। তিনি দীর্ঘ সময় যাবৎ নীরবতা অবলম্বনের মাধ্যমে নিরবছিন্ন ধ্যান ও অনুসন্ধান কাজে রত থাকতে এবং বিষয়ের খুঁটিনাটি সম্পর্কে সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে ন্যায় ও সত্যের উদঘাটন করতে সক্ষম হতেন। তিনি তাঁর সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি বিবেচনা এবং নির্ভুল নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার দ্বারা মানব সমাজের প্রকৃত অবস্থা, দল বা গোত্র সমূহের গতিবিধি ও মন-মানসিকতা, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো অনুধাবনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হতেন। যার ফলে শত অন্যায়, অশ্লীলতা এবং অনাচার পরিবেষ্টিত সমাজে বসবাস করেও তিনি ছিলেন সবকিছুর উর্ধ্বে, সবকিছু থেকে মুক্ত ও পবিত্র। শরাবপায়ীদের সাথে বসবাস করেও কোনদিন তিনি শরাব স্পর্শ করেন নি, দেবদেবীর আস্তানায় যবেহকৃত পশুর গোশত্ তিনি কখনো খাননি এবং মূর্তির নামে অনুষ্ঠি কোন প্রকার খেলাধূলায় তিনি কখনো অংশ গ্রহণ করেননি।
জীবনের প্রথমস্তর থেকেই তিনি তৎকালীন সমাজে প্রচলিত যাবতীয় মিথ্যা উপাস্যকে ঘৃণা করতেন এবং সে ঘৃণার মাত্রা এতই অধিক ছিল যে, তাঁর দৃষ্টিতে আর অন্য কোন জিনিস এত নিন্দনীয় ও অপছন্দনীয় ছিল না। এমনকি লাত ও উযযার নামে শপথ করার ব্যাপারটি তাঁর কানে গেলে তিনি তা সহ্য করতেই পারতেন না।
(বোহাযযার ঘটনায় এবং মুদ্রণে বিদ্যমান আছে। দ্রষ্ঠব্য ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ১২৮ পৃঃ।)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে আল্লাহর খাস রহমত, হেফাজত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে লালিত পালিত, পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়েছেন সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। অতএব, যখনই পার্থিব কোন ফায়দা লাভের দিকে প্রবৃত্তি আকৃষ্ট বা আকর্ষিত হয়েছে অথবা অপছন্দনীয় কিংবা অনুসরণীয় রীতিনীতি অনুসরণের প্রতি আখলাক আকৃষ্ট হয়েছে তখন আল্লাহ তা‘আলার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রন সেখানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইবনে আসীরের একটি বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আইয়ামে জাহেলিয়াতের লোকেরা যে সকল কাজ করেছে দু’বার ছাড়া আর কখনো সে ব্যাপারে আমার খেয়াল জাগেনি। কিন্তু সে দু’বারের বেলায় আল্লাহ তা‘আলা আমার এবং সে কাজের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর পর কখনো সে ব্যাপার সম্পর্কে আমার কোন খেয়াল জন্মে নি যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা আমাকে পয়গম্বরীর মর্যাদা প্রদান করেছেন।
এ ঘটনা ছিল, যে বালকের সঙ্গে আমি মক্কার উপরিভাগে ছাগল চরাতাম এক রাত্রে তাকে বললাম, ‘তুমি আমার ছাগলগুলো একটু দেখাশোনা করো, আমি মক্কায় যাই এবং সেখানে অন্যান্য যুবকগণের মতো যৌবন সংশিষ্ট আবৃত্তি অনুষ্ঠানে যোগদান করি।’
সে বলল, ‘ঠিক আছে। এর পর আমি বাহির হলাম এবং তখনো মক্কার প্রথম ঘরের নিকটেই ছিলাম এমন সময় কিছু বাদ্য যন্ত্রের শব্দ এসে কানে পৌঁছল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোথা থেকে বাদ্যযন্ত্রের এ শব্দ ভেসে আসছে?’
লোকেরা বলল, ‘অমুকের বিবাহ হচ্ছে, তারই বাজনা বাজছে’’। আমি সেই যন্ত্র সঙ্গীত শ্রবণের জন্য সেখানে বসে পড়লাম। অমনি আল্লাহ তা‘আলার নিয়ন্ত্রণ আমার শ্রবণ শক্তির উপর আরোপিত হল। তিনি আমার কর্ণের কাজ বন্ধ করে দিলেন এবং আমি সেখানে শুয়ে পড়লাম। তারপর সূর্যের তাপে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তার পর আমি আমার সে বন্ধুর নিকট চলে গেলাম এবং তার জিজ্ঞাসার জবাবে ঘটনাটি তার নিকট বিস্তারিত বর্ণনা করলাম। এর পর আবার এক রাত্রি আমার বন্ধুর নিকট বসেছিলাম এবং মক্কায় পৌঁছে তদ্রুপ ঘটনার সম্মুখীন হলাম। তদন্তর আর কখনো অনুরূপ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করি নি।
(হাদীসটি হাকিম ও যাহাবী বিশুদ্ধ বলেছেন। কিন্তু ইবনে কাসীর আল বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে ২য় খন্ড ২৮৭ পৃঃ একে দুর্বল বলেছেন।)
সহীহুল বুখারীতে জাবির বিন আব্দুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, যখন ক্বাবা’হ গৃহের নিমার্ণ কাজ চলছিল তখন নাবী কারীম (সাঃ) এবং আব্বাস (রাঃ) প্রস্তর বহন করে আনছিলেন। আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললেন, ‘স্বীয় লুঙ্গি আপন কাঁধে রাখ তাহলে প্রস্তর বহন জনিত যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর দৃষ্টি আকাশের দিকে উঠে গেল এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। জ্ঞান ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করতে লাগলেন, ‘আমার লুঙ্গি, আমার লুঙ্গি’’। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর লুঙ্গি বেঁধে দেয়া হল। অন্য বর্ণনা সূত্রে জানা যায় যে, এরপর তাঁর লজ্জাস্থান আর কোন দিনই দেখা যায় নি।
(সহীহুল বুখারী ক্বা‘বা নির্মাণ অধ্যায় ১ম খন্ড ৫৪০ পৃঃ।)
নাবী কারীম (সাঃ)-এর কাজকর্ম ছিল সব চাইতে আকর্ষণীয়, চরিত্র ছিল সর্বোত্তম এবং মহানুভবতা ছিল সর্বযুগের সকলের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য। তিনি ছিলেন সর্বাধিক শিষ্টাচারী, নম্র-ভদ্র, সদালাপী ও সদাচারী। তিনি ছিলেন সব চাইতে দয়াদ্র চিত্ত, দূরদর্শী, সূক্ষ্ণদর্শী ও সত্যবাদী। মিথ্যা কখনো তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর সত্যবাদিতার জন্য তিনি এতই প্রসিদ্ধ এবং প্রশংসনীয় ছিলেন যে আরববাসীগণ সকলেই তাঁকে ‘আল-আমীন’ বলে আহবান জানাতেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন আরববাসীগণের মধ্যে সব চাইতে নির্ভরযোগ্য আমানতদার। খাদীজাহ (রাঃ) সাক্ষ্য দিতেন যে, ‘তিনি অভাবগ্রস্তদের বোঝা বহন করতেন, নিঃস্ব ও অসহায়দের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করতেন। ন্যায্য দাবীদারদের তিনি সহায়তা করতেন এবং অতিথি পরায়ণতার জন্য মশহুর ছিলেন।
(সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৩ পৃষ্ঠা।)
নবুয়াত প্রাপ্তি
হেরা গুহার অভ্যন্তরে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন চল্লিশে পদার্পণ করলেন, ঐ সময় তাঁর এত দিনের বিচার বিবেচনা, বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা-ভাবনা যা জনগণ এবং তাঁর মধ্যে ব্যবধানের এক প্রাচীর সৃষ্টি করে চলেছিল তা উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং ক্রমান্বয়ে তিনি নির্জনতা প্রিয় হয়ে উঠতে থাকলেন। খাবার এবং পানি সঙ্গে নিয়ে মক্কা নগরী হতে দু’মাইল দূরত্বে অবস্থিত হেরা পর্বত গুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকতে লাগলেন। এটা হচ্ছে ক্ষুদ্র আকার-আয়তনের একটি গুহা। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে চার গজ এবং প্রস্থ পৌনে দু’গজ। এর নীচ দিকটা তেমন গভীর ছিল না। একটি ছোট্ট পথের প্রান্তভাগে অবস্থিত পর্বতের উপরি অংশের একত্রে মিলে মিশে ঠিক এমন একটি আকার আকৃতি ধারণ করেছিল যা শোভাযাত্রার পুরোভাগে অবস্থিত আরোহী শূন্য সুসজ্জিত অশ্বের মতো দেখায়।
পুরো রমাযান রাসূলুল্লাহ (ষাঃ) হেরা গুনায় অবস্থান করে আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকেন। বিশ্বের দৃশ্যমান বস্তুনিচয়ের অন্তরাল থেকে যে মহাশক্তি প্রতিটি মুহুর্তে সকল কিছুকে জীবন, জীবিকা ও শক্তি জাগিয়ে চলেছেন, সেই মহা মহীয়ান ও গরীয়ান সত্ত্বার ধ্যানে মশগুল থাকতেন। স্বগোত্রীয় লোকদের অর্থহীন বহুত্ববাদী বিশ্বাস ও পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণা তাঁর অন্তরে দারুন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করত। কিন্তু তাঁর সামনে এমন কোন পথ খোলা ছিল না যে পথ ধরে তিনি শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে পদচারণা করতে সক্ষম হতেন।
পুরো রমাযান রাসূলুল্লাহ (ষাঃ) হেরা গুনায় অবস্থান করে আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকেন। বিশ্বের দৃশ্যমান বস্তুনিচয়ের অন্তরাল থেকে যে মহাশক্তি প্রতিটি মুহুর্তে সকল কিছুকে জীবন, জীবিকা ও শক্তি জাগিয়ে চলেছেন, সেই মহা মহীয়ান ও গরীয়ান সত্ত্বার ধ্যানে মশগুল থাকতেন। স্বগোত্রীয় লোকদের অর্থহীন বহুত্ববাদী বিশ্বাস ও পৌত্তলিক ধ্যান-ধারণা তাঁর অন্তরে দারুন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করত। কিন্তু তাঁর সামনে এমন কোন পথ খোলা ছিল না যে পথ ধরে তিনি শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে পদচারণা করতে সক্ষম হতেন।
(আল্লামা সুলায়মান মানসুরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১ম খন্ড ৪৭ পৃষ্ঠা, ইবনে হিশাম ১ম খন্ড, ২৩৫ ও ২৩৬ পৃষ্ঠা। ফী যিলালিল কুরআন: ২৯/১৬৬ পৃষ্ঠা।)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্জন-প্রিয়তা ছিল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।
এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ভবিষ্যতের এক মহতী কর্মসূচীর জন্য তাঁকে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। যে আত্মার নসীবে নবুয়তরূপী এক মহান আসমানী নেয়ামত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে এবং যিনি পথভ্রষ্ট ও অধঃপতিত মানুষকে সঠিকপথ নির্দেশনা দিয়ে করবেন ধন্য তাঁর জন্য যথার্থই প্রয়োজন সমাজ জীবনের যাবতীয় ব্যস্ততা, জীবন যাত্রা নির্বাহের যাবতীয় ঝামেলা এবং সমস্যা থেকে মুক্ত থেকে নির্জনতা অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ তা‘আলা যখন মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্বব্যবস্থায় সব চাইতে মর্যাদাশীল ও দায়িত্বশীল-আমানতদার মনোনীত করে তাঁর কাঁধে দায়িত্বভার অর্পণের মাধ্যমে বিশ্বমানবের জীবন বিধানের রূপরেখা পরিবর্তন এবং অর্থহীন আদর্শের জঞ্জাল সরিয়ে শাশ্বত আদর্শের আঙ্গিকে ইতিহাসের পরিমার্জিত ধারা প্রবর্তন করতে চাইলেন, তখন নবুয়ত প্রদানের প্রাককালে তাঁর জন্য একমাসব্যাপী নির্জনতা অবলম্বন অপরিহার্য করে দিলেন যাতে তিনি গভীর ধ্যানের সূত্র ধরে দিব্যজ্ঞান লাভের পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হন। নির্জন হেরা গুহার সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি বিশ্বের আধ্যাত্মিক জগতে পরিভ্রমণ করতেন এবং সকল অস্তিত্বের অন্তরালে লুক্কায়িত অদৃশ্য রহস্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করতেন যাতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই তিনি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ব্রতী হতে পারেন।
এভাবে আল্লাহ তা‘আলা ভবিষ্যতের এক মহতী কর্মসূচীর জন্য তাঁকে প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। যে আত্মার নসীবে নবুয়তরূপী এক মহান আসমানী নেয়ামত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে এবং যিনি পথভ্রষ্ট ও অধঃপতিত মানুষকে সঠিকপথ নির্দেশনা দিয়ে করবেন ধন্য তাঁর জন্য যথার্থই প্রয়োজন সমাজ জীবনের যাবতীয় ব্যস্ততা, জীবন যাত্রা নির্বাহের যাবতীয় ঝামেলা এবং সমস্যা থেকে মুক্ত থেকে নির্জনতা অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ তা‘আলা যখন মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্বব্যবস্থায় সব চাইতে মর্যাদাশীল ও দায়িত্বশীল-আমানতদার মনোনীত করে তাঁর কাঁধে দায়িত্বভার অর্পণের মাধ্যমে বিশ্বমানবের জীবন বিধানের রূপরেখা পরিবর্তন এবং অর্থহীন আদর্শের জঞ্জাল সরিয়ে শাশ্বত আদর্শের আঙ্গিকে ইতিহাসের পরিমার্জিত ধারা প্রবর্তন করতে চাইলেন, তখন নবুয়ত প্রদানের প্রাককালে তাঁর জন্য একমাসব্যাপী নির্জনতা অবলম্বন অপরিহার্য করে দিলেন যাতে তিনি গভীর ধ্যানের সূত্র ধরে দিব্যজ্ঞান লাভের পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হন। নির্জন হেরা গুহার সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি বিশ্বের আধ্যাত্মিক জগতে পরিভ্রমণ করতেন এবং সকল অস্তিত্বের অন্তরালে লুক্কায়িত অদৃশ্য রহস্য সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করতেন যাতে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই তিনি বাস্তবায়নের ব্যাপারে ব্রতী হতে পারেন।
(ফী যিলালিল কুরআন: পারা ২৯, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭।)
ইনশাহআল্লাহ! চলবে.........
কোন মন্তব্য নেই
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু