একজন আদর্শ শিক্ষকের গল্প

মানুষ জীবনে সবচাইতে বেশী যে ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করে তা হলো- ইস! যদি আবারও বাল্যকালে ফিরে যেতে পারতাম!! শুধু মাত্র খেলাধুলা আর হৈ হুল্লোড়ই এই অবাস্তব আশা জাগানিয়া কারণ নয়। আরেকটি কারণ আছে। তা হলো- দায়িত্বহীনতা ৷ শৈশবে কারও প্রতি তেমন দায়িত্ব পালন করতে হয় না। অন্যদের প্রয়োজন অনুধাবন করা, সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা এসবের বালাই থাকে না শিশু বয়সে। তাই তো শৈশব কালকে এতো আনন্দদায়ক বলে মনে হয়। বয়সের সাথে সাথে বাড়ে দায়িত্ব, কর্তব্যের বোঝা। এ বোঝা বড়ই গুরুতর। সফল তো সেই যে কিনা নিজের ওপরে অর্পিত দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারে। প্রশ্ন হলো, ক’জন মানুষ নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে?
নারীদের কাজের প্রধান পরিসর হলো ঘর। তবে অনেকেই বাস্তবতার প্রয়োজনে ঘরের পাশাপাশি বাইরেও কাজ করেন । ঘর এবং বাহির- এই দুটো সামাল দিতে গিয়ে অনেক নারীই হিমসিম খেয়ে যান। অনেকে আবার ঘর এবং কর্মক্ষেত্র দুটি জায়গাই চমৎকারভাবে সামলে নিতে পারেন। তবে শুধু এই দ্বি-মুখী দক্ষতাটাই শেষ কথা নয়। আল্লাহর বান্দা হিসেবে তারঁ সাথে সম্পর্ক রক্ষা করাটাও প্রতিটি মুসলিম নারীর অবশ্য কর্তব্য। আজ এমনই একজনকে নিয়ে লিখবো যিনি ঘর,কর্মক্ষেত্র, স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক সবকিছুকেই ব্যালেন্স করেছেন। তিনি হলেন আমার প্রিয় মেহেরুন্নেসা ম্যাডাম।
আমি যে স্কুলে পড়তাম তা ছিলো কম্বাইন্ড। স্কুল এন্ড কলেজ। মেহেরুন্নেসা ম্যাডাম আমাদের ক্লাস নিতেন না। তিনি কলেজ শাখায় বাংলা ব্যকরণ পড়াতেন। মুসলিম মহিলা টিচারদের মধ্যে আমাদের হেডমিস্ট্রেস ছাড়াও মেহেরুন্নেসা ম্যাডাম বোরকা পড়তেন। ঢোলা বোরকার ওপরে বিশাল ওড়না এমনভাবে পড়তেন যে তাঁর শরীরের দুই তৃতীয়াংশ ঢেকে যেতো। মুখ, কপাল এমনকি ভুরু পর্যন্ত দেখা যেতো না। যেহেতু গার্লস স্কুল, সেহেতু পড়ানোর ক্ষেত্রে ছেলেদের মুখোমুখি হবার কোনো সুযোগই নেই। পুরুষ টিচারদের সাথেও অকারণে কথা বলতে দেখিনি কখনো ম্যাডাম কে। ছোটো -বড় নির্বিশেষে সব টিচার ম্যাডাম কে ভীষণ শ্রদ্ধা করতো। ম্যাডামের প্রতি বরাবরই মুগ্ধতা ছিলো আমার। পরে জানতে পারলাম তাঁর মেয়ে আমাদের ক্লাসেই পড়ে। এবার ওনার মেয়ের সাথেও ভাব হলো। সেই সূত্র ধরেই পারিবারিক পরিমন্ডলে ম্যাডামকে দেখার সুযোগ পেলাম।
ব্যক্তিজীবনে তিনি চারটি সন্তানের মা। চারটি সন্তানকেই ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলেছেন ম্যাডাম। একজন আদর্শ শিক্ষকের পাশাপাশি তিনি একজন আদর্শ মা, আদর্শ গৃহিণী এবং সর্বোপরি তাক্বওয়াবান একজন মানুষ। আমার বান্ধবী বর্তমানে একজন ডাক্তার আলহামদুলিল্লাহ্। মায়ের মতো সেও চাকুরীক্ষেত্রে বোরকা পরিধান করে এবং সহকর্মীদের সাথে কথা-বার্তা, আচরণের ক্ষেত্রে সীমারেখা বজায় রাখে। বর্তমান যুগে শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্দা মেইনটেন করার দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। তবে মায়ের দেয়া শিক্ষাই মেয়েকেও সঠিক পথে চালিত করছে তা বুঝতে আমার কষ্ট হয় না।
পর্দা মেইনটেইন করেও যে বাইরে কাজ করা যায়, প্রগলভ না হয়েও যে অমায়িক ব্যবহারের মাধ্যমে সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা যায়—মেহেরুন্নেসা ম্যাডাম শুধু নিজেই তার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেননি বরং পরবর্তী প্রজন্মের মাঝেও তা সঞ্চারিত করেছেন সফলতার সঙ্গে।
মহান আল্লাহ যেন ম্যাডামের পারিবারিক এবং কর্মজীবনের সকল কাজের বিনিময়ে তাঁকে উত্তম প্র্রতিদান দান করেন এবং ইমানের সঙ্গে মৃত্যু দেন উনার একজন গুণমুগ্ধ হিসেবে আমি আল্লাহর কাছে এই দুআ করি। ফিতনার এই যুগে অন্তরে সর্বদা আল্লাহ ভীতি বজায় রেখে ঘর-বাহিরে কাজ করতে পারা এমন নারীই আজ মুসলিমদের বড্ড প্রয়োজন।




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.