প্রশ্ন: আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?*


আসসালামু আলাইকুম,

*প্রশ্ন: আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?*

উত্তরঃ

মুয়াজ্জিন আযানে যা যা বলবে তার সাথে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র ‘হাইয়্যা আ’লাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ’ যখন বলবে তখন জবাবে সেটা না বলে বলতে হবে,

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ উচ্চারণঃ লা হা’উলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।

এটা হচ্ছে আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। আযানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ।

বিঃদ্রঃ ফযরের আযানে আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম ও জামাতের ইকামাতের সময় ক্বাদকা মাতিস সালাহ – এই দুইটি বাক্যের জবাবে এইগুলোই বলতে হবে। অন্য কিছু বলতে এমন কোনো কিছু সহীহ হাদীসে নাই – তাই যা আছে তাই বলতে হবে।

“আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম” এর জবাবে “সাদাক্বতা ওয়া বারারতা” বলার কোনো ভিত্তি নেই (জাল কথা)। [মিরআ’ত ২/৩৬৩, হা/৬৬২]

“ক্বাদকা মাতিস সালাহ” এর জবাবে “আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা” বলার বর্ণিত হাদীসটি ‘যঈফ’। [আবু দাউদঃ ৫২৮, শায়খ আলবানী, ইরওয়াউল গালীলঃ২৪১।

💠 *প্রশ্নঃ আযানের জবাব দিলে কি প্রতিদান পাওয়া যাবে?*

উত্তরঃ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” [সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৫]

সুবহা’ন-আল্লাহ! জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়!! মাত্র ২-৩ মিনিটে এতো সহজে করা যায় এমন একটা আমল হেলাফেলা করে বাদ দেওয়া ঠিক হবেনা। আর এর জন্য তো আলাদা কোনো দুয়াও মুখস্থ করা লাগছেনা, শুধু মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে অন্তরে বিশ্বাস ও খেয়াল রেখে কথাগুলো বলা।

আপনি চেষ্টা করলে আজকে থেকেই এই আমল করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন আর দিনে পাঁচবার এই আমল করে সহজেই অনেক সওয়াবের মালিক হতে পারেন ইন শা’আল্লাহ।

*রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত পাওয়ার জন্য সহজ আমলঃ*

আমরা আসলে অনেকেই জানিনা কোন কাজটা করলে কি লাভ। এইজন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ব্যাপারে আমরা উদাসীন থাকি। অথচ একটু মনোযোগী হলেই অনেক কম কষ্টে অনেক বেশি সওয়াব ও উপকার পাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন সহজ আমলের মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আযান শুনে কেউ যদি আযানের দুয়া পড়ে কিয়ামতের দিন ঐ ব্যাক্তির জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে।”
[সহীহ আল-বুখারীঃ ৬১৪, তিরমিযীঃ ২১১১, নাসায়ীঃ ৬৮০, আবু দাউদঃ ৫২৯]

আযানের জবাব দেওয়ার পরে যে একবার দুরুদে ইব্রাহিম (নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা) পড়ে ও এর পরে আযানের যেই দুয়া আছে সেটা পড়ে তার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত করা জরুরী হয়ে পড়ে। কেউ চাইলে আযানের জবার দেওয়ার পর অতিরিক্ত এই আমলটিও করতে পারেন।

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحمُوداً الَّذِي وَعَدْتَهُ،

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ্ দাও’য়াতিত্ তা-ম্মাহ। ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাহ। আ-তি মুহা’ম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযিলাহ। ওয়াব্আ’সহু মাক্বা-মাম মাহ’মূদানিল্লাযী ওয়াআ’দতাহ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! মুহাম্মাদ ﷺ কে ওসীলা (জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর) এবং ফযীলত (সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন), আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছিয়ে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।

বিঃদ্রঃ আমাদের দেশের অনেক বই পুস্তক ও রেডিও টিভিতে যে দুয়া দেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু অতিরিক্ত কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যা কোনো সহীহ হাদীসে আসে নাই। অতিরিক্ত কথার মাঝে আছে “ইন্নাকালা তুখলিফুল মিয়াদ”, “ওয়াদ-দারাজাতার রাফীয়াতা” এইরকম কিছু কথা অতিতিক্ত আছে বায়হাকী কিতাবে, যেই হাদীসগুলোর সনদ সহীহ নয়। তাই এখানে দুয়াটা যেইভাবে দেয়া আছে এইভাবেই পড়া উত্তম। কারণ সবগুলো হাদীসের কিতাবে এইভাবেই এসেছে, এর বিপরীতে যে অতিরিক্ত কথাগুলো দেখা যায় সেগুলো হয় দুর্বল, অথবা জাল হাদীস।

 *পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের জন্য আযানের সময়ে দুয়া:*

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “দুটো সময় এমন রয়েছে যখন কোন দুয়া ফেরত দেয়া হয় না অথবা খুব কমই ফেরত দেয়া হয়। আর তা হচ্ছে ___

১. আযানের সময়ের দুআ এবং
২. যখন যুদ্ধের জন্য মুজাহিদগণ শক্রের মুখোমুখি হয়।” [আবু দাউদ, সহীহ, সহীহুল জামিঃ ৩০৭৯]
সুতরাং, আপনারা আযানের সময় আযানের উত্তর দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় দুয়াগুলো বেশি করে করতে পারেন।

 *আযান ও ইকামতের মাঝখানে দুয়া:*

আযান ও ইকামতের মাঝখানে যেই সময়, সেই সময়ের দুয়া কবুল করা হয়। মসজিদের মাইকে আযান দেওয়ার পরে মুসল্লিরা নামাযের জন্য একত্রিত হলে জামাত শুরুর আগে আরেকটা আযান দেওয়া হয় মসজিদের ভেতরে, সেটাকে ‘ইকামত’ বলা হয়। অধিকাংশ মসজিদেই সাধারণত আযানের ১৫ মিনিট অথবা ৩০ মিনিট পরে ইকামত দেওয়া হয়। আর মাগরিবের ওয়াক্ত ছোট হওয়ায় আযানের ৪-৫ মিনিট পরেই ইকমত দেওয়া হয়। বোনেরা পরিবারের পুরুষ সদস্যের মাধ্যমে নিকটস্থ মসজিদে আযান দেওয়ার কতক্ষণ পরে ইকামত দেওয়া হয় সেটা জেনে নেবেন। আর একান্তই জানা সম্ভব না হলে, আযান দেওয়ার পরে অন্তত ১৫ মিনিট নিশ্চিৎ ধরে ঐ সময়ের মাঝে দুয়া করতে পারবেন। আযানের জবাব দেওয়ার পরে জামাত শুরুর আগে ঐ সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা উচিত। রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন,

“আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ কখনই ফিরিয়ে দেওয়া হয়না”।
[তিরমিযীঃ ৩৫৯৪, আবু দাউদঃ ৫২৫, শায়খ আলবানী ইরওয়াউল গালীলঃ ১/২৬২]
------------------
উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.