শ্রেষ্ঠ মানুষেরা -হযরত আদম( আ:) [পর্ব -১]

শ্রেষ্ঠ মানুষেরা

হযরত আদম( আ:)


প্রথমে আল্লাহ ছিলেন। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না ।এমন কোনো মুহূর্ত ছিল না যখন তিনি ছিলেন না। তিনি ব্যতীত কোন বাস্তবতা ছিল না ।

কোন এক পর্যায়ে অসীম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সৃষ্টি করবেন ।একে একে সম্ভাবনার জগত থেকে বাস্তবতার জগতে নিয়ে আসতে লাগলেন তাঁর প্রথম সৃষ্টিগুলোকে ।

যেহেতু অসীম জ্ঞানের মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৃষ্টি বলে কিছু থাকবে, তার মানে সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাটাই শ্রেয় ।সেই সৃষ্টি ভালো কিছুই করুক বা খারাপ কিছু ।

আল্লাহর তার আরশ সৃষ্টি করলেন ।পানি সৃষ্টি করলেন ।কলম সৃষ্টি করলেন। এবং সেই কলমকে আদেশ করলেন লিখো।কলম বলে ওঠলো আমার রব আমি কি লিখবো??

আল্লাহ বললেন সময়ের শেষ পর্যন্ত। অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছু লিখো। আরশ শব্দের অর্থ আসন।আসন,পানি,কলম এই শব্দ গুলোর অর্থ আমরা জানি।কিন্তু আল্লাহর সেই আরশ,,সময়ের শুরু সেই পানি,,এবং সবকিছুর নিয়তি লেখা সে কলম কেমন তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় ।এবং একমাত্র আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে ।

মহাবিশ্ব তৈরির 50 হাজার বছর আগে আল্লাহর হুকুমে সেই কলম সবকিছুর নিয়তি লিখে রেখেছিল লওহাল মাহাফুজে। 50 হাজার বছর পর আল্লাহ আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করলেন।

অতঃপর কোনো এক পর্যায়ে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন ফেরেশতাদের ।নূর থেকে তৈরি আল্লাহ এই অপূর্ব সৃষ্টি প্রবৃত্তিগত ভাবেই আল্লাহর এবাদতে নিমজ্জিত থাকে ।এবং আল্লাহর কোন হুকুম এর অমান্য করে না ।এবং তাদের মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন জিবরাইল আলাইহিসসালাম ।

আল্লাহ নূর থেকে ফেরেশতা তৈরি করার পর আরও কিছু সময় পার হলো ।এবং এরপর এক নতুন জাতি সৃষ্টি করলেন এবং তাদের সৃষ্টি করলেন এক ধরনের ধোঁয়া বিহীন আগুন থেকে ।এই জাতির নাম হল জ্বিন।

ফেরেশতা আর জ্বিনদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো জ্বিন জাতি প্রবৃত্তিগত ভাবে আল্লাহর ইবাদত করেনা।বরং তারা চাইলেই তার হুকুম অমান্য করতে পারে। আল্লাহ জ্বিনদের দুনিয়াতে হালিফা হিসেবে পাঠালেন ।আগুন থেকে তৈরি এই সৃষ্টি ছিল উত্তেজনা প্রবণ তারা ঘনঘন যুদ্ধও খুনাখুনিতে লিপ্ত হতে লাগল এবং দুনিয়াতে অন্যায়-অনাচার ছড়িয়ে পড়লো ।কিছু পুণ্যবান জ্বিন থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ আল্লাহকে অমান্য করতে লাগলো ।

কিন্তু একজন ছিল যে বিশেষভাবে আল্লাহর ইবাদত করত। এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করত। একপর্যায়ে তাঁর ইবাদতের পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাকে এতোটা তার কাছে আসার অনুমতি দিলেন যে, সে ফেরেশতাদের অবস্থানে গিয়ে আল্লাহর এবাদত করার সুযোগ পেল। অন্যদিকে দুনিয়াতে জিন জাতির অপকর্ম চলতে থাকায় আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন দুনিয়াতে গিয়ে সেই জিনদের বিতাড়িত করার জন্য ।এই দায়িত্ব পালন করার জন্য ফেরেশতাদের সাথে পাঠানো হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করা সেই জ্বিন কে ও।

দুনিয়ায় অন্যায় অনাচার সৃষ্টিকারীদের ফেরেশতারা ধ্বংস করল ।এবং খুব অল্পসংখ্যক জ্বিন রেহাই পেলো। আল্লাহর হুকুম পালন করে ফেরেশতারা আসমানে ফিরে আসলো ।এবং তাদের সাথে সেই পুণ্যবান জ্বিন।

এরপর কতটুকু সময় পার হলো তা আমরা জানিনা। কিন্তু একপর্যায়ে রব্বুল আলামীন ঘোষণা দিলেন তিনি এক নতুন জীব সৃষ্টি করবেন।যখন আল্লাহ ঘোষণা দিলেন তিনি মানুষ সৃষ্টি করবেন ।

ফেরেশতারা অবাক হয়ে যায় তারা দেখেছিল স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন জ্বিন দুনিয়াতে কত অন্যায়-অনাচার করেছিল। তারা জানত মানুষ কেউ যদি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেয়া হয় তাহলে তারাও পৃথিবীতে একই রকম অন্যায় অনাচারে লিপ্ত হবে।

তবু কেন আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করবেন ??তারা আল্লাহ সিদ্ধান্তের উপর প্রশ্ন তুলছিল না। বরং তাদের বিস্ময় প্রকাশ করছিল ।আল্লাহ খুব সহজভাবেই বোঝালেন ।তার কাছে এমন জ্ঞান রয়েছে যা ফেরেশতাদের কাছে নেই অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করার পর তারা দুনিয়াতে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হলেও তাদের সৃষ্টি করার পেছনে কারণ রয়েছে। এবং শীঘ্রই সেই কারণ গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে।

অতঃপর আল্লাহ নিজ হাতে আদম আ: কে সৃষ্টি করলেন ।এবং তাকে সৃষ্টি করলেন মাটি থেকে ।এবং তার দৈহিক গঠন সম্পন্ন করার পর তার ভেতরে রুহ বা আত্না ফুঁকে দিলেন। এবং তিনি আদম আলাইহিস সালামকে সবকিছুর নাম শেখালেন।

এবং তিনি ফেরেশতাদের হুকুম দিলেন আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করার জন্য ।ফেরেশতাদের আসনে তখন সেই পুণ্যবান জ্বিন এর ও জায়গা ছিল। সেই আদেশটি তার ওপরেও প্রযোজ্য ছিল ।কিন্তু প্রতিটি ফেরেশতা তাৎক্ষণিকভাবে আদম আলাইহিস সালামকে সম্মান স্বরূপ সেজদা করলেও সেই জ্বিন তাকে সিজদা করলো না।

প্রথমবারের মতো কেউ স্বয়ং আল্লাহর উপস্থিতিতে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখালো।

এবং সাতে সাতে তার এতো বছর ইবাদতের উদ্দেশ্য প্রকাশ পেল ।সে আল্লাহকে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা কামনা করেনি। কামনা করেছিল মর্যাদা ,সম্মান ।আগুনের তৈরী জ্বিন হয়ে এবাদতের মাধ্যমে নূরের তৈরী ফেরেশতাদের মধ্যে জায়গা করে সে এতটা অহংকারী হয়ে গিয়েছিল,যে সে মাটির তৈরি আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করাকে ছোট করে দেখল।

সে যে মহাবিশ্বের স্রষ্টা মহান রব্বুল আলামীনের আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে সবচেয়ে অপদস্ত অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল তা বুঝতে পারল না।এবং হইতো আল্লাহকে অমান্য করার চেয়েও বড় ভুলটা সে তারপরে ই করল ।সে আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেল। সে ধরে নিল সে যে ভুল করেছে এর থেকে আল্লাহ তাকে আর কোনদিন ক্ষমা করবেন না ।এই হতাশ হয়ে যাওয়াকে আরবীতে বলা হয় আবলাসা। এবং সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল ইবলিশ।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বিতাড়িত করলেন।ইবলিসের মনে এত প্রবল হিংসা এর ক্রোধ জন্ম নিল যে সেই অভিশাপের মুহূর্তেও সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে ফেলল ।কিন্তু সে মাগফেরাত এর জন্য দোয়া করল না ।বরং আল্লাহর কাছ থেকে কিছু সময় রেহাই চাইলো। যেন সে আল্লাহর কাছে প্রমাণ করতে পারে মানব জাতি কতটা খারাপ। এবং মহান রব্বুল আলামীন এত বেশি দয়াশীল তার সৃষ্টিকে তিনি এতটাই ভালোবাসে যে তার সরাসরি হুকুম অমান্য করার পর ইবলিশ যখন তার কাছেই দোয়া করল তিনি তার দোয়া কবুল করে নিলেন ।
তাহলে আমরা যখন ভুল করে ফেলি। বার বার একই গুনায় লিপ্ত হতে থাকি এবং এরপর মনে করি আমরা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেছি আল্লাহ হইতো আমাদের ক্ষমা করবেন না ।আমাদেরকে কি এমন চিন্তা করার কোনো কারণ রয়েছে?????

আদম আলাইহিস সালাম কে জান্নাতে প্রবেশ করালেন ।এবং তিনি সেখানে তার রবের নেয়ামত উপভোগ করতে লাগলেন ।এবং ইবলিশ গোপনে তাকে ধোঁকা দেয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলো ।

প্রথম পর্ব শেষে সবার জন্য কিছু প্রশ্ন ,,,১।ইবলিশ সারাজীবন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে গেলো এবং এত বেশি এবাদত করল যে ,আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের অবস্থানে নিয়ে গেলেন ।অথচ তার একটি মাত্র ভুলের জন্য আল্লাহ তাকে চিরতরে অভিশপ্ত ঘোষণা করলেন। এর কারণটা কি ???২।আদম আলাইহিস সালাম মাটির তৈরি হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ নুর ও আগুনের তৈরী সৃষ্টিদের আদেশ করলেন তাকে সেজদা করার জন্য। যদি ও নুর ও আগুন উভয় বস্তুই মাটির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ।এর কারণটা কি??? আগামী পর্বে আদম আলাইহিস সালামের জীবনের পরের অধ্যায়গুলো বর্ণনা সহ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।


Baseera ইউনিউব চ্যানেল থেকে সংগৃহিত





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.