তাকদির বা ভাগ্য


ভাগ্য নিয়ে এত সুন্দর ও সুস্পষ্ট লেখা আগে পড়িনি।ভাগ্য নিয়ে যাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে আশাকরি তাদের সংশয় দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।



১.জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এগুলো কি পূর্ব নির্ধারিত নাকি দোয়ার দ্বারা পরিবর্তন করা যায়?



২.আর যারা নিজের পছন্দ অনু্যায়ী বিয়ে করে, সেক্ষেত্রে যার সাথে বিয়ে হয় সেই জোড়াও কি আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন?”


জবাবঃ

তকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ। আল্লাহ এই ভাগ্য পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন। আধুনিক যুগে অনেকেই ভাগ্য বিশ্বাস করেন না। তারা মনে করেন চেষ্টা ও অধ্যাবসায় দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। আর ইসলাম আমাদেরকে তকদিরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে বলেছে।



এখন প্রশ্ন থেকে যায়, ভাগ্য যদি পরিবর্তন না করা যায় তাহলে এত খাটাখাটনি করে লাভ কি?

এর চেয়ে চুপ করে বসে থাকলেই তো হয়।ভাগ্যে যেটা লেখা আছে সেটাই হবে। এছাড়া আরো জটিল বিষয়ও এখানে এসে যায়।

ভাগ্য কি?

এক কথায় ভাগ্য হল নির্ধারিত ভবিষ্যত। হ্যা,এটা নির্ধারিত থাকে কিন্তু বিষয়টি আমরা একটু ভুল বুঝি।
ধরুন আপনি সকাল ১০ টার সময় আপনার কম্পিউটারে এই লেখাটি পড়ছেন। আপনি জানেন না যে দশ মিনিট পরে আপনার ভাগ্যে কি ঘটবে। এমন হতে পারে যে ১০টা বেজে ১০ মিনিটের ভাগ্য এভাবে লেখা আছেঃ–

১.আপনি যদি রান্না ঘরে যান তবে একটি কাচের বাটি ভেঙ্গে ফেলবেন।

২.আপনি যদি রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে যান তবে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে।

৩.আপনি একজন বন্ধুকে ফোন দিলে সে টাকা ধার চাইবে।

৪.আপনি যদি জানালা বন্ধ করতে যান তবে হাতে ব্যাথা পাবেন।

৫.আপনি যদি ঘর গোছাতে শুরু করেন তবে হারিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট খুজে পাবেন………ইত্যাদি।

আপনি যেটা করবেন বা বেছে নিবেন, সেটার ফলাফল নির্ধারিত আছে কিন্তু আপনি কোনটা করবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। আপনি যেকোনো একটা বেছে নিতে পারেন। এটাই হলো মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা। আল্লাহ এখানে আপনাকে কোন জোর করেন না। আপনি কি করলে কি হবে এটা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন কিন্তু আপনি কি করবেন সেটা আপনার ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।
.
অতএব ভাগ্য বলতে আমরা যে ভবিষ্যৎ বুঝে থাকি সেটা অবশ্যই পূর্ব নির্ধারিত কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত অনেক ভবিষ্যতের মধ্যে একটি আমরা নিজেরাই বেছে নেই। আমরা নিজেরাই যখন বেছে নিচ্ছি তখন এর দোষ, গুণ, প্রাপ্তি, ক্ষতি সবই আমাদের। এর দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণ আমাদের। আপনি কি করবেন সেটা নির্ধারিত নয়।আপনি কি করলে কি হবে সেটা নির্ধারিত।

ভাগ্য আগে নির্ধারিত থাকলেও আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করে ভাগ্য পরিবর্তন করেন। আপনি আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইলেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান সেটা অবশ্যই দিবেন। সেটা যদি আল্লাহ আপনাকে না দেন তবে তার দুটি মূল কারণ থাকতে পারে।

প্রথম কারণ হলো-আপনার চাওয়াটা ঠিকমতন হয়নি।চাওয়াটা দায় সারা গোছের হয়েছে।

দ্বিতীয় কারণ হলো-সেই জিনিসটি আপনার জন্য সুফল নয় বরং দুর্ভোগ বয়ে আনবে। তা না হলে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহ সেটা অবশ্যই দিবেন। হাসরের ময়দানে শেষ বিচারের সময়, দোযখ থেকে বাঁচতে, অনেকেই আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করবে। কিন্তু এসব মিথ্যা অভিযোগ তো মিথ্যাই।।কিন্তু কেউ যদি অভিযোগ করে “হে আল্লাহ, আমি অমুক দিন তোমার কাছে অমুক জিনিস চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে সেটা দাওনি।”এটা কিন্তু সত্য অভিযোগ। সর্ব শক্তিমান আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে এমন সত্য অভিযোগ কেউ করতেই পারবে না। কারণ কেউ যদি কোন সত্য অভিযোগ করতে পারে তাহলে তো উনার ভুল বা ব্যর্থতা দেখানো হল (নাউজুবিল্লাহ)। তবে তো তিনি (আল্লাহ) কেমন উপাস্য, কেমন রব, কেমন সর্ব শক্তিমান এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কাজেই যারা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চেয়ে দুনিয়াতে পায়নি, তারা হাসরের ময়দানে ওই দোয়ার জন্য এত বেশী পুরস্কার পাবে যে তখন সে বলবে, “হায়, দুনিয়াতে যদি আমার কোন দোয়াই কবুল না হত তবে আরো কত পুরস্কার পেতাম।”

দোয়াঃ
আল্লাহর কাছে বান্দার একটা চাওয়া। এটা কখনো বিফলে যায় না। আল্লাহ কিছু এই দুনিয়াতে দেন কিছু পরকালে দেবার জন্য জমিয়ে রাখেন। কিন্তু তিনি দিবেনই।।বান্দা চেয়েছে আর আল্লাহ দেননি বা দিবেননা এমন কখনো হবে না। বান্দা যত পাপীই হোক না কেন আল্লাহ তার দোয়া (চাওয়া) কবুল করেন। এই চাওয়াটা অবশ্যই সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
ভাগ্য হল আমাদের ভবিষ্যৎ। আল্লাহ এটা নির্ধারিত করেছেন। কিন্তু নির্ধারিত কোন ভবিষ্যৎ আমরা বেছে নেব সেটা আমাদের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। আল্লাহ এখানে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাজেই এই বেছে নেওয়ার দায়বদ্ধতা (লাভ/ক্ষতি) আমার।আমাদের দোয়া (চাওয়া) কবুল করে আল্লাহ ভাগ্য পরিবর্তন করেন। যদি আমাদের চাওয়া দুনিয়াতে পূরণ না হয় তবে সেটা আখিরাতে পুরণ হবে। দোয়া কখনো বিফলে যায় না। আসুন, আমরা জীবনের ছোট বড় সব চাওয়া বেশী বেশী করে আল্লাহর কাছে চাই। এতে আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ রয়েছে।




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.