আল্লাহর কাছে আসার গল্প

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
ইন্টার লাইফ পার করেছি ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে খুব মজায়।মহিলা কলেজ এ পরতাম বিধায় কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না।তাছাড়া ছোট বেলা থেকেই গার্লস স্কুলে পড়ে এসেছি।ঘুরাঘুরি পছন্দ করতাম খুব।তাই দেখা যেতো ক্লাস বাদ দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে বেশিরভাগ টাইম ঘুরতাম, খেতাম, আর সে ছবি আপলোড দিতাম ফেসবুকে।পারিবারিক শাসনে থাকায় উগ্র ছিলাম না কখনোই।পড়াশোনায় সময় কম দেওয়ায় ইন্টারে রেজাল্ট টা খারাপ আসে।বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াবে।কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আমি পারিনি পূরণ করতে ইন্টারে জিপিএ কম থাকায়।সেসময়টায় বাবা মায়ের কষ্ট টা খুব ভেতর থেকে ফিল করেছিলাম।
অবশেষে ফুফাতো ভাইয়ার পরামর্শে ২০১৯ এ বাবা আমাকে ভর্তি করান কমার্সের একটা প্রফেশনাল কোর্সে।নতুন করে স্বপ্ন দেখলাম ক্যারিয়ার বিল্ড আপের।আর বাবা মাকে খুশি করার।
২০১৯ জানুয়ারি ৩০। প্রথম ক্লাস থেকেই আমি খুব মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। আর ঐ ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো কম্বাইন্ড ক্লাস শুরু আমার।অনেক ছেলে বন্ধু হয়েছিল।
১৯ ফেব্রুয়ারি আমার আইডি তে একটা রিকুয়েস্ট আসে।আইডিতে অনেক ইসলামিক পোস্ট ছিলো যেগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো।এক্সেপ্ট করে জানতে পারলাম উনি আমাদের ক্যাম্পাসেরই এক সিনিয়র ভাই। নিজ থেকেই মেসেজ করেন।
রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।প্রথম দিনই কল দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন।আর রিকুয়েস্ট করলেন যেনো ফেসবুকের ছবি সব ডিলিট করে দিই।বদনজর সম্পর্কে অনেক কিছু জানালেন।উনার প্রতিটি কথা আমার খুবই ভালো লাগল আর অনেক ইসলামীক কথা দিয়ে এমন ভাবে বুঝিয়ে বললেন আমি অবশেষে ডিসিশন নিয়ে নিলাম ছবি ডিলিট করার।২১ ফেব্রুয়ারি ছবি ডিলিট করে দিলাম।উনি আমাকে পড়াশোনায় ও হেল্প করতেন।উপদেশ দিতেন মিথ্যা কথা না বলার, গীবত না করার।আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন।বিভিন্ন ইসলামীক লেকচারের ভিডিও দিতেন। নামাজের গুরুত্ব, শাস্তি যেদিন জানলাম, নামাজ পড়তে শুরু করলাম ঠিকঠাক। তখনও বড় ভাইয়ের মতো রেসপেক্ট করে প্রতিটা কথা মানতাম ইসলামের বিধি বিধানের প্রতি দূর্বলতার জায়গা থেকে।
এরপর একদিন উনি আমাকে দেখা করার কথা বললেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বোরখা পড়ে দেখা করবো। তুলে রাখা বোরখা আলমারি থেকে নামিয়ে পড়লাম।৪ মার্চ প্রথম দেখা করি।আর আমি সেদিন থেকে বোরখা রেগুলার পরা শুরু করলাম।১৪ মার্চ ৪র্থ বারের দেখায় উনি বলেন "ভালো করে পড়াশোনা করো। আমি আমার পরিবারে তোমার কথা জানাবো।" শুনেই আমি একটু অবাক হলেও খুব খুশি হই। কারণ এমন একজন মানুষ আল্লাহর পথে চলতে সহায়ক হবেন ভেবেই। হারাম সম্পর্কের ব্যপারে আমার তেমন জ্ঞান তখনও ছিলো না। জড়িয়ে পড়েছিলাম হারাম সম্পর্কে।
কিন্তু খুব বেশি দিন এগুলো না যোগাযোগ।এরপর আর দেখা হয়নি। শুধু ফোনেই কথা হতো। কিছুদিন পরে উনি যোগাযোগ কমিয়ে দেন। আমার সে সময় টা খুব খারাপ লাগতো। আমি বুঝতাম না এই অস্থিরতা কি করলে যাবে আমার।
অবশেষে ২৯ মার্চ একটা খারাপ সিচুয়েশন তৈরী করে বাজে বিহেভ করে। ভেবেছিলাম হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু উনি ৩০ তারিখ একটা লম্বা ভয়েজ রেকর্ড এ আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন আর কোনো সম্পর্কে তিনি থাকতে চান না। আমি উনার জন্য পারফেক্ট না। আমি যেনো মেনে নিতে পারছিলাম না।
এই কষ্ট টা থেকেই আমি মুলত আমার রবকে খুঁজে পাই। আমি তখন রাতে সিজদায় এতো কাঁদতাম। আমার জীবনের বিগত পাপ গুলোর জন্য, সব ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। আমি youtube এ universal vision এর লেকচার গুলো শুনতাম। তখন কোন চ্যানেল এর একটা হারাম সম্পর্ক রিলেটেড একটা ভিডিও সামনে আসলো। নামটা ঠিক মনে নাই। ভিডিওটা দেখার পর অনুশোচনায় নামাজে তওবা করে কাঁদলাম খুব। আর কখনো এমন হারাম কাজে না জড়ানোর ওয়াদা করলাম।
কোরআন পড়া শুরু করলাম নিয়মিত।অল্প অল্প মুখস্থ করার চেষ্টা করতাম, আর অর্থ পড়তাম।কি অদ্ভুত এক প্রশান্তি আসতো আলহামদুলিল্লাহ।আমি তাহাজ্জুদে নিয়মিত হয়ে গেলাম। জানি না মাঝরাতে এলার্ম বেজে উঠলে auto মনে চলে আসতো আমার শুয়ে থাকলে চলবে না।রবের সন্তুষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম। আমার সিজদায় গেলেই পাপ গুলোর জন্য কান্না পেতো। ননমাহরাম সম্পর্কে জানার পর থেকেই বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বাড়ালাম। আস্তে আস্তে চেনা জগতে খুব অচেনা হয়ে গেলাম।
কিন্তু আল্লাহর পথে চলা খুব সহজ হয়নি পরিবার থেকেও বাঁধা আসতে শুরু করলো।হিজাব নাই।আমি পর্দা করতাম বড় ওড়না দিয়ে।পরিপূর্ণ পর্দা সম্পর্কে জানার পর অল্প কিছু টাকা জমিয়ে যেদিন প্রথম হাত মোজা কিনলাম মা তো সেই রাগ।তাও জোর করে পড়া শুরু করলাম।সামর্থ্যের মধ্যে যা ছিলো তা দিয়েই পর্দা করি।মা তো সন্দেহ করা শুরু করলেন। বকা দিতো খুব।অতিরিক্ত কিছুই ভালো না,জঙ্গির দলে নাম লিখাইছো নাকি। এসব বলতো। কষ্ট পেতাম না। রবের কাছে ধৈর্য্য ধারণের তাওফিক্ব চেয়ে দুয়া করতাম।
বাসায় কেউ আসলে সামনে যেতে চাইতাম না।মা বলতো নতুন কাহিনী শুরু করছো? দেখছিনা আগে কেমন চলছো।এমন আরও অনেক কথা শুনতে হয়েছে। মা মাঝে মাঝেই আমার ফোন নিয়ে নিতো। যেই মা ছাড়া সন্তানের আপন কেউ হয়না দুনিয়ায় সেই দিনগুলোতে মা কে বড়ো অচেনা লাগতো।মনটা ভেঙ্গে যেতো, কিন্তু রবকে রাতের অন্ধকারে সিজদায় কেঁদে বলতাম কারো কটু কথায় কষ্ট পাইনা, ধৈর্য্য দাও,ক্ষমা চাইতাম,পরিবারের সবার হিদায়াতের জন্য দুআ করতাম।।অনেক আপুকে দেখতাম অনলাইনে জিলবাব এর পিক দিতো।শখ হতো কেনার।কিন্ত সামর্থ্য আর হতো না।আর বাসায় তো বলাই যাবেনা। তারপর অল্প কিছু টাকা দিয়ে রবকে ভালোবেসে কোরআন কে বুঝবো বলে অনলাইনে একটা একাডেমীতে ভর্তি হলাম।
একঝাঁক দ্বীনি বোনের সংস্পর্শ পেলাম।।আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।রব উনাদের উছিলায় নতুন নতুন শেখার তাওফিক্ব দিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ এরপর রব আমাকে ফিরিয়ে দিলেন যা নিয়ে নিয়েছিলেন তার চাইতে উত্তম। আমি সেই ইন্সটিটিউট ছেড়ে ৬ মাস পর একটা ভালো সাবজেক্ট নিয়ে অন্য এক ভার্সিটিতে অনার্সে ভর্তি হলাম। শুরু থেকেই ননমাহরাম avoid শুরু করলাম। আল্লাহই সহজ করে দিলেন। মেডিকেল related subject নিয়ে পড়ছি।আল্লাহ চান তো ইচ্ছে আছে মেডিকেল ল্যাব এ জব করে মানুষের সেবা করার।এখন প্রায় ১ বছর...
আল্লাহ আমার পরিবারের সবাইকে আলহামদুলিল্লাহ নামাজী করেছেন।মায়ের মন কিছুটা নরম হলো।এখন আগের মতো বকে কম।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.