আল্লাহর কাছে আসার গল্প


লিখাটা ঈর্ষা জাগায়💚


বেশ কয়েক বছর আগের কথা।
তখন আমি ইসলামের নিয়ম কানুন মানতাম না তেমন একটা, বুঝতামই না এটাই আসলে মেইন কথা।
কিন্তু ইসলামের প্রতি একটা টান সব সময়ই ছিল।
.
ছিল প্রচুর বন্ধু।
প্রচুর গান, মুভি, আড্ডাতে সময় কেটে যেত কত!
গান তো ছিল আমার জন্যে সব কিছু!
বার্থডে থেকে শুরু করে সব ধরণের day ই celebration করতাম।
আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমি জানতামই না এগুলো পুরোপুরি গুনাহ!
একটা মানুষ তো তখন ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে যখন সে জানে যে এইটা গুনাহ!
কিন্তু আমি যেমন ছিলাম আমি শুধু বুঝতাম নামাজ নিয়মিত পড়া দরকার, হিজাব পড়তে পারলে ভাল আর গানটার গতি করা দরকার।
কারণ এটা বুঝতাম যে মিউজিক হারাম।
আর এটা ছাড়া যা আমি ছিলাম তাতে কোন সমস্যা নাই!
.
বন্ধু, আড্ডা, গান, জীবনের বেশ কিছু সময় এভাবেই কেটে গেল আমার।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার যে আমার 'journey towards light' শুরু হয়েছিল মিউজিক ছাড়ার মধ্য দিয়েই।
যেহেতু জানতাম গান শুনা গুনাহ, তাই যত শুনি না কেন একটা গিল্টি ফিলিং থাকত। রমজান মাসে আরো খারাপ লাগত।
তাই ঠিক করলাম কষ্ট করে শুনব না এক মাস রমজানকে সম্মান করে।
এই মাসটা গেলে আবার না হয় শোনা যাবে।
একটা মাসের ই তো ব্যাপার।
কে জানত আমার এই ছোট একটা স্টেপ আমার রবের এত পছন্দ হবে...!
.
এর পরের বছরের রমজানে আমি দিন গুনছিলাম কবে শেষ হবে রমজান, আবার কবে শুরু হবে গান শোনা।
এই এমন একটা সময়ই মিউজিক নিয়ে এক জনের সাথে আমার খুব লাগে।
ঝগড়া শেষে রাগ কমার পর বুঝতে পারি ও আসলে ঠিক ই বলেছে, আমি নিজেই তো গান শুনি মিউজিক হারাম জানা সত্ত্বেও।
নাহ, ডিসিশন নিয়ে নিলাম গান ছেড়ে দেব। এরপর থেকে আমি আর গান শুনিনি, আলহামদুলিল্লাহ।
কষ্ট হয়েছিল খুব বেশি।
মাঝখানে তো এত কষ্ট হয়েছিল যেন নেশাগ্রস্ত আমি।
But Allah helped.. as He always had done.. alhamdulillah...!
.
এর মধ্যেই এডমিশন টেস্ট দিলাম। এরপর ভাবলাম হিজাবটা আমার আসলেই সেভাবে শুরু করা দরকার। অবাক লাগে ভাবতে যে আমি নেকাবী মেয়েদের দেখলে করুণা করতাম, সে আমি সময়ের পরিক্রমায় নিজেই নিকাবী, আলহামদুলিল্লাহ!
তবে এর চেয়েও কঠিন বোধহয় ছিল সমস্ত ছেলে ফ্রেন্ডদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া।
আমার এত ভাল ভাল ফ্রেন্ড.. যাদের সাথে জীবনের কত সময় কাটিয়েছি, আনন্দ -দু:খ ভাগাভাগি করে নিয়েছি।
আর নাকি কখনো যোগাযোগ হবে না তাদের সাথে।
এক জন তো অনেক কেঁদেছিল।
আমিও কি কম কষ্ট পাইনি!
কিন্তু এগুলো তো আমার রবের জন্যে, শুধু তার জন্যেই ছিল।তাই প্রচন্ড কষ্ট পেয়েও চোখে পানি নিয়ে 'Allah, I love U, I really love You... ' এই কথাটা বলার মাঝে যে কি শান্তি ছিল... সেটা পাওয়ার জন্যে এরকম হাজারটা সম্পর্ক ও sacrifice করা যায়..
.
বন্ধু, আড্ডা, গান, অবারিত স্বাধীনতা, সব ই ছিল।
শুধু সত্যিকার শান্তি আর ভালবাসা ছিল না।
মাঝে মাঝে অবাক হই এখনো কিভাবে আল্লাহ আমাকে ফেরালেন!
কিভাবে আমাকে আলোর পথ দেখালেন!
আমি তো যোগ্য ছিলাম না এগুলো কোন কিছুরই!
কোন কিছুরই না!
এটা স্রেফ আর স্রেফ তার নিয়ামত ছাড়া কিছুই না।
.
এখন আমি অনেক সুখে, অনেক শান্তিতে আছি, আলহামদুলিল্লাহ। জীবনের জটিলতা এখন অনেক গুণ বেড়েছে, বেড়েছে দায়িত্ব, কর্তব্য আর সমস্যাও।
কিন্তু সব কিছুতে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা, তার কাছে যেতে চাওয়া, তাকে ভালবাসা, তার জন্যে কিছু একটা করতে চাওয়া।
এ শান্তি যে পায়নি, তাকে আসলে বোঝানো যাবে না সে কি পায়নি..
.
বৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হয়ে চিৎকার করে বলতে চাওয়া
'আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আল্লাহ,
অনেক বেশি ভালবাসি'!!
বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে চিৎকার করে বলা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ , আসলেই তুমি এক আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোন প্রভু নেই...'
প্রচন্ড ঝড়ের সময় দরজা আটকে একা অন্ধকার ঘরে কুরআন পড়া,
ফজরের পর মুগ্ধ চোখে ভোরের আকাশ দেখা,
কানে হেডফোনে তাফসীর আর হাতে চায়ের মগ।
.
দোষ না থাকা সত্ত্বেও এই প্রচন্ড ইগো সম্পন্ন এই মানুষটা আগে sorry বলা আর এরপর শুধু তুমি খুশি হবে বলে তৃপ্তি পাওয়া। অসম্ভব ভাল লাগার এই তৃপ্তি গুলোর, এই স্মৃতি গুলোর জন্যে এরকম হাজারটা জাহেলিয়্যাতের জীবন স্যাক্রিফাইস করা যায়... হাজারটা..
.
আমার ছোট জীবনে একটা জিনিস বুঝেছি.
"never underestimate the power of Dua"।
কিভাবে কোন দুয়া আল্লাহ যে কবুল করেন সেটা আমরা বুঝতেও পারব না।
জীবনে যতই খারাপ ছিলাম না কেন কখনো এই দুয়া ছাড়িনি ‘'আল্লাহ আমাকে তোমার প্রিয় বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে দাও।”
প্রিয় বান্দার ধারে কাছেও যেতে পারিনি জানি, কিন্তু আল্লাহ তো পথটা ঠিকই দেখিয়েছেন।
আলোর সন্ধান ঠিকই পেয়েছি তার অপার করূণায়।
.
আলহামদুলিল্লাহ,
আলহামদুলিল্লাহ ফর দ্যা লাইট! আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ফর ইসলাম


কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.