আল্লাহর কাছে আসার গল্প

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)

আসসালামুআলাইকুম
.
তথাকথিত মুসলিম ব্যাংকে চাকরী করে বাবা,এমন এক পরিবারের মেয়ে আমি!
ছোট বেলা থেকে নামাজ এর বিষয়টা মাথায় ছিলো, তবে রোজা রাখাতে সমস্যা করতেন বাবা। অনেক আদরের মেয়ে হওয়ায় রোজা রাখলেও দরকার পড়লে আসরের সময় ও ইচ্ছা করে জোর করে পানি খাইয়ে দিতেন!
তখন আমার নামাজ ফরজ ছিলো! অতিরিক্ত ভালোবাসেন বাবা, যেটা সব বাবারাই করে।
তবে এটা একটি বাড়াবাড়ি ই ছিলো। শুধু একটাই কথা আমার মেয়ের যাতে কোনো কিছুতেই কষ্ট না হয়!

যাই হোক,পড়াশোনায় সব সময় ভালো হওয়ার সুবাধে মেডিকেল এ পড়ার ইচ্ছা ছিলো আমার এবং পরিবারের ও।
তার জন্য বাবা ভালো স্কুলে পড়ানো থেকে শুরু করে টিউশন কোনো কিছুরই কমতি করেন নি।
সব ঠিক ঠাক ছিলো... হঠাৎ যখন মেডিকেলে পরীক্ষা দিলাম তখন ই ঘটলো সমস্যা। আমি টিকলাম না সরকারী মেডিকেল এ!
অথচ,আর কোনো কিছুর জন্য প্রিপারেশন ও নেইনি আমি!
কোনো ভবেই মানতে পারছিলাম না বিষয়টা, পরিবার ও একেবারে ভেঞ্জে পড়ে।
পরের বার আবার ও ট্রাই করবো ভাবলাম, তখনো টিকলাম না!
তখন সে কি অবস্থা আমার।
ডিপ্রেশনে পুরা ডুবে ছিলাম... এখন মনে হয় যদি তখন আমি টিকে যেতাম মেডিকেলে তাহলে হয়তো আমি আমার রব্ব কে চিনতেই পারতাম না। একটা জিনিস সরিয়ে নিয়ে আমার জন্য আরো কত বড় একটা জিনিস আমার রব্ব আমাকে দিয়ে দিলেন আলহামদুলিল্লাহ!
অনার্সে এডমিট হলাম মহিলা একটা কলেজে!
তখন ফেবুতে খুবই একটিভ থাকতাম,টাইম স্পেন্ট করার জন্য। এই ভাবে হোয়াটস আপ এ ও কিছু গ্রুপে এড হয়ে, পর্দা -মাহরাম এগুলা র বিষয়ে জানলাম।
এর আগের সময়টা খুবই ভয়ানক ছিলো!

আমি নারীবাদী হয়ে গেলাম, মেয়েদের বিয়ে দেবে কেনো? কেনো অন্যের ওপর ডিপেন্ডেন্ট হবে একটা মেয়ে, এই সেই আরো কত কি! বিয়ে কে সম্পূর্ণ রুপে অস্বীকার করতাম(আল্লাহ মাফ করুন) সাথে গান শুনা, আর সিনেমা-সিরিয়াল দেখা তো ছিলোই! (ইয়া আল্লাহ মাফ করো)
অনেক ভাবলাম যে এটা তো ঠিক হচ্ছেনা তখন আল্লাহর সাহায্যে হুট করেই গান শুনা আর মুভি দেখা অফ করে দিলাম।
অনার্স এর ২য় ইয়ার এ প্রথম আমি পুরো পরীক্ষা দিই নিকাব করে, এটা আমার জন্য কত বড় এচিভম্যান্ট ছিলো তা বলার মতো না। অথচ এর আগে কখনো ই আমি নিকাব করে থাকিনি!
আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝলাম
একদিন হাতমোজা কিনে আনলাম আর কালো একটা ওড়না, যাতে বোরকার ওপর এটা ও পরতে পারি।
এতেই ঘটলো সমস্যা। মা খুবই নারাজ হলেন,"আমি ও তো পর্দা করি, তোমার এত কিছু লাগবে কেনো?
কেউ বিয়ের কথা তো আগাবেই না, কেউ জানবে ও না এখানে কোনো মেয়ে আছে, এই ভাবে এত কম বয়সে বয়স্ক সাজার কি আছে আরো কত কি!
"
তবে আমি ছিলাম আমার সিদ্বান্তে অটল।
ননমাহরাম রা বাসায় আসলেও দুরত্ব রাখতে চাই, যদিও পারিনা পুরোপুরি
তখন খুবই খারাপ লাগে...
অনেকে অনেক কথা বলে, বিশেষ করে পরিবার আমাকে এভাবে দেখতে চায়না।
বাবা তো খুবই খারাপ ভাবেন ওগুলা!
.
যাই হোক, বাবার টাকা যেহেতু ব্যাংকের টাকা, তাই আমি চাই আমি নিজে যাতে ইনকাম করতে পারি হালাল ভাবে।
যাতে প্রচুর দান করতে পারি!
.
আর আমাদের দেশের যা অবস্তা তাতে তো মেয়েদের পর্দা করে চাকরী করাটা অনেক কষ্টকর!
.
একটা মাদ্রাসায় ইংরেজীর টিচার হিসাবে ঢুকছি, তবে মনে হয় না বেশিদিন ঠিকতে পারবো! পর্দা'র ঠিকটাক ব্যাবস্থা হচ্ছেনা।প্রিন্সিপাল এর সামনে যেতে হয় প্রায়শই! যদিও আমি চোখ নিচের দিকে রাখি, তবে এভাবে চলাটা কষ্টকর।যেটা খুবই অস্বস্তিকর আমার জন্য.
মহিলা টিচাররা ও আছে,উনারা কখনো ফ্রি টাইমে নানাধরনে গসিপ করে থাকেন! যেটা গীবত হয়ে যায়। এবং অনেক সময় গান ও শুনেন, ফ্রি টাইম পাছ করার জন্য,তখন খুবই খারাপ লাগে। কোনো ভাবে উঠে যেতেও পারিনা। তবে তা ও তখন কোনো একটা বাহানা ধরে উঠে যাই ওদের থেকে। এটা অবশ্য ওরা ও হয়তো বুঝে! যেটা ওদের ও খারাপ লাগার কথা! এতো হুজুরির কি দরকার এই টাইপ আর কি!
অনেকে তো বলছেও, যদি এত পর্দা করতে হয় তাইলে চাকরী করবা কেন?
দোয়া করবেন সবাই যাতে খুব তাড়াতাড়ি একজন উওম জীবন সঙ্গী পেয়ে যাই!
যে আমার জান্নাতে যাওঅার সাথী হয়! যার হাত ধরে জান্নাতেও হাঁটতে পারি..
যিনি আমাকে দ্বীনের পথে হাঠতে আরেকটু সহযোগীতা করেন!
.
একটা মেসেজ সবার জন্য,প্লিজ ফিরে আসুন আপুরা,এখনো তো বেঁচে আছি আমরা,এখনো তওবার সুযোগ আছে,যখন মরে যাবো তখন তো আর এই সুযোগ থাকবেনা!
তাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন, অন্তত প্রথমে গান-মুভি এগুলা শুনা/দেখা বাদ দেন, দেখবেন বাকিগুলাও ইনশা'ল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে!


(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)

দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি



কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.