আল্লাহর কাছে আসার গল্প-১৮

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া যে তিনি আমায় তার সিরাতুল মুস্তাকিমের পথের অনুসারি করেছেন।
জাহিলিয়াতের মধ্যে ডুবে ছিলাম এক সময়।
খুব ছোট্ট বেলায় মাকে হারাই। তারপর থেকে দাদা দাদীর কাছে থেকে মানুষ হওয়া। ক্লাস ফ্রোরে থাকা কালীন দাদা মারা যায়।
তারপর বোনের বিয়ের পর, আপু আমাকে তারকাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই লিখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। দুনিয়াবি লিখাপড়া নিয়েই ছিলাম সচেতন। এটার জন্যই জীবনে যত বকাবকি শুনেছি। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো খুবই নগন্য। ছোট বেলায় মক্তব, আর বড় হওয়ার পড় ক্লাশের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ ছিলো ইসলামিক জ্ঞান।
আপুদের ছিলো জয়েন ফ্যামিলি। হালাল-হারাম,পর্দা, মাহরাম,গায়রে-মাহরাম এসব কোন কিছুর জ্ঞানই ছিলোনা। মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েও আমরা ছিলাম অনেকাংশে গাফেল। ইসলামের কোন ধরনের মৌলিক শিক্ষাই পালন করতাম না। মন চাইলে নামাজ পড়তাম, আর রমজান মাস আসলে ইচ্ছা হলে রোজা রাখতাম।
চারপাশের পরিবেশ ছিলো খুবই খারাপ। কথায় আছেনা সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আমার বেলায়ও ঠিক তেমন হলো।
বন্ধু বান্ধবী,আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি কারো কাছ থেকেই দ্বীনের জ্ঞান পাইনি।
হারাম সম্পর্কের মধ্যে ডুবে ছিলাম এক সময়। এর জন্য পরিবারের কাছেও অনেক লাঞ্ছিত হয়েছি। (আল্লাহুমাগফিরলি)
ইন্টারে পড়াকালীন ফোন কিনে ফেসবুক একাউন্ট খুলি,সেই থেকে শুরু হলো ভার্চুয়ালের মাধ্যমেও বিভিন্ন হারাম কাজে জড়িয়ে পড়া।
ফেসবুকে নিত্য নতুন ছবি দেওয়া নিজের কিংবা বিভিন্ন বেপর্দা নারীদের। টিবি সিরিরাল, নাচ গান, মুভিদেখা, আড্ডা দেওয়া, আর বিভিন্ন ধরনের দিবস উপলক্ষে পার্টি প্রোগ্রাম করা এসব ছিলো আমার নিত্য দিনের সঙ্গি।
একসময় কেউ একজন আমাকে "মুসলিম নারী" গ্রুপের মধ্যে এড করে দেয়। একদিন সেখানে হারাম রিলেশনের ব্যাপারে একটা পোষ্ট দেখতে পাই। তারপর সেদিনই এসব হারাম সম্পর্কের ইতি টানলাম। আলহামদুলিল্লাহ
পরিচিত একভাই একটা দ্বীনী বোনকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর থেকে ওই বোন প্রতিনিয়ত আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে দ্বীন সম্পর্কে বুঝাতে থাকে। ফেসবুক থেকে সব ছবি সরিয়ে ফেলতে বলে।
পর্দা সম্পর্কে নাসিহা দেয়। প্রথম প্রথম ওনাকে আমার খুব বিরক্ত লাগত।
আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমি আস্তে আস্তে ওই আপুর কথামত নিজের ভুল বুঝতে পারি।
ফেসবুক থেকে নিজের এবং সকল বেপর্দা নারীদের ছবি ডিলিট করে দেই। মিউজিক শোনা হারাম জেনে ফোন থেকে সব গান, নাটক ইত্যাদি ডিলিট করে দেই।
সব অপরিচিত ছেলেদের আনফ্রেন্ড করে দেই।
বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক পেইজ গ্রুপ ইত্যাদিতে জইন করি। ইসলামিক লেকচার শুনি আর ইসলামিক বই পড়া শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ
ওই আপুটা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিত। নামাজ কুরআন পড়ার জন্য বলতে থাকতো। প্রথম প্রথম না শুনলেও পরবর্তীতে লজ্জায় পড়ে হলেও ঠিকমত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। কুরআন পড়তাম।
আপুর কথা মত একসময় আমি সহিহভাবে পর্দা করা শুরু করি। একটা জব ছিলো আমার, পর্দার গুরুত্ব বুঝতে পেরে, জবটা আমি ছেড়ে দেই।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে ওই প্রিয় বোন টার মাধ্যমে হিদায়াত দান করেছেন।
আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে ভালো রাখুক।
হিদায়াত এমন একটা জিনিস যেটা পাওয়ার থেকেও রক্ষা করা বহুগুনে কঠিন।
যেহেতু আমার পরিবার, চারদিকের পরিবেশ আমার জন্য অনুকূল নাহ। তাই আমাকে প্রতিনিয়ত শয়তানের ধোকায় পড়ে নফসের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।
এই জীবনে আমার দুনিয়াবি তেমন কোন চাওয়াই নেই। এখন শুধু একটাই চাওয়া। আমি যেন একজন উত্তম দ্বীন্দদার জীবন সঙ্গী পাই। ভালো একটা দ্বীনি পরিবার পাই। যাদের মাধ্যমে আমি আমার দ্বীনকে যথাযথভাবে পালন করতে পারবো।
দোয়া করবেন আমার জন্য আল্লাহ যেন আমাকে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত দ্বীনের উপর অটুট থাকার তাওফিক দান করে।

দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি








কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.