মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব-----১৫

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব-----১৫
হিসাব নিকাশ যেভাবে শুরুঃ
এরপর আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের থেকে হিসাব নিতে শুরু করবেন। যার হিসাবে কঠোরতা করবেন সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
হিসাব নিকাশের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ (سورة مريم: 39)
আর তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপ দিবস সম্পর্কে যখন সব বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাব, অথচ তারা রয়েছে উদাসীনতায় বিভোর এবং তারা ঈমান আনছে না। (সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩৯)
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِنْ سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ (سورة آل عمران :30)
যেদিন প্রত্যেকে উপস্থিত পাবে যে ভাল আমল সে করেছে এবং যে মন্দ আমল সে করেছে তা। তখন সে কামনা করবে, যদি মন্দ কাজ ও তার মধ্যে বহুদূর ব্যবধান হত! আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সাবধান করছেন এবং আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল। (সূরা আলে ইমরান. আয়াত ৩০
হিসাব নিকাশ শুরু সম্পর্কে হাদীসে এসেছে
عن عبد الله بن مسعود عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه حتى يسأل عن خمس : عن عمره فيما أفناه ، وعن شبابه فيما أبلاه ، وعن ماله من أين اكتسبه وفيما أنفقه ، وماذا عمل فيما علم
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত যে নবী কারী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: পাঁচটি প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার আগে কোন মানব সন্তান কেয়ামতের দিন পা নাড়াতে পারবে না। তাকে প্রশ্ন করা হবে জীবন সম্পর্কে; সে কি কাজে আয়ু শেষ করেছে? প্রশ্ন করা হবে তার যৌবন সম্পর্কে ; কি কাজে সে তাকে বার্ধক্যে পৌছে দিয়েছে? প্রশ্ন করা হবে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে; কিভাবে সে তা আয় করেছে আর কি কাজে তা ব্যয় করেছে? আর প্রশ্ন করা হবে সে যা জ্ঞান অর্জন করেছে সে মোতাবেক কাজ করেছে কি না? (বর্ণনায়: তিরিমিজী, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, দেখুন সহীহ আল জামে)
এমনিভাবে আজ ভুলে যাওয়া হবেঃ
হাদীসে এসেছে :
عن أبي هريرة قال: قالوا : يا رسول الله ! هل نرى ربنا يوم القيامة ؟ قال : هل تضارون في رؤية الشمس في الظهيرة ، ليست في سحابة ؟ قالوا : لا . قال فهل تضارون في رؤية القمر ليلة البدر ، ليس في سحابة ؟ قالوا : لا . قال فوالذي نفسي بيده ! لا تضارون في رؤية ربكم إلا كما تضارون في رؤية أحدهما . قال فيلقى العبد فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ، وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . قال فيقول : أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول : فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى الثاني فيقول : أي فل ! ألم أكرمك ، وأسودك ، وأزوجك ، وأسخر لك الخيل والإبل ، وأذرك ترأس وتربع ؟ فيقول : بلى . أي رب ! فيقول : أفظننت أنك ملاقي ؟ فيقول : لا . فيقول : فإني أنساك كما نسيتني . ثم يلقى الثالث فيقول له مثل ذلك . فيقول : يا رب ! آمنت بك وبكتابك وبرسلك وصليت وصمت وتصدقت . ويثني بخير ما استطاع . فيقول : ههنا إذا . قال ثم يقال له : الآن نبعث شاهدنا عليك . ويتفكر في نفسه : من ذا الذي يشهد علي ؟ فيختم على فيه . ويقال لفخذه ولحمه وعظامه : انطقي . فتنطق فخذه ولحمه وعظامه بعمله . وذلك ليعذر من نفسه . وذلك المنافق . وذلك الذي يسخط الله عليه . رواه مسلم.
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি কেয়ামত দিবসে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে দেখতে পাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আচ্ছা দুপুর বেলা যখন মেঘ না থাকে তখন সূর্যকে দেখার জন্য কি তোমাদের ভীর করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন: পূর্ণিমার রাতে যখন আকাশে মেঘ না থাকে তখন চাঁদ দেখার জন্য কি তোমাদের ভীর করতে হয়? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন: না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! তোমাদের প্রতিপালককে দেখার জন্য সেদিন তোমাদের কোন কষ্ট করতে হবে না। যেমন সূর্য ও চন্দ্র দেখার জন্য তোমাদের কোন কষ্ট করতে হয় না। আল্লাহ এক বান্দার সাথে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ বলবেন: হে ব্যক্তি আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাতের বিশ্বাস রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে আনা হবে। আল্লাহ বলবেন: হে ব্যক্তি আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমাকে বিবাহ করাইনি। আমি কি তোমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করিনি? সে ব্যক্তি উত্তর দেবে অবশ্যই আপনি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাতের বিশ্বাস রাখতে? সে বলবে, না। আল্লাহ তখন বলবেন: আজ আমি তোমাকে ভুলে গেলাম যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে।
এরপর তৃতীয় এক ব্যক্তিকে সাক্ষাত দিবেন। আল্লাহ তাআলা তাকে অপর দুজনের মত করেই প্রশ্ন করবেন। সে বলবে, আমি আপনার প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। আপনার কিতাব, আপনার রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছি। নামাজ পড়েছি, রোযা রেখেছি, দান-সদকা করেছি। সাধ্যমত আপনার প্রশংসা করেছি। তার উত্তর শুনে আল্লাহ বলবেন, তাই নাকি? তাহলে এখনই তোমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী উপস্থিত করি। তারপর (তোমার উত্তর সম্পর্কে) তুমি ভেবে দেখবে। বলা হবে, কে আছে তার সম্পর্কে স্বাক্ষ্য দেবে? এরপর তার মুখ সীল করে দেয়া হবে। তার রান, তার গোশত, তার হাড্ডিকে বলা হবে, তোমরা কথা বলো। এরা তাদের জানা মতে তথ্য দিতে শুরু করবে। এভাবে আল্লাহ নিজে স্বাক্ষ্য দেয়ার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। আসলে এ ব্যক্তিটি ছিল দুনিয়ার জীবনে মুনাফিক। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন। (বর্ণনায় : মুসলিম)
 এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলাকে দর্শন করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের প্রবল আগ্রহ। আল্লাহর সাক্ষাত লাভের আকাংখা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়।
দুই. আল্লাহকে দেখার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যা মুর্খ ও জ্ঞানী সকল মানুষের বোধগম্য। যখন তার একটি সৃষ্টিকে একত্রে সকল মানুষ দেখতে পারে তখন স্রষ্টাকে যে দেখতে কারো কষ্ট হবে না তা সহজেই বুঝা যায়।
তিন. যারা আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান রাখতো না তারাও আল্লাহর সাক্ষাত পাবে তবে সেটা তাদের জন্য সুখকর হবে না।
চার. যারা সমাজ, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের নেতা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন করা হবে।
পাঁচ. মুনাফিকরা দুনিয়ার জীবনে মুনাফিকি করে পার পেয়ে গেলেও আল্লাহ তাআলার সাক্ষাতের সময় ধরা খেয়ে যাবে।
ইনশাআল্লাহ চলবে..............।




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.