মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব----১৪

আসসালামু আলাইকুম

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-১৪


মূর্তিগুলো অক্ষমতা প্রকাশ করবেঃ


দুনিয়াতে যারা মূর্তি পুজা করেছিল কেয়ামতের দিন সেসকল মূর্তিগুলো তাদের পূজারীদের কোন রকম সাহায্য করতে অক্ষমতা প্রকাশ করবে।

এ প্রসঙ্গে আল্লহ তাআলা বলেন:
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ مَوْبِقًا (سورة الكهف : 52)
আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে। অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর আমি তাদের মধ্যে রেখে দেব ধ্বংসস্থল। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৫২)


আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
وَقِيلَ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَرَأَوُا الْعَذَابَ لَوْ أَنَّهُمْ كَانُوا يَهْتَدُونَ (سورة القصص : 64)

আর বলা হবে, তোমাদের দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর তারা আযাব দেখতে পাবে। হায়, এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত! (সূরা আল কাসাস, আয়াত ৬৪)

আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُم
ْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُمْ مَا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ وَمَا نَرَى مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ لَقَدْ تَقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَزْعُمُونَ (سورة الأنعام : 94)

আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে। (সূরা আল আনআম, আয়াত ৯৪)

কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা শিরককারীদের বলবেন, দুনিয়াতে তোমরা যে সকল দেব-দেবী, মূর্তি, মানুষ, জন্তু-জানোয়ার-কে আমার সাথে শরীক করতে তাদের থেকে আজকে সাহায্য চাও। তাদের-কে বলো তোমাদের উদ্ধার করতে। তখন শিরককারীরা তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা কোন উত্তর দেবে না।

যারা ঈসা আলাইহিস সালাম কে আল্লাহর পুত্র বলে গ্রহণ করেছে তিনি তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিবেন-
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاس
ِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ ﴿116﴾ مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿117﴾ (سورة المائدة)

আর আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর? সে বলবে, আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য সম্ভব নয়। যদি আমি তা বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনি জানেন, আর আপনার অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহে সর্বজ্ঞাত। আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ১১৬-১১৭)

ঈসা আলাইহিস সালাম কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আল্লাহ! আমি কিভাবে বলি, আমি আপনার পুত্র আর আমার মাতা মরিয়ম আপনার স্ত্রী। এটা বলার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? আপনি তো জানেন আপনি যা আদেশ করেছেন আমি শুধু সেটাই বলেছি। আমি তাদের বলেছি আল্লাহ তাআলা হলেন, আমার ও তোমাদের প্রভূ। তোমরা তারই ইবাদত করো। আর এটাই সঠিক পথ। যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আপনি দেখেছেন আমি কি বলেছি তাদের। যখন আপনি আমাকে নিয়ে আসলেন তখন থেকে তারা যা কিছু করেছে ও বলেছে সে সম্পর্কে আমার কোন দায়িত্ব নেই।

ভাবার বিষয় হল, মারইয়াম আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর কত মর্যাদা আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। যারা তাদের সম্মানে বাড়াবাড়ি করে আল্লাহর সাথে তাদের শরীক বানালো আল্লাহ তাদের শাস্তি দিবেন। কারণ তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। আল্লাহ যা বলেননি ধর্মের ব্যাপারে তারা তা বলেছে। তাই তারা মিথ্যাবাদী। এ জন্য আল্লাহ তাআলা বলবেন:
قَالَ اللَّهُ هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (سورة المائدة: 119)

আল্লাহ বলবেন, এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ১১৯) আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা ঈসা আলাইহিস সালাম এর বক্তব্য সমর্থ করে এ কথাটি বলবেন।

উম্মতে মুহাম্মদী কেয়ামতের দিন অন্য সকল জাতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেঃ


এটা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। কেয়ামত দিবসে তারা সকল জাতির মিথ্যাচারের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। কেয়ামতের দিন যখন সকল নবী রাসূল ও তাদের সম্প্রদায়কে একত্র করা হবে তখন ঐ সকল জাতিরা নবী রাসূলদের আহবানের বিষয়টি অস্বীকার করবে। তারা বলবে আমাদের কাছে নূহ আলাইহিস সালাম দাওয়াত পৌছে দেয়নি। আবার কেহ বলবে আপনি আমাদের কাছে হুদ, সালেহ, শুআইব কে পাঠিয়েছিলেন হয়ত কিন্তু তারা আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। এভাবে তারা তাদের নবী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে নিজেদের বাঁচার তাগিদে। তখন উম্মতে মুহাম্মাদী সকল নবীদের পক্ষে আর তাদের মিথ্যাবাদী উম্মতদের বিপক্ষে স্বাক্ষী দিবে।

হাদীসে এসেছে-

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجاء بنوح يوم القيامة ، فيقال له : هل بلغت ؟ فيقول : نعم يا رب ، فتسأل أمته : هل بلغكم ، فيقولون : ما جاءنا من نذير ، فيقول : من شهودك ، فيقول : محمد وأمته ، فيجاء بكم فتشهدون ، ثم قرأ رسول الله صلى الله عليه وسلم : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا - قال : عدلا - لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا }. رواه البخاري.

আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন নূহ কে ডাকা হবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পালন করেছো? সে বলবে, হ্যাঁ, হে প্রভূ। এরপর তার জাতিকে প্রশ্ন করা হবে, সে কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছে? তখন তারা বলবেম না, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসেনি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার স্বাক্ষী কারা? সে উত্তর দেবে, মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন তোমাদের ডাকা হবে আর তোমরা তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন : আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: বুখারী)

আর আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يجيء النبي يوم القيامة ومعه الرجل ، والنبي ومعه الرجلان ، والنبي ومعه الثلاثة ، وأكثر من ذلك ، فيقال له : هل بلغت قومك ؟ فيقول : نعم ، فيدعى قومه ، فيقال لهم : هل بلغكم هذا ؟ فيقولون : لا ، فيقال له : من يشهد لك ؟ فيقول : محمد وأمته ، فيدعى محمد وأمته فيقال لهم : هل بلغ هذا قومه؟ فيقولون : نعم ، فيقال : وما علمكم بذلك ؟ فيقولون : جاءنا نبينا ، فأخبرنا أن الرسل قد بلغوا فصدقناه ، فذلك قوله : { وكذلك جعلناكم أمة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا }

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন নবীদের ডাকা হবে। কারো সাথে একজন অনুসারী থাকবে কারো সাথে থাকবে দুজন আবার কারো সাথে থাকবে তিন জন বা এর বেশী। তাদের জাতিকে ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এ ব্যক্তি কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছে দিয়েছিল? তারা উত্তর দেবে, না, আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌছে দেয়নি। তখন নবীকে প্রশ্ন করা হবে তুমি কি আমার বাণী পৌছে দিয়েছো? সে বলবে, হ্যা, দিয়েছি। তখন তাকে বলা হবে তোমার পক্ষে কে আছে স্বাক্ষী? তখন নবী বলবেন, আমার পক্ষে স্বাক্ষী আছে মুহাম্মদ ও তার উম্মত। তখন মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এ ব্যক্তি কি তার জাতির কাছে আমার বানী পৌছে দিয়েছে? তখন তারা বলবে, হ্যা, সে তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌছে দিয়েছে। তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে তোমরা এটা কিভাবে জানলে? তারা উত্তর দিবে, আমাদের কাছে আমাদের নবী এসেছিলেন, তিনি আমাদের বলেছেন, এ নবী তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌছে দিয়েছে। এটা হল আল্লাহ তাআলার সেই বাণীর প্রতিফলন: আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন। (বর্ণনায়: আহমাদ, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
ইনশাআল্লাহ চলবে..............।





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.