প্রাকৃতিক শক্তি বা অসুখ বিসুখকে আল্লাহ্‌ শাস্তি হিসেবে ব্যবহার করতেই পারেন

প্রাকৃতিক শক্তি বা অসুখ বিসুখকে আল্লাহ্‌ শাস্তি হিসেবে ব্যবহার করতেই পারেন। ইসলামের থিওলজি অনুযায়ী কোনোকিছুই নিজে থেকে ঘটে না, আল্লাহ্‌র সম্পূর্ণ প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঘটে। সেই প্রজ্ঞার অংশ হিসেবে আল্লাহ্‌ যে প্রাকৃতিক শক্তিকে কখনও কখনও পাপী জনপদকে শাস্তি দেয়ার জন্য, আবার কখনও কখনও পরীক্ষা নেয়ার জন্য ব্যবহার করেন এর নিদর্শন কুরআনে অসংখ্যবার এসেছে। আল্লাহ্‌ যেহেতু জানিয়েছেন আর আমরা যদি আল্লাহ্‌র ওপর এবং আল্লাহ্‌র দেয়া কুরআনের ওপর আস্থা এনে থাকি তাহলে এটি অস্বীকারের কোনও উপায় নেই।
তাই বলে আমরা কি প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকে আমাদের খেয়ালখুশি মতো বাছাই করে কোনটা আল্লাহ্‌র শাস্তি আর কোনটা নয়, বা কেন আল্লাহ্‌ এভাবে শাস্তি দিচ্ছেন সে ব্যাপারে কথা বলতে পারি? পারি না এবং বলা উচিৎও নয়। এমন নয় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কেবল মুসলিম অমুসলিম রাষ্ট্র বেছে বেছে আসে। এটা আল্লাহ্‌র সুন্নাহ নয়। যদি এমন হোত তাহলে সবাই বাধ্য হয়েই ইসলাম গ্রহন করতো, যেহেতু তারা দেখতো যে কেবল মুসলিম থাকলেই ভালো থাকা যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ্‌ সেরকম ইসলাম চাননি, আল্লাহ্‌ চেয়েছেন সত্যিকারের ঈমান। আল্লাহ্‌ কখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে শাস্তি হিসেবে পাঠিয়েছেন এবং কেন সে ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই বা সে ব্যাপারে একটা চিন্তা মাথায় আসলেই সেটা পাবলিকলি বলতে হবে এমন না। দা'ঈ বা 'আলেমদের এমন দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়নি। সেই জ্ঞানও তাদের নেই।
আল্লাহ্‌র পথে যারা ডাকবেন তারা মানুষকে মমতা নিয়ে ডাকবেন এবং তাদের দুঃখ কষ্টের সময় খোঁচা দেবেন না বা নিজের বিচার বিভাগ বসাবেন না। তাদের কাজ হোলো মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে ডাকা এবং সাধারণ ভাবে ন্যায় অন্যায়ের খতিয়ান তুলে ধরা - এমনভাবে যাতে মানুষ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। নিজের প্রতিশোধকে আল্লাহ্‌র প্রতিশোধে পরিণত করা দা'ঈ ইলাল্লাহ্‌র কাজ নয়। তাকে জিঘাংসার ভাষায় কথা বলতে বা আল্লাহ্‌র কাজি হিসেবে পাঠানো হয়নি, তা সে যত আপাত ভদ্র ভাষা ব্যবহার করুক না কেন।
কেবল অমুসলিম ব্যক্তি বা জনপদের ব্যাপারে কটাক্ষ করাটাই ভুল তাই নয়, মনে রাখা দরকার যেসকল মুসলিমেরা ইনসাফ পছন্দ করেন তারাও আপনার এধরণের কথা পছন্দ করেন না, তা আপনার নিজের মতো লোকেরা যতই লাইক শেয়ার দিন আপনার কথা। যে আপনি একটি অমুসলিম দেশের রোগ বালাই কীভাবে আল্লাহ্‌র শাস্তি সে ব্যাপারে লেকচার দিতে পারেন, সেই আপনিই আবার সৌদি আরব কর্তৃক ইয়েমেনের লোকেদের নিধন কেন হচ্ছে, ইয়েমেনের মানুষ কেন তীব্র মন্বন্তরের মুখে পড়লো, সেটা আল্লাহ্‌র কোন শাস্তি সে ব্যাপারে তেমন একটা রা করেন না। হ্যাঁ অবশ্যই ইয়েমেনের মানুষের ওপর যা হচ্ছে সেটাকে আমরা আল্লাহ্‌র শাস্তি বলতে পারি না। কিন্তু সেই ইনসাফের খাতিরেই আপনার সুবিধা মতো অমুসলিম দেশে ঘটা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আল্লাহ্‌র শাস্তি হিসেবে দেখানোর যে ধৃষ্টতা আপনি দেখাচ্ছেন সেটা কোন প্রয়োজন থেকে আসছে?
তার মানে কি এই যে আল্লাহ্‌র শাস্তির কথা আপনি মানুষকে বলবেন না? অবশ্যই বলবেন। কুরআনে এর কথা যেহেতু এসেছে সেহেতু সাধারণভাবে কোনও অকেশন ছাড়াই আপনি মানুষকে আল্লাহ্‌র সকল ধরণের পুরষ্কার ও শাস্তির কথা বলবেন। কিন্তু ঘটনা ধরে ধরে একটি নির্দিষ্ট জনপদকে নাজেহাল করার জন্য এবং মুসলিম ইগোকে উস্কে দেয়ার মতো ভাষা আপনি ব্যবহার করবেন না।
এর মানে কি এও যে অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলিম নিগ্রহের কথা আপনি বলবেন না? অবশ্যই বলবেন, মুসলিম অমুসলিম সকলের যে কোনও গুণ বা ত্রুতি ইনসাফ সহকারে। আপনার ধর্মের খেদমত ঐ ইনসাফ থেকেই আসবে, কোনও জনপদের প্রতি আপনার ব্যক্তিগত অনুরাগ বা ঘৃণা থেকে ধর্মের খেদমত হবে না। আল্লাহ্‌ সুরাহ আর-রাহমানের শুরুতেই বলেছেন যে তিনি সবকিছুকে সঠিক পরিমিতিতে তৈরি করেছেন এবং আমাদের কাজও হোলো পরিমিতি বোধ রাখা এবং যাকে যতটুকু মাপ দেয়া উচিৎ ততটুকু দেয়া এবং কারও ভাগ থেকে না কমানো। এটা কেবল পণ্যসামগ্রীর মাপে নয়, অন্যের প্রতি আচরণেও।
বিনয় কেবল শব্দচয়নে এবং সুন্দর প্রেজেন্টেশনে হয় না, বিনয় আসতে হবে চিন্তাভাবনা ও মানসিকতায়, সেটাই আসল বিনয়।
আপনি ভুলে যাবেন না তায়েফের ঘটনা। আবু তালিব ও খাদীজার (রা.) মৃত্যুর পর শোকাহত আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সা.) তায়েফবাসীরা ছোট শিশু লেলিয়ে দিয়ে পাথর ছুঁড়ে রক্তাক্ত ও লাঞ্ছিত করেছিলো। জবাবে আল্লাহ্‌ দুই ফেরেশতাকে পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে বলেছিলেন যে আল্লাহ্‌র রাসূল চাইলে পাহাড়ের ফেরেশতা পাহাড় তুলে নিয়ে তায়েফবাসীদের ওপর নিয়ে ফেলবেন।
চিন্তা করুন তো - আপনার মানসিকতা দিয়ে চিন্তা করুন - আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) যদি চাইতেন তায়েফবাসীদের পাহাড়চাপা দিয়ে মারতে তাহলে কতগুলো 'ভালো' ব্যাপার ঘটতো। আল্লাহ্‌ই তো তাকে এই সুযোগ দিয়েছেন, প্রতিশোধ নেয়ার এই সুযোগ ছাড়ার কি মানে হয়? স্ট্র্যাটেজিকালিও কতগুলো কাফের শ্ত্রুকে শেষ করে দেয়া যায়। অন্যান্য আরবদের মনেও তার ক্ষমতার ব্যাপারে ত্রাস সৃষ্টি করা যায়, এক ঢিলে কতগুলো পাখি!
আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) তায়েফবাসীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন যে তিনি চান তায়েফবাসীদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো ইসলাম পালন করবে। তা-ই হয়েছে। আল্লাহ্‌র রাসূলের (সা.) সুন্নাহ ও তার মানসিকতাটা দেখুন। যে-ই আল্লাহ্‌ শাস্তি দেন সে-ই আল্লাহ্‌ই এই রাসূলকে পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি রাহমাতুল্লিল 'আলামীন - সমস্ত বিশ্বের জন্য এক করুণা। আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সা.) সুযোগ দেয়া হলে তিনি বরাবরই ক্ষমা করেছেন। সেটাও আল্লাহ্‌র ইচ্ছেরই অংশ, আল্লাহ্‌র ইচ্ছে ছাড়া কিছুই হয় না।
আল্লাহ্‌র দা'ঈ হিসেবে প্রজ্ঞাবান হোন। হিকমাহ ও মাও'ইযাতুল হাসানাহ দুটোই ব্যবহার করুন। এসেনশিয়ালিস্ট হবেন না। আপনি মুসলিম অভিজ্ঞতার ও পাপ পূণ্যের গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারেন, আনন্দ বেদনা বুঝতে পারেন, অন্যদেরটাও বোঝার চেষ্টা করুন। চীন মাত্রই কেবল মুসলিম নির্যাতন করা স্বৈরাচারী সরকার নয়। চীনে রয়েছে আপনার আমার মতো আনন্দ বেদনায় দিন কাটানো অসংখ্য মানুষ। তাদের ইসলামের পয়গাম কীভাবে দেবেন সেই চিন্তা করুন। কে জানে আপনার চেষ্টায় আজকের চীনবাসীরা বা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম একদিন ইসলাম গ্রহণ করবে।
ভালো উন্নত স্বপ্ন দেখুন। আপনি নিজে স্বপ্ন না দেখতে পারলে মানুষকে কীভাবে দেখাবেন?
-Asif Shibghat Bhuiyan





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.