আটটি কালোজিরাঃ


 আটটি কালোজিরাঃ

:
এক মহিলা গেলেন এক কবিরাজের কাছে, গিয়ে বললেনঃ
-"হুজুর, আল্লাহ কেনো আমাকেই এই কষ্ট দিলেন, আমার ছেলে কোনো কথা শুনে না, কিছু খায়না, খুব কান্নাকাটি করে, সময়মত ঘুমায় না, জন্মের সময় মাথায় ব্যথা পেয়েছিল, তাই একটু অসুস্থ, হুজুর আমার একটাই বাচ্চা, আমার কোনো অশান্তি নাই জীবনে, এই একটাই কষ্ট, হুজুর কোনো তদবির দেন যেন আমার ছেলেটা একদম সুস্থ হয়ে যায় ... "
.
হুজুর তাকে বুঝালেন, জীবনে একটু বালা মসিবত থাকবেই, সবাইকে কোনো না কোনো ভাবে কষ্ট দিয়ে আল্লাহ ইমতিহান নেন, সে যেন সবর করে।
কিন্তু মহিলা কোনো কথাই শুনবে না, তাকে তদবির দিতেই হবে।
কবিরাজ নিরুপায় হয়ে তাকে বললেনঃ
-"আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি তোমার গ্রামে যাও, এরপর আমাকে আটটা বাসা থেকে আটটা কালোজিরা এনে দিবা, আমি তাতে ফুঁ দিয়ে দিবো, তোমার ছেলেকে আটদিন আটটা কালোজিরা খাওয়ালে সে একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে ... তবে শর্ত হচ্ছে এমন আট বাসা থেকে কালোজিরা আনবে যাদের পারিবারিক, আর্থিক, মানসিক অর্থাৎ কোনো দিক দিয়ে কোনো কষ্ট অভাব অনটন নেই, যাদের সন্তান আছে অর্থাৎ নিঃসন্তান নয়, যাদের স্বামী স্ত্রী শাশুড়ি ননদ জায়ে অনেক মিল মিশ, যাদের অঢেল সম্পত্তি, যাদের শরীরে বিন্দু মাত্র রোগ নেই ইত্যাদি…"
.
মহিলা অনেক আনন্দের সাথে বিদায় নিলেন কবিরাজ থেকে, সেই দিনই রওনা দিলেন তার গ্রামে, আর প্রতি বাসায় যেয়ে যেয়ে খোঁজ করতে লাগলেন, কোন বাসায় কবিরাজের শর্ত অনুযায়ী মানুষরা আছে ...
.
এক বাসা দুই বাসা তিন বাসা আট বাসা দশ বাসা এমন করে করে সে পুরো গ্রামের সব বাসায় যেয়ে খুঁজে আসলেন কোথাও পেলেন না এমন একটা পরিবার যারা কিনা কবিরাজের সেই শর্ত গুলো রাখে।
.
প্রায় প্রতিটা পরিবারেই কারো নিঃসন্তান, কারো পঙ্গুত্ব, কারো স্বামী স্ত্রী অশান্তি, কারো অসুস্থ সন্তান, কারো স্বামী নেই, কারো অভাব, কারো অবাধ্য সন্তান,কারো মানসিক রোগ, কারো মৃত্যু রোগ, মানে কোনো না কোনো বিপদ লেগেই আছে!
.
মহিলা ভারাক্রান্ত মনে ফিরে এলেন কবিরাজের কাছে, এসে বললেনঃ
-"হুজুর আমি তো এমন কোনো পরিবার পেলাম না, বরং এমন সব পরিবার দেখেছি যারা আমার থেকে বেশি মসিবতে আছে, তাদের তুলনায় তো আমার মসিবত কিছুইনা, হুজুর আল্লাহ তো আমাকে অনেক বড় বড় আজাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন অল্প একটু কষ্ট দিয়ে, আল্লাহ তো আমাকে অনেক ভালবাসেন, আর আমি এতোই অসন্তুষ্ট ছিলাম আল্লাহর উপর!!”
.
.
মোরালঃ
১/ সুখে থাকলে ভুতে কিলায়।
.
২/ নিজের কষ্টটাকে বড় করে দেখতে নেই, যদিও সবার কাছে যার যার কষ্ট সবচেয়ে বড়, অথচ আশেপাশে একটু তাকালেই দেখা যাবে নিজের থেকে বহুগুণ বেশি কষ্টে মানুষ আছে।
.
৩/ যে কোন বিপদই আল্লাহর তরফ থেকে ইমতিহান, আর তা অবশ্যই অনেক সামান্য ও আল্লাহর রহমত যে এর থেকেও বড় বিপদ হতে পারতো।
.
৪/ এই জগতে কষ্ট অর্থাৎ ইমতিহান ছাড়া কেউই নেই।
.
৫/ কষ্ট আসবেই, কারণ এর দ্বারাই আল্লাহ বান্দার ঈমানী হালত দেখে নেন ...
.
ফায়েদাঃ
জান্নাত পাওয়া এতোই সোজা?
কষ্টে সবর না করে হা হুতাশ করলে কি হয়?
.
যখনই নিজের কষ্টটা খুব প্রকট হবে তখনই এমন সবার কষ্টের কথা শোনা উচিৎ যারা নিজের থেকেও বেশি কষ্টে আছে ...!
:
লেখাঃ Ustazah Zainab Al Gazi
(আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.