নবীর শিক্ষা


১.
সামনে যতদূর চোখ যায়, ধূ ধূ মরুভূমি। মাথার উপরে সূর্যটা আজ তেজিয়ে আছে। আশপাশে কয়েকটা তাবু দেখা যাচ্ছে। মরুভূমিতে মানুষের বাড়ি হচ্ছে তাবু। কেউ ধনী হলে তার তাবুটা একটু বড় আর ভিন্ন ধরনের হয়। তবে তাবুতেই থাকতে হয় মরুবাসীকে।
তেজী সূর্যটা আমাকে রেহাই দিবে না। দিবেই বা কেন? সে তো তার সত্য রবের নির্দেশ মোতাবেক পরিচালিত। সে তার কাজ করবেই, যেমনটা তার রব তাকে আদেশ দিয়ে রেখেছে। সামান্য দূরে একটা মরুদ্যান দেখা যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে খেজুর তলায় জোহর পর্যন্ত একটু বিশ্রাম করি। সূর্যটা একটু নেতিয়ে গেলে সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করে নিব।
২.
;- কি ব্যাপার আবূ বকর, উসমান! তোমরা ঘর ছেড়ে এখানে বসে আছো কেন?
- ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি এখানে?
;- আগে বলো, তোমরা এখানে বসে আছো কেন?
- সেই সত্য সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! ক্ষুধা আমাদেরকে ঘর হতে বের করে এনেছে।
;- আমিও সেই সত্য সত্তার শপথ করছি, যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! ক্ষুধা আমাকেও ঘর হতে বের করে এনেছে।
- একটা ব্যবস্থা করুন ইয়া রাসুলুল্লাহ!
;- চলো আমার সাথে।
৩.
শোন, মুমিন কখনো পেটপুরে খেতে পারেনা। মুমিনের ঘরে কয়েকদিনের খাবার মজুদ থাকাও সোভা পায় না। তাহলে সে তার রবের নিয়ামত চিনতে পারবেনা।
প্রভু ভালোবেসে তার বান্দাদের বিভিন্ন পরিক্ষা দেন। তন্মধ্যে 'ক্ষুধা' একটি। তোমাদের ক্ষুধা থাকা সত্তেও তোমরা কোন অসদুপায় অবলম্বন করো নি। আল্লাহর উপর ভরসা করেছো। আল্লাহকে আপন ভেবেছো। যেমনি মা সন্তানকে কোন কঠিন শাস্তি দিলেও, সন্তান মায়ের কোলে মাথা গুঁজে।
দুনিয়ায় তোমরা এমনভাবে চলবে, যেন তোমরা মুসাফির। মুসাফির যেমন ভ্রমন করতে করতে তার আসল গন্তব্য খুঁজে বেড়ায়, তোমরাও দুনিয়ার রং-তামাশা, ফিতনা পাড়ি দিয়ে জান্নাত খুঁজে বেড়াও। জান্নাত'ই মুমিনের গন্তব্য। -পথ চলতে সাহাবিদের উপদেশ দিলেন প্রিয় রাসূল।
;- আনসারী? আনসারী, বাড়িতে আছো?
- তিনি বাড়িতে নেই। 'জবাব দিলেন আনসারীর স্ত্রী।'
;- কোথায় গেছে?
- তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গেছেন।
৪.
'ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি আজ আমার বাড়িতে? বাড়িতে এসে রাসূলকে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলেন আনসারী সাহাবী।'
'ওগো শুনছো? প্রিয় রাসূল আজ আমার বাড়িতে এসেছেন আবু বকর, উসমানকে নিয়ে। এই পুঁটলি টা রাখো, ধুম্বার চামড়া দিয়ে তৈরি করা মাদুরটা দাও। মেহমানদের বিছিয়ে দিই। তুমি পানপাত্র প্রস্তুত করো। আমি বাগান থেকে খেজুর নিয়ে আসি।'
- ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনারা এখান থেকে বেছে বেছে খেজুর খান।
;- পুরো থোকনা আনলে কেন? বেছে বেছে কয়েকটা আনলেই হতো।
- ভাবলাম আপনি বাছাই করে পছন্দমত খাবেন।
;- তুমিও বসো আমাদের সাথে।
- আপনারা খেজুরের কাঁদি থেকে গ্রহন করুন। আমি ছুরি ধার দিয়ে নিচ্ছি। আপনাদের জন্য দুগ্ধবতী মেষ টা জবাই করবো। 'মেষ পালের দিকে তাকিয়ে আনসারী সাহাবী বললো'
;- না, তুমি দুগ্ধবতী মেষ জবাই করোনা।
- ইয়া রাসুলুল্লাহ। এ মেষ টা ৪মাস যাবৎ দুধ দিচ্ছে। আমরা যথেষ্ট দুধ দোহন করেছি এর থেকে। এর মাংস সুস্বাদু হবে। আপনার জন্য আমার জান-মাল কুরবান হোক। আমি সর্বোৎকৃষ্ট এই দুগ্ধবতী মেষ জবাই দিচ্ছি আপনার জন্য ।
;- তুমি এ মেষ টা জবাই করলে ওর বাচ্চারা দুধ পাবেনা। এ মেষ টা ভবিষ্যতে আরও বাচ্চা দিতে পারে, দুধ দিতে পারে। এর থেকে তুমি আরও লাভবান হতে পারবে। তুমি বরং অন্য মেষ জবাই করো।
- 'শপথ সেই মহান সত্তার, যিনি আপনাকে পৃথিবীবাসীর কল্যানের জন্য প্রেরন করেছেন। প্রেরন করেছেন সৎ পরামর্শ দিয়ে, সহযোগিতা দিয়ে কলুষিত পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য।' - কথাগুলো বলেই আনসারী সাহাবী ছুটে গিয়ে প্রিয় রাসূলের কপালে চুমু খেলেন।
৫.
তোমরা খালি পেট নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছো। কিন্তু পেটপুরে ঘরে যাচ্ছো। আল্লাহ মানুষকে কিভাবে, কোত্থেকে রিজিক দেন, সে উৎস বুঝাতে তিনি পাখির দিকে তাকাতে বলেছেন। এটাই সত্য রবের নিদর্শন।
যেমনটা তিনি বলেছেন, 'তোমরা কি দেখনা? প্রত্যহ প্রভাতে পাখি খালি পেট নিয়ে নীড় চেড়ে যায়। সন্ধ্যা নামলে তারা ভরাপেট নিয়ে নীড়ে ফিরে।'
রিজিকের উৎস তুমি বুঝতে পারবেনা। তুমি চিন্তাও করতে পারবেনা, রাতে তুমি কি খাবে! তুৃমি যদি তোমার রিজিকের নিশ্চিত তালিকা করতে পারো, তাহলে তিনি প্রভু নন, রাজ্জাক নন। তার প্রতিশ্রুতি সত্য নয়।
;- আবু বকর, উসমান! তোমরা যে আনসারী সাহাবীর বাড়িতে খেজুর খেলে, মেষ ভুনা দিয়ে রুটি খেলে, মিষ্টি পানি খেলে, এসব নিয়ামতের জন্য আল্লাহ তোমাদের জিজ্ঞাসা করবেন।
- ক্ষমা করবেন ইয়া রাসুলুল্লাহ। এই আহারের কথা জিজ্ঞেস করে আল্লাহ কি করবেন?
;- কেন? তোমরা ক্ষুধার তাড়নায় ঘর থেকে বের হয়েছো। এখন পেট পূর্ণ করে ঘরে ফিরছো। তোমরা কি এ আপ্যায়নের ব্যাপারে জানতে?
- না, জানতাম না ইয়া রাসুলুল্লাহ।
;- এটা কি আল্লাহর নিয়ামত নয়?
- আল্লাহ কি শুধু আহারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন?
;- শুধু আহার নয়। আল্লাহ তোমাদের ঘোড়া, উটে আরোহন করিয়েছেন। খোঁড়া, পঙ্গুদের এ সুযোগ দেন নি। তিনি তোমাদের নারীদের সাথে বিয়ে দিয়ে আনন্দ-উজ্জল জীবন উপহার দিয়েছেন। শারীরিক, মানসিক অসুস্থ এবং বিয়ে করার পূর্বে মৃতদের সে নিয়ামত দেন নি।
এভাবে দুনিয়ায় তোমার সকল সুখের মুহুর্তের কথা তুলে ধরে তিনি জিজ্ঞেস করবেন, 'বলো, হে আদম সন্তান! এসব নিয়ামতের শুকরিয়া কোথায়?
এবং সকল দূর্দশা, বিপদ, দুঃখের কথা তুলে ধরে জিজ্ঞেস করবেন, ' বলো, হে আদম সন্তান! এসবের সময় তোমরা কার উপর ভরসা করেছো, কার কাছে আশ্রয় চেয়েছো? কে তোমাদের এসব থেকে পরিত্রান দিয়েছেন?
( গল্পের মূল উৎস একটি হাদিস থেকে নেওয়া। হাদিসটি আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি গ্রন্থে হাদিসটির সিরিয়াল নং ব্যতিক্রম থাকায় রেফারেন্স সূত্র দিচ্ছি না। কিছু আবেগ এবং কল্পনার মিশ্রনে গল্পটি তৈরী।)




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.