গল্প: তোমায় নিয়ে পর্ব: ৮+৯

গল্প: তোমায় নিয়ে
লেখাঃ সানজিদা সুরাইয়া স্মৃতি

পর্ব: ৮+৯


ঘুম ঘুম চোখে সে চেয়ে দেখল ওয়াশরুমের দরজায় কিছু একটা লিখা। চোখ দুই হাত দিয়ে ডোলতে ডোলতে সামনে এগিয়ে গিয়ে পরতে লাগল একটা কাগজে লিখা:
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﻲ ﺍﻋﻮﺫﺑﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﺒﺚ والخباءث

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট পুরুষ ও স্ত্রী শয়তানের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। -(বুখারী: ৬৩২২)
.
নীরা বলে উঠল - কি অদ্ভুত আইডিয়া! ওয়াশরুমের দরজায় বাথরুমে যাওয়ার দোয়াটা লিখে রেখেছে। এই ছেলেটা!!!!
ততক্ষনে নীরা দোয়াটা পরে নিয়েছে, এটা স্বাভাবিক যে যাওয়ার পথে কাগজে কিছু লিখা থাকলে তাতে চোখ আটকাবেই।
সেখানে ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার দোয়াটাও লিখা ছিল:
ﻏﻔﺮﺍﻧﻚ

উচ্চারণঃ গুফরা-নাকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ আপনার নিকট ক্ষমা চাই। -(আবু দাউদ: ৩০)
.
নীরা ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল। মুখ মুছা শেষ হলে চিরুনি নিতে যাবে ঠিক ঐ মুহূর্তে নীরার নজরে পরল আয়নাতেও কাগজে লিখা :
اللهم حسنت خلقي فحسن خلقي'
উচ্চারণ "আল্লাহুম্মা হাসসান তা খালকী ফাহাস সীন খুলুকী"
অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আপনি আমার চরিত্রকে সুন্দর করে দেন। (মুসনাদে আহমদ মিশকাত)
.
হায়রে পাগল!!!
আলত করে চুল আঁচড়াতে লাগল নীরা আর কি যেন ভাবতে লাগল!।
.
নীরা খুব পিপাসা পেয়েছে। রান্নারুমে যেতেই নীরা খেয়াল করল কাগজে লেখা কোনো কিছু খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ্‌ বলতে হবে আর শেষে আলহামদুলিল্লাহ।
এই ছেলেটা কখন করেছে এসব? রাতে? কি জানি আল্লাহই জানে।
ঈশাম সকাল সকাল অফিসে চলে যায় নীরার ঘুম ভাঙার আগেই। যেদিন নীরার ভার্সিটি থাকে সেদিন নীরাকে পৌছে দিয়ে অফিসে যায়।
আজ ভার্সিটি নেই। ঈশামের মা বাবার সাথেই বা কতক্ষণ কথা বলা যায়। মা রান্নায় ব্যস্ত। আর নীরা তো আনাঢ়ী একটা মেয়ে। রান্নাঘরে গেলে রান্নার ১২ টা বাজিয়ে ফেলবে। ঈশামের মাও নীরাকে জোর করে না। সংসার বুঝে গেলে এমনিতেই করবে। এখন একটু স্বামীকে সময় দিক, তারা নিজেদের মধ্য একটু বুঝা পড়া হউক, সারা জীবনটাই তো সংসার করবে, এখন তাদের ভালবাসা মহব্বত হউক। ঈশামের মায়ের কথা এগুলাই।
.
নীরার খুব বোরিং লাগছে। একা একা কি থাকা যায়? অলস সময়! খুবই বিরক্তিকর লাগছে।
ফেসবুকে একটু লগ ইন করি। টাইম পাস। নীরা ফেসবুকে ঢুকে বান্ধবিদের সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত হয়ে গেল। একে একে বান্ধবিরা অন লাইন থেকে চলে গেলে আবারো একা পরে গেল নীরা। ফেসবুকে সময় কাটাতে নীরা ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রল করা শুরু করল। স্ক্রল করছে আর লাইক দিচ্ছে। স্ক্রল করতে করতে নীরার একটা পেজের পোস্টে নজর পরল। টাইটেলে লিখা: " where is your hijab?
পোস্টে ঢুকে অার্টিকেলটা পরতে লাগল। সেখানে পর্দার বিষয় বস্তু এবং বাহিরে যেতে পর্দা করছেন কিন্তু পর্দা করার পরও সোশাল মিডিয়াতে কেন ছবি ছাড়েন এই বিষয় টা অতীব চমতকার করে লিখা ছিল।
নীরা খুব মনোযোগ সহকারে পরল। ঈশাম বলেছিল বলে পর্দা করেছে নীরা, মন থেকে না। কিন্তু পর্দা সম্পর্কিত কুরঅানের আয়াত এবং হাদিস নীরার মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। পর্দার মূল্য কিছুটা হলেও বুঝতে শিখছে নীরা। তারপর অার্টিকেলটা পরার পর মনে হল: আমার ফেসবুকে তো এখনো ছবি আছে। তাহলে আমার এত কষ্ট করে বোরখা পরে লাভ কি হল, হিজাব করে নিকাব পরে কি আমি মশকরা করছি? খুব ভাল ভাবেই নীরা বুঝতে পারল যে এটা উচিত নয়।
নীরা ফেসবুকের ফোটোতে গেল। সেখানে দেখল তার কিছু ছবি, ভার্সিটি লাইফের আনন্দঘন ছবি। নীরা ডিলেট করতে যাবে, কিন্তু পারছে না,
ভাবছে, থাক না! কিই বা হবে?
আবার ব্যক করছে।
পরেক্ষনেই আবার মনে হচ্ছে পর্দার কথা। আবার যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষন এরকম করার পর নীরা এক দমে সব ছবি ডিলেট করে দিল।
বাহ! মনটা অনেক হালকা লাগছে! নীরার অন্যান্য বান্ধবিদের বলল: তোদের কাছে আমার ছবি আছে। ওগুলা ডিলেট করে দিস।
.
নীরার মনটা অনেক ফুরফুরে হয়ে গেল। সে নিজেও বুঝতে পারতেছিল না যে, কত বড় গুনাহ থেকে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা বাঁচিয়েছেন।
দুপুরে নামাজের পর খাওয়ার পর্ব শেষে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল নীরা। বালিশের নীচ থেকে হে'দ ফোনটা বের করে স্মুথ হিন্দি গান প্লে করল। গানের রাজ্যে হারিয়ে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরল নীরা বুঝতেই পারল না।
.
ঘুম ভাঙলো পেটের ব্যাথ্যায়। কি অসহ্য যন্ত্রনা! নীরা পিরিয়ড এর তারিখ ভুলে গিয়েছিল। এর কারনে কোনো ব্যবস্থাই করে রাখে নি নীরা। শুধু মনে মনে ভাবতে লাগল কেন তারিখটা ভুলে গেলাম! এখন কি হবে?
ঈশামকে বলবই বা কিভাবে যে আমার জিনিস লাগবে। অনেক ভাবনা চিন্তা করে নীরা ঈশামকে ফোন দিল।
- আসসালামু আলাইকুম নীরা!
- ও আলাইকুমুসসালাম।
- কিছু বলবে তুমি? ( নীরা আজ পর্যন্ত ঈশামকে কখনও ফোন দেয় নি)
- হুম।
- কি বল?
- কখন আসবেন?
- সন্ধা ৭ টায় ইংশা আল্লাহ।
- ও!
- তোমার কি কিছু লাগবে নীরা?
- হুম।
- কি বল।
- আসার সময় ফার্মেসী থেকে প্যাড নিয়ে আসিয়েন।
এই বলে নীরা টুস করে ফোনটা কেটে দিল।
ঈশাম ও দিকে খুব অনুশোচনায় পরে গেল। কারন ঈশামের আগেই উচিত ছিল এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার। তার প্রয়োজনীয় জিনিস কি লাগবে তা আগে থেকেই ম্যানেজ করে দেওয়া উচিত ছিল। ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু নীরাকে এসব জিজ্ঞাসা করলে মাইন্ডও করতে পারত। তবুও নীরা আমাকে বলেছে এটাই আলহামদুলিল্লাহ।
.
ঈশাম অফিস শেষে খুব দ্রুত বাসায় ফিরে।
- নীরা এই নাও।
- নীরা দেখল তার প্রয়োজনীয় জিনিস এনেছে কিন্তু নীরা যেটা ইউজ করে সেটা না অন্যটা।
- আপনি এটা কেন এনেছেন?
- কেন?
- আমি এটা ইউজ করি না।
- ইয়ে মানে! তুমি না বললে আমি কিভাবে জানব বল।
- নীরা ঈশামকে বলে দিল কোনটা ইউজ করে।
- আচ্ছা দাও আমি চেঞ্জ করে আনি।
- না থাক! লাগবে না।
- না দাও চেঞ্জ করে নিয়ে আসি।
- বললাম তো লাগবে না।
- ঈশাম নীরার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আবার ফার্মেসীর দোকানে গেল চেঞ্জ করতে ।
.
- এই নাও। এইটা না?
- হুম। আল্লাহ কেন যে এই। রোগটা দিল মেয়েদের!!! খুব বিরক্তিকরভাবে নীরা বলল।
ঈশাম শুনে বলল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা এরই মাধ্যমে তোমাদের মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন যা একজন পুরুষকে আল্লাহ দেন নি। সূরা আল বাকারাহ ২২২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
" আর তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয সম্পকে। বলে দাও - ইহা অনিষ্টকর। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন হতে বিরত থাকবে। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদের হুকুম দিতেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।
.
হায়েযকে কখনও ছোট মনে করবে না। কারন এই সময় তোমরা অপবিত্র থাক একথা ঠিক। কিছু বিষয়ে তোমরা এই কয়দিন ছুটিতে থাকবে। এটা আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ( সা) এর আদেশ।
নীরা জান? হযরত মুহাম্মাদ ( সা) আর আয়েশা (রা) এর রোমানটিকতা কি ছিল?
" হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্নিত, আমি হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ( সা) এর মাথা চিরুনি দ্বারা আঁচড়াতাম। ( বুখারী - ২৯১)।
হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্নিত, তিনি সফিয়া ( রা) কে বলেছেন- নবী কারীম ( সা) কোন কোন সময় আমার কোলে টেক লাগাতেন, আমি তখন হায়েয অবস্থায়, আর তিনি কোরঅান তেলাওয়াত করতেন। ( বুখারি- ২৯৩)।
.
আমাদের আইডল হযরত মুহাম্মাদ ( সা) স্ত্রীদের হায়েয অবস্থাতেও বিবিদের সাথে একই চাদরের নিচে শয়ন করেছিলেন। এই হাদিস থেকেই বুঝা যায়,
হযরত উম্মুল মো'মেনীন হযরত উম্মে সালামা ( রা) থেকে বর্নিত, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ( সা) এর সাথে পশমি চাদরের উপর শুয়ে ছিলাম। হঠাত আমার হায়েয দেখা দিলে আমি গোপনে বিছানা ছেড়ে উঠে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। হুযুর ( সা) আমার পরনে হায়েযের কাপড় দেখে বললেন, কি? তোমার হায়েয এসে গেছে নাকি?
আমি বললাম- হ্যা!
হুযুর ( সা) আমাকে পুনরায় বিছানায় ডাকলেন। আমি তার সাথে সে অবস্থায়ই পশমি চাদরে শয়ন করলাম। ( বুখারী - ২৯৪)
.
আল্লাহ তোমাদেরকে এই সময়ের নামাজও মাফ করে দিয়েছেন।
বল তো? আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছেন? নাহ! দেন নি। এটা আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে আরেকটি অনুগ্রহ।
.
হযরত মুঅাযাহ বিনতে আবদুল্লাহ ( রা) থেকে বর্নিত, জনৈক মহিলা এক সময় হযরত আয়েশা ( রা) কে বললেন, কারও হায়েয দেখা দেয়ার পর যখন সে পবিত্র হয়, তখন কি সে তার হায়েয কালীন নামাযগুলার কাযা আদায় করতে হবে?
আয়েশা ( রা) তাকে বললেন- তুমি কি হারুরিয়া? ( হারুরিয়া খারেজি সম্প্রদায়ের একটি উপদল)।
তিনি আরও বললেন- নবি কারীম ( সা) এর যামানায় তিনি আমাদেরকে হায়েযকালীন নামাযের কাযা আদায় করার আদেশ করেননি।
অথবা তিনি বলেছেন, আমরা এরূপ করতাম না।
( অর্থ্যাত হায়েযের দিন গুলার কাযা আদায় করতে হবে না)।
.
নীরা বলে উঠল- আপনার জ্ঞানের প্রসংশা করতে হয়। ইচ্ছা করছিল না বলতে! কিন্তু না বললে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ হবে।
- উহু! নাহ! আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান। উনাকে বল। আল্লাহ দিয়েছেন বলেই বলতে পারছি । মাশা আল্লাহ বলো?
- নীরা মুখ ভেংচি কাটল।
.
নীরা ঈশামের দিক থেকে ফিরে অন্য দিকে মুখ করে মনে মনে বলল-
মাশা আল্লাহ!
.
নীরা রুম থেকে বের হবে এমন সময় ঈশাম পিছন ফিরে ডাক দিল:
- নীরু!!!!!
.
নীরার হৃদপিন্ড যেন ধরাস করে উঠল.....
.

পর্ব- ৯
.
নীরা পিছন ফিরে ঈশামকে কিছু একটা বলবে অমনি খেয়াল করল ঈশাম নীরার দিকে এগিয়ে আসছে।
ঈশাম যতই নীরার দিকে এগিয়ে আসে ততই নীরা পিছনে যায়। নীরা আস্তে আস্তে দেওয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তোতলাতে তোতলাতে বলতে থাকে:
- এএএএএই কি হইছে অাঅাঅাপনার। কাছে আসার চেষ্টাও করবেন না বলে দিচ্ছি! ভাল হবে না কিন্তু!! দূরে যান! দূরে যান বলছি!
ঈশাম নীরার সামনে থেকে সরছে না।
নীরা ঈশামের বুকে এক ধাক্কা দিয়ে কয়েকহাত দূরে ঠেলে দেয়।
- এই এই করছ কি? আমি তো পরে যাব! যদি পরে যেতাম? তাহলে কি হত?
- কি আর হত? কোমড় ভেঙে বসে থাকতেন। আমি মানা করছি না কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না। এমনি হবে। হুমমম!
- বারে! আমার বিয়ে করা বউ, ২ লক্ষ টাকা দেনমহর দিয়ে বিয়ে করে ঘরে এনেছি, আর আমি কিনা আমার বউকে ভালবাসতে পারব না?
- ভালবাসতে বলছে কে আপনাকে?
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা।
- নীরা চুপ।
ঈশাম আবারো নীরার কাছে আসতেই নীরা চিতকার করে উঠল-
- মা!!!!!!!!
.
ঈশাম ৫ হাত পিছনে সরে গেল। এই নীরু! চুপ!
- এই বার? হুম?
-মাকে ডাক কেন?
- নীরা দাত কেলিয়ে হাসতে থাকে।
.
আচ্ছা? আপনি আমাকে নীরু বলে ডাকেন কেন?
- খুব ইচ্ছে ছিল নিজের বউকে শর্ট নামে ডাকব।
- আহারে ইচ্ছা!
- হুম ইচ্ছা। কারন হযরত মুহাম্মাদ ( সা) উনার বিবিকে শর্ট নামে ডেকেছিলেন।
.
হযরত আয়েশা ( রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ ( সা) আমাকে সম্বোধন করে বললেন- হে আয়েশ! ইনি জিবরাইল ( আ), তোমাকে সালাম বলছেন। তদুত্তরে আমি বললাম, ওয়া আলাইহিস সালাম, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আয়েশা ( রা) আরও বলেন, আমরা যা দেখি না, নবী কারীম ( সা) তা দেখেন। ( বুখারি- ৫৭৬৮)।
হযরত আনাস ( রা) থেকে বর্ণিত, একবার উম্মে সুলায়ম ( রা) সফরের সামগ্রীবাহী উটে সাওয়ার ছিলেন। আর নবী কারীম ( সা) এর গোলাম আনজাশা উটগুলাকে দ্রুত হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নবি কারীম ( সা) তাকে বললেন, ওহে আনজাশ! তুমি কাচপাত্রবাহী উটগুলা ধীরে ধীরে হাকিয়ে নিয়ে যাও। ( বুখারি- ৫৭৬৯)
.
তাহলে আমার প্রেয়সী কে আমি কি শর্ট করে নামে ডাকতে পারব না?
- নীরা মুখ বাকা করল।
- আচ্ছা তুমি কি পোলিও রোগি?
- কেন? কথায় কথায় মুখ বাকা কর কেন? ছোটবেলায় আমার শশুড় শাশুড়ি কি আমার বউটাকে পোলিও টিকা খাওয়াই নাই?
- নীরার মুখ ফুলে গেছে।
- আচ্ছা কি নামে ডাকলে আমার প্রিয়তমা খুশি হবে শুনি? লাল পরি, নীল পরি, ডানা কাটা পরি, শাক চুন্নি, ময়না পাখি, টিয়া পাখি, হলুদিয়া পাখি, সারস পাখি, সোনা পাখি? নাকি সোনা বউ ডাকলে খুশি হবেন?
- আপনাকে এত পেচাল পারতে বলছে কে?
- পেচাল কই পারলাম?
- আপনি অতিরিক্ত কথা বলেন। বাচাল কোথাকার!
- তা বলতে পার!
- জি হা সেটাই।
- নীরু! তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। চোখটা বন্ধ কর।
- কি? চোখ বন্ধ করব কেন? করব না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এই নাও।
ঈশাম নীরার সামনে এক গুচ্ছ বেলি ফুলের মালা ধরল।
ছোট হাদিয়া বলতে বলতে পার। তুমি কি পছন্দ কর না কর তা তো এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না। নাও ধর!
নীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। এই ছেলেটা কিভাবে জানল আমি বেলি ফুলের মালা পছন্দ করি? কখনও তো বলি নি তাকে। আশ্চর্য!
ঈশাম এখানে একটা চালাকি করেছে। নীরার ফোনের গ্যালারি থেকে নীরার ছবি গুলা দেখেছে। নীরার সব ছবিতেই চুলের খোপায় বেলি ফুল গুজিয়ে দিয়ে ছবি তুলেছে। তাই নীরাকে প্রশ্ন করার মানেই হয় না নীরা কোন ফুল পছন্দ করে।
- আপনাকে ফুল আনতে বলেছিল কে?
- ছোট হাদিয়া বলতে পার। আল্লাহ আমার ছোট ছোট আশা পূরন করছে আলহামদুলিল্লাহ্‌।
- কোনো প্রয়োজন ছিল না।
- নীরু! তুমি কি জান হাদিয়া দিলে মায়া মহব্বত বৃদ্ধি পায়?
হযরত আবূ হুরায়রা ( রা) থেকে বর্ণিত হুজুর ( সা) ইরশাদ ফরমান, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে হাদীয়া দাও। এতে মহব্বত বৃদ্ধি পায়। ( ফয়জুল কাদীর, জামে ছগীর- ২/২০৩)।
সামর্থ্য অনুযায়ী মাঝে মাঝে হাদীয়া দেওয়া উচিত।
রাসূলে কারীম ( সা) এর একটি সাধারন ও সংক্ষিপ্ত উপদেশ সব সময় স্মরনে রাখা কর্তব্য,
"তোমরা পরস্পর উপহার উপঢৌকন আদান প্রদান কর, দেখবে, এর ফলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হয়েছে, পারস্পরিক প্রেম- ভালিবাসার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। "
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে,
তোমরা পরস্পরে হাদিয়া তোহফার আদান প্রদান করবে, কেননা হাদিয়া তোহফা দিলের ক্লেদ, ও হিংসা - দ্বেষ দূর করে দেয়। ( আহমদ, তিরমিযি)।
.
তুমি নিশ্চয় জান, মানুষের অন্তরে ধন সম্পদের মায়া খুবই তীব্র। তা যদি অন্য কারও কাছ থেকে লাভ করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার মন তার দিকে ঝুকে পরে, এবং ধন সম্পদ দানকারীর মনও ঝুকে পরে তার প্রতি যাকে সে দান করল। অবশ্য সেটা হতে হবে তার সামর্থ্য অনুযায়ি।
ইমাম ইয়াজিদ নখয়ী বলেছেন- স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামী কে উপহার দেওয়া খুবই বৈধ কাজ।
কিন্তু এ ব্যপারে শরীয়াতের নির্দেশ হল, কেউ অপরের দেয়া উপহার ফেরত নিতে বা দিতে পারবে না।
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ বলেছেন, এভাবে উপহার আদান প্রদান করলে কেউই কারোটা ফিরিয়ে দেবেও না, ফিরিয়ে নেবেও না।
আল্লামা আইনী লিখেছেন,
স্বামী স্ত্রী কে এবং স্ত্রী স্বামী কে যা কিছু একবার দিয়ে দিয়েছে, তা ফেরত নেওয়া কারও পক্ষেই জায়েজ নয়। ( উমদাতুলকারী)।
স্বামী স্ত্রীর মান- অভিমান অনেক সময় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেক সময় তা সীমালঙ্ঘন করে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সা) এর দাম্পত্য জীবনেও তা দেখা দিয়েছিল। হযরত উমরের স্ত্রী একদিন হযরত উমার ( রা) বললেন,
" আল্লাহর কসম, নবীর বিবিগন পর্যন্ত তার কথার প্রত্যুত্তর করে থাকেন। এমন কি তাদের এক একজন রসূলকে দিনের বেলা ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত অভিমান করে থাকেন।
তখন উমর ( রা) চিন্তায় ভারাক্রান্ত হয়ে তার কন্যা উম্মুল মু' মিনীন হযরত হাফসার নিকট বিষয়টি সম্পকে সত্যাসত্য জানতে চাইলেন। জওয়াবে হাফসা ( রা) হ্যা সূচক উক্তি করলেন। হযরত উমর ( রা) এর পরনাম ভয়াবহ মনে করে কন্যাকে সাবধান করে দিলেন এবং বললেন-
" সাবধান! তুমি রাসূলের ( সা) নিকট বেশী বেশী জিনিস চাইবে না। তার মুখের উপর জওয়াব দেবে না, রাগ করে কখনও তাকে ত্যাগ করবে না। আর তোমার কিছু দরকার হলে তা আমার নিকট চাইবে। "
.
তাই কোনো কিছু স্বামীর কাছ থেকে চাওয়ার আগে এও ভাবতে হবে যে, স্বামীর সামর্থ্য আছে কিনা। স্বামী দিতে পারবে কিনা। তা নাহলে অনেক সময় মনমালিন্য হতে পারে। স্বামী ও অনেক মন খারাপ করতে পারে যে, আমার স্ত্রী আমার কাছ থেকে চাইল তা আমি দিতে পারলাম না।
- বুঝেছ নীরু?
- নীরা চুপ করে থাকল।
.
সকাল বেলা ঈশাম অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীরা ঈশামকে বলল,
- আমার কিছু টাকা লাগবে। একটা জায়গায় যাব।
- কোন জায়গায়?
- পার্লারে।
- ও আচ্ছা। একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি?
-হুম।
- কি করতে যাবে?
- নিজেকে একটু ঠিক করতে। অনেক দিন হল যাওয়া হয় না।
- কত টাকা লাগবে।
- ৫০০। ৪০০ টাকা ফেসিয়াল আর ১০০ টাকা ভ্রু প্লাগ।
- আমি তোমাকে ৪০০ টাকা দিব।
- কিছু মনে করবেন না। ৫০০ টাকা দিতে কি আপনার কোনো প্রবলেম হবে? না মানে সমস্যা হলে আমার লাগবে না।
- আলহামদুলিল্লাহ। মাসের প্রথমে আমার সমস্যা নেই। আমি তোমাকে ৫০০ টাকাই দিতে পারব। কিন্তু তোমাকে আমি ৪০০ টাকাই দিব। কারন তুমি ফেসিয়াল করতে পার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ভ্রু প্লাগ করতে পারবা না।
- কি সমস্যা ভ্রু প্লাগ করতে? আমার অনেক দিন হয়ে গেল ভ্রু প্লাগ করি না। ভ্রু অনেক বড় হয়ে গেছে, একটু সাইজ করে আনতে হবে।
- নাহ! তুমি করতে পারবে না।
- কেন?
- আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নিষেধ আছে।
.
কিভাবে নিষেধ করা হয়েছে জান?
" হযরত আলকামা ( র:) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রা) লানত করেন এমন সব নারীর উপর, যারা অপরের অঙ্গে উল্কি উতকীর্ণ করে। যারা কপাল প্রশস্ত করার জন্য কপালের উপরিভাগের চুল গুলো উপরে ফেলে ( ভ্রু প্লাগ) এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরূ করে ও বড় করে কৃতিম উপায়ে আল্লাহর সৃষ্টি বদলে ফেলে।
তখন উম্মে ইয়াকুব জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কেন? উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ ( রা) বললেন, আমি কেন তার উপর লানত করব না যার উপর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা) লানত করেছেন। এমনকি আল্লাহর কিতাবেও তাই আছে।
তখন উম্মে ইয়াকুব বললেন, আমি সমস্ত কিতাব ( কোরঅান) পরেছি, কিন্তু তাতে তো এটা পেলাম না। তখন আবদুল্লাহ বললেন, যদি তুমি কোরঅান পাঠ করতে তা হলে অবশ্যই তাতে পেতে-
" রাসূল যা তোমাদেরকে দেন তা মজবুতভাবে আকড়ে ধর আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক। ( বুখারি- ৫৫১৪)।
.
রাসূলুল্লাহ ( সা) এর লানত যে কাজের জন্য ধার্য করা হয় তাহলে সেই কাজটা কি করা উচিত? রাসূলুল্লাহ ( সা) এর আমরা প্রিয় উম্মাত হয়ে কিভাবে তার কথার বিরোধিতা করতে পারি?
নীরা খানিক্ষন চুপ থেকে বলল,
আমাকে না হয় মানা করলেন কিন্তু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মেয়েরা যে করছে?
- তাদেরকে তোমরা দাওয়াত দিবে।
- আর অনেকে না জেনে করে। কিন্তু অাফসোস বেশির ভাগই জেনেই করে। কারন তাদের কাছে মানুষের কাছে সুন্দর লাগানোই লক্ষ্য। কিন্তু অাদো তাদেরকে এই কাজ করলে সুন্দর লাগে না। এটা রাসূলুল্লাহ ( সা) এর লানত লাগে।
.
- ফেসিয়াল করতে সমস্যা?
- যদি না সেটা পরপুরুষ কে দেখাও। দেখালে সমস্যা। শুধু স্বামী দেখতে পারবে। আর ফেসিয়াল যদি হারাম কিছু দিয়ে না করে তাহলে ঠিক আছে। তোমার নিয়ত যদি থাকে আমার তকের যত্ন নিব স্বামীর কাছে সুন্দর লাগানোর জন্য তাহলে ১০০% ঠিক আছে।
.
ঈশাম বলল, অফিসে যাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।
- ও আলাইকুমুসসালাম।
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ)

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.