গল্প: তোমায় নিয়ে পর্ব: ২০+২১

গল্প: তোমায় নিয়ে
লেখাঃ সানজিদা সুরাইয়া স্মৃতি

পর্ব: ২০+২১




সকালে ঈশামের জন্য নীরা চা বানাল। সেই বিখ্যাত চা। যেই চা খেয়ে নীরার বাবা বলেছিল- এইভাবেই কি স্বামীর জন্য চা বানাবে কিনা।
কি জানি! নীরার চা বানানো কেন ভাল হয় না। তা হোক গা! যা মন চায় তাই! বানিয়েই ফেলি। ভাল না হলে ঢকঢক করে গিলে ফেলব।
নীরা অতি যত্ন সহকারে চা বানিয়ে ঈশামের নিকট দিল।
আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। তাই সকাল ঈশাম বই পড়ায় ব্যস্ত।
- এই যে ধরেন!
বই থেকে মুখ উচিয়ে দেখল নীরা চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আহা! কি সুন্দর জীবন আলহামদুলিল্লাহ! বউ চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে, এমন দৃশ্য দেখার জন্য কত ছেলেই না জানি প্রহর গুনে। আজ পালা ঈশামের।
- জাযাকিল্লাহ খইরন! জাযাকিল্লাহ খইরন! এই বলে নীরার হাত থেকে চা নিল ঈশাম।
প্রথম চুমুক মুখে দিয়েই ঈশাম যেন কোথায় হারিয়ে গেল।
- এই যে! কি হইছে?
- না মানে! ভাল হইছে চা।
- আমি কি এইটা জিজ্ঞাসা করেছি কেমন হইছে চা।
- তা?
- চা কেমন হইছে তা আমি জানি।
- আচ্ছা? তুমি নিজে বানিয়েছ তুমি নিজেই জান? তা বেশ ভাল! তুমিই বল কেমন হয়েছে?
- তোমার চাহনি দেখেই বুঝছি। আমার বাবা তো আমার হাতের চা খেয়ে ৯০, ১৮০ পারলে ৩৬০ ডিগ্রী মুখ বাকা করে।
- ঈশাম জোরে করে হেসে উঠল।
- হাসতেছ?
- হুম! আমার শশুড় মশাই তো বেশ লোক!
- তা বটে।
নীরা ঢকঢক করে চা গিলে ফেলল মনে হচ্ছে শরবত খাচ্ছে।
ঈশাম বেচারা কি করবে? চায়ের দামে সেও শরবত খেল।
নীরা ঈশামের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়েই জিজ্ঞাসা করল,
- আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
- জি অবশ্যই।
- তোমার সাথে আমার বিয়ের ৩ মাস হল। আমি তোমাকে মানা করেছিলাম আমার অনুমতি ব্যতিত স্পর্শ না করতে। কিন্তু স্বামী হিসেবে তুমি তো সেই অধিকার রাখতে। তুমি আমাকে জোরও করতে পারতে। কারন তোমার অধিকার আছে। কেন.......
নীরার প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই ঈশাম বলে উঠল,
- আমি যদি তোমাকে জোরই করতাম তাহলে তাহলে তুমি আমাকে সব পুরুষই এক এরকম টাইটেল দিতে। কি দিতে না?
নীরা কিছু বলল না।
- শুনো নীরা! যৌন সম্পক স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অতি গুরুত্ব পূর্ণ। এটার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা গাঢ় হয়, তাছাড়া সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া এটা। স্বামী স্ত্রীর জন্য খুবই পবিত্র এটি। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দেনমহর দেওয়া হয় মূলত স্ত্রীদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে গ্রহন করতে। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সব কিছুই বৈধ। বিয়ের প্রথম দিন থেকেই স্বামী স্ত্রীর সাথে সব কিছু করতে পারে।
কিন্তু! যে মেয়ে বিয়ের পর চেনা জায়গা থেকে অচেনা একটা পরিবেশে অচেনা মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে যখন আসে তার সব কিছু ছেড়ে তখন সেই মেয়েটির মানসিক অবস্থার কথাও মাথায় রাখতে হবে। কারন অনেকেই স্বাভাবিক থাকতে পারে না। আমি এই বিষয়টা কে আমি খুবই সেনসিটিভ ভাবি। কারন স্বামীর অধিকার আছে ঠিক আছে কিন্তু স্ত্রী মানসিক ভাবে প্রস্তুত কিনা সেটা যদি না ভাবি তাহলে কি হল ব্যাপারটা। আরে? সারাজীবনের জন্য বউ করে ঘরে আনলাম, আমি তো তাকে অবশ্যই পাব কিন্তু যখন সে মানসিক ভাবে প্রস্তুতই না তখন কেন আমি জোরজবরদস্তি করব?
তুমি কি প্রস্তুত ছিলে নীরা?
- না।
- তো? তুমি সেদিন প্রস্তুত ছিলে না। যদি আমি তোমাকে জোর করতাম তাহলে তুমি কি আমাকে সেই দলে ফেলে দিতে না?
- হুম।
- দেখ! বিষয়টা কে কিভাবে নেয় আমি জানি না। আমি কোনো তর্কেও যেতে চাই না। কিন্তু আমি তোমার কাছে শুধু স্বামী না, বন্ধুও হতে চেয়েছি। স্ত্রীর মানসিক দিক দেখাটাও ইসলাম বলে। স্ত্রীর অসুস্থতা, মানসিক দুর্বলতা থাকতেই পারে। সেজন্য স্ত্রী কে মানসিক ভাবে প্রস্তুত নেওয়ার সময় দেওয়া দরকার আমি মনে করি। আমি তোমার স্বামী। অধিকার অবশ্যই পাব। কিন্তু আমি চাইনা আমার পশুত্ব আচরনের কারনে তোমার কাছে আমি সারাজীবন অপছন্দের মানুষ হিসেবে থাকি। আর সেইদিন ধৈর্য্য ধরেছিলাম বলেই আমি আজ তোমার কাছে সম্মানিত। কি নীরা ঠিক বলছি না?
- ঈশামের কথা শুনে নীরা বাকরুদ্ধ!
নীরা বলল,
- তোমার মত করে যদি সবাই ভাবত! কত মেয়ের যে জীবন সুন্দর হত আল্লাহ মালুম!
.
নীরা বলল,
তোমার মত স্বামী পেয়ে আমি সত্যিই ধন্য।
ঈশাম মুচকি হেসে উত্তর দিল,
All credit goes to ALLAH ( Swt).
.
- দাও তো তোমার কোন শার্ট গুলো ময়লা হয়েছে।
- কি করবা?
- কি করব আর? ময়লা শার্ট নিয়ে নিশ্চয় আমি গায়ে দিব না। ধুয়ে দিব।
- তুমি?
- বারে! কেন আমি না?
- না মানে......
- তুমি কি বলতে চাচ্ছ আমি জামা কাপড় ধুতে পারি না? এতই আনাঢ়ী আমি?
- না তা বলি নি।
- ঈশাম তুমি জান না পুরুষের কাপড় ধুয়ে দেওয়া সুন্নাত। হযরত আয়েশা ( রা) উম্মুল মো'মেনীন হয়ে যদি উনার স্বামী হযরত মুহাম্মাদ ( সা) এর কাপড় যদি ধুয়ে দেয় তাহলে আমি তোমার স্ত্রী আমি কেন পারব না?
" হযরত আয়েশা (রা) বলেন, আমি নবী কারীম ( সা) এর কাপড় থেকে নাপাক দূর করতাম। অতপর তা পরিধান করে হুজুর ( সা) নামাজের জন্য চলে যেতেন।
তাছাড়া কাপড় ধুয়ে দেওয়াও স্বামী সেবার অন্তর্ভুক্ত। হযরত আয়েশা ( রা) এর আমলের সাথে আমল মিলে যায় এমন সৌভাগ্যের কাজ আর কি হতে পারে? বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহিলা হযরত আয়েশা ( রা) তার স্বামী নবী কারীম ( সা) এর কাপড় ধুতে পারলে এবং এটা গৌরবের কাজ হলে আমি করব না কেন?
- বাহ! মাশা আল্লাহ! আমার বউ তো দেখি অনেক কিছুই শিখে গেছে।
- জি হা জনাব! দোয়ার প্রার্থী।
- তোমাকে একটা সুন্দর হাদিস বলি, খুবই সুন্দর..
আনসারী মহিলা হযরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ ( রা) এর ঘটনা।
একদা তিনি নবী কারীম ( সা) এর খেদমতে এলেন। সেখানে তখন অনেক সাহাবিও উপস্থিত ছিলেন। মহিলা বললেন,
আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান হউন। আমি মহিলাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল হয়ে আপনার দরবারে এসেছি। আমার প্রান আপনার উপর উতসর্গ হউক, পূর্ব পশ্চিমের কোন মহিলা আমার আগমনের সংবাদ জানে না, না কেউ শুনেছে, কিন্তু অনেকেই আমার মত বুদ্ধি রাখে । হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ পাক আপনাকে নারী পুরুষ সকলেরই কাছে প্রেরন করেছেন। আমি আপনার উপর এবং আপনি যা নিয়ে আগমন করেছেন তার উপর ঈমান এনেছি। আমরা মহিলারা ঘরে আবদ্ধ থেকে পুরুষের প্রয়োজন পূর্ন করে থাকি। গর্ভে সন্তান নিয়ে তা সহ্য করি। আর পুরুষেরা জুমার নামাযে , জামায়াতে, রোগীর সেবায়, জানাযাতে শরিক হয়, হজ্জের পর হজ্জ করে, এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার কারনে প্রচুর সাওয়াব পেয়ে থাকে। সমস্ত পুরুষ যখন হজ্জ ওমরা করতে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে যাত তখন আমরা তাদের ধন সম্পদ পাহারা দেই। তাদের সন্তান দেখা শুনা করি। হে আল্লাহর রাসূল ( সা)! এতে আমাদের কি পরিমান সাওয়াব হয়?
.
এবার রাসূলুল্লাহ ( সা) স্বীয় দিক পরিবর্তন করে সাহাবায়ে কেরামের দিকে ফিরে বললেন,
মহিলার প্রশ্ন গুলো শুনে রাখ সে দ্বীনের ব্যাপারে কেমন প্রশ্ন করেছে।
সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন,
হে আল্লাহর নবী! এ ব্যাপারে আমরা জানি না।
অতপর হুজুর ( সা) মহিলার দিকে ফিরে বললেন- যাও! তুমি ছাড়া অন্যান্য মহিলাদের জানিয়ে দাও যে , তোমরা মহিলারা স্বামীর সাথে উত্তম আচরন করবে , তাদের মন যোগাবে, তাদের কথার বিপরীত কাজ করবে না। এ সমস্ত কাজ পুরুষদের অন্যান্য কাজের সমতুল্য।
সুতরাং মহিলাটি অত্যন্ত খুশি হয়ে তাকবীর দিতে দিতে চলে গেল। ( বায়হাকী, শেয়াবুল ঈমান-৬/ ৪৬১)।
.
নীরা দেখ! একজন আনসারী মহিলা তার আমলের ব্যাপারে কতই যত্নশীল ছিলেন যে, উনি মনে করেছিলেন যে পুরুষেরা যে যে আমল করতে পারে এর ফলে পুরুষেরা সব সাওয়াব নিয়ে গেল, আর আমরা নারী হয়ে পুরুষের প্রয়োজন মিটাই, সন্তান, তাদের ধন সম্পদ, সংসার দেখভাল করি, তাহলে আমরা নারীরা কি তাদের আমলের তুলনায় পিছিয়ে পরছি?
এরপর রাসূলুল্লাহ ( সা) বলে দিলেন, স্বামীর সাথে ভাল আচরন, তাদের প্রয়োজন পূর্ন, তাদের কথা বিপরীতে কাজ না করলে পুরুষের সমান সাওয়াব তারাও লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর সিস্টেম কতই না চমতকার!
.
নীরা ও ঈশাম গল্প করছে। এরপর নীরা ঈশামের কাপড় চোপড় ধুতে গেল। দুপুর ১২ টার দিকে নীরার ডাক....
- এই যে মহাশয়! আসুন গোসল সেরে নিন। জুমার নামাজে যাবেন না? আমি আপনার গোসলের পানি রেডি করে রেখেছি।
- মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি?
- জি হা! তুমি কি জান না, হযরত আয়েশা ( রা) নবি কারীম ( সা) এর জন্য ওযু গোসলের জন্য পানি প্রস্তুত করে রাখতেন।
" হযরত আয়েশা ( রা) বলেন, রাতের বেলা আমি নবী কারীম ( সা) এর জন্য পানির তিনটি পাত্র প্রস্তুত রাখতাম।
১) পানির পাত্র, এই পাত্র দ্বারা রাসূলুল্লাহ ( সা) পেশাব- পায়খানা ওযু ইত্যাদি করতেন।
২) মিসওয়াক এর।
৩) পান করার পাত্র।
সো! আমিও তাই করব।
- ঈশাম নীরার কাজ দেখে খুবই খুশি হল।
- তোমার আরাম আয়েশের ব্যাপারেও আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। তুমিই আমার জান্নাত, আবার তুমিই আমার জাহান্নাম। তুমি যদি সন্তুষ্ট থাক তাহলে আল্লাহ আমাকে আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতে দিবেন, আর যদি অসন্তুষ্ট থাক তাহলে আল্লাহ, আল্লাহর ইচ্ছায় আমাকে জাহান্নামে দিবেন।
- ঈশাম বলে উঠল! আলহামদুলিল্লাহ! আমি সন্তুষ্ট !
এই বলে ঈশাম নীরাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরতেই নীরা চিতকার করে বলে উঠল,
- মা!!!!!
তাড়াতাড়ি করে ঈশাম নীরাকে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগল, আর পিছন ফিরে নীরাকে বলল,
- মনে থাকে যেন।
নীরার কি যে হাসি!
.
গোসল সেরে ঈশাম দেখল নীরা পাজামা, পাঞ্জাবী, টুপি বিছানার উপর রেখে দিয়েছে। ঈশাম তা পড়ে নিল।
নীরা হাতে চিরুনি নিয়ে ছোট বাচ্চাদের যেমন করে মায়েরা চিরুনি দিয়ে আচরিয়ে দেয় ঠিক তেমনি করে ঈশামের মাথার চুল আচরিয়ে দিচ্ছে।
ঈশাম কিছুই বলল না। কারন বলারও কিছু ছিল না। শুধু আল্লাহ কে শুকরিয়া জানাচ্ছিল।
নীরা বলে উঠল,
হযরত আয়েশা ( রা) বলেন, আমি হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ( সা) এর মাথায় চিরুনি করতাম। ( বুখারি- ৫৫০১)
তাই আমিও করেছি।
- তুমি দেখছি অনেক কিছুই শিখে ফেলেছ।
- হুম! হুম! দাড়াও আরেকটা কাজ বাকি আছে।
- কি?
- নীরা দৌড়ে গিয়ে আতরের শিশি নিয়ে আসল। এরপর ঈশামের পাঞ্জাবীর কলার ধরে নীরার কাছে নিয়ে এসে পাঞ্জাবীতে আতর লাগাতে লাগল।
ঈশাম চুপ করে নীরার কর্মকাণ্ড গুলো দেখছে।
" হযরত আয়েশা ( রা) বলেন, আমি নিজ হাতে নবী কারীম ( সা) এর গায়ে এহরাম বাধার সময় খুশবু লাগিয়েছি এবং তওয়াফে যেয়ারতের আগে মিনায়ও খুশবু লাগিয়েছি। ( বুখারি- ৫৪৯৮)।
- এবার নামাজে যাও।
- তুমিই তো সব করলা। আমাকে তো কিছুই করতে দিলা না।
- তুমি আবার কি করবা?
- ঈশাম নীরার কপালে মিষ্টি একটা ঈশামের ঠোটের একটা স্পর্শ লাগিয়ে দিল।
- ওকে! এইবার আমার কাজটা করলাম।
নীরা মুখ নিচু করে আছে।
- যাও তো এবার মসজিদে।
- আচ্ছা! আচ্ছা! যাচ্ছি তো! ঠেলো না!
.
নীরা এখন খাস পর্দা করে। হাত পা মোজা পরিধান করে। এখন সে পর্দা করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। হেদায়েত পাওয়ার আগে নীরা অনিচ্ছাকৃত ভাবে পর্দা করত কিন্তু এখন শুধু আল্লাহর জন্যই করে ইচ্ছাকৃত ভাবে।
নীরা এখন নামাজ পরে, আল্লাহর জন্য। ঈশামকে তাহাজ্জুদে ডেকে দেয়, ফজরের সময়ে মসজিদে পাঠিয়ে দেয়।
নীরার ফোনে আর গান নেই, আছে কুরঅানের এপস।
নীরার অবসর সময় কাটে ইসলামিক বই পড়ে।
নীরা কিছুদিনের মধ্যেই সংসার বুঝে গেছে। শাশুড়ির সাথে কাজ করে সংসারের।
স্বামী সেবায় নীরা কোনো ত্রুটি রাখতে নারাজ।
ঈশাম কোন কাজে খুশি হবে সেই কাজটি করতে পারলে যেন, তার আনন্দের সীমা থাকে না।
ছোট ছোট আমল সে একদম জব্দ করে ফেলেছে, কম আমল করলেও নীরা নিয়মিত করে।
শশুড় শাশুড়ির মন জয় করে ফেলেছে।
আনাঢ়ী মেয়ে নীরার এমন পরিবর্তন দেখে ঈশাম তার রবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর স্ত্রী নীরার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে।
ঈশাম নীরার সাথেই জান্নাতে যেতে। জান্নাতে নীরাকে সঙ্গি হিসেবে পেতে চায়। আল্লাহর দরবারে চোখের অশ্রু ফেলে সে কি মিনতি ঈশামের।
অপর দিকে নীরাও ঠিক একই দোয়া করে।
দুজন দুদিকে দোয়া করে । কিন্তু শ্রোতা একজন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা।
তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী।
.
কয়েক মাস পর..........
নীরার শরীর খুব খারাপ সকাল থেকে।
ঈশামকে ফোন দিল নীরা,
- আসসালামু আলাইকুম।
- ও আলাইকুমুসসালাম। নীরু? তোমার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ তোমার?
- হুম! সকাল থেকে শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে।
- মা কে বলেছ?
- হুম। কিন্তু তুমি আস তাড়াতাড়ি।
- ইনশাআল্লাহ।
.
অনেক চেষ্টা করেও ঈশাম আজকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিতে পারে নি। অফিস আওয়ার শেষ হলেই যেতে পারবে এর আগে না। নীরাকে ফোন করে জানাল ঈশাম। নীরা হেসে বলল, আমি জানি সব ঈশাম, তুমি এত ব্যস্ত হইও না। আমি এখন সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।
অফিস শেষে ঈশাম বাসায় আসল।
- নীরু কেমন আছ?
- আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
- কি হইছিল?
- জানি না। হঠাত করে বমি করেছি। বমি করতে করতে একদম কাহিল আমি।
.

পর্ব: ২১
.
নীরার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঈশাম নীরাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। কিন্তু নীরা বলল,
- থাক না, হতেই পারে এরকম।
- থাক কিসের? চল। আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। উঠ! রেডি হও।
নীরা যাবে না তাও ঈশামের জেদের কাছে হার মানল।
.
মহিলা ডাক্তারের কাছে নীরাকে দেখিয়েছে ঈশাম। ডাক্তার নীরাকে চেকআপ করল।
- মি: ঈশাম! গুড নিউজ। আপনি সন্তানের বাবা হতে চলেছেন। ভয়ের কারন নেই। প্রেগনেনসির সময় এরকম অসুস্থতা হয়ই।
কথাটা বাংলা সিনেমার ডায়লগের মত শুনালেও এই ডায়লগ না শুনলে যেন মনেই হয় না তারা সন্তানের পিতা মাতা হতে চলছে। আধুরাই থেকে যায়।
ডাক্তারের মুখে এই কথা শুনার পর হবু বাবা মায়ের কি অনুভূতি হয় সেটি কেবল তারাই জানে যারা সন্তানের মা বাবা হয়েছে। ঈশাম ডাক্তারের কথা শুনা মাত্রই বলে উঠল,
- আলহামদুলিল্লাহ। ঈশামের সেই কি হাসি।
নীরার দিকে তাকিয়ে দেখল নীরার চোখ ছলছল করছে। নীরা সাথে সাথে তার পেটে হাত দিয়ে অনুভব করতে লাগল, আসলেই কি নীরা কনসিভ করেছে, আসলেই কি তার শরিরের ভিতর একটা প্রান আছে।
নীরার আনন্দ যেন আর ধরে না।
ঈশাম ওইযে ডাক্তারের চেম্বার থেকে নীরার হাত ধরেছে আর ছাড়ে না। পৃথিবীর মধ্যে আর কে সুখি? ঈশামের মন চাচ্ছে জোরে করে একটা চিতকার দিয়ে বলি,
আমি বাবা হতে চলেছি।
.
ঈশাম নীরাকে নিয়ে বাসায় ঢুকল সাথে মিষ্টির প্যাকেট।
- কিরে ঈশাম হঠাত মিষ্টি আনলি?
- তোমরা কি নাতি নাতনী কে দেখতে চাও না নাকি?
ঈশামের কথা শুনে বুঝতে বাকি রইল না যে নীরা মা হতে চলেছে।
নীরার শাশুড়ি তো দৌড়ে গিয়ে শশুড় কে খবর দিল।
একটা সন্তান পৃথিবীতে আসার আগে তার হবু মা বাবার কি যে আনন্দ তা যদি কোনো কিছুতে বুঝানো যেত?
সেই বাধ ভাঙা খুশির জোয়ারে ভাসছে ঈশাম আর নীরা।
ঘরের দরজা বন্ধ করেই ঈশাম নীরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
নীরা ঈশামের বুকে মুখ গুজে দিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
নাহ! আজ ঈশাম নীরার কান্না থামাবে না। কারন আজ ঈশামও কাদবে । এই কান্না দুখের না।
আচ্ছা! ছেলে মানুষ তো খুব কষ্ট না পেলে সহজে কান্না করে না। তাহলে সন্তান পৃথিবীতে আসবে শুধু এই খুশিতেই কি চোখে পানি আসবে?
কি অদ্ভুত?
আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তা'য়ালা সন্তানদের জন্য পৃথিবীতে এই মানুষ রূপি এঞ্জেল সৃষ্টি করেছেন।
.
নীরার জন্য ঈশাম এক্সট্রা কেয়ার নিতে শুরু করল। খাবার দাবারে, দৈনন্দিন রুটিনে ঈশাম পরিবর্তন আনল। নীরার প্রথম কয়েকমাস ঈশাম এক্সট্রা যত্ন নিবে। কারন খুবই সেনসিটিভ সময়।
নীরা মন খারাপ করে বসে আছে। কারন শরীর তার ভাল নেই। বমি, ক্লান্তি, অবসাদ, ক্ষুধামন্দা সব যেন জেকে বসেছে। কিছুই ভাল লাগছে না। ঈশাম নীরার কাছে এসে বসল। নীরার মাথা ঈশাম তার বুকের উপর রেখে নীরার চুল বুলাতে বুলাতে বলল,
" হযরত আনাস ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন ( এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদাতকারীর মত সাওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব বেদনা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কি কি নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে ( অসুখ ইত্যাদি কারনে বিরক্ত করে মাকে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সাওয়াব পারে। ( আলমু' জাম, তাবরানী: ৬৯০৮, আবু, নুঅাইম: ৭০৮৯)।
.
নীরা ঈশামের দিকে তাকাল।
তুমি কি আরও সুসংবাদ শুনবে?
- হুম।
- হযরত ইবনে ওমর ( রা) হতে বর্ণিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন, মহিলাদের গর্ভধারণ থেকে নিয়ে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের এতই সাওয়াব হয় যেরূপ সাওয়াব হয় আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দিলে। এর মাঝখানে মৃত্যুবরন করলে ( অর্থ্যাত গর্ভ ও ভূমিষ্ঠ এর মাঝখানে মারা গেলে) সে শহীদের মর্যাদা পাবে। ( মাজমা' -৪/ ৩০৮)।
.
- সুবহানাল্লাহ!
- কি নীরা? দেখেছ? কত মর্যাদা একজন গর্ভবতী মায়ের। পুরুষেরা কি এই মর্যাদা পাবে?
- না কখনই না।
- তাহলে দেখ তো কত বড় একটা অনুগ্রহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার পক্ষ থেকে।
- নীরা ঈশামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
- কিছু খাবে নীরা?
- ভাল লাগছে না।
- ঈশাম নীরার কোনো কথা না শুনে খাবার নিয়ে এসে জোর করে খাইয়ে দিল।
- মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহিলা কারা জান?
- নাতো!
- হযরত মা'কাল ইয়াসার ( রা) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন- মহিলাদের মধ্যে সেই মহিলা শ্রেষ্ঠ যে অধিক ভালবাসতে পারে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেয়। ( জামেছগীর, বায়হাকী- ৭/৮২)।
- কি শ্রেষ্ঠ হতে চাও না?
- ইনশাআল্লাহ।
.
একটা সন্তান জন্ম দিতে একটা মা যে কত কষ্ট স্বীকার করে, তা সেই মা জানে যিনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ভ্রুন অবস্থা থেকেই শুরু হয় অবর্ণনীয় কষ্ট।
ঈশাম খুব কাছ থেকে নীরাকে দেখছে। তারই সন্তান জন্ম দিতে নীরা আজ এত কষ্ট করছে । তাই তার প্রতি সহানুভূতি, প্রেম, ভালবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা, যত্ন, মানসিক সাপোর্ট খুবই দরকার। নীরার কষ্ট দেখে ঈশাম মনে মনে ভাবছে,
আমার মা আমাকে যখন পেটে রেখেছিল, তখন আমার মাও অনেক কষ্ট করেছে।
ঈশাম যেন খুব ফিল করছে। কি কষ্টই না করেছে ঈশামের মা। প্রায় সব মাই কষ্ট করেছে। ঈশাম যেন খুব করে অনুভব করছে। ভাবতে ভাবতে ঈশামের চোখে পানি এসে পরেছে কখন তা সে খেয়ালি করে নি।
.
- নীরা তুমি কি জান মায়ের গর্ভে যখন ভ্রুন থাকে তখন থেকে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের মধ্যে কি কথা হয়?
- নাতো! হযরত আনাস ইবনে মালেক ( রা) নবী কারীম ( সা) থেকে বর্ননা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা'য়ালা প্রত্যেক মায়ের রেহেমে ( গর্ভাশয়ে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রেখেছেন। মায়ের গর্ভাশয়ে যখন কোন বীর্য ঢুকে তখন উক্ত ফেরেশতা আল্লাহর কাছে আরজ করেন,
হে আল্লাহ! বীর্য কি করা হবে?
যদি আদেশ হয় সম্মুখে পরিচালনা কর, তখন গর্ভাশয়ের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর যতদিন বীর্য হিসেবে থাকার নির্দেশ দেন তা বীর্য থেকে যায়। তারপর আস্তে আস্তে যখন তা জমাট রক্তে রূপান্তরিত হয়, তখন ফেরেশতা আবার বলেন,
হে আল্লাহ! এখন তা জমাট রক্তে রূপান্তরিত হয়েছে।
তারপর আদেশ হলে তাকে গোশতের টুকরায় রূপান্তরিত করা হয়।
তখন উক্ত ফেরেশতা পুনরায় বলেন,
ইয়া রব! এখন তা গোশতের টুকরায় রূপান্তরিত হয়েছে। অতপর মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি কৌশল পূর্নতে রূপ দেওয়ার ইচ্ছে করলে ফেরেশতাকে তা পরিচালনা করার নির্দেশ দেন।
তখন ফেরেশতা আবার আরজ করেন,
হে প্রভু! এখন তো তা পূর্নতা লাভ করেছে, তাতে রূহ দেওয়ার সময় হয়েছে। এখন তা কি পুরুষ হবে না মহিলা?
তারপর এও যখন সমাপ্ত হয়, তখন ফেরেশতা পুনরায় আরজ করেন,
হে বারী তা'য়ালা! এখন তা বদকার হবে না - নেককার হবে?
এর আদেশ হলে পুনরায় প্রশ্ন করেন,
এর রিযিক কি হবে?
এও আদেশ হলে পুনরায় আরজ করেন,
এখন হায়াত কত দিন হবে?
এরও আদেশ হলে ফেরেশতা তার পরিচর্যা করতে থাকেন।
রাসূলুল্লাহ ( সা) ইরশাদ করেন, এসব কিছু মায়ের উদরে থাকা অবস্থায়ই নির্ধারিত হয়। ( বুখারি- ৩১২)
.
- নীরা এটা আমার আর তোমার প্রথম সন্তান আল্লাহর তরফ থেকে। আমি চাই তুমি তোমার অনাগত সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে ।
- জি ইনশাআল্লাহ।
- আমি আরও কিছু পরামর্শ দিচ্ছি তুমি মনে রাখিও এবং সে অনুযায়ি আমল করবে।
- জি বল। আমি অবশ্যই আল্লাহ চাইলে মানতে চেষ্টা করব।
- ঈশাম বলতে লাগল,
তুমি সবসময় চেষ্টা করবে গোনাহ থেকে বিরত থাকবে।
পর্দা করে চলবে।
ধৈর্য্য ধারন করবে, অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি কারনে ধৈর্য্য হারা হয়ে পরবে না। কারন এই সময়টা তোমাদের জন্য জিহাদ তুল্য ইবাদাত।
সময় মত নামাজ আদায় করবে।
যিকির করতে থাকবে। কারন যিকির দ্বারাই মন শান্ত হয়।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
যারা ঈমাম আনে এবং আল্লাহর স্মরনে যাদের মন প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর স্মরনেই মন প্রশান্ত হয়। ( সূরা রাদ- ২৮)।
শোকর আদায় করবে। আল্লাহর সব ডিসিশনের উপর কৃতজ্ঞ থাকবে।
তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী।
অকৃতজ্ঞ হবে না। আল্লাহ বলেন,
" আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। "( সূরা বাকারাহ- ১৫২)।
সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করবে।
সন্তানের জন্য কোরঅান তেলওয়াত করবে। তুমি যেমন কোরঅান তেলওয়াত করবে ঠিক তেমনি তোমার গর্ভের সন্তানের মাঝেও সেটি পরিলক্ষিত হবে।
সবসময় সন্তানের জন্য দোয়া করবে । আল্লাহ বলেন,
বলো তো কে নি: সহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন। ( সূরা নামল- ৬২)।
.
নীরা ঈশামের কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনছে।
গর্ভাবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রী কে মানসিক সাপোর্ট করে তাহলে সেই নারী চরম ভাগ্যবতী। কারন এই সময় টাতে একটা মেয়ে খুবই অসহায় বোধ করে। তার দরকার একটু সাপোর্ট এর। ঈশাম সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। নীরাকে কখনও মনমরা থাকতে দেয় না। হাসিখুশি রাখতে যা করার করে। কারন মা যদি ভাল এবং সুস্থ থাকে তাহলে বেবীও ভাল থাকবে।
ঈশাম তার সাধ্য অনুযায়ী এবং সাধ্যের বাইরেও চেষ্টা করে নীরার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে। নিয়মিত চেক অাপ করায়।
স্বামী হিসেবে একজন গর্ভবতী নারীর প্রতি যা যা দায়িত্ব তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে ঈশাম।
নীরা এবং নীরার ভিতর আরেকটা প্রান!
শুধু ২ জন না। ৩ জনের অস্তিত্ব।
.
নীরাকে তার বাবা মা নিতে এসেছিল।
নীরার সন্তান যতদিন না হচ্ছে নীরার মা চেয়েছিল নীরাকে তাদের কাছে রাখতে। কিন্তু নীরার শাশুড়ি যেতে দেয় নি।
.
নীরার শাশুড়ির কথা,
আমি ঈশামের মা! নীরারও মা! নীরার যত্নের কোনো ত্রুটি হবে না। আপনি যেমন নীরার যত্ন নিবেন ঠিক তেমনি আমি মা আমিও সেইরকম যত্ন নিব। নীরার যত্নের জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। আমার মেয়ের যত্ন আমিই করব।
নীরার শাশুড়ির কথা শুনে নীরার মায়ের চোখের পানি টপটপ করে পড়ছিল। এমন ও শাশুড়ি হতে পারে?
তারপরও নীরার মা বলল,
কিছুদিনের জন্য নিয়ে যাব।
নীরার শাশুড়ি সম্মতি দিল।
সাথে ঈশামও গেল। কারন নীরাকে ছেড়ে থাকা ঈশামের জন্য ইম্পসিবল।
নীরা বলল,
চল! চল! কয়েকদিনের জন্য ঘরজামাই থাকতে!
এই বলে নীরা তো হেসে কুটি কুটি।
.
দিন যায়, নীরার শরিরের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। নীরার মনে হতে থাকে যেন তার পেটে ১৫ কেজি পাথর বেধে রেখেছে। নড়তে পারে না, বসতে পারে না, ঠিক মত শুতেও পারে না। কিন্তু এত কিছুর পরও একটাই আকাক্ষা! কবে তার কোল জুড়ে আসবে তার সন্তান!
.
নীরার পেটের ভিতর বেবীটা খুব নড়ছে। নীরার এই সময়টায় অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু ঈশামের পরশ নীরার সব কষ্টই যেন নি:শেষ হয়ে যায়।
- এই যে পিচ্চি! মাকে এত কষ্ট দাও কেন? এত লাফালাফি কেন হুম?
ঈশাম মাঝে মাঝেই নীরার পেটে হাত রেখে পিচ্চির সাথে কথা বলে।
জন্ম নেওয়ার আগেই এই অবস্থা, জন্ম নেওয়ার পর এই বাবা সন্তানের যে কি হবে তা ভেবেই নীরার হাসি পাচ্ছিল।
.
নীরা পানি খেতে যাবে। নীরার শাশুড়ির ঘরের দিকে তাকাতেই নীরা দেখল,
ঈশাম তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর মা ছেলের মাথা বুলিয়ে দিচ্ছেন।
ঈশাম আগের থেকে অনেক যত্ন নিতে শুরু করেছে মা বাবার। কারন নীরার প্রেগনেন্সির এই সময়টাতে ঈশাম বুঝতে পেরেছে একটা মা তার সন্তানকে জন্ম দিতে কত কষ্ট স্বীকার করে।
নীরার চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগল।
এমনি বুঝি হয় মা সন্তানের সম্পক।
.
নীরার হঠাত চিতকারে ঈশাম দৌড়ে আসল।
দেখল নীরা মেঝেতে পরে আছে।
.
( চলবে ইনশাআল্লাহ)

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.