(জীবন - মৃত্যু - জীবন পর্ব ২)

(জীবন - মৃত্যু - জীবন পর্ব ২)


কেমন হবে কবরের জীবন?

ঘুম থেকে ওঠার পর স্বপ্নের জগত কে যেমন ঝাপসা মনে হয়, বাস্তব কে মনে হয় আসল সত্য। মৃত্যুর পর আপনার মনে হচ্ছে পুরো জীবনটাই যেন ছিল একটা স্বপ্ন, যা আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় কাটিয়েছিলেন।
- ফেরেশতাদের সাথে অলৌকিক সব অভিজ্ঞতা গুলোর পর আপনি ফিরে এসেছেন আপনার কবরে। আপনাকে মাটি দেয়া হয়ে গেছে।
- আপনি শুনতে পাচ্ছেন আপনার কাছের মানুষেরা দোয়া করছে, জিকির করছে, আপনাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছেনা।
- কিন্তু আপনিও জানেন তারাও জানে, তাদের কে যেতেই হবে। প্রত্যেক মানুষ কে তার ব্যক্তিগত পথ পাড়ি দিতেই হবে।
- কবরস্থান থেকে প্রস্থান করা শেষ মানুষটির পদধ্বনি আপনার কানে পৌছয়। এরপর সব নিশ্চুপ।
.
.
.

একটি মুহূর্ত পার হলো, না সারাদিন পার হয়ে গেলো বোঝা গেলোনা। কারণ এই জগতে সময়ের হিসাব মেলানো কষ্ট।
- হঠাৎ করে আপনি অনুভব করলেন আপনার কবরটা ছোট হয়ে আসছে। মাটি আপনাকে চেপে ধরছে!
- চিৎকার করে ওঠার আগেই মাটি আপনাকে এমনভাবে চেপে ধরলো, আপনার মনে হলো আপনার দেহের প্রতিটি অঙ্গ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে!
- এরপরেই আপনাকে মাটি ছেড়ে দিলো।
- এটা কি কবরের আযাব ছিল?
- আপনি কি তাহলে শাস্তি পাওয়া মানুষদের দলে?
- আপনার মনে পড়লো রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই কথাগুলো।
- তিনি বলেছিলেন, যদি মাটির এই চাপ থেকে কেউ বাঁচতো সে হতো সা'দ ইবন মু'আয (রহঃ)।
- যে সা'দ ইবন মু'আয এর মৃত্যু তে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিলো!
- যে সা'দ ইবন মু'আয এর জানাজায় শরীক হতে সত্তর হাজার ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এসেছিলো!
- সেই সা'দ ইবন মু'আয কেও মাটি চেপে ধরেছিলো!
- কারণ এটাই আল্লাহর হুকুম।
- আমরা মাটি থেকে এসেছি, আবার মাটিতেই মিশে যাবো।
.
.

এরপর আপনাকে উঠিয়ে বসানো হলো। দেখতে ভয়ংকর দুজন ব্যক্তি আপনার সামনে উপস্থিত হলো।
- মুনকার আর নাকীর কাউকে শান্তনা দেয়না। তারা নম্যভাবে কথা বলেনা। তাদের কর্তব্য একটাই, তারা আমাদের পরীক্ষা করবে।
- ওজুহাত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
- তারা আপনাকে দেখে বললো, "মান রব্বুক"? তোমার রব কে?
- তাদের চেহারা দেখে আপনি ভেবেছিলেন, আপনার গলা দিয়ে হয়তো কোনো শব্দই বের হবেনা!
- কিন্তু যেই আল্লাহকে সারাজীবন বিশ্বাস করেছেন, যেই আল্লাহর আদেশ পালন করার সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন,
যেই আল্লাহর অমান্য করার পর তার কাছেই ক্ষমা চেয়ে মাথা নত করেছেন, সেই আল্লাহর পরিচয় জানতে চাওয়ার পর আপনি কি করে চুপ থাকেন!

- আপনার ঠোট আর জিহ্বা যেন আপনার মস্তিষ্কের অপেক্ষা না করেই বলে উঠলো, আমার রব আল্লাহ!
- এরপর তারা প্রশ্ন করলো, "ওয়া মা দ্বীনুক"? তোমার দ্বীন কোনটা?
- আপনি বললেন, আমার দ্বীন ইসলাম।
- অবশেষে তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমার কাছে যাকে পাঠানো হয়েছিলো, তার ব্যাপারে তুমি কি বলো?
- তার নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে আপনার মুখে হাসি ফুটে গেলো!
- আপনি বললেন, তিনি হচ্ছে আল্লাহর বান্দা, তার প্রেরিত রসুল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা এবং তার রসুল।
- সাথে সাথে তারা বলে উঠলো, "সাদাকত" তুমি সত্য বলেছো।
- এবং সাথে সাথে আপনার কবরটা প্রশস্ত হয়ে যেতে থাকে। দেখতে না দেখতেই আপনার কবরটি বিরাট আকৃতি ধারণ করে!
- এরপর আপনার সামনে একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। এটা কি একটা ভিডিও নাকি তার চেয়েও আধুনিক কোনো প্রযুক্তি, তা আপনার জানা নেই। সেটা নিয়ে ভাবারও সুযোগ নেই।
- কারণ আপনি হতভম্ব হয়ে দেখতে পেলেন, সেখানে একটি ভয়ানক জায়গা দেখানো হচ্ছে!!
- যেখানে চারিদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে এবং হিংস্র সব জীব কারো জন্য অপেক্ষা করছে!
- আপনাকে জানানো হলো, এটাই আপনার গন্তব্য হয়ে যেতো। যদি আপনি আল্লাহর অমান্য করতেন, গাফেল হয়ে আপনার জীবন কাটিয়ে দিতেন!
- এরপর অন্যদিকে আরেকটি চিত্র তুলে ধরা হলো।
- এবং এবার আপনি আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেলেন!
- যার দিকে তাকিয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে দেয়া যায়!
- আপনাকে বলা হলো, এটাই হবে আপনার সর্বশেষ গন্তব্যস্থল। এটাই হলো জান্নাতের সেই ঘর, যার জন্য আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যেখানে আপনি শীঘ্রই ফিরে যাবেন।
- এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনার কবরের জীবন শুরু হয়।
- কোনো এক পর্যায়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসবে আপনার আত্মীয়স্বজনেরা। যারা আপনাকে ছেড়ে অনেক আগে পরকালের পথ পাড়ি দিয়েছিলেন।
- একবার ভেবে দেখুন, কতটা আন্তরিক হবে সেই মিলন। যেই মা কে, যেই বাবা কে, যেই নানা-নানী, দাদা-দাদী কে আপনিই কবর দিয়েছিলেন বহু বছর আগে!
- বারযাখের জীবনে এসে তাদের সাথে আপনার সাক্ষাত হবে। তারা দুনিয়ার জীবনের খবর জানতে চাইবে, তারা আপনার সাথে গল্প করবে।
- গল্প করতে করতে আপনার এক বন্ধুর কথা উঠে যায়। তারা বলে, অমুক কেমন আছে?
- আপনি অবাক হয়ে যান। আপনি বলেন, অমুক তো আরো তিন বছর আগেই মারা গেছে।
- কেনো, তোমরা কি তার দেখা পাওনি?
- সবাই চুপ হয়ে যায়।
- সবাই বুঝতে পারে, আপনার সেই বন্ধুটি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেনি। কবরের আযাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি!
.
.

যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারলো না। মৃত্যু থেকে শুরু করে জাহান্নাম পর্যন্ত তার পরিস্থিতি ক্রমাগত ভাবে খারাপ হতে থাকে!
- যখন তাকে আসমান থেকে জমিনে ছুড়ে ফেলা হয়!
- যখন মাটি তাকে হিংস্র ভাবে চেপে ধরে!
- এরপর যখন মুনকার আর নাকীর এসে তাকে উঠিয়ে বসায় আর জিজ্ঞেস করে, মান রব্বুক?
- সে কোনো উত্তর দিতে পারেনা। আমতা আমতা করতে থাকে।
- তাকে বলা হয়, মা দ্বীনুক?
- আবারো সে আমতা আমতা করতে থাকে। কোনো উত্তর দিতে পারেনা!
- তাকে প্রশ্ন করা হয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে। তার ব্যাপারে সে কি জানে?
- সে অনিশ্চিত হয়ে বলে, আমি শুনেছিলাম লোকে এই.. এই বলতো।
- তখন মুনকার আর নাকীর বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো!
- তার মাথায় শক্ত লোহা দিয়ে এতো জোরে আঘাত করা হবে যে, তার চিৎকার শুনতে পাবে আশেপাশে প্রতিটি সৃষ্টি!
- শুধু মানুষ ও জীন ব্যতীত।
- এরপর তাকে জান্নাতের একটি দৃশ্য দেখানো হবে। তাকে বলা হবে, এটাই তার গন্তব্য হতে পারতো। যদি সে আল্লাহর আহবানে সাড়া দিতো।
- তারপর তাকে জাহান্নামের দৃশ্য দেখিয়ে বলা হবে, সে নিজেই এই গন্তব্যটি নিজের জন্য বেছে নিয়েছে!
- জান্নাতে সে কি পেতে পারতো আর জাহান্নামে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা সরাসরি দেখার পর তার মনে এমন অকল্পনীয় অনুতাপ জন্ম নেয় যে, আর কোনো শাস্তি না থাকলেও, শুধু সেই অনুতাপ টাই তার জন্য আযাব হিসেবে অসহনীয় হয়ে পড়তো!!!!!!
.
.

সে গন্তব্য আপনার হয়নি।
- আপনি শুয়ে আছেন আপনার প্রশস্ত কবরে। জান্নাতের আলোয় আলোকিত শুধুমাত্র আপনার রবের অসীম রহমতের কারণে।
- এই সুখময় আবাসে আপনি অপেক্ষা করতে থাকেন সেই দিনটির জন্য। যেদিন সবাইকে একটি ময়দানে একত্রিত করা হবে।
কিন্তু আপাতত একটু বিশ্রাম নেয়া যাক.................

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.