শিকলে বন্দি ভালোবাসা (পর্ব - ১০)

(পর্ব - ১০)
(শেষ পর্ব)

- মেহজাবিন মুন


আজ প্রায় বিশদিন হয়ে গেলো মুমু আরাফের সাথে চা বাগানে চলে এসেছে। কয়েকদিন ফাতিমা আয়েশা থেকে তারাও তাদের স্বামীর বাড়ি চলে গেছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই আরাফ মুমুর সাথে কাটায়, বাকি সময় কাজের মেয়ে ওর দেখাশুনা করে। মুমুর শরীরে উন্নতি হুইলচেয়ার পর্যন্ত এসে আটকে গেছে। আরাফ মুমুর জন্য স্টাডিরুম বানিয়েছে, ওর পছন্দমতো কুরআন, হাদিস, তাফসির, গোয়েন্দা, এডভেঞ্চার, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনীর বই এনে সম্পূর্ণ রুম সাজিয়েছে। যাতে মুমু এসবে ঢুবে থাকে হাসিখুশি থাকে।
কিন্তু কিছুতেই মুমুর মন বসে না, মনটা তো পড়ে রয়েছে সেই মনবাগানের দুইটি মহামূল্যবান ফুলের কাছে। ফুল ছাড়া যে বাগান অসম্পূর্ণ, বড়ই বেমানান, বড়ই ফাঁকা। মানষ যতন করে বাগানে বীজ রোপণ করে। পানি, জৈবসার, রুদ্র, আলো বাতাস পেয়ে বীজ থেকে চারা গজায়, গাছ বড় হয়, সবুজ ডালপালায় ভরে উঠে বাগান। তারপর ফুলে ফসলে ভরে উঠে আঙ্গিনা। তেমনি মুমুও তার মন বাগানে ভালোবাসার বীজ রোপণ করেছিলো, সেটা ফুলে ফলে ভরে যাওয়ার পর হুট করে ভুমিকম্প এসে সব ধ্বংস করে দিয়ে গেলো। এ যেন সে মানতেই পারছে না।
বিকালবেলা ফুল বাগানে হুইলচেয়ারে বসে মুমু এসবই ভাবছিলো। এই পাঁচবছরে বাংলোটা পুরোনো হয়নি। বরং আরও সুন্দর হয়েছে, আরাফ বাগানটাকে আরও সুন্দর আর বড় করেছে। অনেক অনেক জানা অজানা ফুল লাগিয়েছে। সম্পূর্ণ বাংলো এরিয়ায় নানা ধরণের গাছপালা লাগিয়ে সবুজ একখন্ড উপত্যকা বানিয়েছে। ছোট্ট একটা পুকুর কেটে তাতে পদ্মফুল ছেড়েছে। চারিদিকের এত আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রতিটা জায়গা তারই আসার প্রতীক্ষায় ছিলো।
-- আসসালামু আলাইকুম। কি ভাবছো একা বসে বসে? আরাফ সালাম দিয়ে মুমুর সামনে এসে ওর হাত ধরে বসলো।
--- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কিছুনা, ভালো লাগছিলো না তাই বসেছিলাম। চলো ভিতরে চলো।
--- উঁহু, না আজ অফিসে কাজ ছিলোনা তাই ক্লান্ত হইনি আমি। বসি এখানেই কি বলো? নাও চকলেট খাও। আরাফ প্যাকেট থেকে একটা চকলেট খোলে মুমুর মুখে পুরে দিলো। তারপর একটা চেয়ার টেনে এসে বসলো।
-- কি ব্যাপার কিছু বলবে নাকি? মনে হচ্ছে কেমন জানি প্রস্তুতি নিচ্ছো কোনকিছু বলার জন্য?
--- হুমম, কয়েকদিন থেকে বলবো বলবো ভাবছি, বলা হয়ে উঠছে না। তবে আমি যা বলবো মন দিয়ে শুনতে হবে। তার আগে একটা কথার উত্তর দাও, নায়রা আর মুনার জন্য তোমার মন খারাপ?
--- ঠিকই ধরেছো, নায়রার সাথে এতটা বছর ধরে আমার বন্ধুত্ব, আমার কাছেই মুনার জন্ম, বেড়ে ওটা ওরা যেন আমার অস্থিত্ব আমার হৃৎস্পন্দন। আচ্ছা তুমি বলোতো হৃৎস্পন্দন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে কখনও?
-- পারে মুমু, ক্ষেত্রবিশেষে পারে। মানুষের স্পন্দনের সাথে আরও একটা জিনিসও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আর তা হলো আশা। কখনও আশা ছেড়ো না বেঁচে থাকা দুষ্কর হয়ে যাবে। এই যে বাংলোটা দেখছো এর প্রতিটা কোনা আমি নিজ হাতে সাজিয়েছি। তা একদিনে হয়নি পাঁচবছর লেগেছে, বীজ বুনেছি, চারা করেছি এদের আবার যত্নের সাথে বড় করেছি। সাথে মনের আঙ্গিনায়ও প্রতিদিন আশার বীজ বুনেছি তুমি আসবে বলে। হঠাৎ করে হতাশা এসে আমায় গ্রাস করতো, মনে হতো সব ধ্বংশ করে ফেলি, কিন্তু দমে যাইনি। আবারও নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন আশার উদয় হয়েছে। মনে মনে তোমার ভাবনাগুলো কল্পনা করেছি, আর তুমি এসে এসব সবুজ সমারোহ দেখলে কত খুশি হবে এটা ভেবে খুশি হয়েছি। যখনই তোমায় বেশি মনে পড়তো তখনই কাজে লেগে যেতাম। কখনও রাত দুটোয়, কখন তাহাজ্জুদ পড়েই। এমন করেই আমার প্রতিটা বছর কেটেছে। আমি তোমায় আরও বেশি ভালোবেসেছি, আমি এও জানি তুমি আমার থেকে দূরে যাওয়ার একটা কারণ আছেই। বলো না সে কারণ কি?
--- এত ভালোবাসো আমায়? কারণটা তুমি কখনও জিজ্ঞেস করোনা আরাফ, বলতে পারবো না। মুমুর চোখ দিয়ে টপটপ পানি ঝরে পড়ছে।
--- ভালোবাসা মনের খোরাক, শরীর যেমন খাবার ছাড়া বাঁচতে পারেনা তেমনি মনের খোরাক না থাকলে মানুষের জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। এই ভালোবাসায় ও অনেক রকমফের রয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসা, মা-বাবার ভালোবাসা, ভাইবোনের ভালোবাসা, মা সন্তানের, কিংবা বন্ধুত্বের ভালোবাসা। এগুলো পবিত্র এবং সুন্দর বন্ধন। আর এই বন্ধনগুলো ঠিকে থাকে, বেঁচে থাকে বিশ্বাস, ভরসা আর আশার উপর। বিশ্বাস রাখো মুমু একদিন সবকিছুই আল্লাহ ফিরিয়ে দিবেন।
-- একটা আশা তো পূরণ হলো না আমার, তুমি বিয়ে করলে না।
--- কথায় আছেনা ভোগে সুখ নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। তাই ভালোবাসা আর বিয়ে মানেই শারীরিক সুখ নয়। সবাই যদি বুঝতো তাহলে ঘরে ঘরে ঝগড়া, ছাড়াছাড়ি, অবৈধ প্রেম আর জারজ সন্তানের আধিক্য হতো না। ভালোবাসা হচ্ছে দুজন পরস্পরকে বুঝা, মনের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া গুলো ভাগাভাগি করা। একই ছাতের নিচে পরম ভালোবাসায় বসবাস করা, একজন কাঁদলে অপরজন যেন তার জল মুছে দেয়, একজন খুশি হলে অপরজনও যেন খুশি হয়ে যায়। মৃত্যুর পরেও যেন দুজন একসাথে জান্নাতে যাওয়ার আশা রাখে। এটাই প্রকৃত ভালোবাসা, এ ভালোবাসা অসীম। আমি তোমাকে এই অসীম ভালোবাসা দিতে চাই মুমু। তুমি আমি আল্লাহর জন্য একে ওপরকে ভালোবেসে ধৈর্য ধরবো, আল্লাহও আমাদের উপর খুশি হবেন। কারণ এটাই হয়তো আমাদের জন্য নির্ধারিত ছিলো। আল্লাহ যার জন্য যা নির্ধারিত তাকে তার প্রাপ্য দান করেন।
--- আজ তুমি এত কথা কেন বলছো?
-- বলছি এ কারণে তোমার মন খারাপ দেখলে আমার সহ্য হয়না। ঘরে ফিরে তো তোমার কাছেই আসি শান্তিতে কথা বলার জন্য, কিন্তু তুমিই যদি মন খারাপ করে এভাবে থাকো ভালো লাগে। চলো খাওয়া শেষ করি গিয়ে।

পরদিন আরাফ দুপুরে তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরলো।
মুখে খুশির ঝলক। কিনৃতু এসে দেখলো মুমু গোমড়া মুখে বসে আছে।
-- তোমাকে একটা খুশির সংবাদ দিবো। আগে গোমড়ামুখ ঠিক করো।
--- আর এমন করবো না স্যরি। কি খুশির সংবাদ বলো না। কতদিন থেকে এ ঘরে কোন খুশির সংবাদ আসেনি।
--- মহারাণী এখন এ ঘরে শুধু খুশিই থাকবে ইনশাআল্লাহ। ক্ষিদে পেয়েছে জলদি ঘরে চলো। আরাফ হুইল চেয়ার ঠেলে মুমুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো তারপর নিজহাতে টেবিলে খাবার সাজিয়ে মুমুকে খাইয়ে দিতে লাগলো। মুমুও ওর মুখে খাবার তুলে দিলো।
--- জানো মুমু, এটাই ভালোবাসা। আমি এই ভালোবাসা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই। তবে তোমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে খুব শীগ্রই। তুমি চেয়েছিলে না তোমার আমার একটা বাচ্চা হোক। এখন সেটা ও পূরণ হয়ে যাবে।
--- সত্যি বলছো? কিভাবে জলদি বলো প্লিজ।
--- আগে তো খাওয়া শেষ করো, তারপর।
--- না না আগে বলো, এখন না শুনে খাবার খেতে পারবো না।
--- আজ নায়রা ফোন করেছিলো আমাকে। ওর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বর ডিভোর্সি মেয়ে বিয়ে করতে রাজি তবে সন্তানসহ নয়। তাই ওর বাবা মা চিন্তায় পড়ে গেছেন কি করবেন। মুনাও তোমার জন্য প্রচুর কান্নাকাটি করে, কারও কাছে যায়না। নায়রা তাদের বলেছে বিয়েতে রাজি হবে এক শর্তে মুনাকে যদি তোমার কাছে দেওয়া হয়। উনারা তো মুনাকে এখন ঝামেলা মনে করছেনই তাই খুশি মনে রাজি হয়ে গেছেন। আগামীকাল নায়রা মুনাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসবে।
আলহামদুলিল্লাহ বলে মুমু খুশিতে কেঁদে ফেললো। 'আজ আর আমার খাওয়া হবেনা, আমি মুনাকে না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাবোনা।'
আরাফ জানে আপনজন হারানোর বেদনা। তাই সে আর কিছু বললো না, মুমুকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।

পরদিন নায়রা যখন মুনাকে নিয়ে আসলো তখন তাদের খুশি দেখে আরাফও খুশিতে কেঁদে ফেললো। এতদিন পর তাদের মিলন হয়েছে।, তাই সে তাদের একা রেখে রান্নাঘরে চলে গেলো নাস্তা বানাতে।
মুমু আর নায়রা দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলো।
--- আম্মি তুমি কাঁদছো কেন? মামনিকে ছেড়ে আবার চলে যাবে? আমি যাবোনা নানুঅাপু ভালোনা, তোমায় শুধু বকা দেয় আর নামাজ পড়েনা।
-- ছিঃ মামনি এসব বলতে নেই, উনি তোমার বড়, আমাদেরও বড় তাই উনার দোষ ধরতে নেই। আল্লাহ পাপ দেবেন।
--- উনি এত পঁচা কেনো মামনি? তুমি কত্তো ভালো, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথ্যাও যাবোনা। আম্মি তুমিও আর যাবে না।
-- না মুনা, আম্মির কিছু কাজ আছে অনেক দূরে। তাই আম্মিকে যেতে হবে। তুমি তোমার মামনির কাছে থাকতে পারবে না একা একা? মামনি অসুস্থ, মামনির পাশে থাকবে গল্প করবে, পানি এনে দিবে।
--- আমি থাকবো, আমি মামনির কাছে থাকবো। তুমি আমার জন্য অনেকগুলো চকলেট নিয়ে এসো।
আরাফ নাস্তা নিয়ে মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকলো। সে আবার বেরিয়ে যেতে চাইলে নায়রা ডাক দিলো।
-- আরাফ ভাই বাকি সব ব্যবস্থা করেছেন? উকিল কখন আসবে? আব্বুরও তো এসে যাওয়ার কথা।
--- আমি ফোন দিয়েছি। উনারা আসতে আর পাঁচমিনিট লাগবে। ততক্ষণে আপনারা নাস্তা করুন।
--- কিসের উকিল নায়রা? এসব কি বলছো তোমরা?
মুমুর প্রশ্নে নায়রা একবার মুনার দিকে আবার মুমুর দিকে তাকালো। মুনা তারমতো করে খেলছে।
কন্ঠস্বর একটু নিচু করে বললো, বরকে আমি বলেছিলাম আমি বিয়েতে রাজি হবো যদি আপনি বলেন আপনি মুনাকে নিতে চাননা। বর আমার শর্তে রাজি হয়ে যাওয়ায় মুনাকে তোর কাছে নিয়ে আসলাম। কিন্তু এমনি রেখে গেলে আম্মু আবারও কিছু করতে পারে, তাই উকিল এনে একেবারে কোর্টের মাধ্যমেই ওকে তোর কাছে দিতে চাই।
-- তুই কেনো আমার জন্য এমন করছিস নায়রা? ছলছল চোখে মুমু জানতে চাইলো।
--- সখী, এটা আমার ভালোবাসার, বন্ধুত্বের উপহার। সারাজীবন তো তুই শুধু দিয়েই গেলি, আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে তাইনা? আর মুনাও তো তোকেই বেশি চায়। আরে কাঁদছিস কেনো পাগলী? আমি জানি আমার মুনা তোর কাছে অনেক ভালো থাকবে, তুই ওকে ইসলামিক শিক্ষায়, আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবি। আমি এতেই সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।
-- আমি তো তোকে সবসময় আমার পাশে রাখতে চেয়েছিলাম, আমার বোন, আমার বান্ধবী, আমারই ভালোবাসার সতীন করে..
বাহিরে মানুষের কথার আওয়াজ শুনে ওরা কথা বন্ধ করে দিলো।
একসময় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলো। নায়রা মুনাকে ধরে আদর করে মুমুর কাছ থেকে বিদায় নিলো। মুমু নিজেই অবাক হয়ে গেলো, নায়রা এতো শক্ত হলো কি করে? একফোঁটা চোখের পানি ফেললো না। আর নায়রা চলে যাওয়ার সময় মনে মনে ভাবছে, "সন্তান কেন সখী তোর মত বান্ধবীর জন্য আমার জান ও কুরবান করতে রাজি।"
দুদিন পর মুনার অজান্তেই নায়রার বিয়ে হয়ে গেলো। একসময় নায়রা তার নতুন স্বামীর সাথে দেশের বাহিরেও চলে গেলো।

সুখেই চলছিলো মুমুর সংসার, মুমু আর আরাফ মুনাকে পেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, সারাদিন মুনার সাথে খেলা, ওর খাবার, ওর দুষ্টামি দুজনকে যেনো মাতিয়ে রাখে। আরাফ বুঝলো সত্যিই ভালোবাসার বন্ধনকে আরো গাঢ় করার জন্য সন্তান থাকা খুবই জরুরী।
একদিন সকালবেলা...
আরাফ মুমু আর মুনা দুজনকে খাইয়ে অফিসে চলে গেছে। আজ কাজের মেয়েটা আসবে না তাই সব কাজ সেরে আরাফ মুমুকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে মুনাকে খেলনা দিয়ে চলে গেছে। মুমু এখন দুই হাতই নাড়াতে পারে, তাই হুইলচেয়ার নিয়ে একা কিছু কিছু চলতে ফিরতে পারে।
মুনা খেলতে খেলতে রান্নাঘরে চলে গেলো, সেখানে স্টোর রুমে একটা বোতল পেয়ে সেটা নিয়ে খেলতে গিয়ে বোতল ভেঙ্গে মুনার পা অনেক জায়গা কেটে গেলো। এমন এক অবস্থা রক্তে সমস্ত ফ্লোর ভেসে যেতে লাগলো।
-- মুনা, মুনা মামনি তুমি কোথায়? কোন আওয়াজ না পেয়ে সে রান্নাঘরে এসে ঢুকে মুনার এমন অবস্থা দেখে মুমু বাকশক্তিহীন দিশাহারা হয়ে গেলো। মুনা বেহুশ হয়ে পড়ে আছে, আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু।
"নাআআআআ আমার মুনার কিছু হতে পারেনা। ওকে বাঁচাতে হবে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কিন্তু কিন্তু কিভাবে? না আমাকে এভাবে বসে থাকলে চলবে না।
তারপর মুমু কিভাবে কি করলো সে নিজেই বুঝলো না। একঘন্টা পর মুমুর ফোন পেয়ে আরাফ হাসপাতালে গেলো। তখন মুমু মুনাকে রক্ত দিচ্ছিলো। কাকতালীয় ভাবে মুমুর রক্তের গ্রুপের সাথে মুনার গ্রুপ মিলে গেছে।
আরাফ যাওয়ার পর ডাক্তার বললেন আরও কিছুক্ষণ দেরী করলে কি হতো জানা ছিলোনা। ওর পায়ের রগ কেটে গেছে, সময়মতো আনায় ব্লিডিং বেশি হয়নি। নাহলে রক্তক্ষরণেই বাচ্চাটা মারা যেতে পারতো।
--- আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কিন্তু ওকে নিয়ে আসলো কে ডাক্তার?
--- কেন আপনার স্ত্রী নিয়ে এসেছেন। উনি এমন কান্না শুরু করেছেন যে আমাদের সাথে সাথে ওটিতে নিতে হয়েছে।
--- আমার স্ত্রী..! আরাফের অবাক হয়ে প্রশ্ন করা দেখে ডাক্তারও অবাক হয়ে গেলেন। উনি আপনার স্ত্রী না?
দুজন দরজার বাহিরে কথা বলছিলেন ভিতরে ডাক্তার যখন আঙ্গুল নির্দেশ করলেন তখন দেখলো মুমু উঠে হেঁটে মুনার বেডে যাচ্ছে।
--- আশ্চর্য! এটা কি করে সম্ভব? এ আমি কি দেখছি?
মুমু তুমি হাঁটতে পারছো?
মুমু আারাফকে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসলো।
-- আলহামদুলিল্লাহ! ওকে বাঁচানোর জন্য কখন হুইলচেয়ার থেকে উঠে হাসপাতাল এসেছি বলতে পারবোনা। পরে যখন দেখলাম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমি নিজেই অবাক হয়ে গেছি।
--- হ্যা এটাই মায়ের ভালোবাসা, মা তার সন্তানের জন্য নিজের জীবন ও বাজি রাখতে পারে। আপনাদের সন্তান খুব ভাগ্যবান যে আপনাদের মতো বাবা মা পেয়েছে।
--- আমাদের সন্তান..! হ্যা আমাদেরই তো তাইনা মুমু?
--- হুম্ম আমাদের সন্তান, ও শুধু আমাদের মুনা। চলো ওর কাছে যাই।
দুজন হাসিমুখে হাত ধরে মুনার বেডের দিকে এগিয়ে গেলো।
আজ যেন তাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ হয়েছে, শিকল মুক্ত হয়ে ভালোবাসার পাখিটি আজ এতবছর পর ডানা মেলে উড়ে চলেছে ভালোবাসার রাজ্যে। আর সেই রাজ্যের বাসিন্দা শুধু আরাফ, মুমু আর মুনা।
.
.
সমাপ্ত




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.