শিকলে বন্দি ভালোবাসা (পর্ব - ৭, ৮, ৯)

(৭ম পর্ব)

- মেহজাবিন মুন

জানালার পাশের সিটে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে নায়রা। বাস ছুটে চলেছে তার গন্তব্যের পথে। কত মানুষ হয়তো কত আশা নিয়ে তাদের গন্তব্যে ছুটে চলে। সবাই কি তাদের গন্তব্য পায়? চাইলেই সব আশা পূর্ণ হয়না। এটাই মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। কষ্ট বা বেদনা নয় নায়রা এসব ভাবে আর আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাস আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়।
"একমাত্র কাফির ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়না।"
(সূরা ইউসুফ: ৮৭)
এই আয়াতটিই তাকে বারবার আশাবাদী করে তুলে, আল্লাহর রহমতের প্রতি আরও বেশি ঝু্ঁকে পড়ে। এখন তো সে সুখের সাগরে ভাসছে। এখন সে একা নয় অন্য একজন তার সাথে আছে। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সেও শ্বাস ফেলছে। জীবন্ত একটা অংশ তার শরীরে বাড়ছে। এ যেন তার অন্যরকম একটা পাওয়া। একটার পর একটা স্টপেজ আসে আর মানুষ নেমে যায়, নায়রা গভীর মনোযোগ নিয়ে এসব মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখছিলো।
--- মা, এই যে হাত মোজা, পা মোজা, এত ঢোলা বোরকা আর চোখ-মুখ ঢেকে রেখেছো তোমার শ্বাস বন্ধ হয়না?
পাশের সিটে বসা মহিলার কথায় সে চমকে উঠলো। এতক্ষণ উনাকে খেয়ালই করেনি, এখন ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ক্রিম কালারের একটা শাড়ি পরে আছেন তিনি, সাথে ম্যাচ করা থ্রী কোয়ার্টার ব্লাউজ পরেছেন। মাথায় নামে মাত্র হিজাব বাঁধা, চোখে চশমা, মধ্যবয়সী একজন মানুষ।
হাতে ফোন নিয়ে ফেইসবুকিং করছেন, এই জমানার আধুনিক একজন মধ্যবয়সী মহিলা।
--- না আন্টি, শ্বাস বন্ধের চিন্তায় কি পর্দা করা ছেড়ে দেবো? এটা যে কতটা প্রশান্তির আর সম্মানের যে পর্দা করে সে জানে।
--- আর এরকম পর্দা না করলে কি হয়? মনে হচ্ছে গায়ে কাপড়ের বোঝা নিয়ে চলতেছো।
--- যারা পরেনা তাদের মনে হতেই পারে। পর্দা ফরজ এবং আবশ্যিক বিষয়, এটা না করলে কয়েকটা ক্ষতি হবে, ১. আল্লাহর হুকুম না মানার জন্য জাহান্নামের শাস্তি পেতে হবে।
২.বাবা ভাই স্বামীকে দাইয়্যুস বানিয়ে ফেলবো।
৩.আমার নিজেরই নিরাপত্তা সংকটে পড়বে, ছেলেরা আমাকে খারাপ নজরে দেখবে। আরও অনেক সমস্যাী সম্মুখীন হতে হবে। তাই সবকিছুর সমাধানই এই পর্দা।
-- এটা অতিরিক্ত হয়ে গেলো না? মেয়েরা একেবারে কাপড়ের সিন্ধুকের ভিতর ঢুকে যাবে আর সুবিধা ভোগ করবে পুরুষ? না করলেও সুযোগ নিবে পুরুষ? আর এই যে আমি কাপড় পরেছি এটা কি পর্দা না?
--- "আল্লাহ কোনো ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের চাইতে বেশি বোঝা চাপিয়ে দেন না" (সূরা বাক্বারা:২৮৬)
এটা হচ্ছে কোরআনের আয়াত আন্টি। আমি অসুস্থ, ক্লান্ত, তাই কিছু বলতে পারছিনা। তবে কিছু কথা না বললেই হয়না..
নায়রা কিছু বলার আগে একটু থেমে ঠিক করে নিচ্ছিলো কি বলবে। তখনই বাস তার স্টপেজে এসে থামলো। কি আর করা কিছু বলতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সে নেমে গেলো। অদূরেই মুমু দাঁড়ানো ছিলো। ওর কাছে যেতেই দুজন দুজনের হাত শক্ত করে ধরলো। এ যেন পরম বিশ্বাস আর ভরসার হাত, দুজনের জন্য পরম নির্ভরতার আশ্রয়। পাবলিক প্লেস না থাকলে এতক্ষণে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো দুজন। দুজনেরই চোখের কোনে পানি জমে উঠেছে। একটা রিক্সা ডেকে মুমু আর নায়রা উঠে পড়লো।
দুইরুমের ছোট্ট একটা বাসায় মুমু একা থাকে, এখন এটাই তার ছোট্ট দুনিয়া।
দুজন বাসায় পৌছে প্রথমে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ কাঁদলো। এটা এতদিন পর দুই প্রাণের বান্ধবীর মিলনের কান্না। দুজনের সব দুঃখ, কষ্ট ধুয়েমুছে নিয়ে গেলো চোখের পানিগুলো। খাওয়াদাওয়ার পর দুজনই দুজনের জীবনে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা খুলে বললো। মুমু নায়রার মা হবার কথা শুনে খুশিতে আবারও কেঁদে ফেললো। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানানোর পর জিজ্ঞেস করলো,
--- ফারদিন ভাইকে জানিয়েছিস নাকি? উনার তো জানা উচিত, যেহেতু উনারও সন্তান।
--- নাহ্, যে আমার জীবন থেকে চলে যেতে চাইছে তাকে যেতে দেওয়াই উচিত। ও তো চায় আমি যেন আর যোগাযোগ না করি।
---তারপরও দায়িত্ব বলে একটা কথা আছে নায়রা।
--- এই বাচ্চা একান্তই আমার, আর ও সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে কি মুমু সবার জীবনে সব আশা পূর্ণ হয়না। আমি আমার সকল আশা, স্বপ্ন আমার বাচ্চাটার জন্য জমিয়ে রাখতে চাই। ওর সাথে ডিভোর্স টা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাক এটাই চাই। আর ওর পরিবারও চায়না আমি ফারদিনের বউ হয়ে থাকি।
--- কিন্তু নায়রা জানিস তো ডিভোর্স এখন আর হবেনা। সন্তান ভুমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সূরা তালাক্ব পড়িসনি? সেখানে তো দেওয়া আছে।
--- এতকিছু হয়ে গেলো যে মনেই ছিলো না। আচ্ছা ইদ্দত সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলতো। জানিস তো আমি ইসলামের বিষয়গুলো এখনও শিখছি। আর তুই ছাড়া সব সম্ভবও না।
--- হুম্ম, স্বামী হতে স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর একটি নির্দিষ্ট সময়কাল যাবত স্ত্রীর নিজেকে অপেক্ষা করিয়ে রাখার সময়টাই ইদ্দত। এটি এক ধরণের ইবাদাত। ইদ্দত দুইধরণের হয়, একটি তালাক্বের ইদ্দত ও ওপরটি বিধবাদের ইদ্দত। যখন কোন স্বামী স্ত্রীর মাঝে তালাক্ব হয়ে যায়, তখন স্ত্রীকে তিনমাস তেরোদিন ইদ্দত পালন করতে হয়। তখন সে অন্যত্র বিয়ে করতে পারেনা, তিনমাস তেরোদিন পার হবার পর সে স্বাধীন। আর বিধবাদের ইদ্দত চারমাস দশদিন, বিধবা গর্ভবতী থাকলে সন্তান ভুমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালনের সময় স্ত্রীকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
--- আর বিধবা নয় এমন গর্ভবতীদের জন্য?
--- সূরা তালাক্বের চার নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে দেওয়া আছে
"তোমাদের যে সব স্ত্রীগণ মাসিক ঋতু আসার বয়স অতিক্রম করেছে তাদের (‘ইদ্দাতের) ব্যাপারে যদি তোমাদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের ‘ইদ্দাতকাল তিন মাস, আর যারা (অল্প বয়স্কা হওয়ার কারণে) এখনও ঋতুবতী হয়নি (এ নিয়ম) তাদের জন্যও। আর গর্ভবতী স্ত্রীদের ‘ইদ্দাতকাল তাদের সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।"
(সূরা আত-তালাক্ব: আয়াত-৪)
---ছয় নাম্বার আয়াতে আরও ডিটেইলস দেওয়া আছে। নায়রা কুরআনের তাফসির খুলে দেখে বললো।
--সে জন্যই তোর কাছে একটা পরামর্শের জন্য এসেছি। তার আগে বল যে মানুষটা তোকে এত ভালবাসে, যে ভালোবাসার জন্য সে মিথ্যা বলতেও দ্বিধা করেনি তাকে ছেড়ে আসতে তোর অন্তর কাঁপলো না?
--- তার ভালোবাসার প্রতিদান দিতেই তো অন্তরে পাথর বেঁধেছি। তারও তো একটা আশা, স্বপ্ন আছে সুন্দর একটা জীবনের, একটা বাচ্চার, একটা ভালোবাসার সংসারের। শুধু মুখের ভালোবাসায় কি সব হয় নায়রা? একজন পূর্ণ বয়স্ক যুবক বিয়ে করেও তার স্ত্রীকে একটি দিনের জন্যও কাছে পাবেনা? বিয়ের আরেক নামই তো স্বামী স্ত্রীর শারিরীক, মানসিক মিলন। একটা রেখে আরেকটা হয়না। আর আমিই বোকা বুঝতে একটু দেরি হয়ে গেলো আরকি।
--- কি বুঝতে দেরি হলো?
--- ওর যদি এইডস হতো তাহলে বিয়ের প্রথম রাতে কি ও চেষ্টা করতো? কখনও করতো না। যখন বুঝলো আমি পুরোপুরি অক্ষম তখন আমি চলে যাওয়ার ভয়ে একটা কঠিন রোগের গল্প ফাঁদলো। যেটার জন্য ওকে কখনও আমার কাছে আসতে হবেনা, আমিও মানসিক শান্তি পাবো। কিন্তু তা তো হয়না নায়রা।
--- তুই পাশে থেকেও উনাকে আরেকটা বিয়ে করাতে পারতি। ইসলামে তো এটা জায়েজ। আমিও মনে মনে ফারদিনের জন্য এটা ভেবে রেখেছিলাম। ও আমাকে সেই সুযোগটাও দিলো না।
--- আমি পাশে থাকলে ও সেটা করবে না। এমনকি আমিও তা সহ্য করতে পারবো না। পরিবারে যে কারও পক্ষ থেকে অশান্তি নেমে আসবে। তাই নীরবে চলে এসেছি, ওকে কিছু শর্ত দিয়ে একটা চিঠি লিখে ঠিকানা দিয়ে এসেছিলাম। হয়তো আমার শর্তগুলো পছন্দ হয়নি, তাই ও আমাকে নিতেও আসেনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এভাবেই জীবন কাটিয়ে দেবো। এখন তোর কাজগুলো বল, কি জন্য এসেছিস?
--- আমি চাই ফারদিন যেন কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। তাই আমার ব্যাংক একাউন্টটা ক্লোজ করে দেবো, যাতে আর টাকা পাঠাতে না পারে। ওর কেনা বাড়িটা আমি ওর বোনদের নামে লিখে দিয়ে তোর কাছে চলে আসবো কোন একটা স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা নেবো। দুজনে মিলে আমার অনাগত সন্তানকে মানুষ করবো।
মুমু মনে মনে সবচেয়ে বেশি খুশি হলেও মুখে বললো,
--- আন্টি তো মানবেন না এখানে আসতে। উনাদের রেখে কিভাবে আসবি? আর বাড়ি কেন লিখে দিবি? তোর কথা বাদ দিলাম, সন্তানের কি প্রয়োজন না?
--- আমি আমার মুহরানা হিসেবে ব্যাংক থেকে টাকাগুলো তুলে নেবো। সেগুলোই আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। আর ওই বাড়িতে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না, কারণ এই বাড়ির জন্য ফারদিনের বোনেরা আমার সাথে ভালোভাবে কথাও বলেনা। কারও মনে কষ্ট দিয়ে আমি কিছু হাসিল করতে চাইনা।
মুমু সন্তুষ্টমনে নায়রার হাত ধরে বললো এজন্যই তোকে বান্ধবী বলতে আমার গর্ব হয়। কোনমানুষ তোর মতো এতটা আত্মত্যাগী হয়না। তা কবে আসছিস আমার তো তর সইছে না।
--- সব মিলিয়ে পনেরো দিন তো লাগবেই, এর ভিতরে তুই আমার জন্য চাকরি দেখ। অবশ্যই পর্দার ব্যবস্থা এবং হালাল থাকতে হবে। তোর কলেজে কি পর্দা মেইনটেইন করতে পারিস?
--- হ্যা গার্লস স্কুল তাই ক্লাসে সমস্যা হয়না। স্যারেরাও আমি আসার পর সব মহিলাদের জন্য আলাদা অফিসরুম করে দিয়েছেন।

কিছুদিন পরই সবকিছু গুছিয়ে নায়রা চলে আসলো বান্ধবীর কাছে, আর নায়রার মা চলে গেলেন লন্ডনে স্বামীর কাছে।
পাঁচবছর পর..
দুজনের সাথে তিনজন মিলে খুব সুখেই দিন চলছে। ছোট্ট রাজকুমারী মুনাকে নিয়েই এখন তাদের দিন কাটে। দুই বান্ধবী তাদের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ওর নাম রেখেছে মুনা। মুমু এখন স্কুল থেকে কলেজে চাকরি নিয়েছে।
একদিন রাতে মুমু খুব বেশি বুকে ব্যথা অনুভব করলো, কিন্তু নায়রাকে কিছু বললো না পরদিনও কলেজে ক্লাস করলো বুকেব্যাথা নিয়ে। বিকালবেলা যখন বাসায় ফিরলো তখন আর দাঁড়াতেও পারছেনা।
---মামনি তোমার কি হয়েছে? তোমাকে কেউ মেরেছে? আমি তোমার খিমার খুলে দেই? মুনা দৌড়ে এসে মুমুকে জিজ্ঞেস করলো। সে সবসময় মুমুর সাথেই বেশি সময় কাটায়।
--- না মামনি লাগবে না, একটু ক্লান্ত আমি। তোমার আম্মুকে বলো এক গ্লাস পানি এনে দিতে।
--- আচ্ছা এক্ষুনি বলছি।
মুনা গিয়ে নায়রাকে বলার পর নায়রা ওর অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। তাড়াতাড়ি পানি খাইয়ে, গায়ের বোরকা খুলে দিলো। তারপর ডাক্তারকে ফোন করতে চাইলে মুমু না করে দিলো।
কিন্ত রাতের বেলা মুমুর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলো। বুকে ব্যথার সাথে সাথে সারা শরীরে শিরশির করতে লাগলো। নায়রা উপায় না দেখে সকাল হতেই জোর করে মুমুকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে গেলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে বসা মাত্রই মুমু জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো। ডাক্তারের পরামর্শে তাড়াতাড়ি কাছের একটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। ডাক্তাররা চেকআপ করে জানিয়ে দিলেন মুমু স্ট্রোক করেছে। এরচেয়েও খারাপ কিছু হতে পারতো, তাড়াতাড়ি নিয়ে আসায় রক্ষা পেয়েছে। বামপাশে একটু বেশি এফেক্ট করেছে তাই কি হবে বলা যাচ্ছেনা।
জ্ঞান ফেরার পর মুমু ঠিকমতো কথা বলতে পারলো,। এতক্ষণে ওর কথা শুনে মুনা কান্না থামালো আর নায়রা সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ওর যেন আজ মুমুর কোলে না গেলে হবেইনা। বেডে উঠে মামনি মামনি বলে মুমুর বুকের উপর শুয়ে পড়লো মুনা, তখন মুমু মুনাকে দুহাত দিয়ে ধরতে গিয়ে আবিস্কার করলো তার বামহাত নড়ছে না, বাম পাও না। এমনকি পুরো বামপাশ অবশ হয়ে গেছে। ও মনে হয় জীবনে এতবড় শক খায়নি এখন নিজের অবস্থা দেখে যতটা শকড হলো। নায়রাও অবাক হয়ে মুমুর দিকে চেয়ে রয়েছে। এটা যে বাস্তবে ঘটেছে নায়রা বিশ্বাসই করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে সে একটা দুঃস্বপ্ন দেখছে, কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙ্গলেই দুঃস্বপ্নটা চলে যাবে। তারা আবার আগের মতো এঘর থেকে ওঘরে লুকোচুরি খেলবে, দুষ্টামী করবে। একসাথে নামাজ পড়বে, মুনাকে কোলে নিয়ে একজন হেঁটে হেঁটে গল্প শুনাবে আর অন্যজন খাইয়ে দেবে। কিন্তু তা যে হবার নয়, এটা যে কঠিন বাস্তব। আর বাস্তবতাকে কখনও বদলানো যায়না। মুনার কান্নায় নায়রা ভাবনা থেকে ফিরলো।
--- মামনি তুমি আমাকে ধরছোনা কেন? আমাকে কোলে নাওনা কেন? ও মামনি উঠো না বাসায় যাবো। এখানে ওষুধের গন্ধ।
--- মুনা, মামনি অসুস্থ। ওকে বিরক্ত করোনা। মা, আমার কাছে আসো, আমি তোমাকে কোলে নেবো।
--- না না না, আম্মি তুমি মামনিকে বলো উঠে আমাকে কোলে নিতে। আমি মামনির কোলে যাবো। ওর কান্নায় মুমুও হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলো। এরকম হবে সে কল্পনাও করেনি। না তার কাঁদলে হবেনা নিজেকে শক্ত করতে হবে, নাহলে নায়রা একেবারে ভেঙ্গে পড়বে। আল্লাহ তো কাউকে সাধ্যাতীত কোন বুঝা চাপিয়ে দেন না। হয়তো এতেই বড় কোন কল্যান নিহিত। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুমু নায়রাকে বললো, নায়রা বাড়ি যা, সকাল থেকে তো কিছুই খাসনি, মুনাকে নিয়ে কিছু খাওয়া। নিজেও রান্না করে খেয়ে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসিস। জানিস তো বাহিরের খাবার আমি একদম খেতে পারিনা।
--- নায়রা চোখের পানি মুছে বললো তুই একা থাকবি কিভাবে?
--- আরেহ পাগলী, হাসপাতালে কি ডাক্তার নার্সের অভাব? তুই বাসায় যাতো।
নায়রা কি ভেবে একজন নার্সকে সার্বক্ষণিক পাহারায় রেখে। মুনাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।
আজ পাঁচবছর পর মোবাইলের কনটাক্ট লিস্ট চেক করে একটা নাম্বার ডায়াল করলো।। কিছু কাজ যে বাকি আছে, অনেক আগেই করা উচিত ছিলো কিন্তু করা হয়নি।
--- আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন? একটা কথা বলার ছিলো।

To be continue in sha Allah





(৮ম পর্ব)

- মেহজাবিন মুন।
--- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
আপনাকে তো চিনলাম না কে বলছেন আপনি?
--- আগে বলুন তো আপনি কি ওই গিফট টা খুলে দেখেছিলেন?
--- কোন গিফট আর আপনি কে বলছেন?
--- আপনি মুমুর দেওয়া গিফটটা খুলে না দেখলে এক্ষুনি দেখুন আর আপনার জীবনে এখনও কেউ না আসলে ওই ঠিকানায় চলে আসুন। মুমুর অবস্থা খুব খারাপ।
--- কি হয়েছে আমার মুমুর? আপনি কে? হ্যালো, হ্যা-হ্যালো..
আরাফ বুঝতে পারলোনা কে ফোন দিলো। কিন্তু সে নাম্বার ডায়াল না করে তাড়াতাড়ি গিয়ে গিফট বক্স খুললো। সেখানে একটা চিরকুট লেখা..
"চলে যেতে বাধ্য হলাম তোমার জন্য।
কারণ আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না। দুইটা শর্ত মানলে নিচের ঠিকানায় চলে এসো।
প্রথম শর্ত- তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করবে। আমরা দুই বউ একসাথেই থাকবো। তুমি কাউকে কারও চাইতে আলাদা করে দেখতে পারবে না।
দ্বিতীয় শর্ত- আমাকে চাকরি করতে দিবে।

ঠিকানা.. (....)"
আরাফ চিরকুট পড়ে কেঁদে ফেললো। নিজের চুল এখন ছিড়তে ইচ্ছে করছে। এতদিন থেকে তার মুমু তার জন্য অপেক্ষা করছে, মনে করেছে ইচ্ছা করেই সে যায়নি। অথচ ঘরেই মুমুর ঠিকানা রেখে সে তাকে খুঁজতে খুঁজতে রাতদিন সব এক করে ফেলছে। সে কিভাবে বুঝাবে মুমু ছাড়া তার জীবন কতটা শূন্য, কতটা অসহায়। সে কিভাবে মুমুকে রেখে বিয়ে করে জীবনে সুখ পাবে? কিন্তু না, এখন মুমুকে পাওয়ার জন্য সে সবকিছু করতে রাজি। আগে মুমুকে দেখবে তারপর ওকে বুঝিয়ে বলে দেবে বিয়ে করা সম্ভব না। অন্য কাউকে সে ভালোবাসতেই পারবেনা। হক্ব আদায় করতে পারবে না, কারণ মুমুই যে তার সব।
জানালার পাশেই মুমুর কেবিন। সকালের মৃদুমন্দ বাতাস জানালা দিয়ে এসে তার গায়ে লাগছে। আকাশে সোনালী রোদ, রোদ্রোজ্জল প্রকৃতি তার কাছে সবসময় ভালো লাগে। সকালের সূর্যটা যেমন নতুন দিনের বারতা নিয়ে আশে তেমনি তার মনেও একটা আশা প্রতিদিন উদয় হয়। হয়তো আজ তার আরাফ তাকে নিতে আসবে। কিন্তু সন্ধ্যার অস্তাচলের মতো প্রতি দিনকার আশা বিলীন হয়ে যায়। ডাক্তার উঠতে মানা করে দিয়েছেন তাই সে নায়রার সাহায্যে তায়াম্মুম করে ইশারায় নামাজ পড়েছে। এখন মোবাইল ফোনে তিলাওয়াত শুনছে। আজ কেন জানি আরাফের কথা খুব মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে ভীষণ বড় একটা ভুল করে ফেলেছে সে। তার এত অভিমান করা ঠিক হয়নি, ঠিক হয়নি এভাবে ওকে একা ফেলে চলে আসা। আজ এই একাকিত্বে সে বুঝতে পারছে আরাফকে তার কতটা প্রয়োজন।
জীবনের এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে সে, চাইলেই আর পিছন ফেরা যাবেনা। হয়তো এই অভিমানেই আরাফ তাকে নিতে আসেনি। কিন্তু আজ কেন সে এসব ভাবছে? কেন এসব ভুলে ভরা অতীত স্মরণ করছে? বাহিরে অনেক বেলিফুল ফুটেছে, কয়েকটা গোলাপ ঝাড়েও গোলাপ ফুল ফুঠেছে। সুগন্ধে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি, এই গোলাপ ফুল তার অনেক প্রিয়। মুমুর নাকে এসে লাগছে বেলিফুলেরও সুভাস, প্রায়দিন আরাফ তার খোঁপায় বেলিফুল গুঁজে দিতো। মুমু জানালার দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলো। তখনই মুনা এসে ওর পাশে বসলো।
--- মামনি তুমি এখনও ঘুম থেকে উঠোনি?
--- আসসালামু আলাইকুম, মুনা মামনি বলেছি না এসেই প্রথমে সালাম দিতে হয়? এখন সালামের জবাব দাও। মুনা একটু লজ্জা পেয়ে গেলো, তারপর সালাম দিয়ে বললো..
--উঠো না মামনি, দেখো আঙ্কেল এসেছেন। তোমাকে দেখতে, আঙ্কেল কত্ত ভালো আমাকে এত্তগুলা চকলেট দিছেন।
--- আঙ্কেল কে? নায়রা কোথায়? মুমু দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
আরাফ দরজায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেও যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, আজ যেন দুজন শুধু চোখের ভাষায় কথা বলবে। আরাফের কুঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো, সারারাত জেগে থাকায় চোখদুটো লাল হয়ে আছে, চোখের নিচে কালো দাগ। মুখের মধ্যে হালকা বলিরেখার দাগ পড়েছে। পাঞ্জাবি পায়জামা পরেই এসেছে, অনেক বয়স্ক লাগছে আরাফকে, মনে হচ্ছে হুট করে বয়স দ্বিগুন হয়ে গেছে তার।

--- মামনি আসো, তোমার মামনি এখন খাবার খাবে। মামনিকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।
--- আম্মি মামনিকে নিকাব পরাও, আঙ্কেল তো দেখে ফেলছেন। আল্লাহ পাপ দেবেন যে!
--- মামনি উনি দেখলে আল্লাহ পাপ দেবেন না। চলো আমরা যাই এখান থেকে।
--- তাহলে তুমি কেন নেকাব করছো? আমি মামনিকে রেখে যাবো না।
--- চলো তোমায় বুঝিয়ে বলছি, আইসক্রিম খাবেনা? চলো তোমায় আইসক্রিম খাওয়াবো।
---সত্যি?! তাহলে চলো..!
ওরা চলে যাওয়ার পর আরাফ কেবিনের দরজা লাগিয়ে মুমুর পাশে এসে বসলো। মুমুর হাত শক্ত করে ধরলো সে,দু ফোঁটা অশ্রু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এটা কি ঠিক হলো মুমু? আমি যতবড় ভুল করি আমাকে তুমি ইচ্ছামতো বকা দিতে, শাস্তি দিতে পাশে থেকে। এভাবে একা আমায় ছেড়ে চলে আসলে...
মুমু ওর মুখে হাতচাপা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো। আরাফ ওকে তুলে বিছানায় বালিশ দিয়ে বসালো। তারপর ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
--- এখন আমি এসে গেছি না? আর কাঁদতে হবে না, আর কোথাও যেতে দেবোনা তোমায়। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
--- তাহলে আগে বলো মাফ করে দিয়েছো আমায়। তুমি কি বিয়ে করেছো?
--- আমি তো রাগই করিনি, মাফ করবো কি তোমায়। আর পাগল হয়েছো নাকি, কিসের বিয়ে?
--- না আরাফ এ হয়না, তাহলে তুমি চলে যাও আমার কাছ থেকে আমাকে আমার উপর ছেড়ে দাও।
--- এতদিন পর তোমাকে খুঁজে পেয়েছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো নয়। আর এই অবস্থায় তো কখনও নয়।
--- এতদিন পর? আমার দেওয়া চিঠি তুমি পড়নি?
--- না মুমু, তোমাকে খুঁজে না পাওয়ায় আমি আর গিফট বক্স খুলিনি। ভাবলাম তুমি যেটাই দাও, তোমার শেষ স্মৃতি আমি আজীবন এভাবেই রেখে দিবো। গতকাল বিকালে নায়রা ফোন দিয়ে গিফটের কথা বলায় খুলে চিঠি পড়ে তো আমি অবাক। এতদিন কেন খুললাম না সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। নাহলে আরও অনেক আগে আমার প্রিয়তমাকে খুঁজে পেতাম। রাতের বাসেই চলে এসেছি। সকালবেলা বাসায় পৌছার পর নায়রা আমাকে সবকিছু বলে এখানে নিয়ে আসলো।
--- তুমি শর্তে রাজি না থাকলে এখানে এসেছো কেন?
--- তুমি বুঝতে পারছো না মুমু, সবমেয়ে তোমার মতো মহান নয়। কেউ ঘরে প্রথম বউ থাকা অবস্থায় বিয়ে করবে না। তোমাকেও দেখতে পারবেনা। এখন তো আরও আগে তোমাকে টর্চার করবে, হয়তো তোমার বিরুদ্ধে আমার কান ভারী করবে। আমি এসব সহ্য করতে পারবো না মুমু, প্লিজ আমায় চাপ দিওনা।
আরাফ এমনভাবে কথাগুলো বললো যে মুমু আর কিছু বলতে পারলো না সেও শক্ত করে আরাফের হাত ধরলো।
--- কতরাত ঘুমাওনি তুমি? এরকম কেন হয়েছো?
--- আমার টিয়াপাখি আমার কাছে নাই ঘুম কি হয়? একাকী কতরাত যে নির্ঘুম কাটিয়েছি। আল্লাহর কাছে তোমার সালামতি চেয়ে কত দু'আ করেছি একমাত্র তিনিই জানেন।
তখনই দরজায় নক হলো।
---ভিতরে আসতে পারি কি?
--- ওহ্ নায়রা, কি যে পাগলামি করিস আয়না ভিতরে।
নায়রা সবার জন্য আইসক্রিম আর ফাস্টফুড নিয়ে কেবিনে ঢুকলো। তারপর মুমুর ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস চেক করে বললো, সব নরমাল আছে, আমি পাহারা দিচ্ছি ডাক্তার আসছে কিনা ততক্ষণে তুই আইসক্রিম খেয়ে নে। ভাইয়া আপনিও নিন।
নায়রা আবারও মুনাকে নিয়ে দরজার বাহিরে আসলে মুমু কতক্ষণ ওর যাওয়ার পথে চেয়ে ভাবলো। তারপর আইসক্রিম খেতে খেতে আরাফকে বললো, -- আমার এতদিন কেন এটা মনে হয়নি ভেবে অবাক হচ্ছি।
--- কি মনে হয়নি?
--- তুমি যদি নায়রাকে বিয়ে করো কেমন হবে?
--- পাগল হয়েছো? কি সব আবোলতাবোল বকছো মুমু? এবার কিন্তু আমার রাগ উঠে যাচ্ছে।
--- আমি সত্যি বলছি আরাফ, দেখো ও আমার জিগরি দোস্ত, নায়রা কখনও আমার সাথে উলটাপালটা কিছু করা তো দূর ভাববেও না। তাছাড়া ওর বেবিও আমার বেবি। মুনাকে ছাড়া আমি একমুহূর্তও থাকতে পারবো না। আমরা বেবিও পেলাম,নায়রা আমাদের দুজনের কাছে থাকলো বাধাহীন, আমাদের ভালোবাসাও অটুট থাকলো। ও তো স্বাভাবিক একজন মহিলা, ওর রোগ ও কমে গেছে। এভাবে ওর জীবন তো নষ্ট হতে দেওয়া যায়না, তোমারও না।
--- কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তো মেনে নিতে পারবো না মুমু। তুমি আমায় এতবড় শাস্তি দিওনা। আমি তোমায় নিয়ে থাকতে চাই, আমাদের আগের ভালোবাসাময় খুনসুটি আর পাগলামি নিয়েই আমি সন্তুষ্ট।
--- এভাবে না করো নাগো। মন থেকে চাইলেই সব সম্ভব। চিন্তা করো এখন সংসারে আমাদের আরও দুজন ভালোবাসার মানুষ এড হবে। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটা ঘর হয়ে যাবে আমাদের।
--- নায়রা কি রাজি হবে? মুনা কি ভাববে?
--- মুনা এখনও বাচ্চা, ওকে যা বলবো বুঝবে। আর নায়রাকে রাজি করার দায়িত্ব আমার।
অবশেষে আরাফ হাল ছেড়ে দিয়ে রাজি হয়ে গেলো। আর মুমু আলহামদুলিল্লাহ! বলে আইসক্রিম সহ ডানহাত দিয়ে আরাফকে জড়িয়ে ধরলো।
--- নায়রা একটু ভিতরে আসবি? কথা আছে তোর সাথে।
---তোর আইসক্রিম খাওয়া শেষ? দরজার ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে নায়রা জিজ্ঞেস করলো।
--- আর আইসক্রিম খাচ্ছি না, তুই আয় এদিকে।
নায়রা রুমে আসতেই মুমু আরাফকে বললো মুনাকে নিয়ে বাহিরে চলে যেতে। তারপর নায়রাকে পাশে বসিয়ে মুমু ওর দিকে তাকালো। আর নায়রা মুমুর মুখে থাকা আইসক্রিম মুছে দিতে লাগলো।
--- নায়রা তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস?
--- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন রে? আমি তো তোকে ভালোই বাসিনা, হা হা হা!
--- নায়রা ফান না সত্যি বল। আমি শুনতে চাই, কতটা ভালোবাসিস?
--- যতটা ভালোবাসলে তোকে কখনও কোন অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করতে পারিনা, যতটা ভালোবাসলে আমার প্রতিটা দু'আয় তোর আমার জান্নাতে এক জায়গায় থাকার দু'আ করি। যতটা ভালোবাসলে আমার সবকিছু নির্দ্বিধায় তোকে দিয়ে দিতে পারি। গম্ভীর কন্ঠে নায়রা বলে উঠলো।
--- আলহামদুলিল্লাহ! যা বলবো দিয়ে দিবি তো?
--- একবার বলেই দেখ!
---তোকে দিয়ে দে আমায়!
--- কি বলছিস বুঝিয়ে বল।
--- আরাফকে তুই আসতে বলেছিস যে, জিজ্ঞেস করেছিলি শর্তে কি লেখা আছে? শর্ত মেনে এসেছে কিনা?
--- ওহ্ উনি তোকে সব বলে দিয়েছেন? নাহ আমি এসব জিজ্ঞেস করিনি তো, কি শর্ত?
--- দ্বিতীয় বিয়ের শর্ত ছিলো ওটা। ও রাজি হয়েছে, এখন তুই রাজি হলেই সব সমাধান হয়ে যায়।
--- মুমু ফাজলামো করিস নাতো। এখন তোর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়েছে চুপচাপ শুয়ে থাক।
--- নাআআআ, যদি ভালোবাসিস তাহলে রাজি হয়ে যা। তোর পুরো জীবন রয়েছে এখনও, আর মুনারও তো বাবা প্রয়োজন। অন্য কাউকে বিয়ে করিয়ে আনলে কি আমাকে ভালোবাসবে তোর মতো?
--- না মুমু এ হয়না আমি রাজি না। আমি আমার বান্ধবীর পায়ে কুড়াল মারতে পারিনা। নায়রা রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো।
বিকালবেলা ও নায়রা ভিতরে আসলো না। বাহির থেকে মুনাকে দেখিয়ে চলে গেলো। পরদিন ও বাহির থেকে খাবার পাঠালো। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ভুত মুমুর মাথা থেকে না নামবে ততক্ষণ সে মুমুর সামনে যাবেনা ঠিক করেছে। ওর এই এড়িয়ে যাওয়া মুমুরও ভালো লাগলো না। যতক্ষণ ও বিয়েতে রাজি হবে ততক্ষণে সেও খাবার, ঔষধ খাবেনা জিদ ধরে বসে থাকলো। বিপি লো হয়ে, রোগ বেড়ে মুমুর অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। ডাক্তাররাও পড়লেন বিপাকে, শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে আরাফ নায়রাকে ডেকে বললো।
--আপনি ওর কথায় রাজি হয়ে যান, বিয়ের পরও আমরা এভাবে থাকবো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি আমার মুমুকে হারাতে পারবোনা। নায়রাও মুমুর অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো। এবং মুমুর সামনে গিয়ে খাওয়াতে বসলো।
---আমি রাজি, তবে বিয়ের পর সতিন হতে পারবোনা। মনে থাকবে তো?
--- আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের বন্ধন অটুট থাকবে ইনশাআল্লাহ।

মুমু তো খুশিতে আটখানা, তার প্রিয় বান্ধবীর সাথে তার স্বামীর বিয়ে। এর চেয়ে বড় খুশি আর কি হতে পারে?
নায়রাকে পরম ভালোবাসা, বিশ্বাসের সাথে মুমুকে জড়িয়ে ধরলো। আজ যেন খুশির প্রজাপতি আকাশে ডানামেলে উড়ছে। এতদিন পর এত খুশি তার জীবনে আসছে।

আজ আরাফের সাথে নায়রার বিয়ে... ওরা নতুন একটা পাঁচরুমের বাসা নিয়েছে। এলাকার পরিচিত সব মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। মুমু ভাবতেও পারেনি সেখানে আরও তিনজন লোক ভিলেনের মতো এসে উপস্থিত হবে।
To be continue in sha Allah




(৯ম পর্ব)

-মেহজাবিন মুন

বধূসাজে বসে আছে নায়রা আর তাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে মুমু।
মুমুর খুব ইচ্ছা ছিলো নায়রাকে নিজহাতে সাজিয়ে দেওয়ার, কিন্তু সে তো উঠে বসতেই পারছে না। তবে নায়রা মুমুর পছন্দের শাড়ি গহনা পরেছে। আজকের অনুষ্ঠানে মুমুর কলেজের আর নায়রার মাদ্রাসার সব শিক্ষিকাও এসে উপস্থিত হয়েছেন।
কি ভেবে জানি মুনা আজ একবারও নায়রার কাছে যাচ্ছে না। সে মুমুর হাত ধরে তার পাশেই বসে আছে।
---মামনি, আম্মি কি লাল শাড়ি পরে আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে?
--- না মামনি, আজ তোমার আম্মি আর তোমার ভালো আঙ্কেলের বিয়ে, তাই আম্মি বউ সেজেছে। সে আমাদের সাথেই থাকবে, আমাদের ছেড়ে যাবেনা।
--- তাহলে তুমিও বউ সাজো না কেন? তুমি কি আঙ্কেলকে দেখতে পারোনা? আঙ্কেল তোমায় বকা দিয়েছেন?
--- না আম্মু আমি তোমার আঙ্কেলের বউ আছিই। এখন তোমার আম্মিও বউ হয়ে যাবে। তখন তুমি উনাকে আব্বু ডাকবে আর আমরা সবাই সবাইকে আরও বেশি ভালোবাসবো,একসাথে থাকবো। আঙ্কেল তোমায় আরও বেশি বেশি চকলেট খেলনা এনে দেবেন।
--- আঙ্কেল কি আবার চলে যাবেন?

--- আঙ্কেল যাবে কিনা জানা নাই তবে তুমি আর নায়রা আমাদের সাথে যাচ্ছো নানুআপু।
নায়রা আর মেহমানরা সবাই বসে ওদের কথা শুনছিলো, হঠাৎ আরেকটা অন্যকন্ঠের আওয়াজ আসতেই সবাই সেদিকে ফিরে তাকালো। দরজায় নায়রার মা বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, তারও পিছনে মুমুর ভাই আর আরাফের বোন।
--আম্মু আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো আম্মু? ঘরে আসো। নায়রা হাত ধরে উনাকে ঘরে নিয়ে এলো। উনার সাথে আরাফের বোন ফাতিমা আর আয়েশাও এসে ঢুকলো। ওর বাবা এবং মুমুর ভাই ভিতরে মহিলা দেখে আর ঘরে ঢুকলেন না। আরাফের কাছে পাশের রুমে গিয়ে বসলেন।
আরাফের বোনেরা মুমুর এই করুণ অবস্থা দেখে ওর কাছে বসে কেঁদে ফেললো।
আর নায়রার মা আবারও গম্ভীর মুখে নায়রাকে বলে উঠলেন,
--- পাঁচবছর তো অনেক নাটক করলে। নাটক শেষ হলে বাড়ি চলো।
--- এসব তুমি কি বলছো আম্মু? কিসের নাটক? আর আমি এভাবে মুমুকে একা রেখে কোথায় যাবো?
--- এই মেয়েটাকে আমার আগে থেকেই সুবিধার মনে হয়নি। ওই তোকে ফারদিনের সাথে ডিভোর্স করিয়েছে তাইনা? ও কোনসময়ই তোর সুখ দেখতে পারেনি, এখন আবার তোকে পটিয়ে তোর বাচ্চাকে, তোর সম্পত্তিকে দখল করতে চায়। তাই বিয়ে নামক ফন্দি এঁটেছে যাতে বিছানায় শুয়ে-বসে আরাম করে খেতে পারে।
--- আম্মুুুুউউউ...! আমি তোমার কাছ থেকে এ ধরণের কথা আশা করিনি।
ঘরভর্তি মহিলারা অবাক হয়ে উনার কথা শুনছেন। তিনি সেটা খেয়াল করে নিতান্তই অভদ্রের মতো বলে উঠলেন,
--আপনারা প্লিজ একটু পাশের রুমে গিয়ে বসুন। আমাদের কিছু কথা আছে।
সবাই এসব কথা শুনতেও চাইছিলো না তাই সুযোগ পেয়েই বেরিয়ে গেলো। তখন আরাফ, মুমুর ভাই, নায়রার বাবা এসে ঘরে প্রবেশ করলেন।
উনারা বাহিরে দাঁড়িয়ে নায়রার মায়ের কথা শুনছিলো এখন ঘরে ঢুকেই মুমুর ভাই রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
--- খালাম্মা আপনি যা বলছেন তা কি বুঝে বলছেন? আমার বোন যদি এমন মেয়ে হতো তাহলে কি নিজের স্বামী, সংসার ছেড়ে সবার সুখের জন্য এতদিন এভাবে পালিয়ে থেকেছিলো? আর এখন এই অবস্থায়ও নিজের সুখ বিবেচনা না করে স্বামীর সুখের কথা চিন্তা করছে?আমিও আপনার নায়রাকে এমন কথা বলতে পারতাম, কিন্তু কোন বিবেকবান মানুষ এমন বলবে না।
--- দেখো ছেলে আমি আমার মেয়েকে বুঝাচ্ছি, তুমি এখানে নাক গলিও না।
--- আমিও আমার বোনকে বুঝাতেই এসেছি যা ও করছে তা ঠিক নয়। কিন্তু আমি কি আপনার মেয়েকে কোন দোষারোপ বা কিছু বলেছি? আপনি যা বলেছেন তা কি ঠিক বলছেন?
--- ঠিক বলেছি, আমার মেয়ে তোমার বোনের জন্য ঠেকবে কেন? তুমি তোমার অসুস্থ বোনকে বুঝাও, আমার মেয়ের জীবনে দখলদারী করার তার কোন অধিকার নেই
আরাফ গিয়ে মুমুর পাশে বসেছিলো, বুঝাই যাচ্ছে ও কতটা রেগে গেছে। মুমু ওর হাত ধরে কোন কথা না বলতে নিষেধ করলো।
কিন্তু নায়রার মা যেভাবে রেগেমেগে কথা শুরু করলেন তাতে ফাতিমা আয়েশাও রেগে গেলো।

--- খালাম্মা আপনি মুরব্বি মানুষ, এভাবে মুখ খারাপ করে কথা বলবেন না। এই বয়সে আপনার এসব সুভা পায়না।
ফাতিমা এতক্ষন শুনতে শুনতে কথা বলে উঠলো।
--- মুখ খারাপের দেখেছো কি? তোমাদের দুই টাকার চাকরিওয়ালা ভাইয়ের কাছে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো ভেবেছো? আমি বেঁচে থাকতে তা কখনও হবেনা।
--- আম্মু তুমি চুপ করো, আব্বু আপনি প্লিজ উনাকে শান্ত হতে বলুন।
--- এখানে শান্তনার কিছু নেই মা, চল আমরা এখান থেকে চলে যাই। এতদিন যা হওয়ার হয়েছে এখন তোকে আমরা ভালো জায়গায়ই বিয়ে দেবো। নায়রার বাবা নায়রার হাত ধরে কথাগুলো বললেন। তিনি যেন একমুহূর্তের জন্যও এখানে দাঁড়াতে রাজি না।
--- তোমরা এতটা স্বার্থপর হবে আমার জানা ছিলো না। যখন আমি অসুস্থ ছিলাম তখন তো সম্মানের ভয়ে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলে। মনে করেছো মাসে মাসে ঔষধ তো কিনে দিচ্ছি, চিকিৎসা আর বাকি খরচ তো পাঠাচ্ছিই, আর কি লাগে? এটাই তোমাদের দায়িত্ব ছিলো। ভাইবোনেরা কখনও আমার সাথে মিশতে চায়নি, আমার সুখ-দুঃখ শেয়ার করার জন্য কাউকে কখনও পাইনি। আমাকে বেঁচে থাকার সঠিক পথ দেখাতে, অনুপ্রেরণা দিতে তখনই মুমু এসেছিলো আমার জীবনে। তখন তো তোমরা কেউ ছিলেনা? বিয়ে দিলেই কি সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? আর যখন ফারদিনও আমাকে না বুঝে ফেলে চলে গেলো, ততদিনে তো মুমুর জীবনে এরচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে। তাহলে ওকে কি করে তোমরা দায়ী, আর লোভী ভাবো? এই মেয়েটা যদি লোভী হত তাহলে এত বড় কুরবানী দিয়ে আমাকে সতীনের জায়গা দিতে রাজি হতো না। বাহ্ আম্মু আজ তুমি বুঝিয়ে দিলে সময়ে মানুষ কতটা পাল্টে যায়।
--- তুই আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না। আমার সাথে এক্ষুণি চল নাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
--- এসব তুমি কি বলছো আম্মু? জানোনা এসব কসম খাওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা করাও মহাপাপ?
--- নায়রা কম কথা বলে কাপড় গোছাও গিয়ে, আমরা এক্ষুণি রওনা হবো। আমরা দুজনেরই এ বিয়েতে মত না। আবারও বাবা গম্ভীর মুখে বললেন।
--- আমিও এই বিয়েতে রাজি না, এ ধরণের মানসিকতার মানুষের ঘরে কখনও শান্তি পাওয়া যাবে না। নায়রা বোন আমার তুমি চলে যাও। মুমুর ভাইও উনার সূরে সূর মেলালেন।

ফাতিমা আয়েশাও একই কথা বললো।
নায়রা অসহায়ের মতো মুমুর দিকে তাকিয়ে আছে, ওর গালবেয়ে তপ্ত অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। আর মুনা ভীত হরিণীর মতো মুমুকে ঝাপটে ধরে ওর পাশে শুয়ে রয়েছে।
আশুভরা চোখে মুমু নায়রার আম্মুকে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে মিনতি করলো। কিন্তু উনিসহ সবাই একবাক্যে আবারও না করে দিলো।
মুমু আবার মুখ খুললে আরাফ মুমুর মুখে চাপা দিলো। তারপর হাসিমুখে বলে উঠলো,
---আপনারা অনেক বলেছেন, আমার মুমুকেও অনেক গালি দিয়েছেন। এখন কিছু কথা বলে আমি এটার সমাপ্তি ঘটাতে চাই, মনযোগ দিয়ে শুনুন।
মুমু কেমন মেয়ে সেটার ব্যাখ্যা আমি ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা, ওর সিদ্ধান্তকে আমি বাহবা দেই। কারণ সব মেয়ে তা পারেনা। ওর মুখের দিকে তাকিয়েই আমি এই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম ওর মনে যদি শান্তি পায়। কিন্তু আমি তো দেখছি এ বিয়েতে শান্তির চেয়ে অশান্তিই বেশি হবে। আর নায়রা,বাবা মায়ের অমতে আপনার বিয়ে করা উচিত হবেনা, তাছাড়া আমিও এখন আর এ বিয়েতে রাজি না।
--- আরাফ তুমি এসব কি বলছো? এটা আমার শর্ত ছিলো আরাফ।
--- আমারও তো কিছু শর্ত চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে মুমু। তোমার উচিত স্বামীর কথা মেনে চলা, এটা ইসলামে বলা আছে। আর একজীবনে সব সুখ না পেলেই কি নয় মুমু? হয়তো এটার জন্য আল্লাহ আমাদের সর্বোচ্চ প্রতিদান দিবেন।
--- কিন্তু...
--- ধরো আমি এরকম তখন কি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যেতে? এ প্রশ্ন আগেও করেছিলাম আমি।
--- কখনও ছেড়ে যেতাম না তোমাকে। আমি দুনিয়াতে এবং জান্নাতে তোমার সাথেই থাকতে চাই। জান্নাতের অলিগলিতে তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই প্রিয়।
ওদের কথা শুনে আয়েশা ফাতিমা একে ওপরের দিকে কান্নাভরা চোখে তাকালো। এদের ভালোবাসার গভীরতা এত যে গভীর তা তারা স্বচক্ষে দেখে বিশ্বাসই করে পারছে না। আর তাদেরই অনুরোধে মুমু আরাফ থেকে দূরে চলে এসেছিলো। কখনও আরাফকে সে কথা বলেনি। এমনকি তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও একটা দিন আরাফের কথা জিজ্ঞেস ও করেনি। এত ভালো একটা মেয়েকে ওরা কৌশলে আরাফের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর সেই আরাফের কাছে মুমুই ছিলো বেঁচে থাকার সাহারা।
আরাফ না করে দেওয়ার পর নায়রা হাসিমুখে তা মেনে নিলো, অনেক চেষ্টা করেও নিজের মেয়েকে কোলে নিতে পারলো না।
নায়রা মুনাকে জিজ্ঞেস করলো "আম্মুজান বলতো তুমি কার কাছে থাকতে চাও?
মুনা চোখ বন্ধ করে বলে দিলো মামনির সাথে।
ঘরভর্তি মানুষের সামনে কথাটি বলা অবুঝ শিশুটিও মুমুকে চায়।
নায়রা মাকে আর কিছু না বলে মুমুর কোলে মুনাকে তুলে দিয়ে বললো, জীবনে তো তোকে দুঃখ আর অপমান ছাড়া কিছুই দিতে পারলাম না। আমার তরফ থেকে ছোট্ট উপহার হিসেবে মুনাকে রেখে দে শখী।
--- এ হয়না নায়রা, অবুঝ একটা মেয়েকে তার মা থেকে আমি ছিনিয়ে নিতে পারিনা। ওকে তোর কাছেই রাখ, কারণ আমি আর ভালো হবো কিনা সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন।
ওর কথার সুযোগ নিয়ে নায়রার মা মুনাকে কোলে নিয়ে নায়রাকে টানতে টানতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ওদিকে নায়রা আর মুনা, এদিকে মুমুর কান্নায় আকাশপাতাল যেনো ভারী হলো।
পরম শান্তনায় আরাফ মুমুর হাতগুলো জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিলো। আর দুইবোন তাদের দুজনকে শান্তনা দিলো,
--- কেঁদোনা বোন, আরাফ তোমার কাছে ফিরে এসেছে, আমরা ও তোমার এই মহানুভবতা দেখে খুশি হয়েছি। আর তোমার প্রতি প্রতি কোন অভিযোগ নেই। আমাদের সাথে বাড়ি ফিরে চলো।
মুমুর ভাইয়ের চোখেও তখন একজঝলক খুশি খেলে গেলো।
অভিমানী গলায় মুমু বললো,
--সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর কিছু পাওয়ার আশা যে বৃথা। যে আশা বারবার মনে উঁকিঝুঁকি দেয়, শেষে কারো না কারো জন্য তা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যায়।
--- এভাবে বলতে নেই মুমু। সবকিছুই আল্লাহর হুকুমে ঘটে। ধৈর্য্য ধরে ভরসা করো মহান রবের উপর। দেখবে জীবন সহজ হয়ে যাবে।
মেহমানরা সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার বাড়ি ফিরলো। আরাফ বসে মুমুর ভাইয়ের সাথে গল্প করছিলো। তখন আয়েশা আর ফাতিমা মুমুর কাছে করজোরে ক্ষমা চেয়ে নিলো। আবারও তাদের জীবনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলো।
মুমু কি সব অভিমান ভুলে ফিরে যাবে আরাফের কাছে? তার জীবনের মোড় কি ঘুরবে কখনও? আল্লাহ চাইলে হয়তো আবারও মুমু সুস্থ মানুষের মতো চলতে ফিরতে পারবে। আল্লাহর হুকুম হলে আবারও দুই বান্ধবী এক হবে হয় দুনিয়াতে নয় জান্নাতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ...






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.