শ্রেষ্ঠ মানুষেরা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম [পর্ব :৮]

শ্রেষ্ঠ মানুষেরা

ইবরাহিম আলাইহিস সালাম [পর্ব :৮]

আল্লাহুম্মা সাল্লি ’আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লায়তা ’আলা ইব্রাহীম ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক ’আলা মুহাম্মাদি ওয়া’আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা বারাকতা ’আলা ইব্রাহীম ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ ।”
আবুল আম্বিয়া ,নবীদের পিতা, খলিলুল্লাহ ,আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইতিহাসের এমন এক ব্যক্তি যিনি ইসলাম, ক্রিস্টিয়ান,ও ইহুদি তিনটি ধর্মে ই সম্মানিত। যে ব্যক্তি মুসলিম জাতির পিতা যার বংশধরদের মধ্যে থেকে আল্লাহ বেছে নিয়েছেন বহু নবী-রাসূল। এবং যার বংশধরদের মধ্যে থেকেই জন্ম নিয়েছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
সে ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম।🌺
প্রত্যেকের জীবনে আমরা নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হই। পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। অনেক পরীক্ষায় আমরা সফল হই ।আবার অনেক পরীক্ষায় ব্যর্থ হই ।এবং সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করি ।আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা করি ।ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যার সামনে আল্লাহ একের পর এক কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষা রেখেছেন ।এবং প্রতিটি পরীক্ষাতেই তিনি পরিপূর্ণভাবে সফল হয়েছেন ।
আমাদের জীবনে যদি কোনো দুশ্চিন্তা থেকে থাকে, দুঃখ কষ্ট থেকে থাকে, আমরা যদি স্রেফ ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের জীবনের দিকে তাকায় আমরা দেখব তিনি যেভাবে পরীক্ষিত হয়েছিলেন তার তুলনায় আমরা আলহামদুলিল্লাহ অনেক অনেক আরাম-আয়েশে জীবন-যাপন করছি।
এবং তার জীবন থেকে আমরা এটাও বুঝবো যে কারো জীবনে বেশি বেশি বাধা-বিপত্তি আসা মানে এই নয়, যে আল্লাহ তার ওপর রেগে আছেন ।বরং এমনও হতে পারে যে আল্লাহ তাকে এত বেশি ভালবাসেন তার ঈমানের প্রতি আল্লাহর এতটা আস্থা রয়েছে যে আল্লাহ তার সামনে বিভিন্ন পরীক্ষা রেখেছেন ।যেন সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে আল্লাহর আরো কাছে চলে আসে। ঠিক যেমন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার দৃঢ় ঈমানের পরিচয় খালিলুলাহ্ বা আল্লাহর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু হবার মর্যাদা পেয়েছিলেন।
যে ব্যাক্তি পৃথিবীর বুকে এক আল্লাহর ইবাদত করার দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ,যার সন্তানেরা সেই বাণী প্রচার করে গেছেন হাজার হাজার বছর ধরে,এই এক আশ্চর্য বিষয়, যে সে ব্যক্তিটি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন এক সমাজে যাকে বলা যেতে পারে শির্কের এক আকড়া।তার জন্মস্থান নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অনেক স্কলারদের মতে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন প্রাচীন ব্যাবিলন শহরের উড় পাহাড়ের অঞ্চলে। যা বর্তমান সময়ে ইরাকের হিল্লা শহরে অবস্থিত। আল্ হাকিমের হাদীসে বর্ণিত রয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল নূহ আলাইহিস সালাম ও ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মধ্যে গত বছরের ব্যবধান ছিল। তিনি বলেছিলেন দশ প্রজন্ম। যা অনেকে অনুমান করেন প্রায় 2 হাজার বছরের সমান।
অন্যদিকে আত তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী ইব্রাহিম আলাই সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর মধ্যে আনুমানিক ২ হাজার বছর ব্যবধান রয়েছে। সেটা যদি সঠিক হয়ে থাকে এবং এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে রয়েছে ।তাহলে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম প্রায় 4000 বছর আগে প্রাচীন মেসোপটামিয়ার বাইবেল শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।ইবনে কাসীর রহ তার আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেন জুমহোর উলামাদের মতে, ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম এর পিতার নাম ছিল তারেহ্ ।এবং আহলে কিতাব রা উচ্চারণ করতো তারেএহ্ ।তার আরেকটি নাম ও প্রচলিত আছে, তা হলো আজার। এবং এই নামটি পবিত্র কোরআনে এসেছে।
কোন কোন স্কলারদের মতে তারেহ্ ছিল মেসোপটেমিয়া রাজ্যের এক প্রখ্যাত পুরোহিত। এবং সে মূর্তি নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ছিল ।এর মধ্যে একটি দেবতা ছিল যার নাম দেয়া হয়েছিল অাজার। এবং তারেহ্ সে দেবতার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিল বিধায় তারেহ্ কেই মানুষ আজার ডাকতো।
প্রাচীন সেই ব্যাবেল শহরে শিরক ছড়িয়ে পড়েছিল পুরোদমে ।এরকম শির্কের এক প্রাণকেন্দ্রে শহরের সবচেয়ে সুপরিচিত ভাস্করের ঘরে জন্মগ্রহণ করে এক ফুটফুটে শিশু। শৈশব থেকেই তার কৌতূহলের কোন অভাব ছিল না। চারপাশে যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে চুপচাপ বসে ভেবে দেখার অভ্যাস ছিল ।সে যত বড় হতে লাগল ততো ভাবতে লাগলো আমার বাবা নিজ হাতে পাথর জোগাড় করে এনে ভাস্কর্য তৈরি করেন। সেই ভাস্কর্য আবার দেবতা হয় কি করে?? আমার বাবা যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলো সে আবার আমার বাবাকে সৃষ্টি করলো কি করে??? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কখনোই তার কাছে মেলেনি। তাকেই শুধু হতো এটাই আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ।আমাদের পূর্বপুরুষেরা এভাবে ইবাদত করতেন ।তাই আমরাও এভাবেই এবাদত করি ।
সামাজিকভাবে আজারের সন্তান সম্মানিত অবস্থানে পৌঁছানো খুব সহজ ছিল ।সে বিখ্যাত পুরোহিত আজারের সন্তান এই পরিচয়ে আরাম-আয়েশে তার জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো ।কিন্তু সে সেই পথ বেছে নেয় নি। বরং সে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে লাগল ।এবং সামাজিক প্রথা গুলো নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগল ।এবং এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে নির্জনে মগ্ন থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহি নাযিল হয় ।
ইব্রাহিম আলাইহিসালাম নবুওয়াত লাভ করেন ।নবুয়ত লাভ করার পর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সমাজের মানুষদের কাছে যৌক্তিকভাবে এক আল্লাহর এবাদত করার আহ্বান জানাতে লাগলেন। এবং ইব্রাহিম আলাইহিসালাম তার পিতা আজারকে বিশেষভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকলেন।আমরা দেখি, যে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার বাবা কে অত্যন্ত সম্মানের সাথে শ্রদ্ধার সাথে ইসলামের পথে আহবান করে গেছেন ।এবংইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তখন পুরোপুরি নিশ্চিত, যে তিনি সঠিক ছিলেন ।আর তার বাবা ভুল পথে ছিল ।তবুও সে রাগ বা বিরক্তি প্রকাশ করেননি। বরং ধৈর্যের সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছেন ।কিন্তু ছেলেরা এমন আন্তরিক আবেদন আজারের হৃদয় স্পর্শ করল না ।হতে পারে সে, সে সময়কার সবচেয়ে প্রখ্যাত পুরোহিত এবং মূর্তি নির্মাণকারী হিসেবে তার কাছে সামাজিক স্ট্যাটাস টাই বড় ছিল। তার ছেলের আবেদনে অতিষ্ঠ হয়ে আজার বলল ,ইব্রাহিম তুমি কি আমার দেবতাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো? তুমি যদি এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ না করো তোমাকে আমি পাথর মেরে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেবো ।
আমার সামনে থেকে চিরতরের জন্য দূর হয়ে যাও ।

আমরা গল্প শোনার সময় এটা সচরাচর চিন্তা করিনা গল্পের মানুষদের সাথে যা ঘটছে তা আমার সাথে করলে কেমন হতো ?একবার চিন্তা করে দেখুন আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে কোরআনের একটি আয়াত শেয়ার করলেন আর সেখানে হাজারো এ্যাংরি রিয়্যাক্ট ।শত শত আক্রমণাত্মক মন্তব্য ।আপনার পাশে দাঁড়ানোর মত একটা মানুষ নেই। এমন অবস্থায় যেই না আপনি ভাবছেন অন্তত আপনার পরিবারের মানুষ আপনার নিজের বাবা-মা আপনাকে বুঝবে। আপনি যে পথে আছেন সেটা কে সাপোর্ট করবে। অমনি যদি তারাও আপনাকে গালমন্দ করে আর বলে পাথর মেরে আপনার মাথাটা ফাটিয়ে দেবে এবং আপনাকে বলে চিরতরের জন্য দূর হয়ে যেতে আপনার তখন কেমন লাগত ???কতটা ক্ষোভ,-কতটা হতাশা কতটা অভিমান জমা হতো আপনার মনে ।এরকম অবস্থায় ইব্রাহিম আলাইহিসালাম তার বাবাকে অত্যন্ত সম্মান সহকারে বললেন।
একদিন বড় উৎসব পালন করা হবে সেখানে হাজির হবে শহরের সব মানুষ । আজার ও সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ।কিন্তু উৎসবের ঠিক আগেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁকে জানালেন তার অসুখ তাই তিনি তাদের সাথে যেতে পারবেন না ।বাস্তবে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর একটি বিশেষ পরিকল্পনা ছিল । শিক্ষকতার একটি নীতি হলো কোন কিছু মুখে বুঝালে সেটা যদি শিক্ষার্থী না বোঝে তাহলে তাকে এক্সপেরিমেন্ট বা প্রাক্টিক্যাল ডেমোন্সট্টেশন এর মাধ্যমে বোঝানো উচিত ।ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এমন কিছু করার পরিকল্পনা করলেন যা সমাজের মানুষকে তাদের ভ্রান্তিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।
শহরের সবাই যখন চলে গেল উৎসবে, ইব্রাহিম আলাইহিসালাম গেলেন মন্দিরে।যেখানে তার বাবার নিজ হাতের তৈরি বহু মূর্তির অবস্থান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন নানা আকৃতির নানা ধরনের মূর্তি রাখা ছিল। সবার মাঝখানে রাখা ছিল সবচেয়ে বড় মূর্তি টি।যে কিনা ছিল তাদের প্রধান দেবতা ।এরা যদি আসলে মূর্তি না হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে যদি আমি আক্রমণ করি তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রক্ষা করতে পারবে এই বলে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বিরাট হাতুড়ি নিয়ে একে একে সব মূর্তি ভাঙতে শুরু করলেন ।স্বাভাবিকভাবেই মূর্তি গুলু নিশ্চুপ।যার প্রাণ নেই তার প্রতিক্রিয়া থাকবে কি করে ??একে একে সব মূর্তি ভেঙে তিনি প্রধান মূর্তির গলায় হাতুড়ি টি ঝুলিয়ে দিলেন ।
একটি ঘর ।চারপাশে শত শত মূর্তির ভাঙা টুকরো ।মাঝখানে শুধু একটি প্রকাণ্ড মূর্তি তার গলায় ঝুলছে এক বিরাট হাতুড়ি।আর তার কিছুদূর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন যুবক ।
নাম তার,,,ইবরাহীম আলাইহিস সালাম 🌺
এবং তার হাত ধরেই পাল্টে যায় গোটা মানবজাতির ইতিহাস। শহরবাসীরা ফিরে এসে হতবাক। তাদের এমন সর্বনাশ কে করল ?তারা যখন উৎসবে আনন্দ করছিল তখন খেয়ে এসে তাদের সব দেবতাদের এভাবে ধ্বংস করে দিল? একমাত্র আজারের ছেলে ইব্রাহিম ই তো এলাকায় ছিল ।বাকি সবাই তো তাদের সাথেই উৎসবে উপস্থিত ছিল ।সবাই মিলে বলল ইব্রাহিমকে ডাকা হোক। সে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে জানে ।ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সবার সামনে হাজির করা হলো। এবং জিজ্ঞেস করা হলো সে এই ব্যাপারে কিছু জানেন কিনা,,,,ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বললেন আমি কি করে জানব? তোমরা বরং তোমাদের বড় দেবতাকে জিজ্ঞেস করো। হাতুড়ি টি তো ওর গলায় ঝুলছে।
তার কথা শুনে শহরবাসীরা আরও রেগে গেলো। এই মূর্তি কি করে বাকি মূর্তিদের ভাঙবে ,,যখন সে নিজেই নড়তে পারে না। যখন তার কোন প্রাণ নেই।
ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বললেনঃ তোমরা নিজেরাই যখন জানো,যে এই মূর্তিগুলো জীবিত নই তারা স্রেফ পাথর তাহলে তাদের কেনো অযথা প্রার্থনা করো??
ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এই প্রশ্ন গুলু সমাজের মানুষদেরএতটাই ভাবিয়ে তুললো যে তারা সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেল। আল্লাহ সূরা আম্বিয়া তে বলেন সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء),
فَرَجَعُوٓا۟ إِلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ فَقَالُوٓا۟ إِنَّكُمْ أَنتُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
উচ্চারণঃ ফারাজা‘উইলাআনফুছিহিম ফাকা-লূইন্নাকুম আনতুমুজ্জা-লিমূন।
অর্থঃ অতঃপর মনে মনে চিন্তা করল এবং বললঃ লোক সকল; তোমরাই বে ইনসাফ।
এখানে আল্লাহ তায়ালা যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তা তাদের অনুভূতি গুলোকে একেবারে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। আল্লাহ বলেন তারা নিজেদের অন্তরের দিকে তাকাল ।অর্থাৎ ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা শুনে তারা আসলে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলো ।এবং একপর্যায়ে তারা একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু করলো ।বলতে লাগলো ইন্নাকুম আনতুমুজ্জা - লিমুন। নিশ্চই তোমরা অন্যায় করেছো। কিন্তু এরপর আল্লাহ বললেনঃ
ثُمَّ نُكِسُوا۟ عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَٰٓؤُلَآءِ يَنطِقُونَ
উচ্চারণঃ ছু ম্মা নুকিছূ‘আলা-রুঊছিহিম লাকাদ ‘আলিমতা মা-হাউলাই ইয়ানতিকূন।
অর্থঃ অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না
এই আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ হলো এরপর তারা তাদের মাথার ওপর ঘুরে গেল ।এখানে মূলত আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন ,যে পরক্ষনেই তারা তাদের অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসলো। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ওয়ান এইটি ডিগ্রী টার্ন নেওয়া। তারা তাদের প্রথা তাদের সামাজিক স্ট্যাটাস পূর্বপুরুষদের রীতি কে প্রাধান্য দিল। সত্যকে ঢেকে দিল ।এবং সবাই সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলে বললো ইব্রাইম কে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলা হোক।
শহরের সবাই মিলে জ্বালানির কাঠ জোগাড় করতে লাগল ।এবং ধীরে ধীরে গাছের এর বিরাট স্তূপ হয়ে গেলো। এরপর তারা সেখানে আগুন জালালো ।এবং সে আগুন এত প্রকাণ্ড আকার ধারন করলো যে ,তারা বুঝতেই পারছিল না ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে কে সেই আগুনে নিক্ষেপ করবে কিভাবে??!
অতঃপর সিদ্ধান্ত হলো তাকে একটি বড় আকারের কেটাপল্ট ব্যবহার করে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে কেটাপল্টের সাতে বাঁধা হলো তিনি তার সবটুকু ভরসা রাখলেন আল্লাহর উপর।
এবং দোয়া করে বললেন ,,,,
হাসবিআল্লাহু ওয়ানিআমাল ওয়াকিল। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। তিনিই তো শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী। এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কে আগুনে দিকে নিক্ষেপ করা হলো।
এবং যেই না ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আগুনের দিকে নিক্ষেপ করা হলো বৃষ্টির ফেরেশতা ভাবতে লাগল কখন আমার কাছে বৃষ্টি নিয়ে নেমে যাওয়ার হুকুম আসবে ,,আর কখন আমি এই আগুনকে টাকে নিভিয়ে দেব।
কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন।সেই মুহূর্তের ভেতরে তিনি আগুন কে হুকুম করে বললেন
قُلْنَا يَٰنَارُ كُونِى بَرْدًا وَسَلَٰمًا عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ
উচ্চারণঃ কুলনা-ইয়া-না-রু কূনী বারদাওঁ ওয়া ছালা-মান ‘আলাইবরা-হীম।
অর্থঃ আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
আগুন তুমি ঠান্ডা হয়ে যাও আর ব্রাহিমের জন্য নিরাপদ হয়ে যাও। এবং মুহুর্তের ভেতরে আগুন তার রবের হুকুম পালন করে ঠান্ডা হয়ে গেল। এবং সে ছিল এক প্রশান্তিময় ঠান্ডা ।এবং ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আল্লাহ যদি আগুনকে শুধু ঠান্ডা হতে বলতেন তাহলে আগুন তার রবের হুকুম পালনের তাগিদে এমনভাবে ঠান্ডা হতো যে তাতে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আঘাত পেতেন। কিন্তু তার রব তার প্রতি এতটাই সহানুভূতিশীল ,যে আগুন হুকুম করার সময় যোগ করলেন ওয়া ছালামা।এবং নিরাপদ শান্তিময় হয়ে যাও।যার কারণে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন সেখানে পুরোপুরি নিরাপদ।
সবাই যখন আগুনের দিকে চেয়ে ছিল হয়ত ভাবছিল তাদের সমাজের ছেলেটা বখে যাওয়ার পর কি এক পরিণতি হল। যখন ভাবছিল এই আগুন নিভে গেলে হয়তো ইব্রাহিমের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না ।সেই ভাবনা গুলো ভেঙ্গে দিয়ে অশরীরীর ন্যায় পাহাড়ের মত উঁচু দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন থেকে হেঁটে হেঁটে পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ।
সেই ঘটনার পর থেকে কেউ ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে স্পর্শ করার সাহস পেত না ।সবার তার থেকে দূরে দূরে সরে থাকত ।এবং তারই অলৌকিক ঘটনার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো।সেই সময় ব্যাবিলনের রাজার নাম ছিল নমরুদ।সে ছিল এক কঠোর স্বৈরাচারী শাসক।যার দাম্ভিকতা এতটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল যে ,সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করত।যখন তার কানে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর আগুন থেকে জীবিত বের হয়ে আসার ঘটনা পৌঁছল সে তাকে ডেকে পাঠালো ।
ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম রাষ্ট্র পর্যায়ে তাওহীদের বাণী প্রচার করার সুযোগ গ্রহণ করলেন।নমরুদ ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করল তুমি কার উপাসনা করো???আজ পর্যন্ত যত মানুষকে নমরুদ এই প্রশ্ন করেছিল সবাই একই উত্তর দিয়েছিল আপনি আমাদের প্রভূ।
হে নমরুদ।

কিন্তু ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমার রব তিনি যিনি জীবন দেন এবং মৃত্যু দেন ।নমরুদ এতটাই উদ্যত মানসিকতা ধারণ করতো সে বলল আমি ই তো জীবন দেই এবং মৃত্যু দান করি ।এবং এরপর সে একজন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মুক্ত করে দিল ।এবং একজন নিরীহ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দিলো।
এবং এর মাধ্যমে সে বোঝাতে চাইল, যে জীবন এবং মৃত্যু তারই হাতে।ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন নমরুদ এতটাই মাথামোটা যে,সে তারই বিচারহীনতা কে জন্ম এবং মৃত্যু দেয়ার ক্ষমতা হিসেবে মনে করছে ।তিনি তার রবের আর একটি বর্ণনা দিলেন ।তিনি বললেন আমার রবের হুকুম সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হয় আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তুমি কি এর বিপরীত করে দেখাতে পারবে ???
নমরুদ আসলে নিজেকে সত্যিকার অর্থেই প্রভু ভাবতো।সে কথা দিয়ে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কে হারাতে চাচ্ছিল না। কারণ সেটা হলে সে সহজেই বলে দিতে পারতো আসলে সূর্য আমার হুকুমেই পূর্ব দিকে উদয় হয় আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায় ।কিন্তু সে যেহেতু আসলে নিজেকে প্রভু মনে করত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কথা শোনার পর প্রথমবার তার মাথায় এই ব্যাপারটা খেলা করলো ।আসলেই তো সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায় আমি তো কখনো এমনটা হওয়ার জন্য হুকুম করিনি। আর আমার হুকুমে তো এটা পরিবর্তন হবে না ।তাহলে কার হুকুমে প্রতিনিয়ত এমনটা ঘটছে,,,
বাকি অংশ পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ্।



Baseera ইউনিউব চ্যানেল থেকে সংগৃহিত



কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.