শিকলে বন্দি ভালোবাসা (পর্ব-১, ২, ৩)


(প্রথম পর্ব)

- মেহজাবিন মুন

--- উফ্ আম্মু তুমি আবারও আজ আমায় কনে দেখাচ্ছো? তুমি বুঝতে পারছো না এটা হতে পারেনা, এটা ধোঁকা আম্মু। আমি ধোঁকা দিয়ে কাউকে বিয়ে করতে চাইনা।
--- কে বলছে এটা ধোঁকা? এটাতে যদি কারও ভালো হয় তাহলে ধোঁকা হলো কিভাবে? ডাক্তাররা তো বলেছে বিয়ে হলে এটা ঠিক হয়ে যেতে পারে।
--- আর যদি ঠিক না হয়? আম্মু আমারও ইচ্ছা করে আমার বিয়ে হোক। আমিও একটা সুখি সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখি, যেখানে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াবে কিউট একটা বেবি, আমায় মা বলে ডাকবে। দিনশেষে ক্লান্ত শরীরে কারও বুকে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস নেবো। তা যে হবার নয় আম্মু। আল্লাহ সবার ভাগ্যে সব রাখেন না। হয়তো এটা আমার জন্য এপারে নয় ওপারে রাখা হয়েছে।
--- তুই বুঝতে পারছিস না মুমু তোর জন্য আমার কষ্ট হয়, চিন্তা হয়। তোর ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, ভাইগুলাও বউ নিয়ে বাহিরে সেট হয়ে গেছে। শুধু তুই বাকি থাকলি, কিভাবে একা জীবন কাটাবি?
--- একা কোথায় তুমি আছো না? তাছাড়া মাস্টার্সটা শেষ করি একটা চাকরি পেয়ে গেলেই একটা বাচ্চা এডপ্ট করবো।
--- তুই কি চাস না তোর নিজের একটা বাচ্চা হোক?
--- আম্মু কতটা চাই সেটা বুঝানোর ভাষা মনে হয় পৃথিবীর কোথাও নেই। শুধুমাত্র আমার রব জানেন।
--- তাহলে মা আজ শেষবার রেডি হয়ে নে, এরপর আর বলবো না। আজ হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। তবে বরকে কিছু বলতে পারবি না।
--- ঠিক আছে মা, আমি বিকালের আগেই ফিরে আসবো, তবে এই শেষবার। বর তো সন্ধ্যায় আসছে তাইনা?

মুমু কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায়। ওকে দেখলে যে কেউ পছন্দ করবে, মায়াবী শান্ত একটা চেহারা, কালো চোখের গভীরতায় যে কেউ ডুব দিতে চাইবে। আর দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক দেহগঠনের একটা মেয়ে সে। কিন্তু মুমুর এই বাইশ বছরের জীবনে পিরিয়ড নামক জিনিস আসেনি। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ দেখিয়েও লাভ হয়নি। কেউ কোন রোগ ধরতে পারেননি।শেষ পর্যন্ত একজন কবিরাজ শেষ চিকিৎসা বলে দিয়েছেন বিয়ে দিয়ে দেখতে পারেন কি হয়।
তারপর থেকে প্রায় দশটা প্রস্তাব আসছে সবাই পছন্দ ও করেছে। কিন্তু মুমু তার জীবনের কঠিন সত্যটা সবাইকেই বলে দিয়েছে আগে থেকে। তাই বিয়েটা আর এগোয়নি।
মুমু দুপুরের পরই নায়রার বাসায় চলে আসলো।
-- আসসালামু আলাইকুম মিস মুমু, বড় চিন্তিত লাগছে?
মুমু বিছানার একপাশে ব্যাগটা রেখে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বললো,
--- আম্মু আজ আবার একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। আর তুই তো জানিসই এটা কোনভাবে সম্ভব না।
--- কেন সম্ভব হয়তো আল্লাহ এর মাঝেই চিকিৎসা দিয়ে রেখেছেন। আমিও রাজি হয়ে গেছি বিয়েতে।
নায়রার সাদা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মুখে একটু লজ্জার আবির পড়লো।
--- কি বলছিস তুই? বিয়ে সেটা কিভাবে সম্ভব?
--- তুই বস আমি প্যাডটা চেইঞ্জ করে আসি।
নায়রা প্যাড নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো আর মুমু সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো কি অদ্ভুত আল্লাহর লিলা। এত রহস্য আল্লাহ সব জায়গায় রাখছেন যে তিনি ছাড়া সেটা উদঘাটন করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। সে আজ এতটা বছর থেকে একটিবার পিরিয়ড হওয়ার জন্য কত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এই নায়রা মেয়েটার একটি বার পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার জন্য দেশ বিদেশের কোন জায়গা বাকি নেই যে ডাক্তার দেখানো, চিকিৎসা করানো হয়নি৷ চব্বিশ ঘন্টা ব্লাড যেতে যেতে মেয়েটা রক্তশূন্যতায় ভুগে। কয়েক মাস পরপর নতুন ব্লাড শরীরে দিতে হয়। আল্লাহর কি নিগুড় রহস্য...!

কলেজের প্রথম দিন মেয়েটা কোনের এক বেঞ্চে বসেছিলো। অনেকে শেতাঙ্গ, ফিরিঙ্গি, ধবল রোগী বলে ওকে খুঁচা মারছিলো। তখন নায়রা বোরকা পরতো না, ইসলাম মানতো না, মানবেই বা কেমন করে জানতোই তো না। কারণ অনেক বড় আর ধনী পরিবারে তার জন্ম। যেখানে প্রতিনিয়ত আধুনিকতার চর্চা হয়, যেখানে চলে নাচ গান আর নিত্য নতুন মডার্ন সাজার প্রতিযোগিতা।
মুমু সেদিন ওর পাশে এসে বসেছিলো। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আর সহ্য করা যায়না। এতটা ফ্যাকাশে যে মনে হয় ভ্যাম্পায়ার একজন বসে আছে। মেয়েটার চোখে পানি টলমল করছিলো। মুমু আস্তে করে ওর হাতটা ধরে জিজ্ঞেস করলো,
--বোন নাম কি তোমার?
-- নায়রা, তোমার নাম?
-- মুমু, তোমার বাড়ি কি এখানে?
-- নাহ, আমি নানুবাড়ি থেকে পড়াশোনা করি। আমাদের বাড়ি এখান থেকে ছয়ঘন্টার রাস্তা।
-- ওহ্ আসলে এখন স্যার নেই, ক্লাস হবেনা। চলো কমনরুমে বসে কথা বলি।
কমনরুমে এসে নায়রা কোনার একটা টেবিলে দুইটা খালি চেয়ার টেনে এনে বসলো। তারপর ব্যাগ থেকে চিপস বের করে দুজনে খাওয়া শুরু করলো।
-- তোমার চোখ তো দারুণ সুন্দর। অনেক মায়া আছে ওই চোখে। তুমি আমার বান্ধবী হবে? নায়রার উচ্ছসিত কন্ঠে বন্ধুত্বের আহবান শুনে মুমু খুশিই হলো।
পরম মমতায় ওর হাত ধরে নিয়ে বললো,
--তোমার চোখগুলোও গভীর মায়ায় ভরা। তাই বন্ধুত্ব করা যায়। তবে শর্ত হলো কখনও ছেড়ে যেতে পারবে না, কিছু লুকাতেও পারবে না।
সেদিন থেকে হয়ে গেলো তাদের বন্ধুত্ব, একজন যেন অন্যজনের আত্মার আত্মীয় হয়ে গেছে।
মুমু জানলো তার থেকে আরও গভীর কষ্টে আছে নায়রা। যেদিন থেকে তার পিরিয়ড শুরু হলো বন্ধ কিংবা শেষ হওয়ার কোন উপায়ই নেই। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক না হয় অথবা বয়স ষোল হওয়ার পরেও মাসিক শুরুই না হয়ে থাকে তাহলে একটা মেয়ের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। কারন বিষয়টিকে অবহেলা করলে শরীরের গ্রোথ হরমোন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়। জন্ম থেকেই কোন কোন মহিলার যোনিতে ত্রুটি থাকে । এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়। হরমোণের পরিবর্তনের ফলে ডিম্বস্ফোটনে (Ovulation) সমস্যা হতে পারে। মেয়েরা পিরিয়ড কবে হবে তার জন্য এমন ভাবে অপেক্ষা করে, পরীক্ষার রেজাল্টের জন্যও বোধহয় তা করে না। বিশ থেকে চল্লিশ বছরের মহিলার ক্ষেত্রে পিরিয়ড অনিয়মত হলে বা বেশি হলে অবশ্যই ধরে নিতে হবে, তার মধ্যে অস্বাভিকতা আছে। কিন্তু নায়রার এমন সমস্যা যেটার কোন সমাধান ই বের করা যায়নি। বাবা মা যতেষ্ট চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাকে নানুবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন যাতে ওর জন্য পরিবারের বা অন্য বোনদের বদনাম না হয়। কি ভয়ঙ্কর এক জীবন পার করছে নায়রা। বাহিরে বের হলেই মানুষ ওকে দেখলে ভয় পায় অন্যচোখে তাকায়। কিন্তু মুমুর পরিবার ইসলামিক জ্ঞানসম্পন্ন থাকায় মুমুকে এ ধরণের কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এমনকি পরিবারের বাহিরে কেউ জানেও না যে মুমু এমন।
--- এখন কি করতে চাস তুই? ছেলের সামনে যাবি? বাথরুম থেকে এসে নায়রা হাত মুছতে মুছতে বললো। মুমুও কাপে কফি ঢালতে ঢালতে বললো,
-- এতে যদি আম্মুর মনে শান্তি আসে তাহলে যাবো। আসলে নায়রা দুনিয়া তো কিছুই নয়, এটা একটা পরীক্ষাক্ষেত্র।
"এই দুনিয়া হচ্ছে স্বপ্ন আর আখেরাত হচ্ছে বাস্তব।
মৃত্যু এই দুইয়ের মধ্যবর্তী অবস্থা, আমরা আছি স্বপ্নের ঘোরে।"
(হাসান আল বসরী রহঃ)
---ঠিক বলেছিস, তবে মাঝে মাঝে দুনিয়াতে কিছু কাজ করতে হয় সুন্দর আখিরাত পাওয়ার জন্য। তা ছেলেটা কি করে?
-- সেসব গেলেই শুনবি, তাড়াতাড়ি বোরকাটা পর।

দুজনেই বিকালবেলা বাড়ি ফিরলো। মুমু তৈরি হওয়ার জন্য আগে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকলো। আজকাল চোখ গুলো বাঁধ মানেনা। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে একান্তেই চোখগুলো স্রোতের টানে ভাসায়। শাওয়ারের পানি আর চোখের পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
আসলে কিছু কষ্ট, কিছু না পাওয়া ভালোবাসা একান্ত নিজের কাছে থাকতে হয়, থাকতে দিতে হয়। এরা যে শিকলে বন্দি, মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানো তাদের জন্য বড়ই বেমানান।
আজও বাথরুমে গোসলে গিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলো সে, তারপর বেরিয়ে আসলো হাসিমুখে। নায়রা ঠিকই সব বুঝলো, এই জগতের বাসিন্দা যে সেই তো বুঝে সব।

--আসসালামু আলাইকুম। বসার রুমে এসে একটা ছেলেকে পাঞ্জাবি পায়জামা পরা অবস্থায় বসে একটা বই পড়ছে দেখে মুমু সালাম দিলো।
-- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বসুন, তা কেমন আছেন?
-- জি ভালো।
-- বড় নার্ভাস ফিল করছেন, ওহ্ বুঝতে পারছি কেন এমন হচ্ছে।
মুমু চমকে উঠলো, ছেলেটা কি আমাকে দেখে কিছু বুঝতে পেরেছে? সেটা কিভাবে সম্ভব?
-- ক্ব..কি বুঝতে পারছেন?
-- এটাই.. এখান থেকে যেতে কষ্ট লাগছে। চিন্তা করবেন না আমি আপনাদের পাশের বাগানেরই এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে এসেছি। যখন ইচ্ছা বাবার বাড়ি আসতে পারবেন আপনি। ও হ্যা এসব কথা থাক এখন। আচ্ছা আপনার কোন কালার শাড়ি পছন্দ? মানে আপনাকে আমার পছন্দ হয়ে গেছে আরকি।
মুমুর ও ছেলেটাকে ভালো লেগে গেলো, বড় চটপটে আর স্পষ্টবাদী মানুষ।
-- কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই পছন্দ করে ফেলেছেন?
--- হুম্ম, জানার দরকার নেই তো। তবে চুপিচুপি একটা কথা বলি কানটা এদিকে বাড়ান।
মুমু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।
-- আরেহ্ বাড়ান তো, বলছি কি কথা।
মুমু এবার সত্যিই মাথাটা এগিয়ে আনলো। আর ছেলেটা বললো আপনার চোখের প্রেমে পড়ে গেছি আমি। আর এখানে আসার আগে কিছুটা জরিপ করেই এসেছি। এখন আপনিও চুপি চুপি আলহামদুলিল্লাহ বলে ফেলুন।
মুমু ছেলেটার কথা শুনে হেসে ফেললো। এতে ছেলেটা তার সম্মতি মনে করে আলহামদুলিল্লাহ বললো। পাশে বসা মুমুর ভাইও আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন।
তিনিও বেশিদিন দেশে থাকতে পারবেন না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বোনের বিয়েটা দিয়ে যেতে চান।
তার একসপ্তাহের ভিতর ছেলেপক্ষ এসে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেললো।
যতই সময় এগিয়ে আসছে মুমু ভয়ে আর চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কি হবে আল্লাহ জানে, এত ভালো একটা ছেলেকে এভাবে ধোঁকা দেওয়া ঠিক হবেনা।

এদিকে নায়রারও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমেরিকা প্রবাসী একজনের সাথে। তার সাথেও কিছু পরামর্শ করা যাবেনা এখন।
( বাস্তবতা নিয়ে লেখা এই গল্পটি। জানার জন্য শেষপর্যন্ত পড়ুন।)
To be continue in sha Allah.


পর্ব: ২


- মেহজাবিন মুন

বিয়ের দিন বিকালবেলা..
--নায়রা আমি কি করবো তুই বল, আমার খুব ভয় করছে রে। মানুষটাকে এসব কিভাবে বলবো?
-- আরে ধূর ভয় করিস না, আল্লাহকে ডাক। তিনি সব সমাধানের মালিক। স্যরিরে আসতে পারলাম না তোর বিয়েতে। জানিস তো আমারও আগামীকাল অনুষ্ঠান। অনেক বুঝানোর পর গায়ে হলুদ থেকে রেহাই পেয়েছি, কাল যে কি হবে।
আচ্ছা তোর বিয়ে তো ঘরোয়াভাবে হয়েছে তাইনা?
-- মোটামুটি, আমার কথা শুনলে তো কেউ। তবে বরকে আগে থেকে বলে রাখায় বোরকা পরতে দিয়েছে। আচ্ছা রাখিরে, হুট করে কেউ চলে আসতে পারে।
মুমু ফোন কেটে দিতেই পিছনে কারও আওয়াজ শুনলো।
-- উঁহু.. উঁহু.. বান্ধবীর সাথে কথা হচ্ছিলো বুঝি?
-- ইয়ে মানে আপনি এখানে কি করেন? পিছন থেকে আড়ি পেতে কথা শুনা বাজে অভ্যাস।
-- মিসেস মহারাণী, আসরের সময় হয়ে গেছে। জামা বদলাতে এসে আপনার কথা শুনলাম। আচ্ছা স্যরি এবার থেকে সামনে বসে শুনবো, হবে?
মুমু আর কিছু বলতে পারলো না। আরাফকে যতই দেখছে ততই সে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।
-- আপনিও নামাজটা শেষ করুন। আমি মসজিদে গেলাম।
আরাফ মসজিদে চলে যাওয়ার পর মুমু নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে অনেক্ষণ দু'আ করলো। তারপর মনে মনে ভাবলো আল্লাহ যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্য করেন। আমি সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফায়সালার উপর খুশি থাকবো।
আরাফের বোনরা মুমুকে সাথে নিয়ে নাস্তা করলো, গল্প করলো। তারপর একসাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করলো। আরাফের বাবা মা নেই, বোনরাই ওর সব। সবাইকে মুমুর কাছে ভালো লাগলো, সময়ের সাথে যেন একটা মায়া হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু রাত যত বাড়ছে ততই ভয়টা বেড়ে যাচ্ছে। অজানা এক অস্থিরতা তার মনে কাজ করছে।
এশার নামাজ শেষ করার পর বোনেরা খাবার মুমুদের রুমে দিয়ে গেলো। আর মেঝো বোন ফাতিমা বললো,
-- দিনে তো সাজো নি। এখন সাজগোজ করে নাও বোন। আমাদের ভাই তো তোমার জন্য পাগল হতে হবে তাইনা?
মুমু ভাবলো সাজবো তো ঠিক আছে কিন্তু সেই মানুষটাকে তো বিকাল থেকে একবারও দেখলাম না। উনি কি আমার কথায় রাগ করলেন। চিন্তিত মন নিয়ে সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো। বাহিরে ঝড়বৃষ্টিতে আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ছে। এই শ্রীমঙলে একটা সমস্যা বলা নেই কওয়া নেই যখন তখন বৃষ্টির আবির্ভাব ঘটে। এই বৃষ্টিতে মানুষটা কোথায় যে আটকে আছে। বিড়বিড় করতে করতে শেষবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো। কাজলটা দেওয়া হয়নি, এই একটা জিনিস সে বরাবর ভুলে যায়। কাজলটা হাতে নিয়ে যেই দিতে গেলো ওমনি শুনলো..
--- ওটা দিও না। তোমার চোখের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দেবে। আমার কাছে তোমার চোখ এমনিতেই সুন্দর লাগে।
--- আ-আপনি কখন আসলেন? ওহ্ আসসালামু আলাইকুম।
--- ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হা হা হা.. কি রেওয়াজ আমাদের না? আগে কথা বলি পরে সালাম দেই! আসলে তোমার ওই সাজগোজের দৃশ্য আর বিড়বিড় কথা বলা মিস করতে চাইনি তাই সালাম দেইনি।
-- আপনি না একটা...
-- অভদ্র তাইনা? ফরমালিটি করে কি লাভ? "আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন, তারপর তুমিও বললে আপনিও তুমি করে বলবেন"
উফ্ এসব মেকি কথা আমার ভালো লাগেনা৷ তাই আগেই তুমি বলে ফেললাম। আর হ্যা তুমিও আমাকে তুমি করেই বলবে বুঝেছো?
-- জি, বুঝেছি।
কেন জানি এরকম চটপটে স্বভাবের ছেলেই মুমুর পছন্দ। কিন্তু কতক্ষণ থাকবে এই ভালোবাসা, কতক্ষণ চলবে এই নাটক।
"আল্লাহ আমি এই মানুষটাকে ছেড়ে যেতে চাইনা। তুমি দয়া করো আমায়।"
-- বৃষ্টি না আমার খুব প্রিয়, চলো বেলকনিতে বৃষ্টিবিলাস করি উইথ গরম গরম কফি চলবে?
-- খাবার তো টান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
--- হোক, মাঝরাতে চুপিচুপি গিয়ে গরম করে নিয়ে আসবো। কাউকে না জাগিয়ে চুপিসারে এসব করার মজাই আলাদা। তা তোমার কি ক্ষুদা লেগেছে বেশি?
-- না না। আমার মোটেও ক্ষিদে নেই।
-- তাহলে দুই মিনিট অপেক্ষা করুন বেগম সাহেবা এক্ষুণি কফি বানিয়ে আনছি।
দুজনে বেলকনিতে বসে চুপচাপ কফি শেষ করলো। তারপর মুমু নববধুর সাজেই উঠে গিয়ে বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে দিলো। একদৃষ্টিতে আরাফ শুধু মুমুকেই দেখছিলো। কিছুক্ষণ পর সেও উঠে গিয়ে মুমুর পিছনে দাঁড়ালো, তারপর মুমুর বৃষ্টিভেজা হাতটি ধরে বললো,
"আমি প্রতিদিন তোমার বৃষ্টি হতে চাই
আমি তোমার ওই কালোচোখের
স্বচ্ছ দিঘির জলে ঢুব দিতে চাই।
ঢুবসাতারের খেলায় মেতে থাকতে চাই
সারাটি জীবন।
তুমি থাকবে কি আমার?
ঢুব দিতে দিবে কি আমায়?
মুমুর সারা শরীর তখন থরথর করে কাঁপছিল। কি বলবে সে? কেন তার এমন অনুভুতি হচ্ছে?
--- আরেহ তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? আমি কি তোমাকে গিলে খাচ্ছি? ওহ শীতে কাঁপছো? ইশ্ রে বৃষ্টির এত কাছে আসার কি দরকার ছিলো চলো রুমে চলো।
আরাফ মুমুকে হাত ধরে রুমে এনে বিছানায় বসালো।
--দেখো মুমু আজ থেকে আমি তোমার স্বামী, তোমার সবচেয়ে আপন। তোমার যেকোন সমস্যা, কষ্ট, সুখ-দুঃখ আমাকে শেয়ার করতে পারো। আমি এসব দেখবো না তো কে দেখবে?
আমি জানি তোমার পিরিয়ড প্রবলেম চলছে।
-- আপনি জানলেন কেমন করে?
মুমু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
-- আরে বোকা তুমি যখন তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলে তখনই বুঝে ফেলেছি। সমস্যা নেই আমি আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। এই ড্রয়ারে তোমার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। আর এরকম সময়ে মেয়েদের সবসময় হাসিখুশি রাখতে হয়। আমিও তাই তোমার সাথে মজা করছিলাম। চলো আমার স্টাডি রুমে তোমাকে আমার বই দেখাই, তোমার বই পড়তে ভালো লাগলে সবসময় পড়তে পারবে।
মুমু ওর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো আর আরাফ ওকে টানতে টানতে স্টাডিরুমে নিয়ে চললো। আরাফের কোন কথাই মুমুর কানে যাচ্ছে না। সে একদৃষ্টিতে আরাফকেই শুধু দেখছে।
মাঝরাতে সত্যিই ওরা চুপিচুপি খাবার গরম করতে রান্নাঘরে গেলো। টর্চের আলোতে এরকম হাঁটাচলা মুমুর অভ্যাস নয়, তারউপর এত ভারী শাড়ি পরে আছে। বাকি সবকিছু খেয়াল আছে মানুষটার কিন্তু শাড়ি পরে যে হাঁটতে পারছেনা সেটা দেখছে না। রাগের ছোটে হাঁটতে গিয়ে শাড়িতে বেঁধে একটা চেয়ার সহ রান্নাঘরে উল্টে পড়লো।
--- ইশ্ দিলে তো সব নষ্ট করে। এখন আপু আসবে বিড়াল খুঁজতে। টেবিলের নিচে ওকে টেনে নিয়ে বসে আরাফ ফিসফিস করে বললো।
---এখানে বিড়াল আছে? আমার বিড়ালে এলার্জি তো!
--- উফ্ বিড়াল মানে আমি। আপুরা জানে আমি মাঝরাতে এসব করি, আমাকে বিড়াল ডাকে।
মুমু ফিক করে হেসে দিলো। আসলে পুরো বিষয়টা এখন তারও ভালো লাগছে।
--- আরাফ বের হয়ে আয় বলছি। আজ বিয়ের রাতেও নতুন বউকে নিয়ে তুই এসব করছিস? তোর কমনসেন্স বলতে কিছু নেই? বের হ বলছি।
দুজনেই টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে আসলো। আরাফ মাথানিচু করে বললো, স্যরি আপু খুব ক্ষিদে লাগছিলো তো, তাই.. আমার কোন দোষ নেই ও উল্টে পড়েছে।
--- চুপ! ইশ্ রে ওর শাড়িটাও খুলেনি। কি একটা অবস্থা করেছে মেয়েটার। আর কবে বড় হবি তুই আরাফ? যা ওকে নিয়ে রুমে যা, আমি খাবার গরম করে আনছি।
--- না না আপু, আপনি কষ্ট করবেন না। আমিই গরম করে নেবো। আসলে শাড়ি পরা হয়নি তো কখনও।
--- জানি বোন। তুমি গিয়ে শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হও, এই উল্লুক এসব সাজগোজের মানে বুঝবে না। যাও আমি খাবার গরম করে আনছি। তারপর তিনি অগ্নিচোখে এমনভাবে তাকালেন যে আরাফ মুমুর হাত ধরে রুমের দিকে দৌড় দিলো।
দুজনে রুমে এসে হাসতে হাসতে কুটিকুটি হলো। একসময় আরাফ মুমুর দিকে তাকিয়ে বললো, এমনই একজন মানুষের অপেক্ষায় ছিলাম, যে আমাকে বুঝবে, আমার সব জেনেও ভালোবাসবে।
--- আপনার সব মানে..?
এমনসময় বড়আপু ঘরে ঢুকায় দুজনের কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো।
---খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো দুজন। নাহলে ফজর মিস হবে, কয়টা বাজে দেখেছো?
উনি চলে যাওয়ার পর চুপচাপ খাওয়া শেষ করে দুজনই শুয়ে পড়লো।
মুমু মনে মনে ভাবছিলো, আজকের রাতেই সব বলতে চেয়েছিলাম আরাফকে। তারপর সে সিদ্ধান্ত নিতো কি করবে। কিন্তু সে সুযোগই পেলাম না। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলে দেবো। কিন্তু ওরই বা কি কথা আছে, যা আমিই শুধু মেনে নেবো ভাবছে?
কখন যে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলো বুঝলোই না মুমু।
মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের সূমধুর কন্ঠে ভেসে আসছে, আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম (ঘুম থেকে নামাজ বড়)
তখনই ওর চোখ খুলে নিজেকে আরাফের একেবারে কাছে আবিস্কার করলো। ছেলেটা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে লজ্জায় মাথানিচু করে বললো, আপনি ঘুমান নি?
--- ঘুমালে কি এত সুন্দর ঘুমন্ত মুখ দেখতে পারতাম? এরকম ঘুমঘুম মুখের নিঃশ্বাস অনুভবের জন্য আমি হাজার রাতও জাগতে রাজি সুন্দরী। বলো তুমি আমার সাথে থাকবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত?
-- ইশশ্ আপনি সবকিছুতেই ফান করেন কেন? উঠুন নামাজের জন্য রেডি হতে হবে।
মুমু চুপচাপ উঠে বাথরুমে চলে গেলো। বাহিরে তখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে বিজলী চমকাচ্ছে। কেন যেন মুমুরও আজ চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে, ইচ্ছা করছে মুষলধারায় অশ্রু বর্ষণ করতে।
বৃষ্টির জন্য আরাফ ঘরেই নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে সে মুমুর হাত ধরে বললো,
--আমি জানি মুমু তোমার যে পিরিয়ড হয়না। আর এও জানি তুমি চাইলেও কখনও মা হতে পারবে না, তোমার ওইরকম কোন অনুভুতিও নেই।
--আপনি জানলেন কোথা থেকে? আপনি কি জেনেই আমাকে বিয়ে করেছেন? এখন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবেন? সুর্য্যের আলো ফুঁটতেই আমাকে বাবার বাড়ি চলে যেতে হবে?
মুমুর গাল বেয়ে তপ্ত অশ্রুধারা নেমে যাচ্ছিলো।
--- আরে পাগলী কাঁদছো কেন? আমি যদি তোমাকে একই প্রশ্ন করি? যে আমি নিজেই এমন একজন মানুষ যার পৌরুষত্ব নেই? তখন কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে?
মুমু কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না, তাকে অবাক করে রেখে আরাফ চা বানাতে চলে গেলো।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ




তৃতীয় পর্ব

-মেহজাবিন মুন

--- আগে চা টা খেয়ে নাও তারপর আরামসে বসে কথা বলা যাবে। ভোরের শান্ত নির্মল বাতাস খুব ভালো লাগছে তাইনা?
আরাফ চা রেডি করে মুমুকে নিয়ে বেলকনিতে এসে বসলো।
--- আপনি কোথা থেকে এসব শুনেছেন বলুন না, আপনি কি আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন?
--- উফ্ তোমাকে তো টিয়াপাখি বলে ডাকতে হবে, এতো বলতে পারো তুমি! আর বলছি না আপনি আপনি করবে না। এই বস্তাপচা শব্দ আমার ভাল্লাগে না, পর পর লাগে।
--- আমার কথার উত্তর দিন আগে, এরপর অন্য কথা।
--- চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মুমু। পরে শুনলে হয়না।
--- এখানে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে আর আপনি চা ঠান্ডার চিন্তা করছেন? আপনি একটা কেয়ারলেস মানুষ, শুধু নিজের চিন্তা করেন। আর কোন কিছুতেই আপনার যায় আসে না, আমি নাহয় চলেই যাবো তবে আপনাকে ভালো করে চা খাইয়ে তবেই যাবো। মুমু চায়ের কাপের সম্পূর্ণ চা পানির গ্লাসে ঢাললো, তারপর পানির গ্লাস আরাফের মাথার উপর ঢেলে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুমে গিয়ে কাপড়চোপড় গুছাতে শুরু করলো।
রাগ করার বদলে আরাফ হাসতে হাসতে বললো,
--- কি দস্যি বউরে বাবা, বিয়ের পরদিনই স্বামীকে টর্চার শুরু করছে। আমি কিন্তু শাশুড়ী মাকে সব বলে দেবো।
আরাফের আচরণে মুমুর রাগে দুঃখে চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে, এরকমভাবে কোনদিন সে উপহাসের পাত্রী হয়নি।
--- আমি এখন বাড়ির সবাইকে বলে দেবো আমার কথা। তারপর চলে গেলে আপনার কি? আমি তো আপনার কিছুই না তাইনা?
মুমু ঘর থেকে বের হতে চাইলে আরাফ তার হাত ধরে ফেললো।
--- নায়রার বিয়েতে যাবে না? যাও রেডি হও, আমরা একসাথেই যাবো।
--- আমি নিজের চিন্তা করছি আর আপনি বিয়ের চিন্তা?
--- যে তোমার এত বড় উপকার করলো তার বিয়েতে যাবে না? আসলে মুমু আমি নায়রার সাথে বিয়ের আগে দেখা করেছিলাম তোমার সম্পর্কে জানার জন্য। ও আমার সাথে মিথ্যা বলেনি, সব জেনেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন খুশি তো? যাও রেডি হও।
মুমু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এ বাড়িতে আসার পর থেকে সে শুধু অবাকই হচ্ছে। সে আরাফকে জড়িয়ে ধরবে কি হাত ধরবে বুঝতে পারছে না। একটুক্ষণ পর খপ করে আরাফের হাত শক্ত করে ধরে বললো,
--- আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। স্যরি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আপনার মতো বড় মনের একজন মানুষকে আমি না জানি কতকিছু বলেছি।
--- এইরকম বিনয়ে নুয়ে পড়ে আপনি আপনি করা ভালো লাগেনা। একটু আগে যেমন দস্যি মেয়ের মতো ঝগড়া করছিলে সেটাই আমার পছন্দ বুঝেছো? এখন থেকে প্রতিদিন আমরা ঝগড়া করবো।
--- জি আচ্ছা। হাসিমুখে বললেও মুমু অবাক হয়ে ভাবলো এ কেমন ছেলেরে বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করতে চায়!
আরাফ মুমু দুজনেই খুশিমনে নায়রার বিয়েতে গেলো।
মুমু আজ অনেক খুশি, আজ তারা দুই বান্ধবীর জীবনেই নতুন খুশির আগমন ঘটেছে।। সারাক্ষণ নায়রার পাশাপাশি থাকলেও মানুষ থাকার কারণে নায়রাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। তবে মুমুর খুশি দেখে নায়রাও খুব খুশি হলো। আর ফিসফিস করে বললো,
-- আল্লাহ সত্যবাদীদের ভালোবাসেন, আর তাদের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সখী এই কথাটা সবসময় মনে রাখিস, আর দু'আ করিস।
--- সত্যিই সখী, আমিও দু'অা করি তোর জীবনটাও যেন আনন্দে ভরে উঠে।
রাতের বেলা নায়রা তার স্বামী ফারদিনকে সবকিছুই খুলে বললো।
সব শুনে ফারদিন শান্ত সূরে জিজ্ঞেস করলো ,
---আমি তো তোমাকে মেনে নাও নিতে পারি, এসব জেনেও তুমি কেন আমাকে আজই সবকিছু বলেছো?
--- আমি চাইনা মিথ্যার আশ্রয়ে জীবন সাজাতে। আমি বরাবরই মিথ্যা বলা পছন্দ করিনা, আর যখন হেদায়েতের পথে পা বাড়ালাম তখন তো এটা চিন্তা করাও আমার জন্য কঠিন। এক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমার মাঝে চারটি জিনিস থাকবে, তখন দুনিয়ার সবকিছু হারিয়ে গেলেও তোমার কোন সমস্যা নেই। (১) আমানত রক্ষা করা (২) সত্য কথা বলা (৩) সুন্দর চরিত্র (৪) বৈধ রুযী’ (আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৪১৮১)।
সুতরাং আমি কিছু হারানোর ভয় করিনা।
ফারদিন নায়রার কথা শুনে হাত ধরে হাসিমুখে বললো, ---তোমার কথাগুলা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এসব নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আমরা আবার চিকিৎসা করাবো, চেষ্টা করবো।
ফারদিনের কথা শুনে নায়রা তার বুকে শান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো আলহামদুলিল্লাহ!। আর ভাবলো আল্লাহ সৎপথে থাকা প্রত্যেক মানুষকে সাহায্য করেন, আমাদের শুধু উচিত দু'আ আর আমল করে যাওয়া।
বাড়ির সবাই নায়রাকে খুব আদর করে, ভালোবাসে। নায়রা এত শান্ত আর নম্র স্বভাবের মেয়ে যে রাশভারী ফারদিন ও দুইদিনের মাথায় নায়রার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করলো।
মুমু নায়রা দুজনই মনের দিক থেকে দুটো সুন্দর মন খুঁজে পেয়েছে, পেয়েছে সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ।
কিন্তু জীবন তো এভাবে চলার নয়, জীবন পথে মানুষকে যে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, কখনও ধৈর্য্য পরীক্ষা, কখনও বিপদ, কখনও বা কঠিন কোনকিছু।
একসপ্তাহ পর...
মুমুরা বাগানো তাদের বাংলো তে চলে আসলো।
বিকালবেলা মুমু ড্রেসিং টেবিলে বসে তার চুল আঁচড়াচ্ছে। মনে চলছে তার গভীর ভাবনা। আরাফ সুন্দর সুঠাম গঠনের একজন প্রাণবন্ত ছেলে। তার তো একটা চাওয়া-পাওয়া ইচ্ছা, স্বপ্ন আছে। এভাবে তো নিজে কিছু পাওয়ার জন্য আরেকজনের স্বপ্নকে ভেঙে দিতে পারিনা। এতটা স্বার্থপর হওয়া বোধহয় ঠিক হবে না, হয়তো একসময় সে বাহিরের দুনিয়ায় আকৃষ্ট হয়ে যাবে।
--- আর কতক্ষণ লাগবে চুল ঠিক করতে? আসো না তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
--- কি কথা বলো শুনছি। আমারও যে কিছু কথা আছে।
--- আমিও তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই মুমু। আমি চাইনা ধোঁকার মাধ্যমে জীবন চালাতে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন, "আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছু নয়।"
--- আজ তোমার কি হয়েছে বলো তো? কেন এমন করে কথা বলছো? বলে মুমু চুল খোঁপা করতে করতে ওর পাশে এসে বসলো।
--- ভালো লাগে তোমার চুল খোঁপা করা, দীঘল কেশের মোহময় সুগন্ধে ঢুবে যাওয়া। ভালো লাগে কল্পনায় তোমায় নিয়ে উড়ে যাওয়া সুদূর কোন স্বপ্নরাজ্যে। যেখানে থাকবে না কোন বাধা, কোন না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
মুমুকে তার পাশে বসাতে বসাতে আরাফ কথাগুলো ছন্দের সূরে বললো।
--- আজ বড় কবি কবি ভাব লাগছে যে? কি এমন বলবে তুমি যেটা ধোঁকা থেকে বাঁচাবে?
--- আমি যা বলবো তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নিবে তুমি কি করবে। আমি এই কথা একমাত্র তোমাকেই বলছি, আর সর্ব দ্রষ্টা মহান রব তো জানেনই। বলো তুমিও কাউকেই বলবে না।
--- কি এমন কথা যেটা এতটাই গোপন, কাউকে বলা যাবেনা? তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে বলো, ইনশাআল্লাহ পরিপূর্ণ জ্ঞান অবস্থায় এই কথা কারও কাছে বলবো না।
মুমু একটু ভয়ে ভয়ে কথাটা বললো, না জানি কি কথা সেটা ভেবে সে ঘাবড়ে গিয়েছে।
--- মুমু আমি এইডস আক্রান্ত। গত ছয়মাস আগে একজনকে ব্লাড দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে আমি এইচআইভি পজিটিভ এ আক্রান্ত। আর তুমি তো জানো এই ধরণের রোগীর কোন চিকিৎসা নেই। আমার আপুরা শুনলে কি পরিমান কষ্ট পাবে বুঝতেই পারছো। তাই আমি এ কথা কাউকেই বলতে চাইনি। কিন্তু উনারা বিয়ের জন্য জবরদস্তি করতে করতে একসময় বাধ্য হয়ে হ্যা করে দিলাম। তোমার সম্পর্কে জেনেই তবে এই বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছি এক কথায়। যাতে যৌন সম্পর্ক স্থাপণ করা না লাগে। অবশ্য তোমাকে আমার অনেক পছন্দও হয়েছে। আর এখন তো ভালোবসি।
--- যদি অন্যকোন মেয়ে হতো তখন কি করতে? কাঁপা কাঁপা গলায় মুমু বলে উঠলো।
--- তখন বলে দিতাম আমি তিন নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা। আর সেটা কি বুঝতেই পারছো? হা হা হা..
আরাফ পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য হেসে দিলো।
কিন্তু ততক্ষণে মুমুর চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে, ও এতবড় একটা কথা শুনবে কল্পনাই করতে পারেনি।
এই রোগের পরিনতি নিশ্চিত মৃত্যু, কিন্তু তার ভোগান্তিটা যে কতটা ভয়াবহ তা শুধু ভোক্তভোগীরাই জানে।
--- আরে পাগলী কাঁদছো কেন? আল্লাহ যতদিন হায়াত রেখেছেন, ততদিন তো বেঁচে থাকবোই। আমি ভালো থাকার জন্য কত হাসিখুশি থাকি, প্রাণবন্ত চলার চেষ্টা করি। আর তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়ো হয়? আর আমরা দুজনই পবিত্র, আল্লাহ এভাবেই হয়তো চমাদের তাকদির নির্ধারণ করেছেন। আখিরাতে নিশ্চয় এর ভালো প্রতিদান পাবো।
মুমু ওর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো। যেন আজ প্রচন্ড কোন ঝড় এসে সব তছনছ করে ফেলেছে। মুমু মনেপ্রাণে সব ঠিক করতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। আর তা চাইলেই পারা যায়না।
--- মুমু আমি তোমাকে পূর্ণ অধিকার দিচ্ছি, তুমি চাইলে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো, আবার থাকতেও পারো।
মুমু আরাফের কথা শুনে ওকে ঝাপটে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। যেন আর থামতেই চায়না, এটা সবকিছু শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কান্না। কোন বহু মূল্যবান বস্তু পেয়ে হারানোর কান্না। আরাফও নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকলো।
--- এসব হলো কিভাবে আরাফ? কেমন করে ভাবলে তুমি আমি চলে যাবো তোমাকে ছেড়ে? তুমি না বলেছো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা একসাথে থাকবো?
--- জানিনা মুমু কিভাবে হলো। আমি যখন স্কলারশিপ এ বাহিরে যাই তখন আমরা একটা রক্তদান টিম গঠন করেছিলাম। যেখানেই রক্তের প্রয়োজন পড়তো, সাহায্যের প্রয়োজন পড়তো আমরা এগিয়ে যেতাম। কিছুদিন পর হুট করে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় আমার জ্বর আসা শুরু করলো, শুকনো কাঁশি হতো। আমি এটাকে পাত্তাই দেইনি। গতবছর দেশে এসে এ চাকরিতে যোগ দিলাম, শরীরের ওজন কমা শুরু হলো, দূর্বল, আর ক্লান্ত লাগতো শরীর, জ্বরও নিয়মিত থাকতো। ডাক্তার বললেন কিছু টেস্ট করাতে, সব টেস্ট রিপোর্ট তারা বারবার দেখে শিওর হলো আমার এইচআইভি পজিটিভ। উনাদের ধারণা কখনও অসতর্ক ভাবে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই ভাইরাস সংক্রমণ করেছে।
মুুমু সারারাত ধরে জায়নামাজে বসে কাঁদলো। তারপর একসময় উঠে গিয়ে আরাফের কম্পিউটারপর সামনে বসলো।
মুমু স্কুল জীবনে এইডস সম্পর্কে সংক্ষেপে যা লিখা ছিলো তাই পড়েছে, এরপর আর এই রোগ সম্পর্কে জানা হয়নি। আজ প্রথম এইডস সম্পর্কে মুমু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলো। আর ভাবলো আমাকেও কিছু একটা করতে হবে, ওর চিকিৎসার জন্য আমিও চাকরি করবো। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত ওর পাশে থাকবো ছায়ার মতো। এজন্যই হয়তো আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছেন।
জানার জন্য---
(এইডস (AIDS) হচ্ছে এইচ.আই.ভি. (HIV) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এমন এক রোগ, যা মানুষের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এইডস (AIDS) এর পূর্ণরূপ হল- (Acquired Immune Deficiency Syndrome) যেহেতু এইডস শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্রমান্বায়ে ধ্বংস করে, তাই এইডসে আক্রান্ত রোগী খুব সহজেই যে কোন সংক্রামক রোগে (নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া ইত্যাদি) আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। এইডস এর কোন প্রতিষেধক বা কার্যকর ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয়নি।
মানবদেহে এইচআইভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা যাবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়া পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়কালে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
এইডস একটি ভয়ানক মরণব্যাধি।
এইচআইভি আক্রান্তের প্রাথমিক লক্ষণঃ
কখনো কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ৬ সপ্তাহ পরে কিছু অনির্দিষ্ট লক্ষন দেখা দিতে পারে যেমন- জ্বর, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। এইসব লক্ষন কোনরকম চিকিৎসা ছাড়াই আবার সেরেও যায়, সে কারণে রোগী এ ভাইরাস সম্পর্কে কোন ধারনা পায় না। HIV কোনরকম লক্ষন প্রকাশ ছাড়াই ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মানুষের শরীরে নিরবে অবস্থান করতে পারে।
এইডস রোগের লক্ষন
শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাবে।
২ মাসেরও বেশি সময় ধরে পাতলা পায়খানা।
ঘন ঘন জ্বর হবে অথবা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হবে।
শুকনা কাশি হওয়া।
এইডস এর সূনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ নেই। আবার এইডস আক্রান্ত ব্যাক্তি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হলে সে রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। কারো মধ্যে উপরের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে তার এইডস হয়েছে। তবে, কোন ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিলম্ব না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ
এইচআইভি সংক্রমণ কিভাবে হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
কোন কারণে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে রক্তদাতার রক্তে এইচআইভি আছে কি না সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে হবে।
যৌনসঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং মিলনের আগে খোলাখুলি কথা বলে নিরাপত্তার ব্যপারে নিশ্চিত হতে হবে।
অনিরাপদ যৌনমিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে।
যেকোনো যৌনরোগে আক্রান্ত হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিবারই ইনজেকশনের নতুন সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের ক্ষেত্রে, সন্তান গ্রহণ, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যৌনরোগ এবং এইচআইভি’র সম্পর্কঃ
যৌনরোগ এবং এইচ আই ভির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যৌনরোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একজন সুস্থ্য মানুষের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এসটিডি (Sexually Transmitted Disease) এবং এসটিআই (Sexually Transmitted Infection) হচ্ছে এমন কিছু রোগ বা সংক্রমণ যা সাধারণত অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আবার কিছু কিছু যৌনরোগ যৌনমিলন ছাড়া অন্য উপায়েও সংক্রমিত হতে পারে।
এইডস কিভাবে ছড়ায়ঃ
বাতাস, পানি, খাবার কিংবা স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না। সাধারনত এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থের (রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধ) মাধ্যমেই ছড়ায়। সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত কিছু উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারেঃ
এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে অথবা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।
এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে।
আক্রান্ত ব্যাক্তি কতৃক ব্যবহৃত সুচ অথবা সিরিঞ্জ অন্য কোন ব্যাক্তি ব্যবহার করলে।
আক্রান্ত ব্যক্তির কোন অঙ্গ অন্য কোন সুস্থ্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে।
এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও এইডস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষদিকে অথবা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডোভুডিন নামক ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কমানো যেতে পারে।
অনিরাপদ দৈহিক মিলনের ফলে অর্থাৎ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত কারো সাথে কনডম ব্যবহার না করে যৌন সম্পর্ক করলে।
এইচআইভি কোন কোন উপায়ে ছড়ায় না
বাতাস, পানি, খাবার এবং স্পর্শের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না।
আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে একই প্লেটে খাবার খেলে এইচআইভি ছড়ায় না।
আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে এইচআইভি ছড়ায় না।
একই বিছানা ব্যবহার কিংবা একই পোশাক পরিধান করলেও এইচআইভি ছড়ায় না।
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি থেকে এইচআইভি ছড়ায় না।
একই পুকুরে গোসল করলে এইডস ছড়ায় না।
মশা কিংবা অন্য কোনো পোকা-মাকড়ের কামড়ের মাধ্যমেও এইডস ছড়ায় না।
এইচ.আই.ভি. সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয় শরীর থেকে নিঃসরিত অধিকাংশ তরলেই এইচ.আই.ভি. ভাইরাস থাকে। তবে স্নেহপদার্থের আবরণ থাকায় এইচ.আই.ভি. অত্যন্ত ভঙ্গুর। তাই এইচ.আই.ভি. ভাইরাস শরীরের বাইরে বেশীক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। তাই সরাসরি রক্ত বা যৌন নিঃসরণ শরীরে প্রবেশ না করলে এইচ.আই.ভি. সংক্রমণের সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। স্পর্শ, একত্রে খাওয়া এমনকি একই জামাকাপড় পরলেও এইচ.আই.ভি. সংক্রমনের কোন সম্ভাবনা নেই। আবার মশার কামড়েও এইচ.আই.ভি. ছড়ায় না। তাই, এইচ.আই.ভি. সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়।
পরিচর্যাঃ
এইডস যেহেতু একটি মরণব্যাধি আবার একজন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্যকে সংক্রমিত করে না। তাই, এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আমাদের সামজ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন না করে তাকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সাহায্য করতে হবে। যেমন-
অক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই সে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে না। তাই তাকে স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করায় উৎসাহিত করতে হবে।
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ ও সৌহার্দ্যমুলক আচরণ করতে হবে।
তাদেরকে মানসিকভাবে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে।
তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে।
এইচআইভি অক্রান্তদের তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বঞ্চিত না করা।
এইডস রোগের চিকিৎসা
এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য এবং এর কোনো সঠিক চিকিৎসাও নেই। তবে কিছু কিছু ঔষধ আছে যা ARV (Anti Retroviral Drug) নামে পরিচিত, এগুলো এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করে। প্রথম গ্রুপ এর ঔষধের নাম Nucleoside reverse transcriptase inhibitors, যা HIV সংক্রমনকে কিছুটা বিলম্বিত করে। দ্বিতীয় গ্রুপ এর নাম Protease inhibitors যা HIV ভাইরাস replication এ বাধা দেয়। এদের যে কোন একটি গ্রুপ এর ঔষুধ একা শরীরে কার্যকর হয় না, তাই সম্বিলিতভাবে দুইগ্রুপের ঔষধ দেয়া হয়। যদিও এটি এইডস উপশম করেনা, তবে এইডস রোগীর মৃত্যু কিছুটা বিলম্বিত করতে পারে। এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল।)
.
চলবে ইনশাআল্লাহ



কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.