আল্লাহর কাছে আসার গল্প


দ্বীনের পথে যাত্রা শুরু করি ২০১২ সাল থেকে।
এই যাত্রা শুরু করা অাল্লাহ রব্বুল অালামিন এর অশেষ দয়া ও মেহেরবানী ছাড়া অার কিছুই নয়।
.
জানিনা কি হলো!
হঠাৎ ইসলামের কথা, দ্বীনের কথা ভালো লাগতে শুরু করল।
একদিন ভাইয়া এসে বলল সে জানতে পেরেছে গান শোনা হারাম, গান শুনলে কানে গলিত সীসা ঢালা হবে।
তাই সে তার মোবাইলের সব গান ডিলিট করে দিয়েছে।
.
অাল্লাহু অাকবার!
কথাটা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।
অামিও গান শোনা ছেড়ে দিলাম।
অথচ ছোট বেলা থেকেই মা নামায পড়ার জন্য ও নিয়মিত কুরঅান তেলাওয়াতের জন্য শাসন করত, নামায না পড়ার ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণনা করত।
কিন্তু তবুও তা অামলে নিতাম না।
কিন্তু সেদিন কি হলো জানিনা, বিনা বাক্যে ভাইয়ার কথা মেনে নিলাম!
.
সেই থেকে পথ চলা শুরু।
অাস্তে অাস্তে নামাযের প্রতিও যত্নবান হতে শুরু করলাম।
কিন্তু পর্দার সঠিক বুঝ পরিবারের ছিলোনা।
ছোটো বেলা থেকে শুনে বড় হয়েছি হাত, মুখ অার পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
অার নিকাব পরা উত্তম।
তাই নিজ ইচ্ছায় ক্লাস এইট থেকে বোরকা নিকাব পরলেও নিজ বাসায় এবং অন্য করো বাসায় গায়রে মাহরামের সামনে নিকাব পরতাম না।
গায়রে মাহরাম কি সেটাই জানতাম না!
তবে উত্তম ভেবে ইভটিজিং এর হাত থেকে বাঁচার জন্য রাস্তায় নিকাব পরতাম।
এদিকে অামাদের বাড়িওয়ালাী অান্টি দোতলা থেকে নিচতলায় অামাদের বাসায় বোরকা-নিকাব পরে অাসতেন। অামাদের সামনের বাসায় উনার ভাসুর থাকতেন।
একদিন উনার ভাসুরের ছেলের বৌ, যিনি প্রেগন্যান্ট ছিলেন, উনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন।
তো সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছেন, উনাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য ছুটাছুটি করছেন, কিন্তু বাড়িওয়ালী অান্টি এ পরিস্থিতিতেও বোরকা নিকাব পরে ওখানে গেলেন।
বিষয়টা অামাকে প্রচণ্ড ভাবালো!!
.
অাবার ভাইয়া এসে গল্প করতো ওদের ক্লাসে একটা মেয়ে কখনো নিকাব খোলেনি, বাধ্যতামূলক স্টাডি ট্যুরে যখন সে যেতো, অাড়ালে গিয়ে একা একা লাঞ্চ করতো তবু কারো সামনে নিকাব খুলতো না।
তো দেখতাম এ মানুষগুলোকে সবাই সম্মান করে।
অার অামি ভাবতাম উত্তম কাজ করায় সবাই যখন সম্মান করে তবে অামিও
উত্তমটাই বেছে নিবো।
.
ইতোমধ্যে অামার জীবনে পড়া প্রথম ইসলামিক বই ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এর "মুসলিম চরিত্র গঠন" থেকে জানতে পারলাম প্রেম করা হারম!
তো গার্লস স্কুল ও মহিলা কলেজের পর যখন অামার কম্বাইন্ড ভার্সিটিতে পড়ার সময় এলো তখন অামিও নিকাব পরে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম এবং নিকাব পরেই ক্লাস করা শুরু করলাম যাতে ছেলেরা অামাকে প্রপোজ করতে না পারে।
এদিকে ভার্সিটিতে অামাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ব্যাচের এক দ্বীনী অাপুর সাথে পরিচয় হলো।
উনি সূরা অাহযাব এর ৫৯ নং অায়াতের রেফারেন্স দিয়ে নিকাব ফরজ হওয়ার কথা বললেন এবং ভাইভাতে স্যারদের সামনে নিকাব খুলতে নিষেধ করলেন। অামি ও অামার এক ফ্রেন্ড, অামরা নিকাব ফরজ না জানা স্বত্বেও ক্লাসে নিকাব পরতাম।
তো অাপুর কথা ও মেনে নিলেও অামি মানতে পারিনি।
বাসায় বলার পর বাসা থেকে বলল, ফিতনার অাশঙ্কা না থাকলে নিকাব খোলা যায়।
অার এটাতো প্রয়োজন।
তাই অামি অামার ফ্রেন্ডের ভুল ভাঙ্গানোর জন্য ৫৯ নং অায়াতের বাংলা অনুবাদ দেখি।
অামাদের বাসায় দুজন ভিন্ন অনুবাদকের দুই মুসহাফ কুরঅান ছিলো।
তো এক মুসহাফের বাংলা অনুবাদে সরাসরি নিকাবের কথা থাকলেও, অন্য মুসহাফে সরাসরি নিকাবের কথা ছিলোনা।
তাই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। অামার ছোটো ভাই অালিয়া মাদ্রাসায় পড়তো।
ওর বইয়ে নিকাবের মাসআলা পড়লাম, কিন্তু নিকাব ম্যান্ডেটরি না বেস্ট তা ক্লিয়ার হলাম না।
এরপর ফেইসবুকে অালেমা অাপুদের একটা পেইজে নক করে জিজ্ঞেস করলাম নিকাব ফরজ কি না?
উনারা বললেন সৌন্দর্য ঢেকে পরিপূর্ণ পর্দা করতে যা করা প্রয়োজন সবই ফরজ।
এই কথার উপর ভিত্তি করে অামিও নিকাবকে ফরজ হিসেবে গ্রহণ করি এবং গায়রে মাহরামের সামনে নিকাব খোলা বন্ধ করে দেই।
.
সুবহানাল্লাহ!
অামার ফ্রেন্ডকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে অামিই ভুল প্রমাণিত হলাম।
কিন্তু বাসায় এর জন্য বকা শুনতে হয়।
শুনতে হয় অামি বাড়াবাড়ি করছি, কারন ইসলাম এতো কঠিন না!!
.
এদিকে ভার্সিটিতে জুনিয়রদের ভর্তির দিন এক জুনিয়র বোনকে দেখলাম অাপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা, হাত মোজা, পা মোজা পরা, চোখে চশমা।
মুগ্ধ হয়ে কত সময় তাকিয়ে রইলাম! ভাবলাম ও যদি এভাবে অাসতে পারে, তবে অামি কেনো নই!?
.
অামিও রঙিন ছেড়ে সম্পূর্ণ কালো গ্রহণ করলাম এবং হাত মোজা, পা মোজা পরা শুরু করলাম।
ফেসবুকে বেশ কিছু দ্বীনি বোনের ফ্রেন্ডলিস্টে ঠাঁই পেলাম এবং দ্বীনি পেইজ ও গ্রুপের লেখা ফলো করা শুরু করলাম। এরপর একদিন ভাইয়া দৈনন্দিন মাসআলা মাসায়েলের জন্য একটা বই কিনে অানলো।
.
ঐ বই এর পর্দার চ্যাপ্টার পড়ে অামি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হলাম নিকাব পরা কোনো ঐচ্ছিক বা উত্তম বিষয় নয়, বরং মাথা ঢেকে রাখার মতোই বাধ্যতামূলক বিষয়। তেমনি হাত-পা ঢেকে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাছাড়া নারীদের কম্বাইন্ড এডুকেশনে পড়া ও বিনা প্রয়োজনে চাকুরী করা কোনটাই জায়েজ নয়।
ফলে পরিবারের চাপে অনার্স কমপ্লিট করলেও মাস্টার্স ও চাকুরী করা থেকে নিজেকে অাল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিরত রেখেছি, অালহামদুলিল্লাহ।
:
কার্টেসীঃ দ্বীনের পথে ফিরে আসা জনৈকা বোন




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.