আল্লাহর কাছে আসার গল্প
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমত যে আল্লাহ তার অসংখ্য বান্দা বান্দীর মধ্যে আমাকে তার হেদায়েতের ছায়ায় স্থান দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ যার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না
প্রথমেই বলি আমার আগের জীবন সম্পর্কে। আমি ছিলাম মোটামুটি মর্ডান স্টাইলিশ একটা মেয়ে
আব্বু ছিলো ধার্মিক আর আম্মুও ছিলো মোটামুটি।
আমরা তিন বোন এক ভাই আমি ছিলাম তৃতীয় জন। তো আমরা ভাইবোন কেউই আল্লাহর পথে ছিলাম না যেটা আমার আব্বুর জন্য ছিল খুবই কষ্টের বিষয়। তোহ স্কুল জীবনে সিক্স থেকেই বোরখা পড়তাম তবে তা ছিল আব্বুর ভয়ে । আব্বুর অগোচরে তখন নাচ গান সবাই করছি কারণ খুবই ভালো লাগতো। কলেজে উঠেও সেম অবস্থা। এমন ছিলো যে ঘুমাতে যাওয়ার সময় গান শুনতে শুনতে যাইতাম আর উঠতাম ও গান নিয়েই।
সেসময় রিলেশনশিপে ও জড়িয়ে গিয়েছিলাম। এককথায় প্রায় আমার চলাফেরার সবই ছিল হারাম পথে।আল্লাহ মাফ করুক 😓। তবে এত এত গুনাহ করলেও বাহিরে শান্তশিষ্ট আর ভদ্রভাবেই চলতাম
নামাজ পড়তাম তাও আব্বু আম্মুর বার বার বলার কারণে তবে বাদও যাইতো ।আব্বু তাবলীগ করে যার কারণে আমাদের বাসায় ও দেশ বিদেশের অনেক জামাত আসতো ।আমিও গেছি তবে বাসায় এসে যা তাই। তবে ইচ্ছা ছিলো জীবনে পর্দা করবো কোনোএকদিন।
জামাত আসলে বাসায় একটা আন্টি আসতো যে আমাদের অনেক বুঝাইতো যখন আসতো তখনই বুঝাতো আমাদের কিভাবে চলা উচিত আল্লাহর পথেই শান্তি আরও অনেক কিছু । তার এত বোঝানোতে মাঝে মাঝে মন নরম হতো দু'দিন পর সব ভুলে যাইতাম । শেষ যেদিন আবারও বুঝাইলো তার পরদিন পর্যন্ত মনেহয় নামাজ পড়েছিলাম পরে বাদ দিছি তার কিছুদিন পর একদিন রাতে স্বপ্ন দেখছিলাম আমি একটা রাজমহলে আছি যেখানে ফ্লোরে অল্প পানি আর আমার চারপাশে অনেক সাপ।এক কথায় যেখানে পা দিচ্ছি ওখানেই সাপ। আমি আবার আগে থেকেই মাঝে মাঝে সাপ বিচ্ছুর স্বপ্ন দেখতাম আর কেন জানি না স্বপ্ন দেখলে মনে হতো এটাই আমার কবরের আজাব কবরের পরিণতি তাই এমন স্বপ্ন দেখলে কিছুদিন নিয়মিত নামাজ হতো।
তো সেদিন কেমন মনটা হঠাৎ পাল্টে গেল মনে মনে বললাম আর নামাজ বাদ দেবোনা পর্দা করবো এই ভেবে আবার মনে হলো নাহ পর্দা বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এসে করবো (তখন একটা দাওয়াত ছিল) , ঐ দিন থেকে করবো সেই দিন থেকে করবো মানুষ কি ভাববে এমন নানা ভাবনা শুরু একদিন কি একটা খুজতে গিয়ে
হাদিসের বই গুছাতে থাকলাম তো একটা বই পেলাম বইটা অনেক পুরাতন এবং পাতলা নাম স্বামীর খেদমত ও পর্দা এমনই কিছু একটা ।তো সেটা পাশে রেখে বই গুছিয়ে রেখে ওটা পড়তে লাগলাম।
বইয়ে আহামরি কিছু ছিলো না তবে আমার খুব ভালো লাগলো মনে মনে বললাম আমি কোথাও যাব না পর্দা এখন থেকে করবো,যে যা ভাবে ভাবুক ।
সেই দিন থেকে শুরু বাহিরে যাওয়া বাদ দিলাম।ফোন থেকে সব গান ডিলিট করলাম ফেসবুকে পিক ছিলো সেসবও ডিলিট দিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
পরিবার নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নি আমার তবে বাহিরে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একটা সংস্থা থেকে ব্লকের কাজ শিখতে গেছিলাম প্রথম দিনই অপমান করছে মুখ না খোলার জন্য পরে আবার ডাকছে। তারপর শুরু হলো অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা সেখানে পর্দার জন্যে কথা শুনতে হলো শেষমেশ স্যার পুলিশের ভয় দেখালো ১৫-২০মিনিট পর মহিলা ডেকে ভেরিফাই করলো এটা ছিল প্রথম বর্ষের পরে আসলো দ্বিতীয় বর্ষ যা ছিল খুবই কষ্টের ।
দ্বিতীয় বর্ষে এমন একটা দিন যায় নাই অপমানিত হতে হয় নাই বিশেষ করে ম্যাডামগুলা ভেরিফাই করার সময় কি বলছে আর না বলছে তার হিসাব নাই। শেষ পরীক্ষার দিন রুম থেকে বের করে দিছে প্রায় ৩০মিনিট ঘুরে ঘুরে ভেরিফাই হতে হয়েছে কান্না চলে আসছে তাদের কথায় ছিল তোমার দিকে কে তাকিয়ে থাকবে? সবাই নিজেরে নিয়ে ব্যস্ত, চলে যাও ভেরিফাই করবো না পরীক্ষা দিতে হবে না তোমার।
তবে এত কিছু বলেও ভেরিফাই করছে এটাই আলহামদুলিল্লাহ তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে এটা আল্লাহর জন্য করছি প্রতিদান ও আল্লাহ ই দিবে দোয়া করি আল্লাহ উনাদের হেদায়েত দান করুক আমিন। আমার দুই বোন এখনও ঠিকমত নামাজ পড়ে না ।বলে বলে এক ওয়াক্ত দুই ওয়াক্ত পড়ে সবাই দোয়া করবেন যেন আল্লাহ ওদের ও হেদায়াত দান করেন, ভাইটাকে বড় আলেম হওয়ার তৌফিক দেন আর আমার জন্যও দোয়া করবেন আমি যেন আল্লাহর হুকুম গুলো মেনে চলতে পারি।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি
শামছুন্নাহার রুমি
কোন মন্তব্য নেই
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু