আল্লাহর কাছে আসার গল্প

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। আমার বাবা ধার্মিক ও আমার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তিনি খুব ছোট্ট বেলা থেকেই আমায় কুর'আন পড়া শিখিয়েছিলেন। আমার বাবার প্রবল ইচ্ছা ছিল তিনি তার সন্তানকে ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজ পড়াবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। তিনি আমার ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজকে আমার জীবনে পাকাপোক্ত করে দিয়েছিলেন।
দিন চলতে থাকে। ক্লাস ৪ এ অধ্যয়নরত অবস্থায় আমরা দেশে চলে আসি। এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আশেপাশের মানুষের আচরণ আমার মনে দাগ কাটে। যার ফলে আস্তে আস্তে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে থাকি। কাজিন আর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রচুর গান শুনতাম। আমি স্কুলে স্কার্ফ পড়ে যেতাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম এই স্কুলে স্কার্ফ পড়া যাবে না।
গরমের দিন স্কার্ফ পড়লে আমি নাকি অসুস্থ হয়ে যাব, এই তাদের যুক্তি ছিল তখন.!! ক্লাসমেটরাও কেউ হিজাব পড়ত না সেইভাবে। সব জায়গায় বোরকা পড়তাম শুধু কোচিং এ যাওয়ার সময় সালওয়ার কামিজ পড়তাম আর রুমে প্রবেশ করার পর ওড়না মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতাম। ইসলাম থেকে আস্তে আস্তে সরে গেলেও নামাজটা ছাড়িনি।
যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম, তখন এক স্যার আমাদের ইসলাম শিক্ষা ক্লাস নিতেন। উনি আমার সম্পর্কে জানতেন। যেহেতু আমার বাবা ইসলামের বেসিক জিনিসগুলো শিখিয়েছিলেন তাই ক্লাসে আমি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সহজেই দিতে পারতাম৷ আর একারণেই ইসলাম শিক্ষা স্যার আমায় যথেষ্ট স্নেহ করতেন। এই ব্যাপারটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন ইসলামকে জানার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। উনি আমায় যথেষ্ট অনুপ্রেরণাও দিতেন।
একদিন উনি ক্লাসে পোশাক, পর্দা ও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয়ে ৩০ মিনিট আলোচনা করলেন। উনি যা যা বলেছিলেন তার প্রতিটি কথা আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্ত তা সত্বেও আমার মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। সেদিন আমি স্যারের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে যোহর সালাত পড়ার সময় যে মনোযোগ টা সেদিন আমি পেয়েছিলাম তা হয়ত এরপরে আর কোনোদিন পাইনি৷
সেদিন থেকে আমার ভাবান্তর শুরু হল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ক্লাসের সবার মধ্যেই মনে হয় এই লেকচার টা শোনার পর ভাবান্তর হবে। কিন্ত না, আল্লাহ হয়ত সেদিন শুধু আমার জন্য স্যারের ওই কথাগুলোয় হেদায়েতের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনের পর গান যথাসম্ভব পরিহার করেছি। পিস টিভির মাধ্যমে ইসলামকে আবার জানতে শুরু করি। দ্বীনের পথে আসার পর নতুন সংগ্রাম শুরু হয়। প্রত্যেকটা সংগ্রামে আল্লাহ আমায় সাহায্য করেছেন।
আমি হাজার পাপী, নীচ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ আমায় কখনো নিরাশ করেন নি। আমলের খাতা এখনো শূন্য। এখনো আমি উদাসীন। এখনো অনেক কিছু বাদ আছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অনেকটা পথ বাকি। আমি জাহিলিয়াতে ডুবে যাচ্ছিলাম, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। দিনশেষে আমি যে বুঝতে পারি আমায় আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে, এই বোধটা আগে আমার ছিল না। এই বুঝটা যে আল্লাহ আমায় দিয়েছেন এই জন্য আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখনো হেদায়েতের পথে হাঁটা অনেকটা বাকি।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)

দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.