আল্লাহর কাছে আসার গল্প

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
২০১৭ সাল৷ সবে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স ভর্তি হয়েছি। জীবন যাপনে দুরন্তপনা। ফ্যাশন সচেতন। তবে পারিবারিক সঠিক শাসন ছিলো বলে উগ্র কখনোই ছিলাম না৷ ফ্যাশন সচেতন থাকলেও শালিনতার সীমা কখনো লংঘন করিনি। অন্যদের মত ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো ছিলো নেশা। এমনিতে কখনো চ্যাট ইনবক্সে কখনো কাউকে রিপ্লাই করতাম না৷ কিন্তু শয়তানের ধোঁকা যখন আসে তখন নিজেকে আটকানো মুশকিল হয়ে যায়।
হঠাৎ চ্যাট ইনবক্সে নক এলো। আমিও জানিনা কি মনে করে রিপ্লাই করলাম৷ ব্যস শুরু সেই থেকেই। কি এক অদ্ভুত আকর্ষন! ভালো লাগা! তীব্র মনের টান! এরপর দেখা হওয়া, এক সাথে সময় কাটানো, রিকশায় ঘুরা, রেস্টুরেন্টে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কথপোকথন... দূর্বলতা আমার ই বেশী ছিলো। তবে কখনোই বলিনি সেটা তাকে৷ আসলে আমাদের মাঝে প্রেম নামক সম্পর্কটা ছিলো না। সে এক অজানা ভালো লাগায় আমার কাছে আসতো৷ আমিও নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম না সে ডাকলে।
সে তার অতীতের দুঃখ ভাগ করে নিতো আমার সাথে। ভালবাসতো একটি মেয়ে কে। মেয়েটির অনত্র বিয়ে হয়ে যাওয়া তে তার জীবন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। সে নাকি কোনদিন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না৷ আমি জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে কেন আসেন আমার কাছে? জবাবে বলতো,, জানিনা৷ আপনাকে খুব ভালো লাগে। আপনাকে না দেখলে কষ্ট হয়৷ তবে সেটা ভালবাসা নয়।৷ এভাবে চলতে থাকে৷ আমি তার জন্য এক প্রকার উন্মাদের মত হয়ে যাই। আমার বান্ধবীরা বুঝাতো আমাকে কিসের পিছনে ছুটছিস? এটা তো মরিচিকা।।
হুট করে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আবার নিজের মন চাইলে হুট করে কোথা থেকে যেন চলে আসে। সে আমাকে নিয়ে নিজের মন মর্জি করতে থাকে। আমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। এদিকে তার খোঁজ নেই বেশ কয়েকদিন। যোগাযোগ করে না। আমি পড়তে পারিনা। খেতে পারিনা৷ রাতে ঘুমাতে পারিনা৷ মনে সুখ নেই৷ মাস্টার্সের একটা পরীক্ষা মিস হয়ে যায় প্রিপারেশন খারাপ থাকায়। পরে অবশ্য সাপ্লিমেন্টারী দিয়েছিলাম সেই পরীক্ষার। পরীক্ষা শেষ হলো। রেজাল্ট দিলো। যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার সপ্তাহ খানিকের মধ্যই রেজাল্ট দিয়ে দেয়। ডিসিশন নিলাম এই ডিপ্রেশন থেকে বের হতে হলে আমাকে ব্যস্ত জীবন বেছে নিতে হবে। একটা জব এ জয়েন করলাম। শুরু হলো আমার ব্যস্ত জীবন। হঠাৎ আবার তার ফোন৷ জানালাম জব করছি। অফিসের ঠিকানা নিয়ে দেখা করতে এলো। আমি আবার নিজের মাঝে প্রান ফিরে পেলা৷
একদিন অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তাকে মোবাইলে ম্যাসেজ দিলাম। গাড়ি পাচ্ছি না। একটু পৌঁছে দিবেন?
সেঃ আমি খুব বিজি।

ঐদিন কেন জানি খুব ঘৃনা হলো নিজের উপর। বাসায় পৌঁছেই ডিসিশন নিলাম ফোন নম্বর পাল্টে ফেলব। পরদিন ঠিক তাই করলাম। পাল্টে ফেললাম নিজের ফোন নম্বর। কিন্তু মনের ভিতরের কষ্টের ঝড় তো থামে না। বান্ধবীরা প্রবল মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু কোন কিছুই আমার কষ্ট কে দমাতে পারছে না।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে চোখে পড়লো কুরআনের আয়াত "আমি আমার অসহনীয় দুঃখ আমার বেদনা আল্লাহর কাছে নিবেদন করছি" (সূরাঃ ইউসুফ,৮৬)।

এই একটি আয়াত পাল্টে দিলো আমার জীবন৷ নিজের সমস্ত দুঃখ কষ্ট আমার রব্বের কাছে উৎসর্গ করে দিলাম। তার কাছে সাহায্য চাইলাম হে রব! আমার মনে শান্তি ফিরিয়ে দিন৷ আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিন মাবুদ।
রব্বের তরফ থেকেই এক গায়েবী আদেশ এলো যেন তার পথেই সমস্ত শান্তি।
শুরু হলো আমার সিরাতুল মুস্তাকিমে চলা।
প্রথমে জব ছাড়লাম। এরপর বোরকা ও নিকাপ শুরু করলাম।
নিজের জীবনের সব গোনাহ'র জন্য রব্বের কাছে লজ্জিত হয়ে তওবাহ করলাম। খাস নিয়তে ক্ষমা চাইলাম।
তবে এই সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ চলা সহজ ছিলো না। পর্দার ক্ষেত্রে পারিবারিক বাঁধা ছিলো। মাস্টার্স করেও জব করব না এমন ডিসিশনে সবাই নারাজ ছিলো। অনেক কটু কথা, আঘাত সহ্য করতে হয়েছে৷ আত্বিয় স্বজনরা জংগি বলেছে।
বলে দিলাম বিয়ে করতে ইচ্ছুক। সংসারী হব।
কিন্তু টাকা ওয়ালা পাত্রের কাছে দ্বীনি পাত্ররা হেরে যায়। শুরু হল আমার আরেক সংগ্রাম। নিজের লোভ কে দমিয়ে শুধু রব্বে করিম কে বলেছি আমার জন্য উত্তম সংগী মিলিয়ে দিন। যার মাঝে আপনার জন্য মুহব্বত আছে।
হারিনি৷ লোভের কাছে নিজেকে নত করিনি। ভরসা ছিল আমার রব আমাকে নিরাশ করবেন না৷ হ্যা, করেন ও নাই। এখন আমার স্বামীই আমার সব৷ এত বেশী ভালবাসি তাকে যে সব সময় শুধু রব কে এটাই বলি,, মরে গেলে আর কিছু না হোক। এই মানুষটার হাতের একটু খানি মাটি যেন কবরে পাই। শুধু এই দুনিয়াতে নয়৷ জান্নাতেও আমি তাকেই চাই। ইনশাআল্লাহ।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)

দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
শামছুন্নাহার রুমি






কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.