আল্লাহর কাছে আসার গল্প

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)

২০১৭ সালের সম্ভবত মার্চ মাস চলছে।আমার ছোট ভাই তখন ভীষণ অসুস্থ।ওকে হসপিটালে ভর্তি করার জন্য আমার মা আমার ভাইকে নিয়ে গেছেন।ফ্যামিলির সবাইর আল্লাহর উপর একটা ভরসা ছিলো বড় কোন অসুখ হবেনা ডাক্তার মেডিসিন দিবেন ব্যস কমে যাবে।

ভাই যেদিন ডাক্তারের কাছে যায় অইদিন ভাইয়ের রিপোর্টএর অপেক্ষা করতে করতে আমি দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ি যোহরের নামায না পড়েই।বিকেলে আমার আব্বু আমার রুমে এসে আমাকে আস্তে করে ডাক দেন আমার নাম ধরে।এতো শীতল গলায় আমার আব্বু আমাকে ডাক দিচ্ছেন নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়ছে এটা অটোমেটিক ভাবে আমার মনে এসে যায় ঘুমের ঘোরে।আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি এবং দেখি আব্বুর মুখটা আটকে রাখা কান্নার দমকে আমাকে বললেনঃওর তো (ভাইয়ের কথা) রিপোর্ট ভালো না রে।বড় অসুখ হয়ে গেছে।তুই তো জানিস বড় অসুখ টা কি।তোর মামা ফোন দিয়ে বললেন ওর অবস্থা ভালো না"।আব্বু চলে যান রুম থেকে।

ব্যস এই এতোটুকুই কথা!আর আমি বিছানায় বসে ছিলাম স্তব্ধ হয়ে।পুরো শরীরটা আমার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো সেদিন।কিভাবে বিছানা থেকে নেমেছি ঠিক জানিনা সুকেসের উপরে রাখা জায়নামাজ দেখে বুক ফেটে আমার কান্না আসে তখন।আব্বু দেখে ফেলবেন বিধায় বাথরুমে গিয়ে আমি হাউমাউ করে কান্না করতে থাকি আল্লাহ আমার ভাই,আমার ভাই আল্লাহ!তুমি আমার ভাইটাকে ভালো করে দাও।আমার ভাই বাচবেনা এতো বড় অসুখ আর বাচবেনা তুমি পারবে সব কোন মেডিসিন লাগবেনা তুমি রিপোর্ট এর খবর টা মিথ্যে করে দাও।বলে হাউমাউ করে বুক ফাটা কান্নায় ভাসছিলাম বাথরুমে বসে পড়েছিলাম।আমার মনে তখন এইটাই বিধেছিল,এইতো দুনিয়া আমার ভাই মারা যাবে কবরে চলে যাবে আর দুনিয়া নেই এটা তুচ্ছ কিচ্ছু নেই এখানে।আমি মারা গেলে কি নিয়ে যাবো এটাই দুনিয়া।আমার তো নিয়ে যাওয়ার কিছুই নেই।বুক ফাটা কান্না এসেছিল।

তখন আমার বুঝে ছিলোনা এটা বাথরুম কারন আমার কান্না করার জায়গা কোথাও নেই।আমার আব্বু আমার কান্না দেখে সহ্য করতে পারবেন না।অযু করে এসে অনেকক্ষণ পর আমি আসরের নামায পড়ি।নামাযে কান্নার চোটে আমি নিজেকে রাখতে পারছিলাম না।সিজদাতে সেদিন আমি গিয়ে শুধু এ কথা বলেছি আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ আল্লাহ আমি গোনাহগার কিভাবে তুমাকে বলবো।আজ আমার প্রয়োজনে তোমাকে বলছি এর আগে ভুল করেও একবারও তুমায় আল্লাহ বলিনি সিজদায় গিয়ে তুমি এ গাফেল প্রতারককে মাফ করে দাও।আমাকে তুমার বানিয়ে নাও।আমি আর তুমাকে ছেড়ে যাবোনা তুমার জন্য সব বাদ দিয়ে দিবো সব।তুমি আমার ভাইকে সুস্থ করে দাও।তারপর কেটে গেছে কিছু দিন,,,,,,,


নতুন পথ।এ পথে হাটা হয়নি আগে।এ পথে পথিকের হাটা ছিলো সপ্নের মত,আর শান্তির বার্তায়।
এ পথে হাটতে গিয়ে প্রচুর গান মুভি ডিলেট করেছিলাম।এককথায় কোন কিছু রান্নাঘরে রান্না করতে শাকসবজি বানাতে গেলেও গান শুনতাম প্রচুর মুভি দেখতাম।মুভি দেখায় এতোটা দক্ষ ছিলাম যে কখন কোন মুভি মুক্তি পাচ্ছে কতটা সিনেমা হলে তা অনেকেই আমার কাছে থেকে জেনে নিতো।এই আমি ওইদিনের পর থেকে সব কিছু ডিলিট করে দেই এবং সেই সাথে আল্লাহকে বলি আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও।পুরো কুরআন তিলায়াত ডাউনলোড করি শাইখ শুরাইমের।একজন নায়কের এতো ভক্ত ছিলাম যে সবাই আমাকে ওই নায়কের পাগল ভক্ত বলতো গর্বে আমার ভেতর টা ভরে যেতো।(রাব্বিগফিলী)


একটা ডায়েরী ছিলো আমার অসংখ্য পিকচার ওই নায়কের নিজ হাতে লাগিয়েছিলাম ডায়েরী ঠাসা ছিলো নায়কের পিকচার দিয়ে।আমার আম্মু ওই ডায়েরী টা ফেলে দিতে চাইসিলেন অনেক বলসেন তুই এই গজব ডায়েরীটা ফেলে দে ওটা বাসায় রাখলে কখনোই ফেরেশতারা আসবে না।কত অনুনয় অনুরোধ করতেন আমি কিচ্ছু শুনতাম না সযত্মে রেখে দিতাম ডায়েরীটা।কিন্ত আল্লাহ আমাকে নতুন এক জীবনের সন্ধান দেয়া পরে ওই ডায়েরী আমি আগুনে পুড়িয়ে ফেলি।একটা একটা নায়কের পিকচার ছিড়ে আগুনে ফেলছিলাম আর আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো সেদিন।আল্লাহকে বলেছিলাম আল্লাহ ওই পিকচার গুলো তুমার ভয়ে তুমার সন্তুষ্টির জন্য আমি আগুনে পুড়াচ্ছি। তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচিয়ে দিও।ওইদিনের কান্নায় মনে হচ্ছিলো আমার রব্বকে আমি পেয়েছি খুজে।কারন আমার সবচাইতে দূর্বলতা ছিলো এই অভিনেতার প্রতি।একসময় ভাবতাম সব ছেড়ে দিলেও ওই নায়ক কখনোই না।কি পাগলই না ছিলাম আমি।আর এই আমাকে আল্লাহ টেনে তুললেন।কখনোই ফ্রি মিক্সিং এ জড়িত ছিলাম না।আইডিতে আত্নীয় ভাইরা ছিলো বিভিন্ন সিনেমা খেলাধুলার পেজে লাইক দেয়া ছিলো।এইটা মেনে নিতে পারছিলাম না।তাই নতুন আইডি ওপেন করি ননমাহরামমুক্ত।পর্দা করতাম না মোটেও।পর্দা করাটা আমার কাছে আজাব মনে হতো,,আমার আম্মু আব্বু আমার বেপর্দায় শংকিত ছিলেন।একটা সময় নিজেকে আবৃত করে ফেলি।নিজেকে দুনিয়া থেকে আলাদা করে ফেলি মাহরাম ছাড়া কারো সামনে বের হওয়ার সাহস আর হয়নি।

আত্নীয়রা ভেবেছিল আমার চেঞ্জ হওয়া সাময়িক মোহ মাত্র।কিন্তু তাদেরকে বুঝাতে পারিনি সেদিন বিকেলে আমার ভাইয়ের ক্যান্সারের কথাটা আমার জীবনটাকেই আমার রব্ব পালটে ফেলেছেন।

আমার দুনিয়াটা এখন আমার চারদেয়ালেই বন্দি।বারান্দায় বেরুতে আমার ভয় হয় কেউ আমাকে দেখে ফেলবে।আত্নীয় স্বজনরা আমাকে এখন মানসিক রোগী বলে।।কলেজে যাই যথারীতি বলা হয় ইসলামি ছাত্রীসংস্থাতে নাম লিখাইসো নাকি!দুইবছর আগে দেখলাম একভাবে এখন দেখি আরেকভাবে,এইটা কি নতুন স্টাইল শুরু করসস,হুজুর কারো সাথে লাইন টাইন করে একদম হুজুরনি হয়ে গেসোস।এক্সাম হলে অসংখ্য কথা বলা হয়ে থাকে যতক্ষন না চোখ দিয়ে পানি না আনাবে ততক্ষন পর্যন্ত চলতেই থাকে।আলহামদুলিল্লাহ।

আমার ফ্যামিলির মানুষরা চিন্তিত এতো ভালো রেজাল্ট পড়াশোনা করে তুই চাকরী করবিনা,,তুই না এডভোকেট হতে চেয়েছিলি,,এই একা রুম থেকে কোন কেউ বসে নেই তোকে নেয়ার জন্য,পর্দা করেও চাকরী করতে পারিস,তোর জন্য আমরা পাগল হয়ে যাবো,,তুই জানিস তুই মানসিক রোগী,উন্মাদ।প্রতিনিয়ত আমাকে এসব শুনতে হয় আমি বিমর্ষ হয়ে যাই বুক ফেটে আমার কান্না আসে রব্ব ছাড়া কেউ নেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও রব্ব দম বন্ধ হয়ে আসে আমার,তারা সবাই আমাকে অসামাজিক পাগল বলে কেনো।বলুক,,রব্ব আমি আজীবন তোমার পথে হাটতে চাই।আমি মানসিক রোগী গাফিল তোমার জন্য দুনিয়া উৎসর্গ করতে চাই,অসামাজিক হতে চাই যতোটা অসামাজিক হলে তোমার কাছে জান্নাতে একটা ঘর পাওয়ার দাবি করতে চাই।।।

ও হ্যা আরেকটি কথা,সেদিন আমার ভাইয়ের ক্যান্সার হওয়ার রির্পোট টা ভূল এসেছিলো।এক সপ্তাহ পরে ডাক্তার জানিয়েছেন আমার ভাইয়ের ক্যান্সার হয়নি সামান্য মেডিসিন খেলে ও সুস্থ হয়ে যাবে।শুকরিয়ায় অবনত হয়েছিলাম রব্বের প্রতি আমি আমার ফ্যামিলি।আমার ফ্যামিলির মানুষ আমি ভাবি
এটা কি ছিলো আসলে,ভাইয়ের ক্যান্সার রোগটা ছিলো আমার রব্বের পক্ষ থেকে হেদায়াতের উছিলা।তিনিই জানেন কাকে কিভাবে পথ দেখাতে হয়।না হলে কখনোই এক সপ্তাহ পরে রির্পোট ভূল এসেছে এটা ডাক্তার জানাতেন না।আমার আল্লাহ সর্বশক্তিমান মহাপরিকল্পনাকারী।

আমার প্রত্যাবর্তন সব প্রশংসা তোমার তরে।।

হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী!আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।(তিরমিযী)

(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.