আল্লাহর কাছে আসার গল্প-৫

(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)

আসসালামু আলাইকুম!!
গত ২৯/১২/২০১৯ইং তারিখে আমি ময়মনসিংহের একটি মহিলা মাদ্রাসার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিই। অতি সামান্য একজন মেয়ে আমি, দ্বীনের বিষয়ে তেমন ইলমও আমার নেই। ঢাকার কোনো এক নামকরা কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীর যেভাবে চলাফেরা করা উচিত তার ব্যতিক্রম ছিল না আমার চলাফেরা। আমি সেই ছোট থেকেই মহান আল্লাহকে চেনার যে পিপাসা, সেটা বুকে নিয়ে এক ক্লান্ত পথিকের ন্যায় ছুটে চলেছিলাম। নিজেকে দ্বীনের পথে রাখার চেষ্টা করেছি।
নবম শ্রেণি থেকে এক ফ্রেন্ড এর অনুপ্রেরণায় নিজেকে পর্দায় আবৃত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার পরিবারের কঠোর নির্দেশ, আমাকে নামকরা ডাক্তার হতে হবে, বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে আমাকে। আমিও সেই লক্ষ্যে নিজেকে অগ্রসর করছিলাম। জেএসসিতে জিপিএ-৫ সহ গোল্ডেন এসএসসি তে ৯৫% মার্কস নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটা ভালো কলেজে ভর্তিও হলাম। আমার মতোই আমি পর্দার মাঝে রেখে নিজেকে কলেজের কার্যাদি সম্পন্ন করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু নামিদামি কলেজ হলে যা হয়!!
সেখানে আমার পরিধানকৃত পোশাক ছিল নিষিদ্ধ। তাই আমাকে বাধ্য হয়ে পর্দা ছিন্ন করতে হয়। তখন থেকেই নিজের ভেতরে এক অনুশোচনার সৃষ্টি হয় - " দুনিয়ার প্রতিটা আনাচে-কানাচে স্রষ্টার রহমতে পরিপূর্ণ আর সেখানে আমার মতো এক নাফরমানি নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য আমার রবকে অবজ্ঞা করছি!!
এতে না হয় আমি আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরন করতে পারলাম কিন্তু বিনিময়ে তো আমি আমার স্রষ্টাকে হারিয়ে ফেলছি, সেটাতো উচিত নই। ছোট থেকে আজ অব্দি প্রভুর নিকটে আমি যা চেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ তার কোনোটাই অপূর্ণ রাখেন নি তিনি। তবে আজ কেনো আমি আমার দুনিয়ার জন্য তাকে হারিয়ে ফেলছি?

আমি যদি ডাক্তার হতে পারি তাহলে হয়তো সকলের স্বপ্ন পূরণ হবে কিন্তু আলটিমেটলি সেটা কি কারো কোনো কাজে আসবে? কবর তো আর আমার এমবিবিএস সার্টিফিকেট দেখে আমাকে কিংবা আমার বাবা-মাকে ছেড়ে দিবে না!"
এমন হাজারো ভাবনা আমাকে ঘিরেছিলো সেদিন তবে আমার কিছুই করার ছিল না। শুধুমাত্র একটা পথই ছিল,, হয়তো আমাকে আমার সারাজীবনের সকল স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে অর্থাৎ দুনিয়াবি চিন্তা বাদ দিতে হবে নাহয় আমাকে গাফেল হয়ে থাকতে হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যা হওয়ার হবে আমি প্রথমটাই বেছে নিবো।

এখন সকলকে বুঝাতে হবে আমার চাওয়াটা। ভাইয়াকে বল্লাম খুব ভয়ে, আল্লাহর অশেষ রহমতে বলার সাথে সাথেই উনি সহমত প্রকাশ করলেন। তবে আর কেউ আমাকে মাদ্রাসায় দিতে রাজি নয়। অনেকের অনেক কথা। এতো ভালো কলেজ ছেড়ে এখন কেনো এইসব হুজুরের লেবাসের ইচ্ছা?
মাদ্রাসার পড়ার কোনো দাম নাই,কি হবে সেটা পড়ে?
আরো অনেককক আজেবাজে কথা শুনতে হয়েছিল। সমাজের লোকজনও আমার পর্দাটাকে ভালোভাবে নিতো না তবে সবাই নয়।অনেকেই আমাকে সাপোর্ট করেছিল। তবে আমি নিরাশ হইনি। কারণ আমি আমার প্রভুকে পেতে চাই আর সেটা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও।

সবার নানান কথা শুনে আমি জেদ করে কলেজে যাওয়া অফ করে দিই। এতেও কারো মন্তব্যের শেষ নেয়। কিন্তু আমার সে মন্তব্য কানে নিলে চলবে না। এভাবে দীর্ঘ ৪ মাস আমাকে লড়াই করতে হয়েছিলো সকলের মতের বিরুদ্ধে। অবশেষে আমি সফল আলহামদুলিল্লাহ।তবে প্রকৃত সফলতা আমার এখনো আসেনি। সেদিনই আমি পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবো যেদিন প্রভু তার দ্বীনের পথে আমাকে কবুল করে নিয়ে হাশরের মাঠে তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন।
আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আমাকে সম্পূর্ণ রব্বুল আলামীনের তরে সপে দিতে পারি....
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.