বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০২


বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০২

.

কুরআন হাদীস থেকে বারযাখের বর্ণনা

.
১। বারা ইবনে আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুপরবর্তী সময়ের এক দীর্ঘ বর্ণনা দেন। সারাংশ এমন: মুমিন বান্দার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে উজ্জ্বল চেহারার ফেরেশতারা জান্নাতি কাপড় ও সুগন্ধি নিয়ে তার দৃষ্টিসীমায় হাজির হয়। জানকবজকারী ফেরেশতা এসে তার রুহকে বের হয়ে আসতে আহ্বান করে। পানির মশক থেকে পানি বের হওয়ার মতো রুহ সহজে বের হয়ে আসে। মউতের ফেরেশতার কাছে অল্প সময়ই রুহ থাকে। ফেরেশতারা সেই রুহকে জান্নাতি কাপড় ও সুগন্ধি দিয়ে জড়িয়ে উপরে নিয়ে যায়। সকল ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকে। আসমানের দরজাগুলো তার জন্য খুলতে থাকা হয়। সব ফেরেশতাগণই আল্লাহর কাছে দুআ করে যেন এই রুহ তাদের কাছ দিয়ে যায়। তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় এই পুণ্যাত্মা কে। সাথের ফেরেশতারা জবাব দেন "এ অমুকের সন্তান তমুক।" সপ্তম আসমানে নেওয়ার পর আল্লাহ আদেশ দেন এই রুহের আমলনামা 'ইল্লিয়্যুন'এ রাখার জন্য। সূরা মুতাফফিফীনের ১৯-২১ আয়াত দ্রষ্টব্য।
.
তারপর সেই রুহকে আবার দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। সে তার কবরের কাছ থেকে আত্মীয়দের চলে যাওয়ার পদধ্বনি শোনে। তারপর বিকট দর্শন মুনকার নাকির এসে তাকে ঝাঁকানি দেয়। তাকে উঠে বসিয়ে তার রব, দ্বীন ও তার কাছে প্রেরিত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। সে যথাক্রমে আল্লাহ, ইসলাম ও রাসূলের কথা বলে। তারপর জিজ্ঞাসা করা হয় সে কী করেছিলো। সে বলে যে সে আল্লাহর কিতাব পড়ে তা বিশ্বাস ও মান্য করেছে। তারপর তাকে আবার ঝাঁকি দয়ে তার রব, দ্বীন ও নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। সে জবাব দেয়। এটাই বান্দার উপর আপতিত শেষ ফিতনা (পরীক্ষা)। এরপর আসমান থেকে ঘোষণা করা হয়, "আমার বান্দা সত্য বলেছে।" তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে, জান্নাতি পোশাক ও সুগন্ধি সরবরাহ করতে বলা হয়। তার কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়।
.
তারপর সুন্দর চেহারার, সুন্দর কাপড় পরিহিত, সুবাস মাখা এক ব্যক্তি আসে। সে হচ্ছে ওই ব্যক্তির নেক আমল। সে বলে, "আল্লাহর কসম! আমি তো তোমাকে আল্লাহর আনুগত্যে দ্রুত করতে দেখেছি। আর আল্লাহর অবাধ্যতায় দেরি করতে দেখেছি। আল্লাহ তোমায় উত্তম প্রতিদান দিন।" কবরে জান্নাব ও জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হয় "তুমি আল্লাহর অবাধ্যতা করলে এই আগুনে থাকতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এর বদলে এই (জান্নাত) দিয়েছেন।" সে এসব দেখে দুআ করতে থাকে যেন তাড়াতাড়ি কিয়ামাত হয়ে যায় যাতে সে তার পরিবার ও সম্পত্তির সাথে পুনর্মিলিত হতে পারে। তাকে শান্ত হতে বলা হয়।
.
অনুরূপে পাপাচারী বান্দার জান কবজের সময় ভীষণ চেহারার ফেরেশতারা জাহান্নাম থেকে দুর্গন্ধী কাপড় এনে হাজির হয়। মউতের ফেরেশতা রুহকে হুকুম দেয় আল্লাহর আযাবের পানে বেরিয়ে আসতে। রুহ দেহের ভেতর ছোটাছুটি করতে থাকে। মউতের ফেরেশতা ভেজা তুলা থেকে কাঁটস বের করার মত টেনে রুহ বের করেন। ফলে ওই বান্দার রগগুলো ছিঁড়ে যায়।
.
সকল ফেরেশতারা তাকে লানত দিতে থাকে। সকলে আল্লাহকে বলে এই রুহ যেন তার দিক দিয়ে না যায়। ফেরেশতারা জাহান্নামের কাপড়ে পেঁচিয়ে তাকে উপরে নিতে থাকে। আসমানের অধিবাসীরা দেখে বলে "এই পাপাত্মা কে?" বলা হয় "অমুকের সন্তান তমুক।" দুনিয়ায় তাকে যত খারাপ নামে ডাকা হতো সেসব ধরে তাকে ডাকা হয়। আসমানের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
.
"নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।" (সূরা আ'রাফ ৭:৪০)
.
তার আমলনামা সিজ্জিনে রাখা হয়। তারপর তার রুহ তার দেহে ফেলে দেওয়া হয়। একইভাবে মুনকার নাকির তাকে প্রশ্ন করে। সে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। তার জন্য কবরে জাহান্নামি উত্তাপের ব্যবস্থা করা হয়। আর কবর সংকুচিত হয়ে গিয়ে তার পাঁজর ভাঙতে থাকে।
.
বিশ্রী চেহারা, বিশ্রী কাপড় ও দুর্গন্ধময় এক ব্যক্তি তার সামনে আসে। সে হলো তার বদ আমল। এক বধির ব্যক্তিকে তার শাস্তির জন্য নিযুক্ত করা হয়। সে হাতে বিরাট এক মুগুর ধারণ করে যা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করলে পাহাড় গুঁড়ো হয়ে যেতো। এই মুগুর দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। ফলে সে গুঁড়ো হয়ে যায়। আল্লাহর আদেশে সে আবার আগের মতো হয়ে যায়। এভাবে শাস্তি চলতে থাকে। সে দুআ করতে থাকে যেন কখনোই কিয়ামাত না হয়।
.
হাদীসটি আহমাদ, আবু দাউদ ও অন্যান্য কিতাবে আছে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.