বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০১


বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০১


ভূমিকা

মৃত্যু এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। অবিশ্বাসীদের সব পার্থিব চাকচিক্যের আশা ভরসা চুরমার হয় এই বাস্তবতার নির্মম আঘাতে। আল্লাহ বলেন,
.
"যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, 'হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন, যাতে আমি সেসব সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি।' কখনোই নয়! এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা (বারযাখ) আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।" (সূরা মুমিনুন ২৩:৯৯-১০০)
.

মৃত্যুর আগমন

একজন সত্যিকার মুমিনের চাওয়া হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে যে ভালোবাসে, তার সাক্ষাতকে আল্লাহ ভালোবাসেন। আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে যে ঘৃণা করে, তার সাক্ষাতকে আল্লাহ ঘৃণা করেন।"
.
এটা শুনে মা আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "কিন্তু আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করিই।" রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এর অর্থ এটা নয়। মুমিনের মৃত্যু যখন আগত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিয়ামাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়। আসন্ন বিষয়গুলো তখন তার প্রিয় হয়ে যায়। সে আল্লাহর সাক্ষাত ভালোবাসে, আল্লাহ তার সাক্ষাত ভালোবাসেন। আর কাফিরের মৃত্যু আগত হলে তাকে আল্লাহর আযাবের দুঃসংবাদ দেওয়া হয়। তখন আসন্ন বিষয়গুলো তার অপ্রিয় হয়ে যায়। সে আল্লাহর সাক্ষাত ঘৃণা করে, আল্লাহও তার সাক্ষাত ঘৃণা করেন।" (বুখারি ও মুসলিম)
.
মুমিনের জান কবজ করতে আল্লাহ ইতস্তত করেন! আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বান্দার আনুগত্যের অনুপাতে আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসেন। বুখারির একটি হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, "যে আমার কোনো বন্ধু (ওয়ালি) এর ক্ষতি করে, তার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দা ফরজ ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তারপর সে নফল ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একসময় সে আমার প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। যখন সে আমার প্রিয়পাত্র হয়, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তা দান করি। সে আমার আশ্রয় চাইলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। মুমিন বান্দার জান কবজ করার মতো ইতস্তত বোধ আমি অন্য কোনো কাজে করি না। সে মৃত্যু অপছন্দ করে, আর আমি তাকে ব্যথা দিতে অপছন্দ করি।"
.
শয়তান আমাদের দ্বারা গুনাহের কাজ করাতে খুব তৎপর থাকে। মৃত্যু হলো তার জন্য গুনাহ করানোর শেষ সুযোগ। কোনো বান্দার মৃত্যুর সময়ে শয়তান উপস্থিত হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যেন মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনটা আল্লাহর নাফরমানি দিয়ে শেষ হয়।
.
মৃত্যুর আগমন ঘটে প্রচুর যন্ত্রণা নিয়ে। নবীগণও এ থেকে রেহাই পান না। আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নিশ্চয় মৃত্যু আসে যন্ত্রণাসহকারে।" (বুখারি এবং আহমাদ)
.
মৃত্যুর লক্ষণ উপস্থিত হওয়া মানে তাওবাহর দরজা বন্ধ। ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আল্লাহ যখন ফিরাউনকে ডুবিয়ে দিলেন, সে বললো 'আমি ঈমান অানলাম যে, বনী ইসরাইল যেই রবের উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।' জিবরীল আলাইহিসসালাম বলেন, 'হায় মুহাম্মাদ, আপনি যদি দেখতেন কীভাবে আমি তার মুখে মাটি ঠেসে দিয়েছি এই ভয়ে যে রহমত তাকে স্পর্শ করে ফেলবে।" (আহমাদ ও তিরমিযি)
.
কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কবরের সামনে দাঁড়ালে এত কেঁদে দাড়ি ভিজিয়ে ফেলতেন, যে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করেও তিনি এত কাঁদতেন না। তিনি বলেন, "নিশ্চয় আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি 'কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে এটি সহজে পার হয়ে যাবে, তার জন্য পরের ঘাঁটিগুলোও সহজ হবে। আর যে এটি সহজে পার হতে পারবে না, তার পরের ঘাঁটিগুলোও কঠিন হবে।" (তিরমিযি)
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.