জন্মদিনের মর্মবীণ:জানতে হবে,জানাতে হবে!


জন্মদিনের মর্মবীণ:জানতে হবে,জানাতে হবে!



প্রদীপ্ত কুটির বইটা পড়তে গিয়ে জন্মদিন নিয়ে লেখা টপিক টা আমার খুব ভালো লেগেছে।চারিদিকে জন্মদিন উদযাপনের ফিতনা আমাদের মুসলিম উম্মাহকে যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে,মনে হয়েছে তথ্য গুলো সবাইকে জানানো উচিৎ।বই থেকে কিছু অংশ এবং নিজের উপলব্ধি মিশিয়ে আমি আমার মত করে লিখেছি।যদিও একটু বড় হয়ে গেছে লেখাটা কিন্তু পড়ার পর মনে হবে এটা আপনার জানার দরকার ছিল!

বার্থডে সেলিব্রেশন ব্যাপারটা একটি ধর্মীয় কালচার থেকে এসেছে।ধর্মীয় কালচার কথাটা পড়লে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসবে খ্রিস্টান অথবা জিউয়িশ এর কথা।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো,"বার্থডে সেলিব্রেশনটা ইহুদি বা খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আসেনি।"
(Encyclopedia Judaica,Vo.4: page 1054)


"আগেকার দিনে খ্রিস্টানরা বার্থডে সেলিব্রেট করতো না। বার্থডে সেলিব্রেট করাকে তারা প্যাগানদের সংস্কৃতি মনে করতো।"(The World Book Encyclopedia,

Volume 3,page:416)।এমনকি "বর্তমান সময়েও অনেক খ্রিস্টান-গ্রুপ বার্থডে সেলিব্রেট করে না।"যেমন জেহোভা'স উইটনেস, ওয়েস্টবরো বেপটিস্ট চার্চ, ইউনাইটেড চার্চ অব গড খ্রিস্টান-গ্রুপ গুলো ক্রিসমাস উদযাপন করে না।


এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে বার্থডে সেলিব্রেশন কারা শুরু করেছে?বার্থডে সেলিব্রেশনের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, সর্বপ্রথম বার্থডে সেলিব্রেশন করেছিল মিশরের রাজা ফারাও।বাইবেলে এই কাহিনীটির উল্লেখ আছে।(Genesis,40:20)।খ্রিষ্টানরা ফারাওকে একজন পাপী মনে করতো। এজন্য বার্থডে সেলিব্রেশন করাকে তারা ফারাও-এর মত পাপীদের সংস্কৃতি মনে করতো।(Origen.in.Levit Home.viii.in migne P.G:495)

মূলত যাদুবিদ্যা থেকে জন্মদিনের সংস্কৃতির উৎপত্তি! শুধু তাই নয় বার্থডে অনুষ্ঠানের দিন যে Happy Birthday বা "শুভ জন্মদিন"বলে কেক কাটা শুরু হয়,এই "শুভ জন্মদিন" বলার পেছনেও রয়েছে বিস্ময়কর ইতিহাস।অথচ আমরা না জেনে তা পালন করে চলেছি!😞
মনে করা হয়,"বার্থডে অনুষ্ঠানের দিন যার বার্থডে তার আত্মা তার নিকট চলে আসে এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছাগুলো (শুভ জন্মদিন,এই দিনে অনেক অনেক খুশি ফিরে আসুক এই টাইপের কথা) আত্মা শুনতে পায় এবং এর দ্বারা তাকে "শুভ"বা "অশুভ"পরিণতি দেওয়া হয়!সবাই যদি শুভেচ্ছা জানায় তা হলে তাকে "শুভ" পরিণতি আর সবাই যদি কুমন্ত্রণা দেয় তাহলে "অশুভ" পরিণতি দেওয়া হয়।এজন্য জন্মদিনে শত্রুদের নিকট থেকে দূরে থাকতে বলা হয়,কারণ শত্রুরা কুমন্ত্রণা দিলে হিতে বিপরীত হবে।"(The Lore of Birthday,Newyourk 1952)

জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালানো আর গিফট দেওয়ার পেছনেও রয়েছে ভয়ংকর কারণ!শয়তানের উপাসক একজন তার বইতে লিখেছে,"শয়তানের ধর্মে সবচেয়ে বড় উৎসব হলো নিজের জন্মদিনের উৎসব"।(The satanic Bible: page 96)এখন জন্মদিন পালন করার ক্ষেত্রে কেউ যদি যুক্তি দেয় যে,আমরা একটু আনন্দ করার জন্য,খুশির জন্য জন্মদিন পালন করছি,আমরা তো আর প্যাগানদের অনুসরণ করার ইচ্ছা নিয়ে বা তাদের বিশ্বাসকে অনুসরণ করে বার্থডে পালন করছি না! এক্ষেত্রে ইসলাম বাধা দিচ্ছে কেন?

বাধা দেওয়ার কারণ হচ্ছে বিশ্বাসে সাদৃশ্য না থাকলেও কর্মে সাদৃশ্য হচ্ছে।জন্মদিন উদযাপন হচ্ছে মুশরিকদের সংস্কৃতি, মুসলিমদের নয়।বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করতে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা আছে।আপনি আমি মানি আর না মানি,জন্মদিন উদযাপনের সংস্কৃতি ইসলাম ধর্মের জন্য অবশ্যই বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ।

ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, "রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে,সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে"।(সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং:৪০৩১)


এগুলো ছাড়াও আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে,ইসলামের উৎসবগুলো আর কাফির মুশরিকদের উৎসবগুলোর মধ্যে একটা চমৎকার বৈসাদৃশ্য আছে।ইসলামের সব উৎসবে আল্লাহকে স্মরণ করাটাকেই মুখ্য করা হয়,আর সমাজের অসহায় মানুষদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির শিক্ষা থাকে।

ঈদের কথায় ধরা যাক,ঈদের শুরুটা হয় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে,ঈদের নামাজ দিয়ে। এরপর অসহায় মানুষদের সাথে,আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীদের সাথে আমরা আনন্দ ভাগ করে নিই।অথচ কাফির সেক্যুলারদের উৎসব দেখলে দেখা যায়, সেখানে শুধু ভোগের শিক্ষা দেওয়া হয়। কুরবানীর মাংসে গরীবের ভাগ থাকে, পহেলা বৈশাখের ইলিশ মাছে গরীবের ভাগ থাকে কি?কিংবা জন্মদিনের পার্টিতে?এই উৎসবগুলোর মাঝে কেবল আত্মকেন্দ্রিকতা,আল্লাহকে ভুলে থাকা আর অপচয়ের মচ্ছব চলে।এ থেকেই তো আমরা বুঝতে পারি কোন উৎসব মুসলিমদের সাথে যায় আর কোনগুলো যায় না।তাই না?

উপরের কথাগুলোর সাথে কারোর ই দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই।আবার লক্ষ্য করি,আমাদের প্রিয় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবারে রোজা রাখতেন।কেন রাখতেন?কারণ সোমবারে তাঁর জন্ম ও নবুয়্যত প্রাপ্তি ঘটে।(মুসলিম-হাদীস নং:১১৬২)
তাঁর শিক্ষা টা লক্ষ্য করুন। তিনি কাফের মুশরিকদের মত উৎসবে না যেতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রোজা রেখেছেন। সেখানে একজন মুসলিম হয়ে জন্মদিনে পার্টি দেবার আমাদের সুযোগ কোথায়?


সমসাময়িকতা আর ফ্যাশন প্রকাশ করতে গিয়ে বড়রা তো আছেই সাথে বাচ্চারা নিজের জন্মদিন পালনের জন্য খুব বেশি উদগ্রীব থাকে।আমরা যদি বাচ্চাকে পরম মমতায় কোলের ভিতর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝায়,"শোনো,জন্মদিন পালন করলে বা কারো জন্মদিনে পার্টিতে গেলে তোমার ভালো লাগবে- তুমি খুশি হবে কিন্তু তোমার আমার রব মহান আল্লাহ তো অখুশি হবেন,রাগ হবেন আমাদের সকলের উপর।আর আল্লাহ কারো উপর রাগ হলে অখুশি হলে সে তো ভালো কিছু থেকে বঞ্চিত হয়"।আমাদের কিউট সোনামণি গুলোকে একটু ভালোবাসা দিয়ে বোঝালেই আমার বিশ্বাস তারা বুঝে যাবে।ছোট থেকে ওকে যেভাবে শিক্ষা দিবেন ও তো সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হবে!

এরপরেও বাচ্চাটা যদি কোথাও কারো জন্মদিন পালন করা দেখে,কেক কাটা দেখে,বেলুন দিয়ে ঘর সাজানো দেখে মনোকষ্টে ভোগে তখন আপনার যদি সামর্থ্য থাকে অথবা সামর্থ্য নাও থাকে তবে ওর মনের কষ্ট দূর করার জন্য জন্মদিনটা বাদে আর যেকোনো দিন বেলুন,কেক,কিছু গিফট,ওর পছন্দের খাবারগুলো কিনে এনে ওকে সারপ্রাইজ দিন।দেখেন এই কাজটা আপনার বাচ্চাকে কতটা আনন্দ দেয়,ওর কচিমনে কতটা খুশির বন্যা বইয়ে দেয়।চাইলে এমন সুন্দর সারপ্রাইজ বাচ্চাটাকে প্রতি সপ্তাহ,প্রতি মাসে দিতে পারেন।এতে ওর পারিবারিক বিনোদনটাও হলো,জন্মদিন পালনের বিজাতীয় অনুসরণ থেকে সরিয়ে আনাও হলো!

ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরকেও নাসীহাহ দিতে হবে,জন্ম সম্পূর্ণ আল্লাহর দান।বছর ঘুরে ঘুরে জন্মের দিনটা চলে আসা মানে হলো মৃত্যুর আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম।সুতরাং জন্মদিন আসলে মৃত্যু তথা আখিরাতকে স্মরণ করার উপলক্ষ হওয়ার কথা ছিলো।অথচ আমরা এটাকে বানিয়ে ফেলেছি আল্লাহকেই ভুলে থাকার একটা অনুষ্ঠান হিসেবে।কী বোকা আমরা,তাই না?আরো আফসোসের কথা হলো, আমাদের মুসলমান পরিবারের ছেলেমেয়েদের এই কথাগুলোকে কে বোঝাবে?তাদেরকে বুঝিয়ে বললে হয়তো তারাও বুঝতে পারতো।But Who will bell the cat?
না,হতাশ হলে চলবে না।আমাদেরকে তো সচেতন হতেই হবে,আরেকজনকেও সচেতন করতে হবে।আজ আমি জানলাম,আপনি জানলেন।বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ডুবে যাওয়া গাফেল উম্মাহকে আমাদেরই বোঝাতে হবে!আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
শামছুন্নাহার রুমি










কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.