এসো জান্নাতের পথে-৮


ক্ষমার প্রতিদানঃ


এসো জান্নাতের পথে-৮, ক্ষমার প্রতিদান

ক্লাস শেষ করে রাবিয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আয়িশা।
দেখা গেলো ক্যান্টিনের এক কোণায় মুখ গোমড়া করে বসে আছে রাবিয়া। চোখগুলি দেখলেই বুঝা যায়, পানি টপ টপ করে পড়ছিলো এক সেকেন্ড আগেও।
আয়িশা ধপ করে বসে পড়লো রাবিয়ার পাশে,
.
— কিরে রাবিয়া? কখন থেকে খুঁজছি তোকে! মন খারাপ কেন তোর?
— এক ফ্রেন্ড খুব বাজে আচরণ করেছে আমার সাথে।
ওর কাছ থেকে একটা জিনিস ধার নিয়ে আজকে আনতে ভুলে গিয়েছিলাম দেখে আমাকে সবার সামনে অপমান করেছে।
যাচ্ছে তাই বলেছে।
মনটা খুব খারাপ লাগছে।
আমি তার থেকে কখনো এমনটা আশা করিনি।
কত সময়ে আমি তার উপকার করেছি।
তার থেকে এর থেকে অনেক ভালো কিছু আশা করেছিলাম।
— এটাই তো সমস্যা রে বন্ধু!
— মানে?
— মানে তুই মানুষের কাছে বেশি আশা করলে এক পর্যায়ে এসে হতাশ তোকে হতেই হবে।
— কি বললি এইটা? তাহলে কি স্ট্যান্ডার্ড নামিয়ে ফেলবো?
— না, স্ট্যান্ডার্ড নামাতে হবে না। দৃষ্টিভঙ্গি একটু বদলাতে হবে।
— যেমন?
— যেমন দেখ, মানুষ অনেক লিমিটেড!
লিমিটেড এবং ভুলে ভরা।
অন্য মানুষের ক্যারেক্টারকে তুই চেইঞ্জ করতে পারবিনা।
ঐটা তোর কন্ট্রোলে নেই।
কিন্তু নিজের এক্সপেক্টশনের লেভেল তুই চেইঞ্জ করতে পারবি।
এটা তোর কন্ট্রোলে।
মানুষের কাছে বেশি কিছু আশা করবি না।
মানুষের দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই।
আশা করবি আল্লাহর কাছে।
ইচ্ছে মতন মনের মাধুরী মিশিয়ে আশা পেশ করবি আল্লাহর সামনে, ওকে?
— কিন্তু যদি আল্লাহর কাছে আশা করে যেটা চেয়েছি সেটা না পাই-তখন কি হবে? উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো রাবিয়া।
— এখানেই তো হারাধন ধরা খেয়ে গেলি।
আল্লাহর কাছে চেয়ে কখনো তোকে খালি হাতে ফিরতে হবে না তো রে বোকা।
আল্লাহ তা'আলা তো তার বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। (১)
.
সহীহ হাদিস থেকে আমরা জানি যে, তুই আল্লাহর কাছে আশা করে কিছু চাইলে আল্লাহ তোকে সেটার প্রতিদান হয় দুনিয়াতে সাথে সাথেই দিয়ে দিবেন।
না হয় এটার বিনিময়ে তোর সামনে থেকে বড় কোনো বিপদ সরিয়ে নিবেন।
না হলে আল্লাহ সযত্নে তোর চাওয়ার প্রতিদানটুকু আখিরাতে তোকে পুরস্কার দিবার জন্যে রেখে দিবেন। (২)
.
তাহলে বল, আল্লাহর সাথে আশা করে লাভ ছাড়া আর কিছু আছে?
— বাহ! এই হাদিসটা তো জানতাম না।
তাহলে এই যে আমি আমার ফ্রেন্ডের খারাপ আচরণে কষ্ট পেলাম?
এখন আমি আমার বান্ধবীর কাছে কিছু আশা না করে এটা নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইব?
— জ্বি! তুই তোর ফ্রেন্ডের কাছে আশা করে বসে থাকিস না যে, সে অনুতপ্ত হয়ে এসে তোকে 'স্যরি' বলবে।
এই প্রত্যাশা করবি তো সে না আসলে চরম কষ্ট পাবি।
তুই মন থেকে তোর বান্ধবীকে এমনি মাফ করে দে।
এটার জন্যে আল্লাহর কাছে রহমতের আশা কর।
তুই যদি কাউকে তার ভুলের জন্যে ক্ষমা করিস, তাহলে আল্লাহ তোকে কিয়ামতের দিন তোর ভুলের জন্যে ক্ষমা করবেন। (৩)
.
এই যে ক্ষমা করলি আর আল্লাহর কাছে আশা করলি—সেটার জন্যে তোকে এতটুকু হতাশ হতে হবে না।
তুই আন্তরিক নিয়তে এটা করে থাকলে আল্লাহ তোকে খুশি করে দিবেন।
তুই দুনিয়াতে পাবি আল্লাহর তরফ থেকে মানসিক শান্তি, আর আখিরাতে পাবি আল্লাহর দেওয়া অকল্পনীয় পুরস্কার।
— আসলেই রে! অলরেডি আমার মন থেকে অস্থির ভাবটা চলে গেছে। রাগের তোপটাও চলে গেছে।
কষ্টটাও ওভাবে আর পাচ্ছি না আর, আলহামদুলিল্লাহ!
আমি আমার বন্ধুর যে উপকার করেছি, সেটার জন্যেও আমার তার কাছ থেকে কিছু আশা করা উচিত না।
আল্লাহর কাছেই আশা করা উচিত।
— এইতো তুই বুঝেছিস!
এই যে আমি তোকে আজকে এই কথাগুলি বললাম।
কালকে যদি তুই এসে আমাকে থাপ্পড় মারিস—আমি বলবো না যে, 'রাবিয়াকে কত ভালো নাসীহা দিলাম আর আজকে কি না সে আমাকে এই প্রতিদান দিলো?'
বলেই দুইজন খুব করে হেসে নিলো। 'তোর সাথে যা ভালো করেছি—এটার জন্যে আল্লাহর কাছেই প্রতিদান চাই। আমি কখনো খালি হাতে ফিরবো না, ইনশা আল্লাহ'।
— আল্লাহ তোকে উত্তম প্রতিদান দিক!
আরেকটা জিনিস খুব ভালো লাগলো! তোকে ঘটনা বলার পর তুই একবারও জিজ্ঞেস করলি না কে আমাকে অপমান করেছে?
তার কি পরিচয়-কোনো রকমের গীবত ছাড়াই আমাকে নাসীহা দিলি! সেজন্যে তোকে জাঝাকাল্লাহ খইর আয়িশা।
— আলহামদুলিল্লাহ বান্ধবী!
আমার তো আর পরিচয় জেনে কোন লাভ নেই।
শুধু শুধু গীবত করে নিজের পায়ে কেন কুড়াল মারব?
আর যা কিছু ভালো, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
— চল তোর প্রিয় রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে আসি।
আমি তোকে খাওয়াব!
— বাহ! উপদেশের বদলে ফ্রি ফুড! চল চল..
— হা হা! যা কিছু ভালো-সব আল্লাহর পক্ষ থেকে!
.........................................
সূরাহ ইখলাসে আমরা পড়ি 'আল্লাহুস সামাদ'; যার অর্থ আল্লাহ চিরন্তন, অমুখাপেক্ষী।
কোন কিছু দিয়েই আল্লাহ সীমাবদ্ধ নন।
তার দয়া সীমাহীন, ক্ষমতা সীমাহীন, ভালোবাসা সীমাহীন।
সীমাহীন তার প্রজ্ঞা।
আর সীমাহীন সত্তার পক্ষেই সম্ভব বান্দার সীমাহীন আবদার গুলি পূরণ করা।
আপনি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই তিনি অলরেডি জানেন আপনি যে কী চান।
মানুষ সেটা কোত্থেকে পূরণ করবে?
মানুষ নিজেই সীমাবদ্ধ।
এই ভুল জায়গায় করা এক্সপেকটেশন থেকেই অনেক হতাশার জন্ম।
তার মানে আশা করা ছাড়া যাবেনা।
আশা আত্মার অক্সিজেন।
জাস্ট আমাদের মনের আশাগুলির ফোকাল পয়েন্টটা মানুষের উপর থেকে সরিয়ে আল্লাহর উপর ফোকাস করলেই এই হতাশা থেকে মুক্তি।
.
স্বামীর কাছে না, বাবা-মার কাছে না, রাষ্ট্রের কাছে না।
সীমাবদ্ধ মানুষের কাছে না, সীমাহীন আল্লাহর কাছে আশা করি।
আল্লাহ অবশ্যই আমাকে আমার আশা-প্রত্যাশা এবং ধৈর্য্যের মিঠা ফল দিবেন।
সেটা আজ হোক, কাল হোক, ক’মাস পরে হোক, ক’বছর পরে হোক, এ দুনিয়ার জীবনে হোক বা আখিরাতে হোক-যেটা চেয়েছি সেটা পাবোই।
হয়তো যা আশা করেছি তার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি পরিমাণে পাবো জায়গামত, সময় মত।
এটাই আল্লাহর ওয়াদা।
ওয়াদা পূরণে আল্লাহ তা’আলার চেয়ে আর উত্তম কেউ আছে কি?
.
𝟏. "Verily, Allah is munificent and generous. He would be ashamed, when a man raises his hands to him, to turn them away empty and disappointed."
.
𝟐. “There is no Muslim who supplicates to Allah (without sin or cutting family ties in it) but that Allah will give him one of three answers: he will hasten the fulfillment of his supplication, he will store it for him in the Hereafter, or he will divert an evil from him similar to it.” They said, “In that case, we will ask for more.” The Prophet said, “Allah has even more.”
.
𝟑. "...and let them pardon and overlook. Would you not like that Allah should forgive you?
And Allah is Forgiving and Merciful."
:
লেখাঃ শারিন সফি অদ্রিতা
(আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)





1 টি মন্তব্য:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.