বিয়েতে আধুনিক সভ্যতার অ-সভ্যতা


বিয়েতে আধুনিক সভ্যতার অ-সভ্যতাঃ

:
বিয়েতে যারা বউকে দেখানোর জন্য স্টেজ বানিয়ে সেখানে তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে পুতুলের মত করে বসিয়ে রাখে আর মাহরাম-গাইরে মাহরাম বাছবিচার না করে তার পাশে গিয়ে বসে, ছবি তোলে তাতেও কিছু মনে করে না তারা নাকি সভ্য সমাজের গর্বিত সদস্য!
.
স্বামীও যখন এসব সহাস্যমুখে মেনে নিয়ে গর্ববোধ করে, আনন্দিত হয় তখন স্বামীর আত্মমর্যাদাবোধ, স্ত্রীর প্রতি মর্যাদাবোধ আর সভ্যতার পারদ কোথায় নেমে গেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
.
উল্টা আপনার ছেলে কাজিন, বন্ধুরা যখন আপনার বউ দেখে বলে, "দোস্ত, তোর বউ তো অসসাধারণ সুন্দরী, সেই সেই!!!"
তখন আপনি গর্ব অনুভব করেন!
তাই না?
.
ওয়েডিং ফটোগ্রাফীর নামে কতগুলো গাইরে মাহরাম ছেলের সামনে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে স্বামী-স্ত্রী বা শুধু স্ত্রী নিজেকে উপস্থাপন করে তখন কি তারা মনে করে ঐ পেশাদার ফটোগ্রাফার যুবকগুলো তাদের চোখ দিয়ে কিছুই দেখে না, চোখগুলো অফিসে রেখে এসেছে?
মনে মনে কিছুই ভাবে না!
মনগুলো বাড়িতে রেখে এসেছে?
.
হয়তো এখনই আমাকে গালি দিচ্ছেন আর মনে মনে আমাকে বুঝাচ্ছেন, আরে, ওরা জড় বস্তু!
পেশাদার ফটোগ্রাফার মাত্র!
ওদের কি ওসব আছে নাকি!
ছি ছি! তোমরা যে কীসব ভাবো? হুজুরদের চিন্তা, দৃষ্টি আসলেই খারাপ!
.
যেসব বোনেরা নিজেরা আগ্রহ করে অর্ধদিবস বসে পার্লারে গিয়ে নিজের সুন্দর চেহারাটা ভূতের মত করে এসে পরপুরুষের সামনে বসেন আর যাকে তাকে পাশে বসতে দিয়ে ফ্রেমবন্ধি হন তাদের কি একটুও আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগে না?
লাগবে কোত্থেকে?
ঐ বোধ থাকলে তো এমন হবারই কথা ছিলো না।
তবে অনেকে বাধ্য হন স্বামী বা নিজ পরিবারের চাপে।
তাদের কথা বলছি না।
.
আপনার বউ কি পাবলিক প্রোপার্টি নাকি?
পাবলিক প্রোপার্টি মানে জনগণের সম্পত্তি।
আমার কথায় কষ্ট পেলে দুঃখিত।
.
পাবলিক প্রোপার্টি হিসাবে স্বীকার করবেন না।
তাহলে কেনো নিজের বউকে পাবলিকের সামনে এভাবে বেপর্দা অবস্থায় উপস্থাপন করছেন?
নিজের বিবেক কি মরে গেছে?
বিবেক কি ব্যাংকে বন্ধক রেখে এসেছেন?
আপনার বউ আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ।
দুনিয়ার সবচেয়ে দামী সম্পদ।
তাকে এভাবে শো অফ করে বেড়াচ্ছেন কেনো?
.
শুধু ভাই বা বোনদের দোষ দেবো কেনো?
আমরাও কি কম যাই?
আমরাও তো বিয়ে বাড়ি গিয়ে নতুন বউ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাই।
নতুন বউকে না দেখলে তো বিয়ে খাওয়াই পূর্ণতা পায় না বলে মনে হয়!
কেনো অন্যের বউ দেখতে এত মজা লাগে?
চোখটাকে একটু নামিয়ে রাখা যায় না?
কষ্ট হয়।
হোক।
তবুও নামিয়ে রাখুন।
.
যে বিয়েতে ছেলেমেয়েদের ব্যবস্থাপনা একই সাথে সে বিয়ে বর্জন করুন।
আপনি নিজে নিজের বউকে পাবলিক প্রোপার্টি বানিয়েন না।
জনগণ কিছু বলে না, বলবে না।
ভাই, ভাবী, বেস্ট ফ্রেন্ডের বউ এসব বলে মজা নেয় মাত্র।
.
আমার কথাগুলো কারো কাছে খারাপ লাগতে পারে।
কারণ আমি তাদের মত উদারমনা নই। হ্যা, আমি আপনাদের মত অত উদার নই।
আমি আপনাদের মত অত ভালোও হয়তো নই।
তবুও এই নষ্ট কালচারের বিরুদ্ধে।
.
কয়েকটা পরামর্শ দিয়ে বিদায় নেই।
বিয়ে করার আগে, ছেলে মেয়ে বিয়ে দেয়ার আগে বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনাগুলো আল্লাহর ওয়াস্তে জেনে নিন।
যা ইসলামে নাই তা করিয়েন না।
বাদ দিন।
অনেক পয়সা বাঁচবে।
অনেক গুনাহ থেকেও বাঁচবেন।
ইসলামে যা আছে যেমন বিয়ে, ওয়ালিমা এগুলো ইসলাম মেনে সুন্নতী পদ্ধতিতে করার চেষ্টা করুন।
মোহর যা দিতে পারবেন তাই ধার্য করুন এবং দিয়ে দিন।
ওয়ালিমার অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ আলাদা বসার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
যে সেন্টারে এমন ব্যবস্থা আছে সেটি বাসা থেকে একটু দূরে হলেও সেখানেই ব্যবস্থা করুন।
বিয়ের কার্ডে নারীদের পর্দা করে আসতে এবং পুরুষদের চোখ নামিয়ে রাখতে নসীহত লিখে দিন।
উপহার না নিয়ে গেলে মান সম্মান সব যাবে-এই মানসিকতার অপনোদনের জন্য অন্তত গিফট আনার মানসিক বাধ্যবাধকতা তুলে নিন।
.
আমরা চাইলেই হয়তো সব পারবো না।
.
আসুন না, আমরা চেষ্টা করি সাধ্যানুযায়ী।
কতটা পেরেছি আল্লাহ তা দেখার আগে দেখবেন আমরা কতটা করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি।
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।
আল্লাহ সাহায্য করবেন।
ইনশা আল্লাহ।
:
লেখাঃ উস্তায শাহদাত ফয়সাল (হাফিঃ)
(আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন)





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.