আল্লাহর কাছে আসার গল্প-২
মহান রবই আমাদের পৌঁছে দিবেন চির সম্মানিত সেই স্থানে যা তিনি মুমিনদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন
যেসব মেয়েরা ছোট থেকে দ্বীনি পরিবেশ পায়,তাদের বাবামাও তাদেরকে মাদ্রাসাতেই ভর্তি করান।তারা সেখানে বেশকিছু নিয়ম কানুনের ভেতর বড় হতে থাকে।
কিন্তু অন্য দিকে আমরা যারা হঠাৎ করে হেদায়াত পেয়েছি, কিভাবে বড় হয়েছি জানেন?
আমরা ছোট থেকে ভিডিও গেইম,নাচ, গান, মুভি এসব দেখেই বড় হয়েছি। কারন আমাদের পরিবেশ ছিলো এমন। যা দেখেছি তাই শিখেছি।
হঠাৎ করে জাহেলিয়াতের জীবন থেকে যখন আমরা হেদায়াতের নূরে আলোকিত হলাম তখন আল্লাহ কে ভালবেসে আমাদের সব কিছু ছেড়ে দিতে হয়েছে
ভাবতে পারেন?
যে মেয়েটা এতদিন ভ্রুপ্লাগ করতো সে হঠাৎ আল্লাহ কে ভালবেসে ভ্রুপ্লাগ করা ছেড়ে দিলো।
যে মেয়েটা ছেলেদের মত প্যান্ট,টপস পড়ে বাহিরে বের হত সেই মেয়েটাই রবের খুশির জন্য লম্বা খিমার, হাত পা মোজায় নিজেকে আবৃত করে নিলো।
যে মেয়েটার এত এত ছেলে বন্ধু ছিলো সে এক আল্লাহর ভয়ে সব ছেড়ে দিলো।
যে মেয়েটা কোন হারাম সম্পর্কে ছিলো, যাকে সে প্রান দিয়ে ভালবাসতো সে আল্লাহকে ভালবেসে সব ছেড়ে দিলো!
যে কখনো গায়ে ওড়না দিতে পরতো না গায়ে গরম লাগে বলে সেই সারাদিন ঘরে ওড়না এবং বাহিরে আপাদমস্তক ঢেকে বের হয়!
আরো কি কি শুনবেন?
কি কি শুনতে চান?
হঠাৎ দ্বীনে ফেরার পর আমাদের সাথে সবাই কেমন ব্যবহার করে সেটা জানেন?
হয়তো জানেন না!
হঠাৎ যারা হেদায়াত প্রাপ্ত হয় তাদের কেউ মেনে নিতে পারে না।অনেক সময় অনেক উল্টাপাল্টা কথা শুনতে হয়,নিকট আত্মীয়দের থেকে। তাদের কাছে এটা নাকি বাড়াবাড়ি!
যারা দ্বীনি পরিবেশে ছোট থেকে বেড়ে উঠেছেন তারা তো সব কিছু মেইনটেইন করতে পারছেন।কিন্তু আমদের চারদিকে ফেতনা।ডানে ফেতনা, বামে ফেতনা, উপরে ফেতনা, নীচে ফেতনা। আমাদের পদেপদে বাধা।সবার কাছ থেকে বক ধার্মিক উপাধি!
কেন জানেন?
কারন আমরা আগে অন্ধকার জগৎ এ ছিলাম।
হঠাৎ কি এমন হলো যাতে খোলা চুল কালো কাপড়ে ঢাকলাম!
অনেকে আবার ধারনা করেন,
হঠাৎ এ পরিবর্তন কেন?
আবার জঙ্গী দলে নাম লেখালো নাতো!
.
ননপ্রাক্টেসিং মুসলিম পরিবার/মডারেট মুসলিম পরিবারে থেকে দ্বীন পালন করা কতটা কষ্ট তা শুধু সেই জানে যে সেখানে প্রতিনিয়ত দিন কাটাচ্ছে তার ভেতরে ইমানের প্রদিপটা জ্বলন্ত রেখে।
আমার পরিচিত একটা দ্বীনি বোন আছে যে কিনা নিকাব পরতে চায়।কিন্তু তার মা নিকাব পরতে দিতে চায় না।সে আমার সাথে মাঝে মাঝে তার অস্থিরতার কথা শেয়ার করে। বারবার বলে তার যদি ভাল একটা প্রাক্টেসিং মুসলিমের সাথে বিয়ে হয়ে যায় তবে তো সে দ্বীন পালন করতে পারবে ভাল করে।
তার এই আকুলতা ব্যাকুলতা কখনো বোঝার চেষ্টা করেছে কেউ?
তার অন্তরে রবের প্রতি কি পরিমান ভালবাসা লুকায়িত রয়েছে তার খবর কি কেউ রাখে!!!?
একমাত্র রবই সেই প্রতিদান দিবে
সব থেকে বেশি কি খারাপ লাগে জানেন!?
যখন বিয়ে নিয়ে কথা হয়,
বাবা মা পছন্দ করে মডারেট মুসলিম ছেলে, যে ভাল বেতন পাওয়া, ভাল বাড়ি গাড়ির মালিক। যাতে ভাল করে সমাজ রক্ষা হয়!
কিন্তু আমরা তো চাই একজন হেদায়াতপ্রাপ্ত সত্যিকারের মুসলিম ছেলে যে আল্লাহর জন্যই তার ঘরের রানীকে ভালবাসবে!
আবার অনেক আলেম বা হাফেজ তারা চিন্তা করেন অত্যন্ত ধার্মিক পরিবার থেকে মেয়ে আনবেন!
ধার্মিক পরিবার গুলো ধার্মিক পরিবারই খোঁজেন।
আচ্ছা তবে আমাদের মত মেয়েরা কি দোষ করলো?
আমাদের কেন সব কিছুতে হেয় করা হয়?
আমরা তো আমাদের রবের দিকেই ফিরেছি,
আমরা সত্য খুঁজে বের করেছি
আমরা তো অবহেলিত কেউ নয়।
আচ্ছা একবার বলুন তো ইসলামের শুরুর দিকে যেসব সাহাবিরা হেদায়াতের নূরে নিজেদের জীবন আলোকিত করেছিলেন তারাও তো তাদের পেছনের জীবনে অনেক মারাত্মক গুনাহে লিপ্ত হয়েছিলেন।
আল্লাহ কি ইসলাম গ্রহনের পর তাদের সুসংবাদ দেন নি?
তাদের কে পাপ মুক্ত করান নি?
আল্লাহর অপার করুনায় তারা আজ জান্নাতের অধিবাসী
তারা যদি পারে আমরাও কিছুটা হলেও পারবো
কারন আমরাও শেষ নবীর উম্মত।
নবীকে না দেখে
তার মুখ নিসৃত বানী স্বীয় কানে না শুনে, আল্লাহ কে না দেখে আমরা ও জাহেলিয়াত থেকে ফিরেছি____,
আমরাও রবকে ভালবেসে সম্মানিতা/সম্মানিত হতে পারি!
আসুন দেখি কুরআনে আল্লাহ আমাদের নিয়ে কি বলেছেন,
.
ﻗُﻞْ ﻳٰﻌِﺒَﺎﺩِﻯَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳْﺮَﻓُﻮﺍ ﻋَﻠٰﻰٓ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻘْﻨَﻄُﻮﺍ ﻣِﻦ ﺭَّﺣْﻤَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻐَﻔُﻮﺭُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ
বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
______[সূরা আয-যুমার,আয়াতঃ ৫৩]
.
ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦ ﺗَﺎﺏَ ﻭَﺀَﺍﻣَﻦَ ﻭَﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺻٰﻠِﺤًﺎ ﻓَﺄُﻭﻟٰٓﺌِﻚَ ﻳُﺒَﺪِّﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻬِﻢْ ﺣَﺴَﻨٰﺖٍ ۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَّﺣِﻴﻤًﺎ
তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"
______[সূরা আল-ফুরকান,আয়াতঃ ৭০]
.
আল্লাহ আরো কি বলেছে জানেন?
"........নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন।"
_____[সূরা আল-বাকারাহ,আয়াতঃ২২২]
.
এগুলো কিন্তু আমার কথা নয়, এগুলো মহান রবের কথা যা পবিত্র কুরআনে বর্নিত;
আমরা যারা অতীতের সব ভুলের জন্য রবের কাছে মাফ চেয়েছি, আন্তরিক তওবা করেছি এবং সেই পাপগুলোকে মনে প্রানে ঘৃনা করে সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি,
পাপ গুলোকে পূন্যে পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
সেটাই আমাদের বিশ্বাস
আপনি ভাবতে পারেন!
পাহাড় পরিমান পাপ করে কেউ যদি রবের কাছে তওবা করে তবে সে মূহুর্তেই পাহাড় পরিমান পূন্যের অধিকারী হয়ে যাবে!
এজন্যই তো তিনিই আমাদের রব
আল্লাহ কিন্তু কুরআনে বলে দিয়েছেন তিনি আমাদের(তওবাকারীদের) ভালবাসেন।
তাই আর কি চাই?
মহান রব যিনি সমগ্র বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা তিনি আমাদের ভালবাসেন!
কারো উপেক্ষা কি এই ভালবাসার সমপরিমান হতে পারে!
কখনোই না!
আমরা ভরসা রাখি আমাদের রবের উপর।
তিনি আমাদের কে যেভাবে অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছেন ঠিক তেমনি হাসরের ময়দানেও সাহায্য করবেন।
.
আর দুনিয়াটা তো পরীক্ষাক্ষেত্র
পরীক্ষা যতই কঠিন হবে সফল হলে তার পুরুষ্কার ও তার থেকেও বেশি হবে
.
আমরা ভয় পাবো না
কখনোই না
আমরা ভীরু না
কারন আমরা বিশ্বাস করি কুরআনের সেই দুটি আয়াত,
.
ﺇِﻥَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻌُﺴْﺮِ ﻳُﺴْﺮًﺍ
নিঃসন্দেহে কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।
____|(সূরা ইন'শিরাহ,আয়াতঃ ৬)
.
ﻭَﻟَﺴَﻮْﻑَ ﻳُﻌْﻄِﻴﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻓَﺘَﺮْﺿٰﻰٓ
শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে (এত নি‘মাত) দিবেন যার ফলে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।
_______|(সূরা আদ-দুহা,আয়াতঃ ৫)
.
ইনশা"আল্লাহ
একদিন আর আমাদের কষ্ট থাকবে না
মহান রবই আমাদের পৌঁছে দিবেন চির সম্মানিত সেই স্থানে যা তিনি মুমিনদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন।
(সকল হেদায়াত প্রাপ্ত বোনের পক্ষ থেকে)
লেখাঃ ফাতেমা ইসলাম লিমা
কোন মন্তব্য নেই
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু