মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব---৬

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-৬


মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-৬


শিঙ্গায় ফুঁৎকার প্রসঙ্গেঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে বলেন:

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ﴿68﴾ وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ الْكِتَابُ وَجِيءَ بِالنَّبِيِّينَ وَالشُّهَدَاءِ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ﴿69﴾ (سورة الزمر)
আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না। (সূরা যুমার, আয়াত ৬৮-৬৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন:

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُمْ مِنَ الْأَجْدَاثِ إِلَى رَبِّهِمْ يَنْسِلُونَ (سورة يس :51)

আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন:

وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ (سورة النمل :87)

আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, সেদিন আসমানসমূহ ও যমীনে যারা আছে সবাই ভীত হবে; তবে আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া। আর সবাই তাঁর কাছে হীন অবস্থায় উপস্থিত হবে। (সূরা আল নামল, আয়াত ৮৭)

এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :

১- প্রথম শিঙ্গা ফুৎকারে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা থাকবে সকলেই বেহুশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাদের রক্ষা করবেন তারা বেহুশ হবে না।
২- দ্বিতীয় বার শিঙ্গা ফুঁক দিলে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে।
৩- দুই বার শিঙ্গা ফুকের বিষয়টি প্রমাণিত হল।
৪- দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুৎকারের পর পৃথিবী আলোকিত হবে। হিসাব-নিকাশ শুরু হবে।
৫- দ্বিতীয় আয়াতে যে শিঙ্গা ফুৎকারের কথা এসেছে সেটা দ্বিতীয় ও শেষ ফুঁৎকার।
৬- তৃতীয় আয়াতে যে ফুৎকারের কথা আলোচিত হয়েছে সেটা হল প্রথম ফুৎকার।
৭- শুধু পৃথিবীর অধিবাসীরা নয়। আকাশের অধিবাসীরাও কেয়ামতের ভয়াবহতায় কম্পিত হবে।

হাদীসে এসেছে :

عن أبي هريرة رضي الله هنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ما بين النفختين أربعون . قال : أربعون يوما ؟ قال : أبيت ، قال : أربعون شهرا ؟ قال : أبيت ، قال : أربعون سنة ؟ قال : أبيت . قال : ثم ينزل الله من السماء ماء ، فينبتون كما ينبت البقل ، ليس من الإنسان شيء إلا يبلى ، إلا عظما واحدا وهو عجب الذنب ، ومنه يركب الخلق يوم القيامة (متفق عليه)

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: দুই শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হল চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আবু হুরাইরা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু হুরাইরা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এরপর আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। তখন মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের দেহের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু মেরুদন্ডের একটি হাড্ডি। আর এটি দিয়েই কেয়ামতের দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরী করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :

১- কেয়ামত সংঘটনে দু বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এ হাদীসটি থেকে আমরা তা জানতে পারলাম। অবশ্য বেশ কিছু আলেম তিন বার বা চার বার শিঙ্গা ফুকেঁর কথা বলেছেন। কিন্তু আল কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দু বার শিঙ্গা ফুকেঁর বিষয়টি অধিকতম বিশুদ্ধ।

২- দু ফুৎকারের মাঝে সময় চল্লিশ দিন না মাস না বছর? কোনটি আসলে উদ্দেশ্য? বিভিন্ন হাদীসে চল্লিশ বছরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে হাদীসগুলো দুর্বল সুত্রের। আসল কথা হলো বিষয়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে।

৩- কেয়ামতের সময় কবরে মানুষের দেহের কোন কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু একটি মেরুদন্ডের হাড় আল্লাহ তাআলা অক্ষত রাখবেন। সেটি দিয়ে মানুষকে আবার সৃষ্টি করবেন।

কেয়ামতের দিনঃ

যখন মানুষ কবর থেকে উঠে দাড়াবে তাদের বলা হবে, তোমরা আসো তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, আর থামো, তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন সকল মানুষ হতাশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। পরাক্রমশালী এক অদ্বিতীয় প্রভুর সামনে সকলে মাথা নত করে দেবে। তারা সেদিন এ আহবানে সাড়া দিতে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দেবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا
সেদিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোন এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না। (সূরা তা-হা, আয়াত ১০৮)

وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا ﴿111﴾ وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا ﴿112﴾
আর চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে যুল্‌ম বহন করবে। এবং যে মুমিন অবস্থায় ভাল কাজ করবে সে কোন জুলুম বা ক্ষতির আশংকা করবে না।
(সূরা তা-হা আয়াত ১১১-১১২) فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ ﴿42﴾ يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ ﴿43﴾ خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ ﴿44﴾ (سورة المعارج )

অতএব তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা (বেহুদা কথায়) মত্ত থাকুক আর খেল-তামাশা করুক যতক্ষণ না তারা দেখা পায় সেদিনের, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যেদিন দ্রুতবেগে তারা কবর থেকে বের হয়ে আসবে, যেন তারা কোন লক্ষ্যের দিকে ছুটছে অবনত চোখে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে! এটিই সেদিন যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মাআরিজ, আয়াত ৪২-৪৪)
ইনশাআল্লাহ চলবে...............।



মৃত্যু,কেয়ামত ও পরকাল_____পর্ব-----১

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল___পর্ব----২

মৃত্যু, কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব--৩

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----৪

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব---৫

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল_____পর্ব----৭

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----৮





কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.