মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল____পর্ব----৮

মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-৮


মৃত্যু,কিয়ামত ও পরকাল-৮


হাশরের ময়দানের অবস্থাঃ

হাদীসে এসেছে:
عن سهل بن سعد رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يحشر الناس يوم القيامة على أرض بيضاء ، عفراء ، كقرصة النقي ، ليس فيها علم لأحد. (رواه مسلم2150)

সাহল ইবনে সাআদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিবসে মানুষকে সাদা পোড়ামাটি রংয়ের উদ্ভিদহীন একটি যমীনে একত্র করা হবে। যেখানে কারো জন্য কোন আলামত থাকবে না। (বর্ণনায়: মুসলিম, হাদীস নং ২১৫০)

عن عائشة رضي الله عنها قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : يحشر الناس يوم القيامة حفاة عراة غرلا . قلت : يا رسول الله ! النساء والرجال جميعا ، ينظر بعضهم إلى بعض ؟ قال صلى الله عليه وسلم : يا عائشة ! الأمر أشد من أن ينظر بعضهم إلى بعض. (متفق عليه)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলতেন: কেয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ, খালি পায়ে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষ ও নারী সকলকে একত্র করা হবে আর একজন অপর জনের দিকে তাকাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে আয়েশা! সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপর জনের দিকে তাকানোর ফুরসত পাবে না। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম)

কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে উপস্হিত হবেঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى ﴿124﴾ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا ﴿125﴾ قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آَيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى ﴿126﴾

আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১২৪-১২৬)

তিনি আরো বলেন:
وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا (سورة الإسراء : 97)

আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। (সূরা আল ইসরা, আয়াত ৯৭)
হাদীসে এসেছে:

عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رجلا قال : يا رسول الله ! كيف يحشر الكافر على وجهه يوم القيامة ؟ قال أليس الذي أمشاه على رجليه في الدنيا ، قادرا على أن يمشيه على وجهه يوم القيامة ؟ . قال قتادة : بلى . وعزة ربنا !

আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন : অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি। (বুখারী ও মুসলিম)

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: يعرق الناس يوم القيامة حتى يذهب عرقهم في الأرض سبعين ذراعا، ويلجمهم حتى يبلغ آذانهم

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)

عن المقداد بن الأسود رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : تدني الشمس ، يوم القيامة ، من الخلق ، حتى تكون منهم كمقدار ميل . قال سليم بن عامر : فوالله ! ما أدري ما يعني بالميل ؟ أمسافة الأرض، أم الميل الذي تكتحل به العين . قال : فيكون الناس على قدر أعمالهم في العرق . فمنهم من يكون إلى كعبيه . ومنهم من يكون إلى ركبتيه. ومنهم من يكون إلى حقويه. ومنهم من يلجمه العرق إلجاما . قال وأشار رسول الله صلى الله عليه وسلم بيده إلى فيه .

মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (বর্ণনায়: মুসলিম ২১৯৬)

হে আল্লাহর বান্দা! আপনি এভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন, আমার অবস্থা তখন কেমন হবে? আমি কি সেদিন সৌভাগ্যবান হবো না দুর্ভাগা? আমার জীবনের অধিকাংশ কাজ কি সৎ কাজ হয়েছে না পাপাচার বেশী হয়েছে? আমি কি মদ, ব্যভিচার, জুয়া, প্রতারণা, মিথ্যা কথা, দুর্নীতি, আমানতের খেয়ানত, অপরের সম্পদ আত্নসাৎ, অপরের মানহানি, অপরের দোষ চর্চা, অপবাদ, মিথ্যা মামলা-মুকাদ্দামা, সূদী কারবার, ঘুষ লেনদেন, খাবারে ভেজাল, ওয়াদা খেলাফী, ঋণ খেলাফী, ইসলামের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব, ইসলাম অনুসারীদের নিয়ে উপহাস তামাশা ইত্যাদি অনৈতিক কাজগুলো পরিহার করে চলতে পেরেছি, না এগুলো ছিলো আমার জীবনের নিত্য দিনের সঙ্গী? কাজেই কেয়ামতের এ কঠিন দিনের মুখোমুখী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ-কে ভয় করুন। সকল বিষয়ে আল্লাহ-কে ভয় করে সাবধানতার সাথে পথ চলুন। দুনিয়ার জীবনে একবার ব্যর্থ হলে তা কাটিয়ে উঠা যায়। কিন্তু কেয়ামতের সময়ের ব্যর্থতার কোন প্রতিকার নেই। কাজেই এখন থেকেই নিজের আমলের হিসাব নিজে করতে থাকুন।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا ﴿21﴾ وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا ﴿22﴾ وَجِيءَ يَوْمَئِذٍ بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ يَتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ وَأَنَّى لَهُ الذِّكْرَى ﴿23﴾ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي قَدَّمْتُ لِحَيَاتِي ﴿24﴾

কখনো নয়, যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে পরিপূর্ণভাবে। আর তোমার রব ও ফেরেশতাগণ উপস্থিত হবেন সারিবদ্ধভাবে। আর সেদিন জাহান্নামকে উপস্থিত করা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু সেই স্মরণ তার কী উপকারে আসবে? সে বলবে, হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য!’(সূরা আল ফাজর, আয়াত ২১-২৪)
ইনশাআল্লাহ চলবে...................।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.