মৃত্যু,কেয়ামত ও পরকাল_____পর্ব-----১

মৃত্যু,কেয়ামত ও পরকাল


মৃত্যু,কেয়ামত ও পরকাল_____পর্ব-----১

হে আল্লাহর বান্দাগণ! কেয়ামত আসবেই। স্পষ্টভাবেই আসবে। আসবে সময় মত। কিন্তু মানুষ কি এ জন্য উপদেশ গ্রহণ করছে? নিচ্ছ কি কোন প্রস্তুতি? আচ্ছা কেয়ামত না হয় আমরা দেখতে পাচ্ছি না এখন, কিন্তু প্রতিদিন আমাদের আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, প্রতিবেশীর মৃত্যু তো আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এটাতো অস্বীকার করতে পারি না, কিংবা এতে সন্দেহ করতে পারি না। তা সত্বেও এর জন্য আমরা কী প্রস্তুতি নিচ্ছি? কী উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করছি?
আসলে আপনার সত্যিকার বন্ধু সে, যে আপনাকে এগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আপনার সত্যিকার দুশমন সে, যে আপনাকে দুনিয়ার লোভ লালসার পথ দেখায়। আখেরাত সম্পর্কে আপনাকে করে বিভ্রান্ত ও সন্দেহপ্রবন।
আমাদের ভুলে গেল চলবে না এ পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সকলের উপস্থিত হতে হবে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর কাছে। এরপর হয়ত আমরা যাবো জান্নাতে অথবা জাহান্নামে, যেখানের বসবাস হবে স্থায়ী। যেখানে নেই কোন জীবনাবসান।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ ﴿5﴾ إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ ﴿6﴾

হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক(শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। (সূরা আল ফাতির, আয়াত : ৫-৬)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآَخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ

হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হ, তখন তোমরা যমীনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৩৮)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

আর তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্লতায় আছে, অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই নগণ্য। (সূরা আর রাদ, আয়াত ২৬) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
تعس عبد الدينار، تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميلة، تعس عبد الخميصة، إن أعطى رضي وإن لم يعطى سخط، تعس وانتكش وإذا شيك فلا انتقش . طوبى لعبد آخذ بعنان فرسه في سبيل الله أشعس رأسه مغبرة قدماه، إن كان في الحراسة كان في الحراسة وإن كان في الساقة كان في الساقة، إن استأذن لم يؤذن له وإن شفع لم يشفع . أخرجه البخاري

টাকা-পয়সার দাস ধ্বংস হোক, রেশম কাপড়ের দাস ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক পোশাকের দাস। এদের অবস্থা হলো, তাদেরকে প্রদান করা হলে খুশী হয় আর না দিলে অসন্তুষ্ট হয়। ধ্বংস হোক! অবনত হোক! কাঁটা বিঁধলে তা যেন উঠাতে না পারে।
তবে সৌভাগ্যবান আল্লাহর ঐ বান্দা যে আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধরেছে, মাথার চুল এলোমেলো করেছে ও পদদ্বয় ধুলায় ধূসরিত করেছে। যদি তাকে পাহারার দায়িত্ব দেয়া তবে সে পাহারার দায়িত্ব পালন করে। যদি তাকে বাহিনীর পিছনে দায়িত্ব দেয়া হয় তবে তা পালন করে। যদি সে নেতার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চায় তবে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না। যদি সে কারো জন্য শুপারিশ করে তবে তার শুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।” বর্ণনায় : বুখারী।
অনেক মানুষ আছে যারা- কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করায় লিপ্ত রয়েছে, পাপাচারের জেলখানায় বন্দি হয়ে আছে, কিন্তু তারা মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী হিসাব-নিকাশ থেকে একেবারে বেখবর। আর আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন, তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দিয়েছেন তখন আমার কাজ হলো তাদের নসীহত করা এবং সত্য-সঠিক পথে যেতে সাহায্য করা।
চিন্তা করে দেখি আজ যদি আমার মৃত্যু এসে যেত তাহলে আমি কিছুক্ষণ পর মাটির নিচে চলে যাবো। আমার পাপগুলো লিখিত থাকতো, সেগুলোই আমার সঙ্গী হতো। এ কথা চিন্তা করলে নিজের কুপ্রবৃত্তি দমন হয়ে যেত। পাপাচারের উপকরণগুলো আমার থেকে দূরে চলে যেত।
হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় করুন। পৃথিবীর এ সুখ-শান্তি চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত ক্রমেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যুর সময়ের কথা একটু চিন্তা করুন। তখন যদি আমার পাপের বোঝা ভারী হয় সৎকর্মের চেয়ে তাহলে কত বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে।
এক কবি চমৎকার বলেছেন :
فَلَوْ أنَّ إذَا مِتْنَا تُرِكْنَا + لَكَانَ المَوْتُ رَاحَةَ كُلِّ حيٍّ وَ لَكِنَّا إذَا مِتْنَا بُعِثْنَا + وَنُسْأَلُ بَعْدَهُ عَنْ كُلِّ شَيءٍ

যদি এমন হত আমরা মরে যাবো আর আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে তাহলে মৃত্যু হত সকল প্রাণীর জন্য শান্তির বার্তা।
কিন্তু কথা হল আমরা যখন মরে যাবো তখন আমাদের হাজির করা হবে আর এরপর প্রশ্ন করা হবে সকল বিষয় সম্পর্কে।
হে আল্লাহর বান্দা! জীবনের প্রতি দীর্ঘ লোভ ও ভোগ-বিলাসিতার আশা পরিত্যাগ করুন, আর মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিন।
মহান রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সবাইকে দুনিয়া ও আখেরাতে উভয়কালে কল্যাণ ও শান্তি দান করেন।আমিন।
আমরা যদি এভাবে বলতাম, কতই না ভাল হত। আল্লাহ তাআলার কাছেই আমার সকল বিষয় উপস্থাপিত। সকল বিষয়ে আমি তার উপর তাওয়াক্কুল করি। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি সর্বোত্তম কর্ম-বিধায়ক। মহান পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সামর্থ ছাড়া কেহ খারাপ কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারে না। আর তার তাওফিক ব্যতীত কেহ নেক আমল করতে পারে না।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.