শ্রেষ্ঠ মানুষেরা সালেহ্ আলাইহিস সালাম: [পর্ব -৭]

শ্রেষ্ঠ মানুষেরা


সালেহ্ আলাইহিস সালাম: [পর্ব -৭]


আগের পর্বে বলা হয়েছিল নূহ আলাইহিস সালামের ছেলে সাম এর বংশধর এর নাম ছিল ইরাম।ইরাম এর এক পুত্রের বংশধরদের বলা হতো আদাল উল্যা অর্থাৎ প্রথম আদ।এবং দ্বিতীয় পুত্রের বংশধরদের বলা হতো আদআস সানি অর্থাৎ দ্বিতীয় আদ।
এবং এই দ্বিতীয় আদের অপর নাম হল সামুদ।কোন কোন স্কলারদের মতে আদ জাতি ধ্বংস হওয়ার প্রায় 500 বছর পর সামুদ জাতির কাছে আল্লাহ নবী প্রেরণ করেন ।
তাদের অবস্থান ছিল আরব উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। তাদের মূল শহরের নাম ছিল হিজর। বর্তমানে যে মাদাহ্ ইন সালেহ্ নামে পরিচিত। এবং এটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ।যা সৌদি আরবের জেদ্দা শহর থেকে প্রায় 700 কিলোমিটার উত্তরে।
আদ জাতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে সামুদ জাতি ছিল সবচেয়ে এগিয়ে ।পাথর খোদাই ও স্থাপত্য শিল্পের দিক থেকে তারা ছিল অত্যন্ত পারদর্শী ।সাম্প্রতিক আর্কিওলজিক্যাল এক্সক্যাভেশন প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রাচীন এই জাতির খোদায়ী কাজের নমুনা উদঘাটিত হয় ।বোখারীর হাদীসে বর্ণিত আছে নবম হিজরীতে তাবুকের যুদ্ধে যাওয়ার পথে সাহাবীরা হিজর অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিলেন ।তখন রসূল সা: তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন তোমরা কান্না অবস্থা ছাড়া অভিশপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করো না ।কারণ তাহলে তোমাদের উপর ও ওই অভিশাপ আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছে। অর্থাৎ রাসূল সাঃ যেনো সূক্ষ্মভাবে এই কথায় বললেন,, যে এমন ভয়াবহ ধ্বংসের উদাহরণ দেখেও যদি আমাদের মনে ভয় না ঢুকে তার মানে আমাদের মন শক্ত হয়ে গেছে। এবং হয়ত আমরা প্রাচীন সেই লোকগুলোর মতোই অহংকারী হয়ে উঠব ।এবং সেই অহংকার আমাদের জন্য আল্লাহর গজব নিয়ে আসবে ।আল্লাহ যেন আমাদের রক্ষা করেন ।
পার্থিবজীবন ও ভোগবাদিতা কে প্রাধান্য দিলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায় ।এবং সামুদ জাতির বেলায়ও তাই হয়েছিল। তখনো নুহ আলাইহিস সালাম এর সময়ে সেই মহাপ্লাবনের কথা লোকমুখে আলোচিত হত ।আর আদজাতির বিনাশের বিষয়টি তাদের জন্য এক চিরন্তন সত্য ছিল ।তাদের ধ্বংসস্তূপের উপরই সামুদ জাতি তাদের অট্টালিকা সমূহ নির্মাণ করেছিল। অথচ এরপরেও সামুদ জাতির মাঝে শিরক ও মূর্তিপূজা ছড়িয়ে পড়লো।
এত নিকট ইতিহাস থেকে ও শিক্ষা না নিতে পারার দোষে আল্লাহ কিন্তু তাদের তখনই করে দিতে পারতেন ।কিন্তু অসীম অনুগ্রহের মালিক তাদের কাছে নতুন করে একজন নবী পাঠালেন
যার নাম সালেহ্ আলাইহিস সালাম। 🌺
সালেহ আলাইহিস সালাম দাওয়াত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ-তায়ালা উল্লেখ করেন সামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহ্ কে পাঠিয়ে ছিলাম। তিনি বলেছিলেন ভাইয়েরা আমার ,তোমরা আল্লাহর এবাদত কর ।তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোনো সত্য ইলাহ্ নেই ।কিন্তু সমাজের প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা যখন দেখল সমাজের একেবারে সাধারণ মানুষেরা সালেহ্ আলাইহিস সালাম এর দাওয়াতে সাড়া দিয়েছে ,,তারা বলল তোমাদের মত লোকেরা যে বিষয়ে বিশ্বাস করে,যে বিষয় ঈমান আনে আমরা সেটা কি প্রত্যাখ্যান করব ।সেটার উপরই অবিশ্বাস আনবো।
বাস্তবে সামাজিক স্ট্যাটাস তাদেরকে এতটা অহংকার করে তুলেছিল ,যে তারা সত্যকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই না করে এই ব্যাপার নিয়ে পড়েছিল যে সালেহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী গ্রহণ করলে তাদের সামাজিক অবস্থান নেমে আসবে কিনা।
সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে উদ্দেশ্য করে অবিশ্বাসী রা বলল হে সালেহ্,, তোমার উপর আমাদের এত আশা ছিল তোমাকে নিয়ে কত আকাঙ্ক্ষা ছিল তোমার কত প্রতিভা ছিল অথচ তুমি এসে আমাদেরকে আমাদের শত শত বছরের সংস্কৃতি প্রত্যাহার করার আহ্বান যাচ্ছ ।আমাদের বাপ-দাদারা যা করে এসেছেন সেটাকে তুমি ভুল দাবি করছ। তোমার কথাবার্তা নিয়ে আমরা অত্যন্ত হতাশ হয়ে গেলাম ।কিন্তু সালেহ্ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচলিত না হয়ে তার দাওয়াতের কাজ চালিয়ে গেলেন ।মানুষকে বোঝাতে লাগলেন
আল্লাহর দিকে ছুটে চলা ছাড়া আমাদের অস্তিত্বের কোন মানে নেই।

আল্লাহর ইবাদত না করতে পারলে আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজই বৃথা। প্রতিটি অর্জনই একদিন ধুলোয় মিশে যাবে ।অন্ধকার কবরে আমাদের একাকী প্রবেশ করতে হবে ।এবং মাটির নিচে সেই অন্ধকারে ফেলে আসার পর ধীরে ধীরে প্রতিটি মানুষ আমাদের ভুলে যাবে ।সেখানে আলো খুঁজে পাওয়ার একটাই উপায় তাহল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা ।
অবিশ্বাসীরা ভাবল সালেহ্ আলাইহিস সালাম এর ক্যাম্পেইন বন্ধ করতে হবে ।তাকে জনসমক্ষে অপমান করা হলে তার বিরামহীন এই প্রচারণা হয়তো বন্ধ করা যাবে। তারা তাকে বলল তুমি যদি সত্যিই নবী হও নিশ্চয়ই তুমি অলৌকিক কিছু করে দেখাতে পারবে ।অর্থাৎ তারা সালেহ্ আলাইহিস সালাম এর পক্ষ থেকে একটি মিরাকেল চাচ্ছিল।কিন্তু মিরাকেল অলৌকিক কোনো ঘটনার ব্যাপারে আল্লাহর একটি নিয়ম রয়েছে যা ইতিহাস জুড়ে দেখা যায় ।আল্লাহ মানুষের হেদায়েতের জন্য তার কাছে ডেকে নেওয়ার জন্য তার বান্দাদের কাছে একজন বার্তাবাহকের মাধ্যমে তার আমন্ত্রণ পাঠান।
সে বার্তা বান্দারা প্রত্যাখ্যান করলেও সেই বার্তাবাহক অত্যন্ত ধৈর্য,মমতা, এবং যুক্তির মাধ্যমে তাদের বোঝাতে থাকেন ।এরপরেও যদি তারা না বোঝে এবং তারা যদি মিরাকেল দেখতে চায়। যদি তারা বলে কেবলমাত্র অলৌকিক কিছু দেখলেই তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করবে ।তখন আল্লাহ তাদেরকে শুধু এক শর্তে অলৌকিক কিছু দেখান। এবং সেটা হলো তারা যদি সেই অলৌকিক ঘটনা দেখার পরেও আল্লাহর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ,তাহলে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন ।
সামুদ জাতির লোকেরা আলাইহিস সালামের কাছ থেকে অলৌকিক কিছু দাবি করল এবং শুধু তাই না তারা নিজেরাই চিন্তা করে করে এমন একটি অবাস্তব চিত্র বর্ণনা করলো যা কখনোই একজন মানুষের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না ।তারা যেহেতু পাহাড়-পর্বতের খোদাই করে লেখা লেখি এবং আঁকাআঁকি করতো তারা সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে বলল তুমি ওই পাহাড় টা দেখছো ??তুমি সত্যিই নবী হয়ে থাকলে ওই পাহাড়টাকে খোদাই করে একটি উট তৈরি করো ।এবং উট টাকে এত বিরাট হতে হবে যে এমন উট আমরা আগে কখনো দেখিনি। এবং শুধু তাই না সেই উট টাকে হতে হবে একটি জীবন্ত উট।এবং শুধু তাই না উট টাকে হতে হবে গর্ভবতী ।
তারা হয়তো ভেবেছিল এমন বিশদ বিবরণ শুনে সালেহ্ আলাইহিস সালাম তাদের তাদের সাথে সমঝোতা করতে চাইবেন। কিন্তু সালেহ্ আলাইহিস সালাম তাদের দাবি শোনার পর শুধু একটা কথাই বললেন। আমি যদি এমন একটি উট তোমাদের সামনে এনে দিতে পারি তোমরা কি বিশ্বাস করবে???
তার এমন প্রশ্ন শুনেই জাতির লোকদের মনে এক ধরনের বিস্ময় কাজ করতে লাগলো ।কিন্তু তারা নিজেরাই যখন এতটাই কনফিডেন্স নিয়ে কল্পনার সব রং মাখিয়ে এমন একটি চিত্র তুলে ধরে ছিল তখন তাদের জন্য পিচুহটা সম্ভব ছিল না তারা বলল-হ্যাঁ,, তুমি যদি সত্যিই আমাদের সামনে এমন একটি উট উপস্থিত করতে পারো তাহলে আমরা বিশ্বাস করব ।
সালেহ্ আলাইহিস সালাম সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে সামুদের লোকদের বর্ণিত সেই অলৌকিক নিদর্শন চাইলেন ।
এবং আল্লাহর হুকুমে সবার চোখের সামনে সেই পাহাড়ের একটি অংশ কাঁপতে লাগল ।এবং তারা হতবাক হয়ে দেখতে লাগলো যে পাহাড়ের একা বিশাল অংশ কাঁপতে কাঁপতে বিস্ফোরিত হয়ে একটি গর্ভবতী উট বেরিয়ে এলো। এবং সে উট টা এত প্রকান্ড ছিল যা মানুষ আগে কখনো দেখেনি ।
এবং সেই উট টাকে আল্লাহ নাখাতুল্লাহ্ বা আল্লাহর উট হিসেবে পবিত্র কোরআনের সম্বোধন করেছেন ।ঠিক যেমন বাইতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর ঘর হল পবিত্র একটি স্থান ।এবং কালামুল্লাহ আল্লাহর কালাম অর্থাৎ পবিত্র কুরআন সবচেয়ে পবিত্র কিতাব।
তেমনি ভাবে এই নাখাতুল্লাহ্ আল্লাহর উটের মর্যাদা ছিল অনেক বেশি। এবং যেহেতু এটা ছিল নাখাতুল্লাহ্ একে যত্ন নেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ বিশেষ কিছু নিয়ম নির্ধারণ করলেন ।একটি আদেশ ছিল ,,যে কোন ব্যক্তি যেন সেই উটকে কোন ধরনের খারাপ উদ্দেশ্যে স্পর্শ না করে ।অবলা প্রাণীদের একেবারে কারণ ছাড়া আঘাত করা খারাপ লোকদের অভ্যাস ।এবং এই অভ্যাস আমাদের বর্তমান সমাজে লক্ষ্য করা যায় ।অনেক লোক আছে যারা রাস্তার পাশের একটি কুকুরকে দেখলে অহেতুক একটি চ‌ওয়াড় থাপ্পর মেরে থাকে। তাদেরকে যদি বলা হয় কি ব্যাপার খামোকা কুকুর টাকে চ‌ওয়াড় তাপ্পর দিলেন কেন??তারা বলে কই চ‌ওয়াড় দিনিতো আদর করেছি।এটা তো আমার পরিচিত কুকুর। আমি মাঝে মাঝে একে বিস্কিট খাওয়াই আর মাঝে মাঝে এভাবে করে আদর করে দেই ।
ভেবে দেখার বিষয় সে লোকগুলি কে যদি আমরা মাঝে মাঝে বিস্কিট খাওয়াই তাহলে তাদেরকে ও কি আমরা একই ভাবে চ‌ওয়াড় তাপ্পর দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে পারি কিনা ।
আল্লাহ তো মানুষের প্রকৃতি মানুষের চেয়ে ভালো জানেন ।তিনি আগে থেকেই বলে দিলেন যে কোন মন্দ উদ্দেশ্য যেনো একটু ব্যাক্তি ও এই উট টিজে স্পর্শ পর্যন্ত না করে।
কারণ এই উট হলো আল্লাহর পবিত্র নিদর্শন । দ্বিতীয় আদেশ ছিল এই ,,যে তাদের শহরে একটি বড় কুয়া বা পুকুর ছিল ।যেখান থেকে শহরের মানুষ পানি নিতো।এবং তাদের প্রতিটি প্রাণীকে পানি খাওয়াতো।আল্লাহ আদেশ করলেন সে কুয়া থেকে একদিন পরপর নাখাতুল্লাহ্ কে পানি খাওয়াতে হবে ।এবং যেদিন নাখাতুল্লাহ্ সে কুয়া থেকে পানি খাবে সেদিন অন্যকেও সেখান থেকে পানি নিতে পারবে না। যেহেতু নাখাতুল্লাহ্ ছিল এমন বিশালাকায় যে,সে পানি খেলে সে কুয়া তে সেদিন আর পানি থাকতো না ।অর্থাৎ পুরো শহরের মানুষ কুয়া টিকে একদিন ব্যবহার করবেন। এবং নাখাতুল্লাহ্ আরেকদিন ব্যবহার করবে। এবং যেদিন নাখাতুল্লাহ্ কুয়া থেকে পানি খাবে সেদিন আর কেউ সে কুয়া টি ব্যবহার করতে পারবে না ।
নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখব এই কাজটা করা কিন্তু মোটেই অসম্ভব ছিল না ।হয়তো কিছু পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল ,,এই যা।কিন্তু মানুষ ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনেই বিচলিত হয়ে যায় ।সামুদের অবিশ্বাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গেল।একে তো সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে অপমান করার পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হলো ।এবং উল্টো তারাই অপমানিত হলো। দ্বিতীয়তঃ সালেহ্ আলাইহিস সালাম যে সত্যিই নবী ছিলেন সেটা সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল ।এবং তার ওপর এই নাখাতুল্লাহ্ এর নিয়ম কানুন মেনে চলা তাদের কাছে বড় বোঝা মনে হতে লাগল ।
আল্লাহর তৈরি জীবন্ত এই বিষ্ময়ের খেদমত করতে তারা নারাজ ছিল। অথচ তাদের ই হাতে তৈরি মাটি আর পাথরের মূর্তির জন্য তারা কত আয়োজন করত। ফুল দিতো, খাবার দিতো। এবং আরও নানা ধরনের অনর্থক কাজে লিপ্ত হতো। শয়তানের ধোকা মানুষকে কতটা অন্ধ করে তোলে।
একপর্যায়ে নাখাতুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সামুদের লোকেরা সিদ্ধান্ত নিল তারা উট টিকে মেরে ফেলবে ।যে উটের গায়ে ব্যথা দেয়ার উদ্দেশ্যে কোন ধরনের মন্দ উদ্দেশ্য স্পর্শ পর্যন্ত করা থেকে আল্লাহ বারণ করেছিলেন সেই উটকে হত্যা করার মতো স্পর্ধা দেখাতে হলে একজন মানুষের অন্তর কতটা বেপরোয়া ,কতটা নিকৃষ্ট হতে হবে ভালো যায় ???
তারা দলবদ্ধভাবে নাখাতুল্লাহ্ এর কাছে গেল এবং তাদের মধ্যে থেকেই যে প্রধান ছিল সে নাখাতুল্লাহ্ এর পা কেটে উট টিকে হত্যা করে ফেলল ।সূরা শামস এ আল্লাহ তায়ালা বলেন
সূরা আশ-শাম্‌স (الشّمس),
فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنۢبِهِمْ فَسَوَّىٰهَا
উচ্চারণঃ ফাকাযযাবূহু ফা‘আকারূহা- ফাদামদামা ‘আলাইহিম রাব্বুহুম বিযামবিহিম ফাছাওওয়াহা-।
অর্থঃ অতঃপর ওরা তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল এবং উষ্ট্রীর পা কর্তন করেছিল। তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের উপর ধ্বংস নাযিল করে একাকার করে দিলেন।
সালেহ্ আলাইহিস সালাম যখন দেখলেন তারা এই সর্বনাশ করেছে।তিনি তাদের আর সত্য পথে আহ্বান করার চেষ্টা করলেন না।
শুধু বললেন তিন দিন।
তিন দিন ।তোমাদের যত আনন্দ করার যত ফুর্তি করার করে নাও। তিনদিনের মাথায় তোমাদের উপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে।
সামুদের লোকেরা এতটাই নিকৃষ্ট ছিল যে তারা ভাবল তিনদিন পর যদি আল্লাহর গজব আসে তার মানে সলেহের কারণেই আমাদের উপর অভিশাপ এসেছে ।সলেহের কারণেই আমরা ধ্বংস হয়েছি। এবং যদি অভিশাপ না আসে তার মানে সে একটি মিথ্যাবাদী।অতএব পরিণতি যাই হোক আমাদের উচিত তাকে হত্যা করে ফেলা। এবং তাদের নয়টি গোত্রের নেতারা সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিল রাতের অন্ধকারে তারা সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে হত্যা করবে ।
কারণ রাতের অন্ধকারে তারা যদি হত্যা করে তাহলে তারা পরের দিন সকালে বলতে পারবে আমরা তো দেখিনি কে তাকে হত্যা করেছে ।গত খুঁটিনাটি চিন্তা করে কতো মিথ্যা যুক্তি দিয়ে তারা নিজেদের বিবেককে ঠান্ডা রেখে এই ধরনের পরিকল্পনা করেছিল ।
অথচ আল্লাহর পরিকল্পনা কত সহজ ভাবে তাদের সব পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিল ।
নয়টি গোত্রের নেতাই যখন সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বের হয় আল্লাহর হুকুমে তাদের অন্তরে এক প্রবল ভয় ঢুকে যায় এবং তারা প্রত্যেকেই সালেহ্ আলাইহিস সালাম কে হত্যা না করেই ফেরৎ চলে যায়।নয়জন ব্যাক্তি যারা মনস্তির করেছিল যে তারা হত্যা করবে তারা কোন ধরনের শারীরিক বা বাস্তব বাধার সম্মুখীন না হয়েও প্রত্যেকে যার যার বাড়িতে ফেরত চলে গেল ।
আল্লাহর ক্ষমতা কত সূক্ষ্ম কত পরিপূর্ণ । সালেহ্ আলাইহিস সালাম এর পরের দিন তার অনুসারীদের নিয়ে হিজর শহর ত্যাগ করলেন।
প্রথম দিন সামুদের লোকদের মুখ হলুদ হয়ে গেল ।এবং তারা টের পেল একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে ।দ্বিতীয় দিন আসতে না আসতেই তাদের সবার চেহারা লাল হয়ে গেল। এবং তৃতীয় দিন তাদের সবার চেহারা কালো হয়ে গেল ।এবং তখন তারা বুঝতে পারল এখন আল্লাহর অভিশাপ অনিবার্য।
নাখাতুল্লাহ্ কে হত্যা করার পর চতুর্থ দিন এক বিরাট ভূমিকম্প আরম্ভ হলো। যা তাদের বহু পরিশ্রমে তৈরি করা অট্টালিকার শহরকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। যে পাহাড় পর্বত আর পাথরের উপর খোদাই করে তারা তাদের প্রিয় নগরীকে সাজিয়েছিল আল্লাহর হুকুম অমান্য করার ফলে নিজের অহংকারের জালে আটকে যাওয়ার কারণে সেই পাহাড়-পর্বত মাটি আর পাথরের সাথে মিলে তারা এমনভাবে একাকার হয়ে গেল,যে সেখানে গেলে বোঝার উপায় নেই সেই জায়গায় কখনো কোন মানুষ বসবাস করে ছিল ।
এবং তারা ধ্বংস হওয়ার হাজার হাজার বছর পর আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আমরা আজ কিছু পাথরের নমুনা পাই ।যেখান থেকে তাদের অস্তিত্বের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু দুনিয়াতে সেই মানুষগুলোর ছিটেফোঁটাও রইল না ।এবং আখেরাতেও তারা সব হারালো।
সালেহ্ আলাইহিস সালাম এর কাছে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছিলেন তার এক আশ্চর্য নিদর্শন ।যাকে বলা হয় নাখাতুল্লাহ্।
এবং তার পরের নবী আল্লাহকে ভালবেসে তার সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য নির্মাণ করেছিলেন এমন এক আশ্চর্য ঘর যে ঘরকে আল্লাহ নাম দিয়েছিলেন বায়তুল্লাহ্। আল্লাহর ঘর।
সে বায়তুল্লাহ্ নির্মাণকারী নবীকে নিয়েই হবে,আমাদের আগামী পর্বের আলোচনা। ইনশা আল্লাহ্।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.