মেরাজ :এক বিস্ময়কর যাত্রা পর্ব -২

মেরাজ :এক বিস্ময়কর যাত্রা

পর্ব -২



প্রথম পর্বে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর বিস্ময়কর যাত্রা ইসরা ওয়াল মেরাজ যাকে লাইলাতুল মেরাজ বা শবে মেরাজ বলা হয়ে থাকে তার প্রথম অংশের গল্প শুনেছি।
যেখানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা তে ভ্রমণ করে মানবজাতির কাছে প্রেরিত সকল নবীর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেছেন।
এরপর তার যাত্রার দ্বিতীয় অংশ মেরাজ শুরু হয় ।এবং তিনি একে একে সাত টি আসমান পাড়ি দেন। এবং প্রতিটি আসমানে তার সাথে দেখা করেন বিশিষ্ট কয়েকজন নবী-রাসূলগণ আলাইহি ইয়ুনুস সালাম। রাসূল সাঃ এর অন্যান্য নবী গণের সাথে সাক্ষাতের কোন এক পর্যায়ে তিনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম ,এবং ঈসা আ:এর সাথে কিয়ামতের দিবস নিয়ে আলাপ করেন।
ইব্রাহিম আ: বলেন আমি কিয়ামতের দিবস কবে হবে এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। মুসা আলাইহিস সালাম ও একইরকম উত্তর দেন। কিন্তু ঈসা আঃ বলেন কেয়ামতের দিবসের একটি চিহ্ন হচ্ছে আমি দুনিয়াতে ফিরে আসব। এবং দাজ্জাল ও আসবে এবং আমি দাজ্জালকে হত্যা করব।এবং এরপর ইয়াজু'জ এবং মাজু'জ আসবে। এবং আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব যেন তারা ধ্বংস হয়ে যায় ।এবং আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন।
এই ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর খুব শীঘ্রই কিয়ামত আরম্ভ হবে। ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সাতে রাসূল সাঃ এর অন্য প্রসঙ্গে কথা হওয়ার সময় তিনি রাসূল সাঃ কে বলেন তুমি তোমার উম্মতের কাছে আমার সালাম পৌঁছে দিও ।
এরপর আরো বলেন জান্নাতের মাটি হচ্ছে উর্বর।এবং কল্যাণময়।কিন্তু এতে কোন গাছপালা নেই। এতে বীজ বোনার পদ্ধতি হচ্ছে সুবহানাল্লাহ,, আলহামদুলিল্লাহ ,,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু,, ও আল্লাহু আকবার বলা।
অর্থাৎ আল্লাহর বান্দারা যখন ই এই যিকির গুলু করেন তখনই জান্নাতে একটি গাছ জন্মায়।
রাসুল সাল্লাহু সাল্লাম এর সাথে মেরাজের সময় আরও দেখা করতে আসে মা-লিক। তিনি হচ্ছেন জাহান্নামের মূল রক্ষী ফেরেশতা ।মা-লিক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলে ও তার চেহারা ছিল গম্ভীর । তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন ওকে এত গম্ভীর দেখাচ্ছে কেন ??তখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জানালেন মা-লিক জন্মের পর থেকে কখনো হাসেনি। কখনো খুশি প্রকাশ করতে পারেনি ।কারণ তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে জাহান্নামের রক্ষী হিসেবে। তবে সে যদি কারো জন্য হাসতে পারত সেটা তুমি হতে,হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যদিও মালিক হচ্ছে আল্লাহর একজন পবিত্র ফেরেশতা ।আমাদের দোয়া থাকবে আমরা যেন কখনোই তার দেখা না পাই।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে উঠিয়ে নেয়া হলো আল্লাহর এক আশ্চর্য সৃষ্টিকে দেখানোর জন্য। যার নাম হল সিদরাতুল মুনতাহা। ইমামে ন‌ওয়্যী বলেন এই গাছটির শেখর ৬স্ট আসমান থেকে শুরু হয় ,আর তা সপ্তম আসমানে শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। আর এই সিদরাতুল মুনতাহা হলো সেই গাছ যার পরে আল্লাহর কোন সৃষ্টি পাড়ি দেয়নি ।রসু্ল (সা) সিদ্রাতুল মুনতাহা বর্ণনা
করতে গিয় বলেন___ 
এর রং এমন যা আমি আগে কখনো দেখিনি। (অর্থাৎ আমাদের জানা সাতটি রংয়ের বাইরে)
নতুন কোনো রংএ রাঙানো; যা ভাষায় প্রকাশ
করা সম্ভব নয়। এবং এ গাছটির রং সারাক্ষনই পরিবর্তন হচ্ছিল। এবং একে ঘিরে ছিল নানা ধরনের বস্তু যার মধ্যে ছিল ছোট ছোট অগণিত
সোনালি প্রজাপতি। 🦋🦋🦋

হাদিসে এসেছে* রসুল (সা) বলেন___🔮
দুনিয়া থেকে যা কিছু আসমানে যায় তা সিদ্রাতুল
মুনতাহাতে গিয়ে পৌছায়; আর যা কিছু আল্লাহর
কাছ থেকে দুনিয়াতে প্রেরিত হয় তা সিদ্রাতুল মুনতাহার মাধ্যমে আসে।
এবং এ গাছ থেকে বয়ে চলে #চারটি নদী। যার দুটি হচ্ছে দুনিয়াতে আর দুটি আখিরাতে।
দুনিয়ার যে দুটি নদী সিদ্রাতুল মুনতাহা থেকে আরম্ভ হয়। তা হল

#নীলনদ_আর_ইউফ্রাইটিসনদী এবং এই নদী গুলো কীভাবে সিদ্রাতুল মুনতাহার সাথে সম্পৃক্ত তা হচ্ছে "ইলমুল গ্ইব" (তা আমাদের জানানো হয়নি) কিন্তু সবচেয়ে প্রাচীন জাতিগুলি এই দুটি নদীকে ঘিরে বেড়ে ওঠেছে।
এবং যে দুটি নদী আখিরাতে বয়ে গেছে। তা হল
থেকেই ইনশাল্লাহ নবিজী (সা) তাঁর উম্মতকে পানি
পান করাবেন। এবং যারা ঐ পানি একবার পান করবে তারা আর কখনো তৃষ্ণা অনুভব করবে না।

আল্লাহ আমাদেরকে সেই মানুষদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুক ।আমিন। এবং এরপর রাসূল সাঃ আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আ: কে তার মূল আকারে দেখলেন। এবং এটা তার জীবনে শুধুমাত্র দু বারি ঘটেছিল। এবং জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকারে এত বড় ছিলেন,, যে তার তার শরীর দিয়ে গোটা প্রান্তর ডেকে যায়। এবং তার আছে 600 টি ডানা ।যে ডানার পালক থেকে অনবরত মণিমুক্তা ঝরতে থাকে। এবং আল্লাহর এই প্রকাণ্ড, পবিত্র ,সম্মানিত সৃষ্টি, আকারে যিনি হইত মহাকাশের গ্রহ গুলো থেকেও বড়। শক্তি ও ক্ষমতার দিক থেকে যার সাথে তুলনা করা যায় আল্লাহর এমন বান্দা খুজে পাওয়া দুষ্কর আল্লাহর এই মহান সৃষ্টির দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকিয়ে একটি আশ্চর্য দৃশ্য দেখতে পেলেন।
সিদরাতুলমুনতাহা পৌঁছানোর কারণে তারা আল্লাহর এত টা কাছে চলে এলেন, যে উচ্চতায় এসে জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর মাহাত্ম্য তার বড়ত্ব ,তার অসীম ক্ষমতা, তার অকল্পনীয় কুদরত, তার সীমাহীন রহমত ,সবকিছু যেন নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পারলেন।
এবং এই উপলব্ধির কারণে আল্লাহর এত মহান একজন সৃষ্টি হয়ে ও তিনি এতটা অসহায় ভাবে পড়ে রইলেন যে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল,যে তিনি একটা ফেলে রাখা ভেজা নেকড়ার মত। এবং এটা কোন ভাবেই তাকে ছোট করে দেখার জন্য নয়। বড়ংটার অন্তরে আল্লাহর মাহাত্ম্যের উপলব্ধি এতটাই প্রবল ছিল যে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এসে তার এই পরিস্থিতি হয়েছিল।
ভেবে দেখুন যে আল্লাহর সামনে আমরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দাড়াই। এবং নামাজে দাঁড়িয়ে আমরা কত রকম কথা ভাবি। কত অন্য মনস্ক হয়ে সালাত আদায় করি। তাও আমাদের রব আমাদের উপর রাগ করেন না। বরং আমাদের গাফিলতি গুলু সারাক্ষণ ক্ষমা করতে থাকে । ইন্নাল্লাহা আরহামুর রাহীমি।
জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে অবস্থায় রেখে এবার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদরাতুল মুনতাহা থেকে ও উপরে উঠতে লাগলেন ।এবং তিনি পৌঁছে গেলেন এমন উচ্চতায় যেখানে আমাদের জানামতে আল্লাহর আর কোনো সৃষ্টি কখনো সেখানে পৌঁছায় নি।
এবং তিনি আল্লাহর এতটা নিকটে চলে গেলেন যে ,তিনি আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি কলমের লেখার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। এরপর তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেন ।যদিও পরবর্তীতে যখন সাহাবীরা জানতে চেয়ে ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তালাকে সরাসরি দেখেছিলেন কিনা ,,,,তিনি বলেছিলেন তিনি শুধু আল্লাহর হিজাবকে দেখেছিলেন।
এবং আল্লাহর হিজাব নূরের তৈরি। তার মানে আল্লাহকে সরাসরি দেখার পরম সৌভাগ্য শুধু জান্নাতে হবে।
আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি বিশেষ উপহার দিলেন। প্রথমত,ফরয নামায।দ্বিতীয়ত সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ।এবং তৃতীয়ত, তার উম্মতের জন্য একটি বিশেষ রহমত ।যারাই আল্লাহর সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করবে তাদের বড় গুনাহ্ গুলু আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।
এরপরে সে বিখ্যাত ঘটনা ঘটে ।যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 50 ওয়াক্ত ফরয নামাযের আদেশ নিয়ে ফেরার সময় মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দেখা হয়। এবং তিনি তাকে উপদেশ দেন আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে অনুরোধ করতে যেন নামাযের এই আদেশ টি আল্লাহ কমিয়ে আনেন। কারণ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ তার উম্মতের জন্য বড় কঠিন হয়ে পড়বে।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে তাকালেন এবং জিব্রাইল আ: ও ইশারা করে বললেন হ্যা।তার উচিত হবে আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে এই অনুরোধ টুকু করা।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন এবং 50 ওয়াক্ত নামাজ কে 40 ওয়াক্ত করা হলো ।এরপর আবারো মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন। এভাবে করে নামাজ কমতে কমতে পাঁচ ওয়াক্তে নামিয়ে আনা হল ।এবারও মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগের মতোই ফিরে যাওয়ার উপদেশ দেন। কিন্তু এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিজেই বললেন তার আবার ও ফিরে যেতে লজ্জা করছিল ।
আল্লাহ তা'আলা তার উপর এতটাই অনুগ্রহ করেছেন তিনি কিভাবে বলবেন যে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও ,তার উম্মতের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে?
এবং সেই মুহূর্তে একটি কন্ঠ বেজে উঠে,,,,,,
এবং তা ছিলো স্বয়ং আল্লাহতালার কণ্ঠ।
এবং তিনি বলেন আমার ফরজ প্রতিষ্ঠিত হল ।
এবং আমি আমার বান্দাদের এবাদত সহজ করে দিলাম।
এবং যদিও সালাত পাঁচটি এর প্রতিদান হবে 50 টির। এর অর্থ হলো আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরোধে ফরয নামায 50 ওয়াক্ত থেকে পাঁচ ওয়াক্ত এ কমিয়ে এনেছেন ঠিক কিন্তু নামাজের পুরস্কার তিনি কমিয়ে দেননি। বরং নামাজের পুরস্কার 50 ওয়াক্তের সমান ই থাকছে।
সুবাহানাল্লাহ।
কিন্তু আল্লাহ এভাবে আমাদের কাছে নামাজ ফরয করলেন কেন?? তিনি তো অতীত এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবকিছু জানেন।এর মানে তিনি তো আগে থেকে জানতেন যে রাসূল সাঃ কে 50 ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দেওয়ার পর উনি কয়েক বার ফিরে এসে তার কাছে নামাযের আদেশ কমিয়ে আনার অনুরোধ করবেন। তাহলে তিনি সরাসরি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদেশ দিলেন না কেন ???
আল্লাহতায়ালা আসলে এইভাবে আমাদের উপর নামাজ ফরজ করার মাধ্যমে আমাদেরকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দান করেছেন। আমাদের উপর যদি পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হতো তাহলে প্রায় আধা ঘন্টা পর পরই আমাদের সালাত আদায় করতে হতো। অর্থাৎ আমরা সারাদিন ইবাদত ছাড়া আর কোন কিছু সময় পেতাম না।
এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আমাদের সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। ঠিক যেমন ফেরেশতারা ক্লান্তিহীনভাবে তার ইবাদত করতে থাকে।
কিন্তু আমাদের দুর্বলতা মাথায় রেখে আল্লাহ আমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন এবং পুরস্কার গুলোকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। ইসরা ওয়াল মেরাজ সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ পর্বে আমরা রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর ফেরার যাত্রা এবং ফেরার পড়ে তার এই অভিজ্ঞতা গুলু বর্ণনা করার প্রতিক্রিয়ার ঘটনা গুলু শুনবো।এবং অবিস্মরণীয় এই ঘটনা থেকে আমাদের কি কি শিখার আছে তা আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.