জান্নাত

সিরাত পার হয়ে মানুষের মধ্যে লেনদেন শেষ হয়ে গেছে ।যারা অন্যদের হক নষ্ট করেছিল তারা তাদেরকে তাদের ভালো আমল গুলো দিয়ে দিয়েছে ।কিছু লোককে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে জান্নাতের দ্বারপ্রান্ত থেকে। আল্লাহর অশেষ রহমত আপনার সেই পরিণতি হয়নি ।
পৃথিবীতে যারা আপনার পিঠ পিছনে দু'চার টা খারাপ কথা বলেছিল আপনার দিন পালন নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছিল আজ সেই মন্তব্যগুলোর জন্য আপনি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করছেন ।
আপনি ভুলবশত একটু-আধটু যাদের হক নষ্ট করেছিলেন সেই হক নষ্ট করা সত্ত্বেও আপনাকে ফিরে যেতে হয়নি কারণ আপনি এমন এক সময়ে ইসলামকে ধরে রেখেছিলেন যখন ইসলাম সঠিকভাবে পালন করা ছিল গরম কয়লা হাতের মুঠোয় ধরে রাখার চেয়েও কঠিন।
হাজারো মানুষের কটু কথা সহ্য করে সবরের সাথে দিন পালন করার পুরস্কার আজ আপনার সামনে ।এরপর এক স্বর্গীয় কন্ঠ আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলে, সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি জান্নাতের দরজার দিকে ছুটে চলছে এর মধ্যে উম্মাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতজন ,আপনার মনে পড়ে যায় বোখারীর সেই হাদিস যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন আমি আশা করি তোমরাই হবে জান্নাতের অর্ধেক জনসংখ্যা।
জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা ।বাব আস সালাহ্ খোলে দেওয়া হবে তাদের জন্য যারা তাদের সালাত ঠিকভাবে আদায় করতো।
বাব আল জিহাদ খোলে দেওয়া হবে মুজাহিদীনদের জন্য ।
বাব আস সাদাকা খোলে দেওয়া হবে তাদের জন্য যারা বেশি বেশি দান-সাদকা করতো।
আর রাইয়ান হবে তাদের জন্য যারা বেশি বেশি রোজা রাখতো।
আল আ্যয়মান হবে তাদের জন্য যারা হিসেব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে ।
আল কাদিমিনাল গায়ি্ব হবে তাদের জন্য যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করত এবং অন্যদেরকে ক্ষমা করে দিতো।
এছাড়া হজ্জ পালনকারীদের জন্য থাকছে বাব আল হজ্জ।
এবং ঘন ঘন আল্লাহকে স্মরণ কারীদের জন্য থাকবে বাব আয যিকির।

কারো কারো জন্য জান্নাতের একটি দরজা খোলা থাকবে ।কারো কারো জন্য একাধিক দরজা খোলা থাকবে ।কারো কারো জন্যে জান্নাতের সব কটি দরজা খোলা থাকবে। আল্লাহ যেন আমাদের জন্য জান্নাতের প্রতিটি দরজা উন্মুক্ত করে দেন।
আপনি জান্নাতের একটি দরজার দ্বারপ্রান্তে কিন্তু আপনি একে দরজায় বা বলেন কি করে ,,,,এ এতো প্রকান্ড এক প্রবেশপথ যে এর দুই পাশ কোথায় গিয়ে শেষ হয় চোখে দেখা যায় না ।মুসলিম হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূল সাঃ বলেছেন জান্নাতের দরজার এক পাশ থেকে আরেক পাশে হলো 40 বছরের যাত্রা।
জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসবেন স্বয়ং রাসূল সাঃ
জান্নাতের রক্ষী ফেরেস্তারা তার পরিচয় জানতে চাইবে।তিনি বলবেন আমি মোহাম্মদ স:।তখন তাকে বলা হবে আপনি সেই ব্যাক্তি যিনি না আসা পর্যন্ত আমাদের জান্নাতের দরজা খুলে দিতে বারণ করা হয়েছিল ।
অতঃপর,,,
জান্নাতের দোয়ার খুলে দেওয়া হলো।এক অদ্ভুদ আলো আপনাদের বরণ করে নিলো।অগণিত ফেরেস্তারা আপনাদের স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে আসলো ।আপনারা প্রবেশ করা মাত্র তারা বলে উঠল সালামুন আলাইকুম সালামুন আলাইকুম। আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ।
জান্নাতে অগণিত মোমিন বান্দা প্রবেশ করার পর আপনাদের স্বাগত জানানোর জন্য পরিবেশন করা হলো একটি বিশেষ পানীয় ।শেষ পানি পান করেছিলেন হাউজে কাউসারে।তখন চিরকালের জন্য আপনার তৃষ্ণা মিটে গিয়েছিলো। কোন প্রকার তৃষ্ণা না থাকা সত্বেও জান্নাতের এই পানীয় পান করে এতটা তৃপ্তি অনুভব করবেন তা আপনি কল্পনাও করেননি ।সেই অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হয়তো এখন থেকে যেসব অভিজ্ঞতা হবে তার কোনোটিই বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাও একটা হালকা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করা যাক।,,,,,,,,,,,
আপনার চারপাশের প্রতিটি মুখ উজ্জ্বল প্রতিটি মুখ হাস্যজ্জল ।কারো অন্তরে একটি ফোঁটাও মন্দ অনুভূতি নেই। কোন হিংসা বিদ্বেষ নেই। কোন আফসোস নেই। কোন দুঃখ বেদনা নেই। সবাই সবার সুখ দেখে আনন্দিত ।সবার মধ্যে এক আশ্চর্য রকমের ভ্রাতৃত্ববোধ কাজ করছে।
একে একে নাম ডাকা হবে সেই অনুযায়ী মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে ।জান্নাতের সেই অপেক্ষার স্থানে আপনি কতটুকু সময় কাটালেন আপনার জানা নেই। এখানে অপেক্ষা করার সময় আপনার মনে কোনো অস্থিরতা নেই। আপনি বাকি অপেক্ষারত মুমিনদের সাথে হাসি আর আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন ।অবশেষে আপনার নাম ডাকা হলো। পৃথিবীতে আপনাকে যত ভালো ভালো নামে মানুষ ডেকেছিল সেই ভালো ভালো নাম গুলো ডেকে আপনাকে জান্নাত এর ভেতরে স্বাগত জানানো হলো।
জান্নাতে প্রবেশ করা মাত্রই আপনার অন্তরি যেন আপনাকে বলতে লাগলো আপনার আবাস কোথায় ?রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন প্রত্যেক ব্যক্তি দুনিয়াতে তার ঘর যত ভালোভাবে চিনতো তার চেয়েও ভালো ভাবে তার জান্নাতের ঘর চিনবে ।আপনি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন আপনার ঘরের দিকে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে না ।সেদিকে যেতে যেতে আশেপাশে যা দেখছেন ,আপনার কান যা শুনছে, যা কিছু সুভাষ নাকি আসছে, সবকিছুই আপনাকে অভিভূত করছে। অবশেষে আপনি পৌঁছে গেলেন আপনার ঘরে আপনার অন্তর আপনাকে বলছে এটাই আপনার ঘর।
কিন্তু একে তো রাজপ্রাসাদ বললেও কম হবে ।স্বর্ণ আর রূপা দিয়ে নির্মিত এক বৃহৎ ভবন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যার স্থাপত্যশৈলী বাকরুদ্ধকর। প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে যার নৈপুণ্য যার নিচে খেলা করছে স্বচ্ছ প্রবাহমান নদী ।যে পানির শব্দে অন্তর জুড়িয়ে যায়। চারিপাশে ঘনসবুজ আল্লাহর প্রশংসা বাণী থেকে জন্ম নেয়া হাজারো গাছে ছেয়ে আছে আপনার ঘর।জান্নাতে প্রবেশ করা শেষ ব্যাক্তি কে দেয়া হবে এমন এক রাজ্য যা গোটা পৃথিবীর চেয়ে 10 গুণ বেশি।
একবার চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন একটি প্রাসাদ নই,একটি শহর নই,একটি দেশ নই,একটি মহাদেশ নই, গোটা পৃথিবীর সমান এক সাম্রাজ্য এবং তার সাথে যোগ করা হল আরও একটি পৃথিবী এবং আরও একটা এবং এভাবে করে দশটি পৃথিবীর সমান আপনার রাজ্য।
এবং তা হচ্ছে জান্নাতের সবচেয়ে ছোট পুরস্কার এবং তাতো হচ্ছে পরিমাণের দিক থেকে, মানের দিক থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা তো পৃথিবীর কোন নেয়ামত এর সাথে তুলনা করা যায় না। আপনি আপনার ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।আপনার এই রাজ্য পৃথিবীর কত গুন বেশি বড় আপনার জানা নেই।
কিন্তু যেদিকে দুচোখ যায় বিস্ময়কর সব দৃশ্য আপনার মন ভুলিয়ে দেয়।
কিন্তু হঠাৎ আপনি থমকে দাঁড়ান।,,,,,,
সময় যেন থেমে দাঁড়ালো ।
স্বর্গীয় এই জগতের সব দৃশ্য যেন মলিন হয়ে পরলো ।
আপনার চোখ পরলো আরেক জোড়া চোখের উপর ।
আপনি ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
আপনি ফিরে গেলেন বহু বছর আগের দুনিয়ার সেই জীবনে।
মায়া ভরা দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
প্রথমবারের মতো মন ভরে দেখছেন আপনার জীবনসঙ্গীকে ।
অজানা সব অনুভূতির ঢেউয়ে ভেসে যায় আপনার হৃদয়।
অনেক স্বপ্ন আঁকছেন মনে মনে।
চূড়ান্ত স্বপ্ন একটাই একসাথে জান্নাতে যাওয়া।
অনন্তকালের জীবনের সঙ্গী হওয়া।
চোখের পলক পড়লো,,,,ফিরে এলেন বর্তমানে ।
আপনি চেয়ে আছেন সে অতি পরিচিত চেহারাটার দিকে। কিন্তু সেই চেহারা তো আর আগের মত নেই সৃষ্টির সব সৌন্দর্য তো মনে হয় আল্লাহ তার ভেতরে গেঁথে দিয়েছেন।
আপনি চেয়ে আছেন আপনার স্ত্রীর দিকে উনি চেয়ে আছেন আপনার দিকে।
প্রবাহমান নদীর কলকল শব্দ আর পাখির গুঞ্জন ছাড়া আর কোন শব্দের প্রয়োজন হচ্ছে না ।
কোন কোন উলামারা বলেন জান্নাতে যখন স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে প্রথমবারের মত দেখবে তারা একে অপরের দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকবে 40 বছর ।আপনার মনে হলো 40 বছর তো নয় যেন দুই এক মুহূর্ত কেটেছে মাত্র।
যতই দেখছেন ততই মন ভরে যাচ্ছে, আবার মনে হচ্ছে এখনো মন ভরেনি । আপনি আর আপনার জীবনসঙ্গী, অনন্তকালের জীবনসঙ্গী, যার সাথে এখন আর কোন কথা কাটাকাটির সুযোগ নেই ।যিনি আপনার আর কোন কাজে আর বিরক্ত হবেন না। যার সাথে এখন হবে ভালোবাসার সম্পর্ক। যা দিনদিন কমবে না বরং বেড়েই চলবে ।
সেই ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে আপনি ঘুরে দেখতে লাগলেন আপনাদের জান্নাতের আবাস। উপরে আকাশ মন্ডলী ভরা উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় কি যেন জ্বলজ্বল করছে। আপনারা বুঝতে পারেন তারা হচ্ছেন জান্নাতের আরো উপরের স্তরের জান্নাতবাসি ।
কিন্তু আপনার মনে কোন আফসোস নেই। আপনার মনে কোন হিংসা নেই। আপনার অন্তর ভর্তি কৃতজ্ঞতা আর যারা আপনার চেয়েও বেশি কিছু পেয়েছে তাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা।জান্নাতে কোনো খারাপ অনুভূতি নেই ।জান্নাতে রয়েছে শুধু সুখ।
আপনি আপনার প্রাসাদের ভেতরে গেলেন। সেখানে আপনি হেলান দিয়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন সম্মানিত আসনে বসে। স্বর্গীয় ফল-ফলাদি আপনার হাতের নাগালে। হরেক রকমের পানীয় পরিবেশন করছে হাস্যজ্জল চির তরুণেরা।
যাদের দিকে ছড়িয়ে থাকা মুক্তোর মত মনে হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্ত আপনি তৃপ্তিভরে আস্বাদন করছেন। এখানে কোন তাড়াহুড়ো নেই।হইতো মাঝখানে কেটে গেল বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানীয় উপভোগ করতে করতে। হয়তো বছর খানেক কেটে গেল আপনার স্ত্রীর সাথে গল্প করতে করতে।
হয়ত একে অপরকে বলছেন কেমন ছিল মৃত্যুর পরের যাত্রা ?কি কি ঘটেছিল? হয়তো ফিরে দেখছেন জীবনের সেই ক্ষুদ্র সময়টা। যখন আপনারা একসাথে ছিলেন। এবং আগ্রহ নিয়ে আলোচনা করছেন কেমন হবে আপনাদের অনন্তকালের যাত্রাটি।
স্বর্গীয় খাবারের পাশাপাশি আপনার জন্য রয়েছে পবিত্র হুর।যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,,,,যদিও দুনিয়ার জীবনে এমন একটি নেয়ামতের কথা শুনলে আমাদের মনে নানা প্রশ্ন জাগে। জান্নাতে কোন খারাপ অনুভূতি নেই। আপনি ফল-ফলাদি উপভোগ করলে যেমন আপনার স্ত্রী সে ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকবেনা। আপনি হুরদের সঙ্গ উপভোগ করলেও আপনার স্ত্রীর এ ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকবেনা ।এবং তিনিও আল্লাহর কাছ থেকে যা যা অজস্র নিয়ামত পাবেন সেগুলো যেমনই হোক না কেন আপনার সেগুলোর ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকবেনা ।আপনারা একে অপরের জন্য খুশি থাকবেন ।
এবং প্রত্যেক কে আল্লাহ যার যার প্রকৃতি অনুযায়ী নেয়ামত দিবেন এবং তিনি আল আলিমুল হাকিম।
কিন্তু জান্নাতের পুরোটা সময় তো আপনি শুধু আপনার আবাসে কাটিয়ে দিবেন না।
জান্নাত বাসীরা একে অপরের সাথে দেখা করবে ।গল্প করবে ।আনন্দ করবে। আপনি দেখা করতে গেলেন আপনার বাবা-মায়ের সাথে। আপনার দাদা-দাদী নানা-নানীর সাথে ।পরম আনন্দের এই মুহূর্তে সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়টি হলো জান্নাতে আপনারা সবাই সমবয়সী। কারণ জান্নাতে সবার বয়স পৃথিবীর 33 বছর বয়সের সমতুল্য ।
এবং সেখানে কারো বয়স একদিন ও বাড়ে না। আপনারা সবাই মিলে অনেক অনেক গল্প করলেন। গল্পের মাধ্যমে জানতে পারলেন আপনার পূর্ব পুরুষরা কিভাবে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করল। কিভাবে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। আপনি খুঁজে বের করলেন সেই ব্যক্তিকে যিনি আপনার জন্মের 5-600 বছর আগে আপনার এক পূর্বপুরুষ কে ইসলাম সম্পর্কে বলেছিল।
যার প্রচেষ্টার ফলে আপনার বংশের হাজারো মানুষ সহজেই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছে। জান্নাতের রয়েছে একটি বাজার। কিন্তু জান্নাতের বাজারে ক্রয় বিক্রয় করার কিছুই তো নেই।বরং সেখানে মানুষ যাবে একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাত করার জন্য। সেখানে আপনার সুযোগ হলো স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলার।
যদিও তার সাথে কথা বলতে চাই এমন কোটি কোটি জান্নাতবাসি রয়েছে ।কিন্তু আপনি তার সাথে মন ভরে কথা বলার সুযোগ পেলেন। কারণ জান্নাতে সময়ের কোনো অভাব নেই। আপনি গল্প করলেন আবু বকর, ওমর, ওসমান ,আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে। কথা বলেন ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব দের সাথে ।আপনি তাদের সাথে যতটা উৎসাহ নিয়ে কথা বলছেন তারাও আপনার সাথে ততটাই উৎসাহ নিয়ে আলাপ করছে।
বিস্ময়ভরে আপনার জীবনের গল্প শুনছে। এত বেশি ফিতনার সময় জন্মগ্রহণ করেও তুমি কিভাবে তোমার দ্বীনকে কে ধরে রাখলে ?আপনি বললেন এ ছিল শুধুই আল্লাহর নেয়ামত। তিনি আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা না করলে আমরা কখনই আজ এখানে থাকতে পারতাম না ।
আল্লাহর রহমত ভালোবাসা আর নিয়ামতে ডুবে থাকা প্রতিটি জান্নাতবাসি তখন মনে করছে তাদের আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। মানুষ,,, যে সৃষ্টিগতভাবেই এমন, যে তাকে এক পাহাড় সমান স্বর্ণ দেয়া হলে তার মনে দুই পাহাড় সমান স্বর্ণ পাওয়ার আশা জাগে।
যে স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি চাইতে থাকে ,চাইতে থাকে ,কখনও সন্তুষ্ট হয় না সেই মানব সন্তানকে জান্নাতে এত বেশি নিয়ামত দেওয়া হয়েছে সেখানে পুরোপুরি সন্তুষ্ট ।তার অন্তরে আর কোনো চাহিদা নেই।
প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দ। প্রতিটি মুহূর্তেই তৃপ্তি ।আর সেই তৃপ্তি কেবল বেড়েই চলছে।
এমন অবস্থায়,,,,,,,,
একটি ঘোষণা শুনা যায়।,,,,,,, ,,,
হে জান্নাতীরা,,,,,,,,
সেই কণ্ঠ শুনে প্রতিটি অন্তর তীব্র ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা কেঁপে ওঠে।
কারণ ,,,,,
এই তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কণ্ঠ।
জান্নাত বাসীরা বলে বলে ওঠে ,হে আমাদের রব আমরা উপস্তিত আছি।
সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে।
আল্লাহ তখন জিজ্ঞেস করবেন তোমরা কি সন্তুষ্ট???
সবাই বলে ওঠে হে আমাদের রব আমরা কেনো সন্তুষ্ট হবো না?,,
আপনি আমাদের এমন সব জিনিস দিয়েছেন যা আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দেননি।
সবার অন্তর যখন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠছে তখন সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে আরও উত্তম কিছু দান করব না???
সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।যে জান্নাতে প্রতিমুহূর্তে এমন সব দৃশ্য,এমন সব শব্দ,এমন সব ঘ্রাণ,এমন সব স্বাদ,এমন সব অনুভূতি যা মানুষ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।
যে নিয়ামতগুলু প্রতিমুহূর্তে হয়ে উঠছে আরও বেশী আনন্দদায়ক।এমন নিয়ামতের চেয়ে উত্তম পুরস্কার আর কি হতে পারে???
সবাই বলে উঠল হে রব এর চাইতে উত্তম আর কি হতে পারে ??তখন আল্লাহ বললেন আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি স্থাপন করব।
এরপর তোমাদের ওপর আমি আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না ।আল্লাহ আপনাকে নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট।
আল্লাহ এই অনন্তকালের জীবনে আপনার কোন কাজে, কোন কথায়, কোন চিন্তায় ,আর কখনো রাগ করবেন না। কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না।
এই প্রথমবার মনে হলো আপনার গোটা অস্তিত্ব যেনো সত্যিকার অর্থে সার্থক হল।
এবং এরপর ,,,,,
,সেই মুহূর্ত,,,,,,
যার জন্য প্রতিটি আত্মা যেন সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই অধীর অপেক্ষায় ছিলো।
সেই মুহূর্ত যে মুহূর্ত প্রতিটি অন্তর খুঁজে বেরিয়েছে প্রকৃতিতে, ভালোবাসায় ,উদারতায়, ভ্রাতৃত্ববোধে ,সৌন্দর্যে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে প্রতিটি ক্ষণে, কিন্তু কোথায় যেন কোন এক কমতি ছিল ।তা ঠিক বুঝতে পারিনি ।
সবাইকে বাকরুদ্ধ করে দিয়ে আল্লাহ তার ও তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে তার হীজাব উঠিয়ে নেন।
প্রতিটি বান্দা উপরে তাকিয়ে দেখছে,,,,,
তাদের সামনে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা হাজির হয়েছেন।
আপনি আল্লাহকে দেখছেন,
আপনি আল্লাহকে দেখছেন,
আপনি আল্লাহকে দেখছেন।
জান্নাতের যে নেয়ামতের মহাসাগরে ভেসে আপনিই এই প্রান্তরে এসেছেন।এই সকল নিয়ামতের জন্যেই আপনি কৃতজ্ঞ।যে সকল নিয়ামত আপনার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ।কিন্তু এই চূড়ান্ত নেয়ামত আল্লাহকে সরাসরি দেখার নিয়ামত হয়ে গেল প্রতিটি বান্দার সবচেয়ে প্রিয় সবচেয়ে মূল্যবান সবচেয়ে বিশেষ পুরস্কার।
আল্লাহ যুলজিলালি ওয়্যাল ইকরাম।যিনি মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের অধিকারী ।তার কতৃত্বের কাছে যেনো ভাষা ও নত করে ফেলে।
এবং সেই মুহূর্তে সবাই জীবনের এই দীর্ঘ যাত্রার অর্থ বুঝতে পারে। বুঝতে পারে এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এত ভুল-ভ্রান্তির পর, এত গুলু ধাপ পেরিয়ে , নিজের অন্তরকে সংশোধন করে, জীবন ও পরকালের পরীক্ষাগুলো পার করে, এই গন্তব্যে পৌঁছনোর উদ্দেশ্য আসলে কি?
এক নিঃসৃত তরল থেকে জন্ম নেয়া মানুষ ,যে এত দুর্বল ,এত অসহায়, এত ক্ষুদ্র ,আজ সৃষ্টির প্রতিপালকের সামনে দাঁড়িয়ে তার এতটা নিকটে তার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করে কোন প্রকার বাধা ছাড়াই তার সাথে সাক্ষাৎ করছে। তার মহিমার তিক্ত প্রভার প্রবলতায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়নি। বরং সে তার আলোয় আলোকিত হয়ে তার এই পরম নেয়ামত গুলু গ্রহণ করতে পারছে ।
আপনি বুঝতে পারেন আপনার অস্তিত্বের প্রতিটি মুহূর্তেই আসলে আর রাহমানোর রাহীম আপনাকে তার কাছে টেনে নিচ্ছিলেন।
এবং সেই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আপনার যা যা প্রয়োজন তাই আপনাকে দিয়ে গেছেন ।তাঁর সান্নিধ্যের পবিত্রতায় প্রবেশ করার জন্য আপনার যে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন ছিল জীবন, মৃত্যু ,জীবনের মাধ্যমে তিনি আপনাকে সেই আত্মশুদ্ধির পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।
এবং আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আপনি সেই পথে ছোট ছোট ধাপ নিয়েছিলেন।
দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনের কোনো এক পর্যায়ে কোন এক অনুপ্রেরণায় আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আপনি তার দিকে একটি ধাপ নিবেন।একটুখানি এগুবেন। এবং সে একটি ধাপের ফলে তিনি আপনাকে তার রহমত ও ভালোবাসায় এমন ভাবে আবরণ করে নিয়েছিলেন নেয়ামতের পর নেয়ামত দিয়ে।
আপনাকে এমন ভাবে ডেকে নিয়েছিলেন তার কাছে, আজ জান্নাতের নির্মল প্রান্তরে বসেই আপনি আল্লাহকে দেখছেন ।তার নিকটে পৌঁছে গেছেন ।আপনার ভূমিষ্ঠ হওয়া আজ সার্থক হল। জীবন,মৃত্যু-জীবন এর যাত্রা আজ সার্থক হলো।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.