মীযান

⚖️মীযান⚖️


হিসাব নেয়া হয়ে গেছে ।
একদল মানুষ হিসাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি পেয়ে গেছে।
আরেক দল মানুষের নেয়া হয়েছে সহজ হিসাব। এবং তৃতীয় দলের মানুষদের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেয়া হয়েছে।

একদল লোক তাদের আমলনামা গুলো পেলো ডানহাতে। আরেকদল পেল বা হাতে।
হিসাবের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে কি কি কাজ করেছিল তা জানতে পারে কিন্তু কোন কাজের পরিণাম কী তা এখনো জানা যায়নি ।

সেটা জানার জন্যই এরপর সবার সামনে নিয়ে আসা হবে ⚖️আল মীযান⚖️
মীযানের সহজ বাংলা হলো দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লা কি তা আমরা সবাই জানি এর দুদিকে দুটো পাল্লা থাকে যাত দিয়ে আমরা ওজন মেপে থাকি।
কেয়ামতের দিবসের মীযান ও তাই করবে ।কিন্তু বলাই বাহুল্য এই মীযান কল্পনা করা আমাদের জন্য সম্ভব না । রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতের দিন মীযান আনা হবে সেখানে যদি গোটা আসমান আর জমিন কে ওজন করা হয় তা করা যাবে।
অতএব আমরা এই মিজান কল্পনা ও করতে পারিনা ।শুধু এতোটুকুই জানি এখানে ছোট-বড় সব ধরনের আমল কে ওজন করা হবে।যে সকল আমল ইখলাসের সাথে , শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তাঁর প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা মোতাবেক করা হয়েছিল সে সকল আমল ক্ষুদ্র হলেও মীযানে তাদের ভার হবে অনেক। আর কোন কাজ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য হয়ে থাকে বা রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে না করা হয়ে থাকে সেই কাজ সংখ্যায় যতই হোক না কেন মীযানে তার কোন মূল্যই থাকবেনা।
বোখারির হাদিসে বর্ণিত আছে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বলেছেন দুটি কথা আছে যা জিহ্বায় অত্যন্ত হালকা কিন্তু মীযানে অত্যন্ত ভারী ।এবং আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।কথা দুটি হচ্ছে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম
তিরমিজির এক হাদীসে বর্ণিত আছে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ,আল্লাহ আমার উম্মতের এক লোককে সবার সামনে নিয়ে আসবেন ।তার পাপের 99 টি আমলনামা পিছিয়ে দেয়া হবে যার প্রত্যেকটি যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকবে ।আল্লাহ বলবেন তুমি কি এর কোনো কিছুকে অস্বীকার করো? আমার আমল সংরক্ষক ফেরেশতা কি তোমার প্রতি কোন অন্যায় করেছে ?লোকটি বলবে না হে আমার প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন তোমার কি পেশ করার মতো কোনো অজুহাত বা কোনো নেকী আছে? লোকটি হতবাক হয়ে বলবে, না হে আমার প্রতিপালক
আল্লাহ বলবেন অবশ্যই আমাদের কাছে তোমার একটি নেকী আছে আজ তোমার প্রতি কোন অবিচার করা হবে না ।এরপর এক টুকরো কাগজ বের করা হবে যাতে লেখা থাকবে আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্’দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়া-আশহাদু আন্না মুহা’ম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহ।
আল্লাহ মীযান আনতে আদেশ করবেন।লোকটি বলবে হে আমার প্রতিপালক এতগুলি বড় বড় আমলনামার কাছে এই ছোট্ট কাগজের ওজন আর কি হবে ?আল্লাহ বলবেন তোমার প্রতি অবিচার করা হবে না ।
অতঃপর আমলনামা গুলোকে দাড়ির এক পাল্লায় এবং ওই ছোটকাগজ টিকে অন্য পাল্লায় চড়ানো হবে। দেখা যাবে পাপের আমলনামা গুলুর ওজন হালকা এবং সেই ছোট্ট কাগজটির ওজন ভারী হয়ে গেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে নিয়মিত যিকির আজকারের কথা উল্লেখ আছে যেগুলোর ওজন মিজানের পাল্লায় ভারী হবে ।আমরা অনেক সময় সংখ্যায় বেশী আমল করার দিকে নজর দেই কিন্তু আন্তরিকতার সাথে আমল করার ব্যাপারে উদাস থাকি।অথচ মীযানের বর্ণনা গুলু শুনলে এব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে না ,যে আমাদের দ্বীনে আন্তরিকতার উপর অনেক বেশি জোর দেয়া হয়েছে ।
আবু দাউদ গ্রন্থে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এমন কিছুই নেই, যা মিযানে সুন্দর চরিত্রের চেয়ে বেশি ভারী হবে।ভালো কাজ বলতে আমরা চিন্তা করি নফল ইবাদতের কথা,কোরআন পড়া,সাদাকা। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মনে করিয়ে দিলেন সুন্দর চরিত্রের গুরুত্ব কত বেশি ।
নিঃসন্দেহে আমরা সাধারনত ইবাদত বলতে যা বুঝি তা ইখলাসের সাথে করলে সেগুলো মিজানের পাল্লা ভারী করবে ইনশাল্লাহ ।কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা যেন সুন্দর চরিত্র বজায় রাখার দিকে নজর দেই ।বিশেষ করে ইন্টারনেটের এই যুগে এমন অনেক কিছুই আমরা অনলাইনে দেখি যার সাথে আমরা একমত নই ,যা আমাদের বিরক্ত করে ,হয়তো রাগিয়ে ও দেয় ।তখন হয়তো খুব সহজেই আমরা রাগের মাথায় একটা খারাপ কথা বলে ফেলি ।
অনলাইন ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে ঘরে-বাইরে রাস্তাঘাটে দিন দিন মানুষের ধৈর্য্য কমে যাচ্ছে ।একজন আরেকজনকে ওভারটেক করছে। একটা গাড়ি আরেকটাকে ধাক্কা দিচ্ছে ।বাসের কন্টাকটার তিন-চারবার ভাড়া চাচ্ছে। অফিসে পলিটিক্স চলছে। ঘরে ঝগড়া চলছে আত্মীয়-স্বজন একজন আরেকজনকে নিয়ে মন্তব্য করছে।
এসব কিছুর মধ্যে সুন্দর আচরণ ধরে রাখাটা এক ধরনের যুদ্ধ। তাই আমরা যেন মনে রাখি এই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পুরস্কার কিন্তু অনেক বড় ।আমাদের মনে হতে পারে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়া বা নফল রোজা রাখা বা বেশি বেশি সাদকা করাকে উল্লেখ না করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর আচরণকে কেন এত গুরুত্ব দিলেন??
এর একটি ব্যাক্ষা হচ্ছে যে কষ্ট করে এত এত নফল এবাদত করে কিন্তু তার আচরণ ভালো না সে তার খারাপ আচরণের মাধ্যমে তার ভালো কাজগুলোকে কেয়ামতের দিবসে হারিয়ে ফেলবে। সে হয়তো কারো ব্যাপারে গীবত করল তখন যার ব্যাপারে গীবত করেছে সে তার তাহাজ্জুদের নেকী নিয়ে যাবে। আরেক ব্যক্তিকে সে গালমন্দ করল সে ব্যক্তি তার সাদাকার নেকী নিয়ে যাবে।
অথচ যে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর তার ভাল কাজ অল্প হলেও কেয়ামত দিবসে সেই ভালো কাজ তার কাছেই রয়ে যায়।এবং সেই ভালো কাজের মাধ্যমে সে পার পেয়ে যায়।
আল্লাহ আমাদেরকে অন্যের হক নষ্ট করা থেকে হেফাজত করুক।রাসূল সাঃ আরো বলেন যে বাবা মা সন্তান হারানোর পর সবর করে তার সে সবর মীযানের পাল্লা ভারী করবে ।
যে ব্যক্তি কারো জানাজায় শরিক হলো তার জন্য ওহুদ পাহাড় পরিমাণ নেকী মীযানের পাল্লায় যোগ করা হবে। যারা নিয়মিত কোরআন পড়েছে তাদের জন্য স্বয়ং কোরআন এসে শাফায়াত করবে।
এবং কোরআন পাঠ করার সময় প্রতিটি উচ্চারিত অক্ষরের জন্য দশটি করে নেকী জমা হবে ।অর্থাৎ আমরা যদি শুধুমাত্র সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করি আমাদের পাল্লায় চারশো টির ও বেশী নেকী জমা হবে । সুবহানাল্লাহ্।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন কোরআন পাঠ করা । একটি লাইন হলেও পাঠ করা ।কিন্তু প্রতিদিন করা ।
অনেকে বলেন কোরআন তো শুধু পড়ে গেলে হবেনা ।কোরআন তো আল্লাহ পাঠিয়েছেন বোঝার জন্য। এই কথাটি 100 ভাগ সত্য। কিন্তু অনেকে আবার কোরআন বোঝার দিকে জোর দিতে গিয়ে কোরআন তিলাওয়াতের মর্যাদা ছোট করে দেখতে চান ।
এবং সেটা অবশ্যই একটি বড় ধরনের ভুল ।কোরআনকে বুঝা সারা জীবনের একটি যাত্রা ।এই অভিযান চলবে নিয়মিত করার পাশাপাশি। কোরআন তিলাওয়াত করার তাৎপর্য শুধু অক্ষরে দশটি করে নেকী নই , আমরা যখন কোরআন তেলাওয়াত করি ,তখনই এই মহাবিশ্বের রব যা বলেছেন আমিও একই কথা উচ্চারণ করছি ।এটা কি শিহরিত হওয়ার মতো বিষয় না ?
উদাহরণস্বরূপ চিন্তা করুন যখন কোন এক বিখ্যাত খেলোয়াড় খেলায় বিজয়ী হয়ে তার জার্সি টা ছুড়ে মারলো তার ভক্তদের দিকে ,যে ভক্ত সে জার্সি টা ধরতে পারে তার অবস্থা কেমন হয় ?? সে হইতো কান্নায় ভেঙে পড়ে ,সে হয়তো সে জার্সিটি সারা জীবন টাঙিয়ে রাখবে। যে সেই খেলেটা দেখেনা এই খেলা টা বুঝে না সে ব্যক্তি হইতো অবাক হবে আর ভাববে আরেকজন মানুষের গেঞ্জি পেয়ে একজন মানুষ এত খুশি হচ্ছে কেনো?
কিন্তু যে সে খেলোয়াড় টাকে চিনে সে জানে এই জার্সির শুধু এক টুকরো কাপড় নয় তার কাছে এর মাহাত্ম্য অনেক অনেক বেশি।
যে আল্লাহ্ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশমণ্ডলী,এই গ্রহ-নক্ষত্র এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যিনি আমি যা যা ভালোবাসি যাকে যাকে ভালোবাসি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনি যে কথাগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যে কথাগুলো মহান, যে কথাগুলো ত্রুটিহীন, যে কথাগুলো বিস্ময়কর, সেই কথাগুলো আমার মত ক্ষুদ্র এক বান্দা তার অগণিত পাপের জর্জরিত জিহবা দিয়ে উচ্চারণ করতে পারছে আমার কি উৎফুল্ল হওয়ার কথা না ??
যে আয়াত আমি উচ্চারণ করলাম তার মানে বোঝার আগেই সে আয়াত উচ্চারণ করার মর্যাদা পেয়েছি,সেই মর্যাদা পেয়ে কি আমার অন্তর কৃতজ্ঞতায় কেঁপে ওঠার কথা না ???
বাস্তবে কুরআন তিলাওয়াত করা ,মুখস্ত করা ,বুজা ,এবং তার উপর আমল করা প্রত্যেকটি কাজ ই শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এবং এর একটিকে ও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই ।প্রত্যেকটি ভালো কাজ ই মীযানের পাল্লা ভারী করবে ।হোক তা রোজা,যাকাত,হজ্জ,নফল ইবাদত, যিকির আজকার ইত্যাদি।
কোন ভালো কাজটি আমাদের জন্য কঠিন বিচার দিবসে কল্যাণ বয়ে আনবে আমরা জানি না। যে হজ্জ করে হয়তো দারুণ তৃপ্তি বোধ করছি হয়তো সেই হজ্জ আল্লাহ কবুল করেন নি আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন ।কারণ সেই টাকা দিয়ে করেছিলাম সেই টাকায় ছিল ঘুষ আর সুদের অংশ।কেয়ামতের দিন মীযানে দেখা গেল সেই হজ্জের কোন ওজন নেই। অন্যদিকে একদিন হয়তো আর্থিক সংকটে পড়া এক আত্মীয় যিনি আত্মমর্যাদাবোধের কারণে মুখ ফুটে টাকা পয়সা চাইতে পারছেন না ।তার চাহিদা টা অনুমান করে তাকে কিছু টাকা দিয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে হয়ত তার সংকট কেটে গেল ।কেটে যাওয়ার পর সে হয়তো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ গেল ।আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে হয়তো সে তার সন্তানদের সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলল। তারা একজন সন্তান কোরআনের শিক্ষক হয়ে গেল।কোরআন শিখালো হাজার হাজার মানুষকে ।কেয়ামতের দিন মীযানে দেখা গেল হাজারখানেক টাকার বিপরীতে আসমান পরিমাণ ভালো কাজ লেখা হয়ে গেছে ।
আমরা যেন প্রত্যেকেই আন্তরিকতাপূর্ণ ছোট ছোট ভালো কাজ দিয়ে আমাদের জীবনকে সাজাতে পারি ।আর যেসব ভুল হয়ে গেছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে পাপের পাল্লা হাল্কা করতে পারি ।আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দিক।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.