জাহান্নাম

জাহান্নাম:🔥🔥🔥🔥

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই এবং মোহাম্মদ সা:তারই রাসূল।নিশ্চয় আল্লাহ সত্য,তার ফেরেস্তারা সত্য,তার কিতাব সত্য,তার রাসূল গণ সত্য,কেয়ামতের দিবস সত্য,কদর সত্য,জান্নাত সত্য,জাহান্নাম সত্য।
জাহান্নাম,,,,,সে নাম যা থেকে আমরা সবাই যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে চায়।যে নাম শুনলে আমরা তা মস্তিষ্ক থেকে দূরে ঠেলে দিতে চায়।জাহান্নামী হওয়া তো দূরের কথা আমরা এই নিয়ে চিন্তা করতে ও চাইনা।কিন্তু জাহান্নাম সত্য ।এবং আল্লাহ আমাদের এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।আপনার নিজের সন্তান যদি আগুনের দিকে হাত বাড়ায় আপনি বলবেন না তাকে আগুনের মত ভয়াবহ বিষয়ের কথা বলে লাভ কি ছোট মানুষ এই সব কথা শুনলে ভয় পেয়ে যাবে।তবে আপনি জানেন,যে আগুনে হাত দিলে তার হাত টা পুড়ে যাবে তাই আপনি তার প্রতি ভালোবাসার কারণে তাকে আগুনের ব্যাপারে সতর্ক করে দিবেন।পবিত্র কোরআনে যে বিষয় গুলো বার বার এসেছে তার মধ্যে একটি হলো জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্কতা।কারণ আল্লাহ জানেন মানুষ এই ব্যাপারে অনেক বেশি খাম খেয়ালি।আল্লাহর রহমত অসীম এই কথা ভেবে অগণিত বান্দা জাহান্নামকে ভুলে সে ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিজেদের ঠেলে দিবে।আল্লাহ জাহান্নামকে সৃষ্টি করেছেন অবিশ্বাসী মোনাফিক বান্দাদের জন্য এবং এমন সব বিশ্বাসীদের জন্য যারা অনেক বেশি পাপ অর্জন করেছে।জাহান্নামে আছে এক অতুসনিয় ক্ষুদা।সূরা ক্কাফে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন একদিন আল্লাহ্ জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবে তোমার পেট কি ভরেছে??জাহান্নাম বলবে হেলমিন মাজিদ অর্থাৎ আরো কিছু আছে কি?রাসূল সাঃ বলেন জাহান্নামের প্রান্ত থেকে এর ভেতর একটি পাথর ফেলে দিলে সে পাথর সত্তর বছর ধরে পড়তে থাকলে ও এর তলায় পৌঁছবে না।জাহান্নামে আছে অনেকগুলো স্তর।যে যত নিচের স্তরে থাকবে তার শাস্তি তত বেশি কঠিন।সহিহ মুসলিম হাদিসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেন তার চাচা আবু তালেব জাহান্নামী বাসিন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা শাস্তি পাবেন।এই হালকা শাস্তি হল তাকে আগুনের এক জোড়া জুতো পড়িয়ে দেওয়া হবে যার তাপের কারণে তার মস্তিষ্ক ফুটতে থাকবে।আল্লাহ যেনো আমাদের কে জাহান্নাম থেকে রেহাই দেন।আল্লাহ যেনো আমাদের পরিবার পরিজনদের কে জাহান্নাম থেকে রেহাই দেন।জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্ন স্তরের জায়গা হবে মোনাফিকদের এবং তারা ভোগ করবে সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি গুলু।
জাহান্নামের বাতাস হবে জামুন যা হবে অত্যন্ত শুষ্ক ও উপতপ্ত।এবং জাহান্নামের পানি হবে হামিম যা হবে ফুটন্ত পানির মত গরম।সেখানে ছায়া থাকবে শুধুমাত্র একটি গভীর ধোয়ার ভেতরে যেখানে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়াই দুষ্কর।জাহান্নামের আগুনের তাপ হবে পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তর গুন বেশি যে পৃথিবীর আগুন এক মুহূর্তের জন্য আমাদের শরীর সইতে পারে না আমরা কি করে জাহান্নামের আগুন সহ্য করার কথা ভাবতে পারি।জাহান্নামীদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন,,,,,,জাহান্নামের প্রতিনিয়ত শাস্তি বাড়তে থাকবে।প্রতিদিন যে শাস্তি দেওয়া হবে টা তার আগের দিনের চেয়ে বেশি হবে।অর্থাৎ এই শাস্তিতে কারো অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।একবার ভেবে দেখুন এইভাবে জাহান্নামের আগুন জ্বলতে থাকবে। একশ বছর নই এক হাজার বছর নই বরং অনন্ত কালের জন্য ।কোটি কোটি বছর পার হয় যাওয়ার পরে ও শাস্তির পরিণাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।আল্লাহ যেনো আমাদেরকে রেহাই দেন।এমন ভয়াবহ শাস্তির কথা ভাবলে আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ পাপ করেছে সত্তর আশি বছর তাহলে তার শাস্তি অনন্ত কালের জন্য কেনো??
এর কারণ হচ্ছে তার জীবন শেষ হয়েছে আল্লাহর হুকুমে।তাকে যদি অনন্তকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দেওয়া হতো সে অনন্তকাল আল্লাহর অমান্য করে যেতো।সে অনন্তকাল অন্যের হক নষ্ট করে যেত।সে অনন্তকাল অবিচার করে যেতো।তাই আল্লাহ সূরা নাবাতে বলেনঃ জাঝাআও বিফা-ক্ এটাই উপযুক্ত প্রতিফল।এটাই উপযুক্ত শাস্তি।এই শাস্তির বর্ণনা শুনে মনে হতে পারে শাস্তিটা কি বড় বেশি কঠোর নই??কিন্তু আল্লাহ হচ্ছেন আলিমুল হাকিম তিনি সব জানেন তিনি সবচেয়ে ভিজ্ঞ।যে শাস্তির বর্ণনা করা হয়েছে জাহান্নামীদের জন্য সেটাই উপযুক্ত শাস্তি।তাদের যদি এর চেয়ে অণু পরিমাণ ও কম শাস্তি প্রাপ্য হতো আল্লাহ তাদের কে ততটুকুই শাস্তি দিতেন ।আল্লাহ যেনো আমাদেরকে সকল প্রকার শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং আমাদেরকে হিসাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেন।জাহান্নামের বাসিন্দা দের দেহ হবে আকারে অনেক বড়।তাদের চামড়ার পুরুতা হবে ৪২ জিরাহ এবং এক জীরাহ হচ্ছে প্রায় তিন ফিট।অর্থাৎ তাদের চামড়া হবে প্রায় ১২০ফিট পৌরু এবং তাদের শরীর গুলু হবে উহুদ পাহাড়ের মত প্রকান্ড।তাদেরকে এত বড় শরীর দেওয়ার কারণ হচ্ছে তারা যেনো তাদের শাস্তি গুলু আরো প্রবল ভাবে অনুভব করতে পারে।জাহান্নামীদের খাবার হবে ধ্বরিয়া যা না ক্ষুদা মেঠাবে না কোনো পুষ্টি দিবে।এছাড়া জাহান্নামীদের জন্য থাকবে যক্কুম নামের এক গাছের ফল।যা খাওয়ার পর গলিত পিতলের মতো তাদের নাড়ি ভূড়ি পুড়িয়ে দিবে।এবং তাদের পানীয় হবে হামিম যা হচ্ছে ফুটন্ত পানি যা পান করার পর তাদের তৃষ্ণা কমবে না বরং বৃদ্ধি পাবে।এবং অজ্জাক্হ যা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুড়া মাংস থেকে বের হওয়া তরল বস্তু ।আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন।
আল্লাহ আমাদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।
যারা দুনিয়াতে মদ্যপান করেছে তাদেরকে জাহান্নামে পান করানো হবে তিনাতুল হাবাল যা হবে জাহান্নামীদের গা থেকে বেড়িয়ে আসা পুজ এবং ঘামের মিশ্রণ।আমাদের মধ্যে যারা মদ্যপান করেছি তারা যেনো প্রত্যেকে তা থেকে তাওবা করে ফিরে আসতে পারে।এইসব খাদ্য এবং পানীয় বিদঘুটে এতটা কষ্টদায়ক হওয়া সত্বেও জাহান্নামীরা এগুলি খাবে এবং পান করবে।
তাহলে ভেবে দেখুন তাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে। জাহান্নামীর কাপড় হবে আগুনের তৈরি এবং গলিত তামার তৈরি।মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, আল্লাহ্ জাহান্নামে সবচেয়ে কম শাস্তি পাওয়া ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলবেন,তোমার কাছে যদি গোটা পৃথিবীর সমান ধন সম্পদ থাকতো তুমি কি জাহান্নাম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তা দিয়ে দিতে??সে বলবে হ্যাঁ।আল্লাহ তখন তাকে বলবেন আমি তো তোমার কাছ থেকে এর চেয়ে আরো অনেক অল্প কিছু চেয়েছিলাম।আজকে আমরা পৃথিবী ভর্তি সম্পদের জন্য নই বরং অল্প কিছু টাকা পয়সার জন্য আমাদের দ্বীনকে ভুলে যায়।আল্লাহ যেনো আমাদের হেফাজত করেন।
যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে তার সাতে শিরক করেনি তারা একপর্যায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।প্রত্যেক ব্যাক্তি যার পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়নি সে পাপের জন্য সাজা পাবে।কোনো কোনো পাপ আল্লাহ সরাসরি ক্ষমা করে দেন।কোনো কোনো পাপের শাস্তি আমাদের দুনিয়াতে পেতে হয় এবং সেটা হচ্ছে সবচেয়ে হালকা শাস্তি যদিও দুনিয়ার জীবনে তা আমাদের কাছে অসহনীয় মনে হয়।যাদের পাপ এত বেশি যা আল্লাহর মাগফেরাত এবং পৃথিবীর শাস্তি দিয়ে ও সেগুলো মুছে যায় নি তারা কবরে আযাব পাবে।কবরের আযাবের মাধ্যমে ও যাদের সব পাপ মুছে যায় নি তারা জাহান্নামের আযাব পাবে।এবং সেখানে তাদের কতদিন থাকতে হবে তা নির্ভর করবে তাদের পাপের উপর।কিন্তু নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এমন একটি জায়গা যেখানে এক মিনিটের জন্য ও থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নই।সহি মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত আছে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন জাহান্নামীদের এমন একজন ব্যাক্তিকে কিয়মতের দিবসে সামনে আনা হবে যে দুনিয়ার জিবনে সবচেয়ে বেশি বিলাসিতার জীবন কাটিয়েছিল।তাকে শুধু একটিবার জাহান্নামে ডুবিয়ে আবার উটিয়ে ফেলা হবে এবং তাকে প্রশ্ন করা হবে ,হে আদম সন্তান তুমি কি কখনো কোনো আরাম উপভোগ করেছো?জিবনে কি কোনো বিলাসিতার স্বাদ পেয়েছ?সে আল্লাহর কসম খেয়ে বলবে, না আমার রব।আমি জিবনে কোনো ধরনের আরাম আয়েশ কোনো ধরনের বিলাসিতা উপভোগ করি নি।সে ব্যাক্তি কিন্তু মিথ্যা কথা বলছে না,,,,
সে এক মুহূর্তের জন্য জাহান্নামের স্বাদ পেয়ে সত্যি সত্যি তার গোটা দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি সুখ ভুলে গিয়েছিল।

ভেবে দেখুন যে জাহান্নামে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমরা জিবনে যত সুখ অনুভব করেছিলাম সব ভুলে যাবো সে সুখ গুলুর জন্য কি জাহান্নাম ক্রয় করে নেওয়া একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির কাজ হতে পারে?বাস্তবে অনেকে বলেন আমি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করলে তো জান্নাতে যাবই।হইতো কিছুদিন জাহান্নামে কাটাবো।এই যা,,এটা যে কত বড় ভয়াবহ একটা ভাবনা এটা জাহান্নামের বাস্তবতা সম্পর্কে না জানলে বুঝা সম্ভব না।আমাদের প্রত্যেককে জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।কোরআনে বার বার এই ব্যাপারে সতর্ক বাণী এসেছে।আমরা যাতে এর থেকে পুরো পুরি দূরে সরে থাকার লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ করি।আমরা যেনো প্রতিদিন এ ভয়ঙ্কর জায়গা টা কে স্মরণ করে নিজেদের জীবন টাকে গুছিয়ে নিই।এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।আল্লাহ যেন আমাদের অন্তর গুলু খুলে দেন তার পবিত্র সতর্ক বানী শুনার এবং বুঝার তাওফিক দেন।জাহান্নাম থেকে আমাদের চিরকালের জন্য দূরে সরিয়ে নেন।এবং হিসাব ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করার তাওফীক দান করেন।

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.