গল্প: তোমায় নিয়ে পর্ব: ১২+১৩

গল্প: তোমায় নিয়ে
লেখাঃ সানজিদা সুরাইয়া স্মৃতি

পর্ব: ১২+১৩



- আবল তাবল কথা কেন বলছেন আপনি?
- তাহলে তুমি কি আমাকে ভালবাস?
- আপনাকে ভালবাসতে আমার বইয়েই গেছে। ( মুখ অন্যদিকে ঘুড়িয়ে)
- তাহলে আবল তাবল কথা হল কিভাবে। ঠিকই তো বলেছি।
- আপনি বেশি বুঝেন।
- মনে তো হয়। মরে গেলেই বুঝবা।
-( নীরা চিতকার করে বলে উঠল) আপনি ঊল্টা পাল্টা কথা বলেন কেন???????
- কত ভালবাস তুমি আমাকে দেখছ?
- আমি কি সেটা বলেছি আপনাকে?
- না বললেও বুঝা যায়।
- কচু বুঝেন আপনি?!
- কচু কিন্তু খুবই ভাল লাগে।
- ( নীরার মুখ ভার)
- আচ্ছা আমি আসি। খালুর কবর দেওয়া হবে কিছুক্ষন পর। তুমি দোয়া করিও খালুর জন্য। তোমার দোয়ায় পারলে আমাকেও রাখিও।
ঈশাম এক রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠল।
নীরা ঈশামের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল।
.
কয়েকদিন পর.....
নীরার ভার্সিটি কক্সবাজার ট্যুরের অায়োজন করেছে । যারা লাস্ট ইয়ার পরিক্ষা শেষ তাদের জন্য স্পেশিয়ালি।
- আমাদের ভার্সিটি থেকে কক্সবাজারে যাওয়া হচ্ছে।
- হুম।
- আমিও যেতে চাই। আমি এ সুযোগ মিস করতে চাই না।
- হুম যাও।
- আমরা ফ্রেন্ডরা মিলে যাচ্ছি।
- তোমরা একা যাচ্ছ?
- একা কেন? আমার অনেক ফ্রেন্ড থাকবে।
- মানে ওইটা না। বলছি তোমাদের সাথে কোনো মাহরাম যাবে না?
- নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন? আমরা তো হারিয়ে যাব না। সবাই এক সাথে থাকব।
- উহু! মেয়েদের একা ছাড়তে নেই। তুমি আমাকে নিয়ে চল।
- আপনাকে নিয়ে কেন যাব। কেউই তার হাজবেন্ডকে নিয়ে যাবে না। সবাই সিংগেল যাবে।
- তুমি আমাকে নিতে চাচ্ছ না এই তো। কোনো সমস্যা নেই তোমার বাবাকে আই মিন আমার শশুড় আব্বাকে সাথে নিয়ে যাও।
- কি বলছেন?
- হুম। ঠিকই বলছি।
- আমি বাবাকে নিয়ে যাব কেন? উহ!!! আপনি মনে হয় কোনো ট্যুরে যান নি?
- গিয়েছি তো।
- ফ্রেন্ডস দের নিয়েই তো গিয়েছিলেন।
- জি।
- আপনারা একা যেতে পারলে আমরা কেন যেতে পারব না? হাজবেন্ড, বাবা কে সাথে নিয়ে যেতে হবে?
- কারন ইসলাম পারমিশন দেয় না মেয়েদের একাকী সফরের।
- কেন?
- আবু হুরাইরা ( রা) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়। ( বুখারী - ১০৮৮)।
তাছাড়া অনেক আলেম ওলামারা বলেছেন একাকী ছাড়াও যাবে না। মাহরাম লাগবে যদি তারা সফর করতে চায়।
- তাহলে আমাকে যেতে দিবেন না?
- যেতে দিব না কেন? আমাকে নয়ত বাবাকে সাথে নিয়ে যাও। আমি তোমাকে মানা করছি না । তোমার নিরাপত্তার জন্যই বলছি।
- হুম বুঝেছি।
- কি বুঝলা?
- আপনি এই কয়দিন আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবেন না তাই বলুন।
- ঈশামের সেই হাসি। হুম তা বটে। কিন্তু তোমার যাওয়াতেও আমার আপত্তি নেই কিন্ত মাহরাম সাথে নিয়ে যেতে হবে । তাছাড়া আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
- ঠিক আছে। না ছাড়লে ছাড়ার দরকার নেই। আমি যাচ্ছি না।
- না গেলে আরও ভাল। আমি টেনশনে থাকব না।
- মেয়েদের শিক্ষা সফর নিয়ে ইসলামে কি বলে?
.
শিক্ষা সফর হওয়া উচিত শিক্ষার মত। কিন্ত আমাদের স্কুল কলেজ ভার্সিটির শিক্ষা সফর আসলে তার মধ্য পরে না। এখন শিক্ষাসফর না, বরং বেহায়াপনা, উশৃঙ্খলতা, গান নাচ, ছেলেমেয়ের ফ্রি মিক্সিং মূলত এগুলা কোনো মতেই একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম / মুসলিমাহ এগুলাতে যেতে ইচ্ছা পোষন করবে না। তুমি তো আগে গিয়েছ, আমিও গিয়েছিলাম ২ বার, কিন্তু এরপর আমি এসবের জন্য আর যাই নি। হ্যা! আমি আমার ফ্রেন্ডস দের সাথে ঘুরে বেরিয়েছি। নাচানাচি, গান বাজনা, ফ্রি মিক্সিং ছিল না। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে মাহরাম ব্যতীত সফর কোনো মতেই উচিত না। আমি যতটুকু জানি ততটুকুর উপর আমল করলে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ফেতনার যুগে মেয়েদের এইরকম সফরে না যাওয়াই ভাল, একাকী যাওয়া তো কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। আমি স্বামী হিসেবে কখনই হতে দিব না।
- ওকে! বুঝে গেছি আমি।
- আলহামদুলিল্লাহ।
- হুম।
- আল্লাহ যদি সামর্থ্য দেয় তাহলে আমিই নিয়ে যাব। আর যা কিছু আল্লাহর খুশির জন্য সেক্রিফাইস করবা আল্লাহ তার উত্তম প্রতিদান দেবেন।
- নীরা কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। পরে মুখে মুচকি হাসি ঈশামের দৃষ্টিগোচর হল।
.
নীরার আজ খুব মন খারাপ। কেন তা নীরা নিজেও জানে না। মন খারাপ হলে, বেশি খুশি হলে নীরা গান শুনে। নীরার ফোনে প্রায় হাজার খানেকের মত গান আছে। বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ আরও বিভিন্ন দেশের গান। মন চাইলেই প্লে করে শুনে নীরা।
আজ নীরার যেন কেমন লাগছে। তাই গান শোনার জন্য মোবাইলের প্লেলিস্টে গেল।
বারবার ঢুকছে, আবার বের হচ্ছে। কিছুক্ষন পর নীরা বুঝতে পারল তার ফোনের সব গান ডিলেট!!!
নীরা যেন আকাশ থেকে পরল। তার এত সাধের গান। বেছে বেছে সে গান গুলা ডাউনলোড করে ফোনে রেখেছে, আর সেগুলা ডিলেট?
নীরার মাথাই যেন কাজ করছিল না। মন খারাপ ছিল এখন মেজাজ বিগড়ে গেছে। রাগে নীরা কাঁচুমাচু করছে।
সন্ধায় ঈশাম বাসায় ফিরল। ফ্রেস হয়ে মাগরিবের নামাজ পরে, খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় রেস্ট নিতে আসল।
- আপনি আমার ফোনের গান গুলো ডিলেট করেছেন?
- হুম।
- নীরা তেলেবেগুনে জলে উঠল। কেন আমার পারমিশন ছাড়া ডিলেট করলেন?
- একটু ভুল হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল। সরি!
- সরি!! আপনি জানেন না আমি গান কতটা পছন্দ করি। আপনি কোন সাহসে সব গুলো গান ডিলেট করেছেন। বলুন?
- আই এম এক্সট্রিমলি সরি।
- আপনি কি মনে করেন! সবাই একবারে চেঞ্জ হয়ে যাবে, একলাফে সব কিছু ছেড়ে দিতে পারবে!
- না।
- তা আপনি একবারে কেন ডিলেট করলেন? আপনিও তো আগে গান শুনতেন? শুনতেন না?
- মাথা নিচু করে। হুম।
- আপনি কি পেরেছিলেন একলাফে সব ছাড়তে?
- না।
- তো আমি কিভাবে পারব? যেখানে আপনিই ধীরে ধীরে চেঞ্জ হয়েছেন। আপনি নিজেই তো একবারে নিজের ফোনের গান একসাথে ডিলেট করেন নি। তো আমার করেছেন কেন?
- আমার ভুল হয়ে গেছে। একটু আস্তে কথা বল মা বাবা শুনবে।
- শুনলে শুনুক।
- বললাম তো ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি নি।
নীরা রাগে গজগজ করছে। রাগ এমন পর্যায়ে চলে গেল যে নীরার হাতে থাকা বাবার দেওয়া আই ফোনটা মেঝেতে এক ঢিলা দিল।
মুহূর্তের মধ্যে ফোনটা ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেল।
ঈশামের মা বাবা পাশের রুম থেকে সবই শুনছিল। ফোনটা ভাঙার সাথে সাথে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
.
ঈশাম ফোনের টুকরা গুলো মেঝে থেকে কুড়াতে লাগল। সব একসাথে জোড়ো করে নীরার কাছে আসল।
- এত দামি একটা সেট এভাবে ফেলে দিলে?
- দিলাম তো কি হইছে?
- এটা অপচয়।
- একটা ভেঙেছি আরেকটা কিনব। কোনো সমস্যা?
- গান বাজনা হারাম।
ইবনু আব্বাস ( রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'য়ালা মদ, জুয়া, ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন। ( মিশকাত - ৪৩০৪)।
আসলে একসাথে সবাই সব কিছু ত্যাগ করতে পারে না। আমার বিষয় টা মাথায় আসে নি। তাই আমি তোমার পারমিশন ছাড়াই গান গুলো ডিলেট করেছি। আসলে তোমাকে আগে বুঝানো উচিত ছিল।
- নীরা কোনো কথা বলে না।
সবাই চুপ।
.
ঈশাম তার কাছে কত টাকা জমানো ছিল তা দেখতে থাকল। তিন হাজার টাকা এই মাসে আছে। একটা ভাল ফোন কিনতে তো আরও লাগবে। নীরাকে বুঝাই যে টাকা কালেক্ট হলেই ফোন কিনে দিবে।
- নীরা আমি তোমাকে ফোন কিনে দিব। কিন্তু এই মাসে হচ্ছে না। তুমি একটু ওয়েট করতে পারবে কিছুদিন?
- আপনাকে ফোন কিনতে কে বলেছে?
- তোমাকে আই ফোন কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু মোটামুটি ভাল একটা ফোন কিনে দিব। তুমি একটু ওয়েট কর।
- আপনাকে কিনে দিতে হবে না।
- তোমার ফোনের প্রয়োজন আছে।
- আমি আমার বাবাকে বললেই এখনি ফোন কিনে পাঠিয়ে দিবে। আমি আমার বাবাকে বলব।
- না! তোমার বাবাকে বলতে পারবে না।
- কেন?
- আমি তোমার স্বামী। আমার সামর্থ্য যেটা হবে সেটাই আমি তোমাকে দিব। কারন তোমার ভরন পোষনের দায়িত্ব আমার। আর আমার আত্ন মর্যাদা একটু বেশি। এটা গুন না দোষ জানি না। আমি তোমাকে কিনে দিব ইংশা আল্লাহ। কিন্তু আমার শশুড় কে বলতে পারবা না।
- কেন বলতে পারব না? আমার আই ফোন লাগবে। পারবেন না তো দিতে। আমি আমার বাবাকে বলব। অবশ্যই বলব।
এই বলে নীরা ঈশামের ফোনটা হাতে নিয়ে নীরার বাবার নাম্বার ডায়েল করতে লাগল।
ঈশাম নীরার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিতে যাবে কিন্তু নীরা ফোনটা আকড়ে ধরে ছিল। ঈশাম অনেক চেষ্টা করল ছাড়াতে কিন্ত পারছিল না।
কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে নীরা বলল,
- ছাড়েন বলছি ফোন!!!!
ঈশাম নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে নীরার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
.
নীরার এক হাতে ফোন আর এক হাত দিয়ে গাল ধরে ঈশামের দিকে তাকাল.....
.

পর্ব: ১৩
.
ঈশাম নীরাকে থাপ্পড় মেরে বেআক্কেল সেজে গেল। ওদিকে নীরা গালে হাত দিয়ে ঈশামের দিকে তাকিয়েই রইল। কেউ বুঝল না আসলে হল টা কি।
পরেক্ষনেই নীরা ফোনটা বিছানার উপর ঢিলা মেরে বিছায় ধপাস করে কাথা মুরি দিয়ে শুয়ে পরল।
ঈশাম নীরাকে ডাকল...
- নী...... কিন্তু ঈশামও অনেক রাগ করে বাসার ছাদের উপর চলে গেল।
.
ঈশামের বাবা মা দুইজনই সব কিছুই শুনেছে। ঈশামের বাবা মাকে বলল,
- কাল সকালে ঈশামকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
- আচ্ছা।
রাতে নীরা ঈশাম কেউ ভাত খায় নি। নীরাকে ভাত খেতে ডাকতে গিয়ে ঈশামের মা দেখে নীরা কান্না করে চোখ ফুলিয়ে তুলেছে। গালে ৩ অাঙগুলের দাগ।
- মা! অাসো ভাত খাও।
- না মা! আমার খুধা নেই। আপনারাই খেয়ে নিন।
- অনেকক্ষণ জোর করার পরও নীরা খেতে আসল না।
দুজনই সারা রাত অভুক্ত থেকে গেল। ঈশাম অনেক সময় পর ছাদ থেকে রুমে ঢুকল। দেখল নীরা ওই কাথা মুরি দিয়ে শুয়েই আছে। ঈশাম অনেক বার ডাকার জন্য কাছে গেল কিন্তু তখনি আবার রাগ করে আর ডাকে না । দুইজনই এপিঠ ওপিঠ করে শুয়ে আছে।
.
সকালে.......
- ঈশাম তোর বাবা তোকে ডাকছে?
- ঈশাম ঘাবড়ে গেল। কারন তার বাবা যখনই তাকে মাকে দ্বারা ডেকে পাঠায় তখনি সিরিয়াস কিছু বলে। ছোট বেলায় একবার এক বন্ধুকে ঠেলা মেরে পানির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। পরে বাবা শুনতে পেরে মাকে দ্বারা খবর পাঠিয়েছিলেন যে, তোর বাবা তোকে ডাকছে।
ওরে আল্লাহ! যাওয়ার সাথে সাথে বাঁশের কইঞ্চা দিয়ে এমন মারা মারছে আজও তার মনে আছে। ঈশাম সেই লেভেলের ভয় পাইছে। জিজ্ঞাসা করল কেন মা?
- জানি না। তুই গিয়ে শোন।
এই মানুষটা অনেক সরল আবার অনেক কঠিন। ঈশাম বাবার কাছে গিয়ে বলে উঠল,
- বা......... ( ঈশামের বাবা কামাল সাহেব পিছন থেকে ফিরে ঠাসসসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল)।
ঈশামেরও সেইম অবস্থা। হাত দিয়ে গাল সাথে সাথে ধরল। ঈশামের আন্দাজটা ঠিকই কিন্তু এরকম হবে প্রস্তুত ছিল না।
কামাল সাহেব বললেন,
- হাত সরা গাল থেকে!
- ঈশাম হাত সরিয়ে ফেলল।
- এক, দুই, তিন, চার। চারটা অাঙগুলের ছাপ উঠেছে। আরেকটা কম। বসাই দিব আরেকটা?
- ঈশাম মাথা নিচু করে রইল।
- তোরে মেরে তক্তা বানিয়ে দেওয়া উচিত! তুই আমার ছেলে? ভাবতেও লজ্জা লাগে! আমার ছেলে নাকি সে! কিরে তোর বাবার কাছ থেকে শিখেছিস? তোর বাবা কি এরকম ছিল? কোনো দিন কি দেখেছিস তোর মায়ের গায়ে হাত দিয়েছি? এই শিখেছিস? তুই আমার ছেলে হয়ে এই অাদর্শে মানুষ হলি? এত কষ্ট করে গড়ে তুললাম আমার ছেলেকে?
কামাল সাহেবের চোখ লাল হয়ে গেছে।
শুন! তোর বাবা যে কাজ আজ পর্যন্ত তোর মায়ের সাথে করে নি কাল তুই তোর বউ এর সাথে করেছিস। কাজটা ভাল করিস নি। কুরঅান হাদিস তুই তো অনেক জানিস। এই তোর আমল? আর তুই নিজেকে দ্বীনদার দাবি করিস? নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিস না, বউ এর সাথে কিভাবে আচরন করতে হয় তা জানিস না, আবার কিভাবে নিজেকে দ্বীনদার ভাবিস? বল?
.
- বাবা আমি বুঝতে পারি নি । আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
- না বুঝে কাজ করা কি বোকামী নয়?
কামাল সাহেব বসে পরলেন।
- বাবা আসলে আমার অনেক রাগ উঠেছিল তাই আর...
- হযরত মুহাম্মাদ ( সা) রাগ করতে নিষেধ করেছেন। এই হাদিসটা পড়িস নি?
" তুমি রাগ করো না"।
- জি বাবা।
- তাহলে?রাগের মাথায় এমন কিছু বলবি না বা এমন কিছু করবি না যাতে পরে পস্তাতে হয়।
- জি বাবা। ইংশা আল্লাহ আর হবে না।
- হুম। আমি তোকে জিজ্ঞাসা করব না কি হয়েছে, কেন হয়েছে, শুধু বাবা হিসেবে ছেলেকে কিছু নসিহত করতে চাই। বস এখানে। ঈশাম বাবার সামনে বিছানায় বসে পরল।
কামাল সাহেব বলতে থাকলেন,
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সেই যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। ( তিরমিজি- ১১৬২)।
ঈশাম স্ত্রীর কাছে উত্তম হতে না পারলে পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবি?
- না।
- সারা দুনিয়ার মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে এসে বাসায় এসে বউ এর সাথে রাগ দেখালে, তার সাথে ভাল ভাবে কথা না বললে, মারধর করলে কি আল্লাহ খুশি হবেন?
- না।
- হুম। শুন ঈশাম। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মন মালিন্য হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই সুযোগ টা শয়তানকে দিবি না। কারন এই সুযোগে শয়তান নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরাতে খুব সহজ হয়। অনেক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। নারীরা সাধারণত লাজুক স্বভাবের। অল্পতে রেগে যায়, অভিমান করে, ক্ষুব্ধ হয়। এগুলা নারীর চরিত্র। মেয়েদের এই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য সম্পকে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
" তোমরা স্ত্রীদের সাথে খুব ভালভাবে ব্যবহার ও বসবাস কর। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর তাহলে এ হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিসকে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ, তার মধ্যে বিপুল কল্যান নিহিত রেখেছেন। " ( সুরা আন নিসা- ১৯)।
এ আয়াতে স্বামীদের হেদায়েত দেওয়া হয়েছে। স্বামীদের প্রতি আল্লাহর প্রথমত নির্দেশ হচ্ছে, তোমরা যাকে বিয়ে করে ঘরে আনলে, যাকে নিয়ে ঘর বাধলে, তার প্রতি সব সময়ই খুব ভাল ব্যবহার করবে। তাদের অধিকার পুরোপুরি আদায় করবে।
আর প্রথমেই যদি এমন কিছু দেখতে পাও যার কারনে তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অপছন্দনীয় এবং যার কারনে তার প্রতি তোমার মনে ভালবাসা জাগার বদলে ঘৃণা জেগে উঠে তখনি তুমি তার প্রতি খারাপ আচরন করতে শুরু কর না। বুদ্ধি পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করবে।
তোমাকে বুঝতে হবে কোনো বিশেষ কারনে যদি তোমার স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা জাগে, তবে এখানেই চূড়ান্ত নৈরাশ্যের ও চির বিচ্ছেদের কারন হয়ে গেল না।
কেননা হতে পারে, প্রথমবারে তুমি হঠাত এক অপরিচিতা মেয়েকে তোমার সমগ্র মন দিয়ে তুমি গ্রহণ করতে পার নি। তার ফলেই ঘৃনার সৃষ্টি হয়েছে কিংবা তুমি হয়ত একটি দিক দিয়েই তাকে বিচার করছ এবং সেদিক দিয়ে তাকে মন মত না পেয়ে হতাশ হয়ে পরছ।
অথচ তোমার বুঝা উচিত, সেই বিশেষ দিক ছাড়াও আরও সহস্র দিক এমন থাকতে পারে, যার জন্য তোমার মনে ঘৃনার এ ঘনঘটা দূর হয়ে যাবে। এবং তুমি তোমার অন্তর দিয়ে তাকে আপন করে নিতে পারবে। সেই সাথে এও বোঝা উচিত যে, কোন নারীই সমগ্র ভাবে ঘৃণার পাত্রী হয় না। যার একটি দিক ঘৃণা যোগ্য, তার এমন আরও হাজার গুন থাকতে পারে, যা এখনও তোমার সামনে উদঘাটিত হতে পারে নি।
তার বিকাশ লাভের জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। এবং সে সময় তাকে দেওয়া তোমার একান্তই কর্তব্য। এ কারনেই নবী কারীম ( সা) বলেছেন-
" কোন মুসলিম পুরুষ যেন কোনো মুসলিম নারীকে তার কোনো একটি অভ্যাসের কারনে ঘৃনা না করে। কেননা একটি অপছন্দ হলে অন্য আরো অভ্যাস দেখে সে তুষ্টও হয়ে যেতে পারে। "
রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- আমার কাছ থেকে মেয়েদের সাথে সদ্ব্যবহার করার শিক্ষা গ্রহণ কর। কেননা নারী জাতিকে পাজরের বাকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাজরের হাড় গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টা সর্বাপেক্ষা বাকা। অতএব তুমি যদি সোজা করতে চাও, তবে ভেঙে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি ফেলে রাখ তবে বাকা হতেই থাকবে। অতএব নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। ( বুখারি- ৩০৮৪)।
.
মহিলাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে পাজরের হাড় থেকে।
" মেয়েলোকদের হাড় থেকে সৃষ্টি " করার অর্থ কি?
বদরূদ্দীন আইনী লিখেছেন,
" পাজর থেকে সৃষ্টি " কথাটা বক্রতা বোঝাবার জন্য রূপক অর্থে বলা হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে যে, মেয়েদের এমন এক ধরনের স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, সে সৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে বাকা হওয়া অর্থ্যাত মেয়েদের এক বাকা মূল থেকে থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতএব তাদের দ্বারা কোনোরূপ উপকারিতা লাভ করা সম্ভব কেবল তখনি, যদি তাদের মেজাজ স্বভাবের প্রতি পূর্ণরূপে সহানুভূতি সহকারে লক্ষ্য রেখে কাজ করা হয় এবং তাদের বাকা স্বভাবের কারনে কখনও ধৈর্য্য হারানো না হয়।
.
হযরত আবূ হুরায়রা ( রা) থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে বলা হয়েছে,
" মেয়েলোক পাজরের হাড়ের মত। তাকে সোজা করতে গেলে চূর্ণ করে ফেলবে, আর তাকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত হলে তা স্বাভাবিক বক্রতা রেখেই ব্যবহার করবে। "
.
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নারীদের স্বভাব জন্মগত বক্র। এ বক্রতা সম্পূর্ণ রূপে দূর করা অসম্ভব। তবে তাদের আসল প্রকৃতি কে বজায় রেখেই এবং তাদের স্বভাব কে যথাযথ ভাবে থাকতে দিয়েই তাদেরকে নিয়ে পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে হবে। তাদের প্রতি ভালবাসা পোষন করা, তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করা এবং তাদের মন রক্ষা করতে শেষ সীমা পর্যন্ত যাওয়া।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ক্ষমাশীলতা দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য ও স্থায়িত্ব এর জন্য একান্তই উচিত। যে স্বামী স্ত্রী কে ক্ষমা করতে পারে না, কথায় কথায় দোষ ধরাই যে স্বামীর স্বভাব, তার পক্ষে কোন নারীকে স্ত্রী হিসেবে সাথে করে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব হতে পারে না। স্ত্রী দের সম্পকে সাবধান বানী উচ্চারণ করার সাথে সাথে তাদের প্রতি ক্ষমা সহিষ্ণুতা প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরঅান মাজীদে বলা হয়েছে,
" হে ঈনানদারগন! তোমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের সম্পকে সাবধান! তবে তোমরা যদি তাদের ক্ষমা কর, তাদের উপর বেশী চাপ না দাও বা জোর জবরদস্তি না কর, এবং তাদের দোষ ত্রুটিও মাফ কর দাও, তাহলে যেনে রাখ, আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। "
.
নবী কারীম ( সা) বরাবরই তার স্ত্রীদের অনেক বাড়াবাড়িই মাফ করে দিতেন। হযরত উমর ফারুক ( রা) হতে বর্নিত একদিনের ঘটনা হতে:
" হযরত উমর ( রা) একদিন খবর পেলেন, নবী কারীম ( সা) তার বেগমগনকে তাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারনে তাকাল দিয়েছেন। তিনি এ খবর শুনে ভয়ে ভয়ে রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নিকট উপস্থিত হলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন,
- আপনি আপনার বেগমদের তালাক দিয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন- না।
পরে রাসুল ( সা) তার সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলেছেন। ( বুখারী)।
.
- ঈশাম!
- জি বাবা!
- তুই কাল বউমাকে ওইরকম করে মারলি এটা কি শরীয়াত সম্মত?
- না বাবা।
- তাহলে?
- সরি বাবা। ইংশা আল্লাহ আর হবে না।
- নবী কারীম ( সা) তার নিজের ভাষায় স্ত্রী দের মারপিট করতে স্পষ্ট নিষেধ করে বলেছেন-
" তোমরা স্ত্রী কে এমন নির্মম ভাবে মারধোর কর না, যেমন করে তোমরা মেরে থাক তোমাদের ক্রীতদাসীদের। ( আবু দাউদ)।
.
স্ত্রী কে না মেরে, তার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করে দেওয়া ও তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করাই অতি উত্তম নীতি। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সা) এই নীতি ও চরিত্রেই ভূষিত ছিলেন। হযরত আয়েশা ( রা) বলেন,
" রাসূলে কারীম ( সা) তার কোন স্ত্রীকে কিংবা কোন চাকর বাকরকে কখনও মারধোর করেন নি- না তার নিজের হাত দিয়ে, না আল্লাহর পথে। তবে যদি কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে, তবে সেই আল্লাহর জন্যে তার প্রতিশোধ নিতেন। "( নাসাঈ)।
.
স্ত্রী দের মারধোর করা, গালমন্দ করা, এবং তাদের সাথে কোনো রূপ অন্যায় আচরন করতে নিষেধ করে রাসূলে কারীম ( সা) বলেছেন-
" তোমরা স্ত্রীদের অাদৌ মারধোর করবে না এবং তাদের মুখমণ্ডলকেও কুশ্রী করে দিও না। ( আবু দাউদ)।
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে,
" তোমরা স্ত্রীদের মুখের উপর মারবে না। মুখমণ্ডলের উপর আঘাত করবে না, তাদের মুখের সৌন্দর্য বিনষ্ট করবে না, অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করবে না, এবং নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য। কোথাও তাদের বিচ্ছিন্নাবস্থায় ফেলে রাখবে না। "
.
- ঈশাম?
- জি বাবা?
- ইসলাম স্ত্রীদের কখন মারতে বলেছে আর কিভাবে তা জানিস না?
- জি বাবা জানি।
- কিন্ত আমি তোকে বলব। কারন বাবা হিসেবে ছেলের কাছে নসিহত।
.
( চলবে ইন শা আল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.