গল্প: তোমায় নিয়ে পর্ব: ১৪+১৫


গল্প: তোমায় নিয়ে
লেখাঃ সানজিদা সুরাইয়া স্মৃতি

পর্ব: ১৪+১৫


স্ত্রীদের মারধোর করা কি অাদৌ জায়েজ?
ইমামা খাত্তাবী লিখেছেন -
" স্ত্রীদের ' মুখের উপর মারবে না' মুখমণ্ডল ব্যতীত দেহের অন্যান্য অংশের উপর স্ত্রীকে মারধোর করা যাবে। তবে শর্ত এই যে, তা মাত্রায় বেশি ও অমানুষিক মার হতে পারবে না।
.
কিন্তু স্ত্রী কে মারধোর করা কখন ও কি কারনে করা সংগত?
মহান আল্লাহ কুরঅান মাজীদে বলেন,
" আর যেসব স্ত্রী লোকদের বিদ্রোহের ব্যপারে তোমরা ভয় কর, তাদের তোমরা ভালভাবে বুঝাও, নানা উপদেশ দিয়ে তাদের বিনয়ী বানাতে চেষ্টা কর। পরবর্তী পর্যায়ে বিছানা থেকে দূরে সরিয়ে রাখ। আর ( শেষ উপায় হিসেবে) তাদের প্রহার কর। এর ফলে যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাদের উপর অন্যায় ব্যবহারের নতুন কোনো পথ খোজ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচচ, সর্বশ্রেষ্ঠ।"
.
এ আয়াতে দুনিয়ার মুসলিম স্বামীদের সম্বোধন করে কথা বলা হয়েছে। " ভয় করা" মানে জানতে পারা অথবা নি: সন্দেহে বুঝতে পারা যে, স্ত্রী স্বামীকে মানছে না, অথচ স্বামী কে মেনে চলাই স্ত্রীর কর্তব্য। এ অবস্থায় স্বামী কি করবে, তাই বলা হয়েছে এই আয়াতে।
.
প্রথমত, বলা হয়েছে স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝাতে, উপদেশ দিতে ও নসিহত করতে, একথা তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে, স্বামীকে মেনে চলা, স্বামীর সাথে ভাল সম্পক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখার জন্য আল্লাহ তা'য়ালাই নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। অন্যথায়, তার ইহকালীন দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন বিষাক্ত হয়ে যাবে, আর পরকালেও তাকে আল্লাহর আযাব ভোগ করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, বলা হয়েছে যে, অমান্যকারী স্ত্রীকে বিছানা থেকে সরিয়ে রাখা, তার সাথে যৌন সম্পক বিচ্ছিন্ন করা। অন্যকথায় তাকে না শয্যা সঙগি বানাবে, না তার সাথে যৌন সম্পক বজায় রাখবে।
.
তৃতীয়ত, বলা হয়েছে তাকে মারধোর করতে। কিন্ত এ মারধোর সম্পরকে এ কথা স্পষ্ট যে, তা অবশ্যই শিক্ষামূলক হতে হবে। ক্রীতদাস ও জন্তু জানোয়ারকে যেমন মারা হয়, সে রকম মার দেওয়ার অধিকার কারও নেই।
.
- ঈশাম? তুমি কি তাকে বুঝিয়েছ আগে?
- না বাবা।
- প্রথমেই তুমি তাকে বুঝাও নি, দ্বিতীয়ত তাকে দূরেও সরে রাখ নি। কিন্তু তৃতীয় পদক্ষেপ কেন গ্রহন করলে? তুমি কি আল্লাহর কুরঅানের আয়াত কে অবজ্ঞা করলে না?
- ঈশাম চুপ।
- মানুষ এখন উল্টো কাজ করে। আগে ধুমাধুম মার দেয় যে মার শরীয়াত সম্মত নয়, পরে আলাদা থাকে, শেষে গিয়ে বুঝাতে থাকে। কি অদ্ভুত?! আল্লাহর দেওয়া নিয়মটাকেই উল্টা বানিয়ে ফেলেছে।
.
স্ত্রীদের প্রতি ব্যবহার সম্পকে একথা বলে দুনিয়ার স্বামীদের বিশেষভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যেন তারা নারীর প্রতি কোনো রকম দুর্ব্যবহার ও অন্যায় অত্যাচার করতে সাহসী না হয়।
অত:পর বলা হয়েছে, স্ত্রী যদি স্বামী কে মেনে নেয়, স্বামীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে রাজি হয় এবং তাই করে, তাহলে স্বামীর কোন অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ অত্যাচার করার, আয়াতের শেষাংশে কোন উপযুক্ত কারন ব্যতীত স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া যে কতদূর অন্যায় তার দিকে ইংগিত করে বলা হয়েছে, তারা যদিও অবলা, দুর্বল, তোমাদের যুলুম - পীড়ন থেকে আত্নরক্ষা করার সাধ্য যদিও তাদের নেই, তোমাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহন করতে তারা যদিও অক্ষম ; কিন্ত তোমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আল্লাহ হচ্ছেন প্রবল পরাক্রান্ত, তিনি অবশ্যই প্রত্যেক যালিমের যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহন করবেন, এবং সেজন্য কঠোর শাস্তিদান করবেন। সুতরাং তোমরা শক্তিবান বলে স্ত্রীদের উপর অন্যায়ভাবে যুলুম করতে উদ্যত হবে, তা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না।
স্ত্রীদের উপর অন্যায় ভাবে, অকারনে ও উঠতে বসতে আর কথায় কথায় কোনরূপ দুর্ব্যবহার বা মারধোর করতে শুধু নিষেধ করেই ক্ষান্ত করা হয় নি, ইসলাম আরও অগ্রসর হয়ে স্ত্রীদের প্রতি সক্রিয়ভাবে উত্তম আচরনের নির্দেশ দিয়েছে স্বামীদের। কুরঅানে আছে,
" স্ত্রীদের সাথে যথাযথভাবে খুব ভাল ব্যবহার করবে। "
.
আল্লামা আলুসী লিখেছেন,
" তাদের সাথে ভালভাবে ব্যবহার কর। আর ' ভালভাবে ' মানে এমন ভাবে যা শরীয়াত ও মানবিকতার দৃষ্টিতে অন্যায় নয়। ( রুহুলমায়ান)।
" স্ত্রীকে মারধোর করবে না, তার সাথে খারাপ কথাবার্তা বলবে না এবং তাদের সাথে সদা হাসিমুখে ও সন্তুষ্টচিত্তে সম্পক রক্ষা করে চলবে। "
একটি হাদিসে রয়েছে,
" রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোক সে যে তার পরিবার ও স্ত্রী পরিজনের জন্য ভাল। আর আমি আমার নিজের পরিবারবর্গের পক্ষে তোমাদের তুলনায় ভাল। তোমাদের সঙগি - স্ত্রী বা স্বামী যদি মারা যায়, তাহলে তার কল্যানের জন্যে তোমরা অবশ্যই দোয়া করবে।
.
একদিনের ঘটনা, একদা নবী কারীম ( সা) সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন -
' তোমরা আল্লাহর দাসীদের মারধোর কর না।'
তখম হযরত উমর ফারুক ( রা) রাসূলের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন:
' আপনার এ কথা শুনে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের উপর খুবই বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। '
তখন নবী কারীম ( সা) তাদের মারবার অনুমতি দিলেন।
একথা জানতে পেরে বহু সংখ্যক মহিলা রাসূলের ঘরে এসে উপস্থিত হল এবং তারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযোগ পেশ করল। সব কথা শুনে নবী কারীম ( সা) বললেন-
" বহু সংখ্যক মহিলা মুহাম্মাদের পরিবারবর্গ এর নিকট এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে গেছে। মনে হচ্ছে, এসব স্বামী তোমাদের মধ্যে ভাল লোক নয়।"
.
- ঈশাম আশা করি তোমার স্ত্রী যদিও কখন তোমার বাধ্য না হয় তুমি তোমার ভাল ব্যবহার দিয়েই মুগ্ধ করে দিবে, এবং প্রথম স্টেপেই তুমি সাকসেসফুল হবে ইংশা আল্লাহ। আমি তোমার উপর আশাবাদী। কারন তুমি আমার ছেলে, যেভাবে মানুষ করেছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তারই যেন উত্তম প্রতিফলন দান করেন। আর একটা কথা তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে ঠিক সেভাবেই আচরন করবে ঠিক যেমন তুমি তোমার মেয়ের সাথে যেমন আচরনটি চাও। আল্লাহ যদি তোমাকে কন্যা সন্তান দান করেন তাহলে তুমি যেকরম চাইবে তার সাথে তার স্বামী ব্যবহার করুক ঠিক তেমনি তুমি এখন থেকেই তোমার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার কর।
রাসূলুল্লাহ ( সা) বিদায় হজ্জের ভাষনে বলেন, পুরুষের কাছে নারীদের কিছু অধিকার আছে,
১) তোমরা নারীদের ভরন পোষন প্রদানে উত্তম উপায় অবলম্বন করবে।
২) তোমরা নারীদের যাবতীয় জামা কাপড় দেয়ার ব্যপারে উত্তম আচরন করবে।
৩) তোমরা নারীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর, কারন তারা তোমাদের কাছে বন্দী। ( তিরমিজি- ১১৬৩)।
রাসূলুল্লাহ ( সা) আরও বলেছেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে, এবং তুমি যখন পরবে তাকেও পরাবে, চেহারায় কখনও প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না। ( আবু দাঊদ- ২১৪২)।
.
ভাল ব্যবহার, ভাল ব্যবহার, ভাল ব্যবহার!!!!!
এই জিনিস ছাড়া নারীদের থেকে কোনো কিছু আদায় করতে পারবে না। তুমি যত বীরপুরুষই হও না কেন। বুঝেছ ঈশাম?
- ঈশাম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করল।
- যাও বউমার কাছে। কাল থেকে না খেয়ে আছে। তোমার মা খাওয়াতে পারে নি। অনেক অভিমান করে আছে। মান অভিমানও ভাঙাতে পার না! নালায়েক কোথাকার!! এগুলাও কি মা বাবা শিখে দিবে???
- ঈশাম মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
- লজ্জাও করে না বাবার সামনে এসব কথায় হাসে! আরেকটা কানের নিচে দিব?
- না না বাবা! আর লাগবে না।
- তা আমার সামনে থেকে সর! যা ভাগ!!!
ঈশাম হাসতে হাসতে রান্না রুমে চলে গেল।
- মা এক প্লেটে ভাত দাও।
- ভাত বেড়ে রেখেছি। এই না। দুই প্লেট দিই তুইও খা?
- এক প্লেটই হবে। একসাথে খাব।
- আচ্ছা।
ঈশামের মা সেই প্লেটে আরো ভাত বেশি দিয়ে দিল।
- এই নে যা তাড়াতাড়ি খাওয়া, আর নিজেও খা।
- আচ্ছা মা।
ঈশাম খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে গেল।
.- নীরু!
- উত্তর নেই।
- এই নীরু!
- উত্তর নেই।
- উঠ না। কাল থেকে খাও নি। উঠ একসাথে খাই খাবার এনেছি।
- খাব না।
- আমার ঘরে এসে আমার বউ না খেয়ে থাকবে এটা আমি হতে দিতে পারি না। উঠ!
- আপনি খান! পেট ভরে গলা পর্যন্ত কব্জি ঢুবিয়ে খান!
- বউকে ছাড়া কব্জি ডুবিয়ে গলা পর্যন্ত কেমনে খাই?
- উত্তর নেই।
- রাগ করছ সোনা বউ?
- না!
- কালকের জন্য সরি আমি। আর হবে না ইংশা আল্লাহ! আল্লাহ আমায় যতদিন বেচে রাখবেন আমার দ্বারা আর কখনও এমন ব্যবহার পাবা না। সরি। আমি বুঝতে পারি নি।
-নীরা চুপ।
- খুব ক্ষুধা পেয়েছে, কেমনে আছ তুমি এতক্ষণ না খেয়ে, নিজের কথা না হয় নাই ভাবলা আমার কথাও কি ভাবতে ইচ্ছে করে না? আমিও যে খাই নি।
- আপনি খেয়ে নিন।
- কেমন ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে দেখ! সরি তো বললাম!
- ইট'স ওকে!
- তাহলে উঠ!
- নীরা চুপ।
- ঈশাম ভাতের প্লেট টা রেখে হাত ধরে টেনে তুলল নীরা কে।
- টেনে তুললেন কেন!!
- হা কর।
- আপনাকে খাওয়াতে হবে না আমি নিজেই খেতে পারি।
- আমি খাওয়াই দিব। হা কর।
- নীরা হা করল।
ঈশাম অনেক যত্ন করে নীরাকে খাওয়াই দিল। ঈশামের চোখের কোনে মুক্তার দানা চক চক করছে। মনে হচ্ছে পুতুল খেলছে ঈশাম। পুতুলকে খাওয়াচ্ছে। কেন জানি নীরাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে ঈশাম!
- আপনি মেয়ে মানুষের মত কাঁদছেন কেন?
- কই!
- আমি কি কিছুই দেখতে পারি না?
- আরেহ না। আই এম সরি কালকের জন্য।
- বললাম তো ইট'স ওকে।
- আসলে তোমার বাবা তোমাকে আমার কাছে সারাজীবনের জন্য তুলে দিয়েছেন। তারই রাজকন্যার সাথে এমন ব্যবহার! আর হবে না ইংশা আল্লাহ।
- আমারও ভুল হয়ে গেছে। আমিও সরি।
- আরেহ না। কি যে বল। কিন্তু তুমি তোমার বাবাকে বলতে পারবে না। এটা কিন্তু ফাইনাল! আমি কিন্তু.....
- নীরা হাসতে হাসতে বলল: আচ্ছা আচ্ছা বলব না।
ঈশাম আর নীরা দুইজনই খেয়ে নিল।
.
.
নীরার মাথার চুলে কতদিন ধরে তেল দেওয়া নেই। নীরার শাশুড়ি বলছে,
- এই যুগের মেয়েদের যে কি হয়েছে! মাথায় তেল দিতে চায় না। নীরা! আস তেল দিয়ে দিই মাথায়।
- নীরা চোর পালানোরর মত করে বলল: না না! লাগবে না। এমনি ভাল। আমি তেল দিব না। চুল গুলো চুপসে যাবে।
- কিসের চুপসে যাবে। মাথা ঠান্ডা থাকবে।
- আম্মু অনেক তেল দিয়ে দিত! মুখ বেয়ে বেয়ে পরত। লাগবে না মা!
- নীরার শাশুড়ি নীরাকে জোর করে ধরে মাথায় তেল দিতে বসল।
.

পর্ব: ১৫
.
নীরার শাশুড়ি নীরার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে আর তাতে তেল দিয়ে দিতে লাগল।
- নীরা তুমি কি জান নেককার মহিলা কারা?
- কারা মা?
- হযরত আবু উমামা ( রা) হতে বর্নিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন, আল্লাহ ভীতির ন্যয় নিয়ামত অর্জনের পর মুমিন বান্দার জন্য নেক স্ত্রী ব্যতীত আর কোনো উত্তম জিনিস হতে পারে না। স্বামী কোন কিছু বললে তা সে শোনে। স্বামী তার দিকে তাকালে তাকে তুষ্ট করে । স্বামী তাকে কোনো বিষয়ে কসম দিলে সে তা পূর্ণ করে। স্বামী বাইরে কোথাও গেলে তার জান মালের নিরাপত্তার জন্য কল্যান কামনা করে। ( মিশকাত - ২৬৮)।
এই হাদিসে আল্লাহভীতি নামক নিয়ামতের পর পুরুষদের জন্য নেককার মহিলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোন পুরুষের ভাগ্যে নেককার মহিলা জীবনসংগিনী হয়ে গেলে তার মত ভাগ্যবান আর কে আছে?
প্রথমত, স্বামী তাকে দেখা মাত্রই খুশি হয়। এ ধরনের স্ত্রী কে স্বামী দেখলে খুশি না হয়ে পারে না। হাস্যেজ্জল চেহারা নিয়ে স্বামীর সম্মুখে নিজেকে হাজির করবে। গোমরা মুখে স্বামীর কাছে আসা উচিত নয়। স্বামী ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই মুখ ভার করে ঘ্যানর ঘ্যানর করা অনুচিত। স্বামীর সামনে কোনো দু:খ কষ্ট প্রকাশ করে স্বামী কে চিন্তা যুক্ত করাও ঠিক না। অপরিষ্কার হয়ে স্বামীর কাছে যাবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সেজেগুজে স্বামীর সামনে যাবে। অপরিষ্কার অগোছালো হয়ে থাকলে স্বামী বাইরের অন্য কোনো সুন্দরী নারীর প্রতি অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাকালে তার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে পারে। অন্য কোথাও গেলে নারীরা নিজেকে অনেক অাকর্ষনীয় করে বের হয়, যে সৌন্দর্য বাইরের পুরুষদের দেখানো জায়েজ নয়।
হ্যা! বিয়ের পর স্বামী কে দেখানো জায়েজ। পর পুরুষদের জন্য তা হারাম। এক হাদিসে তো এদেরকে ব্যভিচারিণী বলা হয়েছে। সে অন্ততপক্ষে চোখ ও অন্তর দ্বারা মানুষকে ব্যভিচারের প্রতি ডাকে মানুষকে নিজের প্রতি অাকৃষ্ট করে।
স্ত্রী হিসেবে অবশ্যই অঙ্গ সজ্জার মাধ্যমে স্বামী কে খুশি করতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত, কসম পূর্ণ করার অর্থ হল, স্বামী - স্ত্রীর প্রতি বিশাস রেখে কসম করল, যেমন স্বামী বলল- শপথ করছি, এটা তুমি অবশ্যই করবে, তাহলে স্বামীর মন খুশি করার জন্য তা পূর্ন করা অবশ্য কর্তব্য।
.
তৃতীয়ত, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার জান মালের নিরাপত্তার উদ্দেশ্য হচ্ছে , স্ত্রী যেন যেখানে সেখানে স্বাধীন ভাবে বিচরন না করে। অন্য কারও সাথে যেন সখ্যতা সৃষ্টি না করে। কোন কোন মহিলা কে দেখা যায়, স্বামীর অনুপস্থিতির। সুযোগ পেয়ে বেপর্দায় চলা ফেরা করে। অপরিচিত পুরুষের সাথে কথাবার্তা বলতে লজ্জা বোধ করে না।
ধন সম্পদ ইত্যাদি কল্যান কামনা মর্ম হল, প্রয়োজন ছাড়া টাকা পয়সা খরচ না করা, জিনিসপত্র যত্ন সহকারে রাখা। অনুরূপ স্বামীর বর্তমানে যাদের কিছু দেয়া সম্ভব হয় না, স্বামীর অবর্তমানেও তা কাউকে দেয় না।
.
জান্নাতি মহিলাদের পরিচয় জান? হযরত আনাস ( রা) হতে বর্নিত, নবি কারীম ( সা) বলেছেন-
আমি কি তোমাদের বেহেশতি মহিলা সম্পকে বলে দিব না?
সাহাবিগন বললেন, বলুন, হে আল্লাহর রাসূল ( সা)!
বেহেশতি মহিলার পরিচয় দিতে গিয়ে নবীজি ( সা) বলেন, স্বামীর প্রতি প্রেমাস্পদ অধিক সন্তান জন্মদাত্রী।
যখন সে রাগান্বিত হয় বা তাকে গালমন্দ করলে বা তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হলে সে মহিলা স্বামী কে সন্তুষ্ট করতে বলে, আমার হাত আপনার হাতের উপর। আমার প্রতি খুশি না হওয়া পর্যন্ত আমি বিছানায় যাব না। ( তারগিব ৩/৩৭)।
স্বামীর সামন্য অসন্তুষ্টি স্ত্রী কে অস্থির করে তুলে। মন তার ছটফট আরম্ভ করে। স্বামী কে অসন্তুষ্ট রেখে ক্ষনিকের জন্যও সরে না। স্বামীর প্রতি ভালবাসা থাকলে স্ত্রী অন্য কারও প্রতি অাকৃষ্ট হতে পারে না। এবং গভীর ভালবাসার কারনে স্বামীর পক্ষ থেকে তার জন্য কোনো কষ্ট প্রকাশ পেতে পারে না। ভালবাসা গভীর হলে তিক্ত কথাবার্তা ও মধুময় মনে হবে। প্রকৃত ভালবাসার কারনে প্রেমাস্পদের পক্ষ থেকে যেকোনো কষ্ট মোটেই অনুভূত হয় না।
.
হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, আল্লাহ পাক যাকে নেক স্ত্রী দান করেছেন তাকে যেন অর্ধেক দ্বীনই দান করা হল। সেজন্য তার উচিত অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যপারে খোদাভিরুতা হাসিল করা।
একজন নেককার স্ত্রীর মর্যাদা দেখেছ?
যে নেককার স্ত্রীকে পেলে তার দ্বীন অর্ধেক পূর্ন হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! কি ইচ্ছে করে না? একজন নেককার স্ত্রী হয়ে দ্বীন দুনিয়া পরকাল হাসিল করতে?
.
জানো কি? ধার্মিক স্ত্রী মহা সম্পদ!
হযরত আবু উমামা ( রা) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ ( সা) বলেছেন, হে মুয়াজ ( শোন) কৃতজ্ঞ অন্তর, আল্লাহর স্মরনে ব্যস্ত জিহ্বা এবং নেক স্ত্রী তোমাদের দীন দুনিয়ার ব্যপারে সাহায্যকারী। এ গুলো মানুষ যা ধন সম্পদ অর্জন করে তার চেয়ে অতি উত্তম। ( তিরবানী ৪/২৭৬)।
.
যে ধার্মিক স্ত্রী দ্বারা দীন দুনিয়ার সাহায্য হয় সে বড় সম্পদ। এ ধরনের স্ত্রী দ্বারা দুনিয়ার জীবন হয় সুখ শান্তির, পরকালীন কাজে সহায়তা করে পাপ থেকে রক্ষা এবং আল্লাহভীতি অর্জনের জন্যও নানাভাবে সহায়তা করতে পারে। সত হওয়ার কারনে নিজেও পাপ থেকে রক্ষা পায় এবং স্বামী কেও পাপ থেকে রক্ষা করতে পারে। নেক কাজে উতসাহী করে তোলে এতে পরকালীন কল্যান হয়।
এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে?
এ সমস্ত মহিলার বিপরীতে যারা পাপিষ্ঠ তারা তো পাপিষ্ঠই বটে অধিকিন্তু স্বামী কেও পাপের প্রতি অাকৃষ্ট করে।
সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে স্বামীর সাথে বাইরে ঘোরাফেরা করে। সিনেমা থিয়েটারে, ক্লাবে যায়, ঘরে টিভি না থাকলে স্বামী কে আনতে বলে। এরাই সন্তানদের দ্বীন বিমুখী ও বে নামাজি বানায়। এভাবে তারা তাদের ঘরকে জাহান্নামের সদৃশ বানায়। এরকম পাপিষ্ঠ সুন্দরী নারীর প্রতি অাকৃষ্ট হয়ে পুরুষরা জাহান্নামকে নিজেদের আবাস্থল করে নিচ্ছে। জাহান্নামে যেতে রাজি কিন্ত এসব নারীর চাহিদা মেটাতেও পুরুষরা রাজি হয়। হায় অাফসোস!
দুনিয়ার মোহে পরে পরকাল বরবাদ করে দিচ্ছে। সাময়িক সুখ লাভ করছে কিন্তু কিয়ামতের দিন যখন আমল নামা দেওয়া হবে তখন রক্তাক্ত অশ্রু বর্ষন করেও পার পাওয়া যাবে না।
.
তুমি কি জান দুনিয়ার মহিলারা হুরেঈন থেকে উত্তম?
হযরত উম্মে সালামা ( রা) রাসূলুল্লাহ ( সা) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল ( সা)! দুনিয়ার মহিলারা শ্রেষ্ঠ নাকি বেহেশতের হুরেঈগন শ্রেষ্ঠ হবে?
হুজুর ( সা) বলেন, জান্নাতের হুরেঈন থেকে দুনিয়ার মহিলারা শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠত্ব এর দিক দিয়ে তারা এমন যেমন অপ্রকাশ্য জিনিস থেকে প্রকাশ্য জিনিস উত্তম।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরকম কেন হল?
রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন- নিজের নামাজ, রোযা এবং আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদাতের কারনে এরূপ হয়েছে।
উল্লেখিত হাদিসের মর্ম হল, দুনিয়াতে নেককার ও নামাজি স্ত্রী গন হুর থেকেও উত্তম। কারন হুরদের জন্য জান্নাতে নেক আমল নেই। এগুলা করতে হয় দুনিয়াতে। সেজন্য হুরের নামাজ, রোযা, কুরঅার তিলাওয়াত, দান খয়রাত, হাজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদাতের সাওয়াব এবং যে সমস্ত ইবাদাত আল্লাহ তা'য়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয় সেগুলা থেকে তারা বঞ্চিত। ( তিবরানী)।
.
তুমি কি জান নারীদের জন্য বেহেশতের ৮ টি দরজাই খোলা থাকবে। আর কারা সেই সৌভাগ্যবতী?
হযরত মুহাম্মাদ ( সা) বলেন, যে নারী ৫ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব এর সাথে পরবে , রমজানে রোযা রাখবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, এবং স্বামীর অনুগত্য করবে, তাদের জন্য বেহেশুতের ৮ টি দরজা উন্মুক্ত থাকবে। তারা যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে। ( সহিহ ইবনে হিব্বান - ৪১৬৩)।
দেখো তো? মাত্র ৪ টি কাজ। এই কাজ গুলা কি খুব কঠিন? নামাজ, রোযা, ইজ্জতের হেফাযত, স্বামীর আনুগত্য করা। এই কাজ গুলো করলে বেহেশতের ৮ টি দরজা খুলে দেওয়া হবে যে দরজা দিয়ে মন চায় সেই দরজা দিয়েই ঢুকতে পারবে।
কত বড় মর্যাদা, কত বড় সুযোগ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা নারীদের দিয়েছেন। কিন্তু এই কাজ গুলোই যেন নারীদের কাছে পাহাড় কাধে নেওয়ার মত কঠিন হয়ে পরেছে।
আজ কাল তো নারীরা নামাজের ধার ধারে না। সময় পায় না নামাজের কাজে ব্যস্ত থাকে নামাজের সময় কোথায় ?
স্বাস্থ্য নষ্ট হবে দেখে রোযা রাখে না।
মান ইজ্জতের হেফাজত করার বদলে মান ইজ্জত বিলিয়ে দিচ্ছে। পরপুরুষ কে নিজের দিকে অাকৃষ্ট করতেই ব্যস্ত। সৌন্দর্য দেখিয়ে বেরিয়ে মজা পাচ্ছে। স্রেফ নিজের সৌন্দর্য দেখিয়ে বেরাচ্ছে শুধু মাত্র বাহবা পাওয়ার জন্য। আর কিছু না। এর ফলে কি হচ্ছে জান?
পরকিয়া, পর নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে সংসার ভাঙন, ধর্ষণ এগুলা যেন মামুলি ব্যপার। শুধুমাত্র নারীরা তাদের মান ইজ্জতের হেফাযত করছে না বলেই এত এত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
নারীরা সৌন্দর্য দেখায় আর পুরুষেরা দেখে ফলে কি হয়? দুজনেরই চোখের জিনা, মনের জিনা। না পারে পুরুষ নিচের দিকে তাকাতে না পারে নিজেকে সংযত রাখতে।
এগুলা কি বেপর্দার কারনে হচ্ছে না? আর সেখানে আল্লাহ বলেছেন, নিজের মান ইজ্জতের হেফাজত করলে জান্নাতের দরজা খুলা থাকবে।
আর স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর বাধ্য হওয়া। খুব কি কঠিন? আর আজকালকার মেয়েরা নারী আন্দোলন করে, নারীদের নাকি পুরুষেরা স্বাধীনতা দেয় না, ঘরে আটকে রাখে। অাফসোস সেই নারীদের জন্য! স্বামী সেবা, স্বামীর আনুগত্য করা যাদের কাছে কাজের বুয়ার মত লাগে।
তারা আজও বুঝল না যে, স্বামীর আনুগত্য এর মাঝে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা নারীদের জান্নাত এর সুসংবাদ দিয়েছেন।
.
তোমার স্বামী তোমার জন্য জান্নাত কিংবা জাহান্নাম!
.
হযরত হোসাইন ইবনে মিহছাব ( রা) বর্ননা করেন যে, একদিন তার ফুফী নবী কারীম ( সা) এর খেদমতে উপস্থিত হন। হুজুর ( সা) তাকে জিজ্ঞাসা করেন,
তোমার কি স্বামী জীবিত আছে?
তিনি বললেন- হ্যা! আছে।
তখন রাসূলুল্লাহ ( সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি তার সাথে কি রকম ব্যবহার কর?
তিনি বললেন-
সম্ভব সকল পন্থায় তার সেবা করি, তবে সাধ্যের বাইরে নয়।
হুজুর(সা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
তুমি তার সাথে কেমন আচরন কর?
তিনি বললেন- আমার সাধ্যমত যা করার তাই করি।
এবার রাসূলুল্লাহ ( সা) বললেন-
জেনে রেখো! সেই তোমার জান্নাত - জাহান্নাম। ( তারগীব ৩/৩৪)।
স্বামীর সন্তুষ্টিই স্ত্রীর জন্য জান্নাত অথবা জাহান্নাম। স্বামীর মতের বিপরীত মত পোষন করা তার অসন্তুষ্টিত, স্বামীর কথার উপর কথা বলা তার সেবা যত্নে কার্পণ্য করা, ইত্যাদি কাজ স্ত্রীর জন্য জাহান্নামের কারন হবে। অবশ্য শরীয়াত সম্মত হতে হবে অসন্তুষ্টি গুলো। আল্লাহ ও তার রাসূলুল্লাহ ( সা) এর নির্দেশিত পথে।
.
বর্তমানে দেখা যায়, বিয়ের পর মাত্র কয়েকদিন ভাল থাকে , স্বামীর কথা মত চলে, কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে স্বামী কে স্বামীই মনে করে না।
আমি কি তোমার দাসী? দাসীবান্দী করার জন্য এসেছি?
তোমার সংসারে এসে কোনো দিন সুখ পেলাম না!
আমাকে কি কয়েদি পেয়েছ যে ঘরে বন্দি থাকতে হবে?
আধুনিক যুগের মেয়েরা কি এরকম দাসত্ব করে বেরাবে?
মেয়েদের স্বাধীনতা বলে কি কিছু নেই?........
.
এসব কথা এখন মুক্তমনা নারীবাদীদের। তারা এখন স্বাধীনতা চায় সংসার স্বামী থেকে, যেন তারা বাইরে ইচ্ছে মত পরপুরুষ দের সাথে রং তামাশা করতে পারে, বেপর্দা হয়ে বেরাতে পারে ।
.
আর যে স্বামী কে সন্তুষ্ট রাখবে সে জান্নাতে যাবে!
.
হযরত উম্মে সালামা ( রা) হতে বর্নিত, নবি কারীম ( সা) বলেছেন, কোন মহিলা ইন্তেকাল করল, আর এ সময় স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট ছিল - তাহলে সে মহিলা বেহেশতে যাবে। ( বায়হাকী, শোয়েবুল ইমান ২/৪২১)।
.
স্বামীর হক সম্পকে বলা হয়েছে...
হযরত আলী ( রা) হতে বর্ণিত, নবী কারীম ( সা) বলেছেন-
হে মহিলাগন! আল্লাহকে ভয় কর এবং স্বীয় স্বামীর মন সন্তুষ্ট রাখ। মহিলারা যদি জানত যে স্বামীর হক কি তাহলে সকাল বিকাল খানা নিয়ে দাড়িয়ে থাকত। ( কানযুল উম্মাল ১৬/১৪৫)।
এ হাদিসের মর্ম হল, যে কথায় স্বামী খুশি থাকে বা তার মন মেজাজ অনুকূলে হয়, যে কথার স্বামীর ভাল লাগে, যা তার পছন্দসই হয় ( শরীয়াত পরিপন্থী নয়) সে ধরনের কথা তাকে শোনানো। যেমন স্বামীর পছন্দ গরম খাবার, তাহলে সাধ্যানুযায়ী সদ্য রান্না করা গরম খাবারেরই ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বামী সকালে নাস্তা খেতে অভ্যস্ত হলে খুব ভোরে শয্যা ত্যাগ করে নাস্তা তৈরি করতে হবে।
কোন একটা নির্দিষ্ট সময় স্বামীর চায়ের অভ্যাস থাকলে আদেশের পূর্বেই চা প্রস্তুত রাখবে।
কিন্তু স্বামী যদি শরীয়াত পরিপন্থী কোনো কাজ করতে বলে তাহলে তা করা যাবে না। স্বামীর আদেশ পালন করতে গিয়ে আল্লাহর আদেশকে লংঘন করা যাবে না।
.
( চলবে ইনশাআল্লাহ)

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.