জীবন - মৃত্যু -জীবন-৩

কবরের আযাব-৩

আপনার কবরে জান্নাতের দরজা খুলে দিয়া হলো,দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় বসে আপনার যত ভালো লাগতো তার চেয়ে ও অনেক বেশি ভালো লাগছে আপনার কবরে।কিন্তু আপনি ভাবছেন তাদের কথা যারা ঈমান নিয়ে মরতে পারেনি,আপনার মনে পড়ে গেল এক হাদিসে নবি কারিম(সাঃ) কবরের কিছু আযাবের বিবরন দিয়েছিলেন।তিনি একরাতে স্বপ্নে দেখেছিলেন ২ জন ফেরেশতা তাকে নিয়ে জেরুজালেমের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা ২ জন লোককে দেখতে পেয়েছিল,একজন লোহার আকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আর ওই ব্যাক্তি আরেকটা লোকের মুখের ভিতর দিয়ে টেনে তা আবার বাহির করছিলো,এতে তার গাল ছিড়ে যাচ্ছিল।এই ভাবে একগালে শাস্তি দিতে দিতে যখন আরেকগালে যাচ্ছিলো তখন আগের গালটা ভালো হয়ে যাচ্ছিল।তখন নবি বললেন এই লোকটি কে??তখন ফেরেশতা বললো চলুন চলুন,ব্যাখ্যা পরে হবে।
কিছুদূর আগিয়ে যেতে তারা আরো দুইটা লোককে দেখতে পেল,একজন লোক পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল,আর ওই ব্যাক্তি আরেকটা ব্যাক্তির মাথা বরাবর সেই পাথরটা মারছিল,এতে তার মাথা চুর্ন-বিচর্ন হয়ে যাচ্ছিল।পাথর যখন দূরে চলে যাচ্ছিল তখন আঘাতকারি ব্যাক্তি সেই পাথরটা আনতে আনতে আবার তার মাথা ঠিক হয়ে যাচ্ছিল।তখন নবি আবার জিজ্ঞেস করলো, এই লোকটি কে?
তখন ফেরেশতা আবার বললো চলুন, চলুন।
তারা কিছু দুর সামনে যেতে একটা গর্ত দেখতে পেলেন,সেইখানে আগুন ছিল আর সেইখানে ছিল কিছু উলঙ্গ নর-নারী,আগুনগুলো তাদের পিছন থেকে ধেয়ে আসছিল,তখন তারা চিৎকার করে উঠেছিল,আবার ও ফেরেশতা বললেন, চলুন চলুন।
কিছুদূর যেতে তারা একটা রক্তের নদী দেখতে পেলেন,নদীর পাড়ে একজন লোক পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল,আর নদীতে একটা লোক সাতরে পাড়ে আসতে চাইছিল,কিন্তু পাড়ে থাকা লোক বার বার সেই পাথরটা নিক্ষেপ করছিল আর ওই লোকটি আবার আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছিল।তখন নবি বললো এরা কারা??
উত্তরে ফেরেশতা বললো,
১ম লোকটি ছিল মিথ্যেবাদি,তার কথা দূর-দুরান্তে ছড়িয়ে পড়তো,তার এই আযাব কিয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে,
২য় লোকটি ছিল গাফেল,যাকে কোরানের শিক্ষা দিয়া হয়েছিল কিন্তু সে কোরান না পড়েই ঘুমিয়ে যেত আর দিনের বেলা কোরান অনুযায়ি আমল করতো না,
৩য় ব্যাক্তি ছিল ব্যাভিচারি আর ৪র্থ ব্যাক্তি হলো সুদখোর।
আরেকহাদিসে আছে,একদিন নবি ২টা কবর এর পাশে দিয়ে যাচ্ছিল,তখন তিনি বললো এরা কবরে শাস্তি পাচ্ছে,কিন্তু এমন কাজ এর জন্য শাস্তি পাচ্ছে,যার থেকে বিরত হওয়া তাদের জন্য কঠিন ছিল না,
একজন অন্যলোকের নামে মিথ্যে কথা রটাতো আরেকজন প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে ধুয়ে নিত না।।
ইসরা আর মেরাজ এর ঘটনায় তিনি এক ব্যাক্তির লোহার কাচি দিয়ে ঠোট কাটতে দেখছিল,তার উত্তরে জিবরাইল বলছিলেন,এরা আপনার সেই উম্মত যারা মানুষকে ভালো কাজের উপদেশ দিত কিন্তু তারা ভালো কাজ করতো না,কোরান পড়তো কিন্তু বুঝতোনা।
কবর এর আযাব সত্যি অনেক ভয়াবহ,যারা ঈমান নিয়ে মরতে পারবে না,তাদের এই আযাব কিয়ামত পর্যন্ত হবে,কবরের আযাব যত কঠিন কিয়ামত তার চেয়েও কঠিন,কিয়ামত যত কঠিন জাহান্নাম তার চেয়েও কঠিন।
আমরা এখন ভাবতে পারি যে আল্লাহ এত দয়ালু,যে আল্লাহ মা বাবার থেকেও অনেক অনেক বেশি দয়ালু সেই আল্লাহ আমাদের কেন এতো শাস্তি দিবেন,আবার অনেকে বলে ইসলাম তো শান্তির ধর্ম তাহলে এইখানে এতো কাটাকাটি,এত শাস্তি কেন??
বাস্তবে আমরা যখন আল্লাহর অমান্য করি,সেই কাজটা কতটুকু খারাপ তা আমরা দুনিয়ার জীবনে বুঝতে পারি না,যে আল্লাহ এত মহান তার কোন কাজ অমান্য করা যে কতটা পাপ তা আমরা বুঝি না,তাই আমরা আল্লাহর রহমত নিয়ে ভাবতে ভালবাসি।কিন্তু তার ন্যায় বিচার এর কথা ভাবতে ভালবাসি না।
একটা খারাপ কাজ করা যে কতটা ভয়াবহ,সেইটা যে কবরের শাস্তির সমান এ কাজ সেইটা আমরা বুঝতে পারি না,কিন্তু আল্লাহ আমাদের অনেক ভালবাসে তাই আমাদের সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি না দিয়ে আমাদের বার বার সুযোগ দেন,যাতে আমরা তার নিকট ফিরে আসি,তার কাছে ক্ষমা চাই আর তার নিকট ক্ষমা চাইতেই তিনি আমাদের ক্ষমা করে দেন।কিন্তু এর পরেও যদি আমরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করতেই থাকি করতেই থাকি, তিনি তার পবিত্র কুরানে বলেছেন আমরা কত ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।কিন্তু এর পরেও যখন কাওকে এই সব বলা হয়,তখন সবাই বলে আমাকে এই সব ভয়ংকর কথা কেন বলা হচ্ছে,কিন্তু এই সব কথার মদ্ধ্যেও যে একটা রহমত আছে সেটা আমরা বুঝতে পারি না।

এমন এক সময় আসবে যখন আল্লাহ তার সব সৃষ্টি ধ্বংস করে দিবেন,সেইটার নাম কিয়ামত।
সামনের পর্বে কিয়ামত নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.