জীবন - মৃত্যু -জীবন-৯

জাহান্নাম-৯


সিরাত পার হয়ে কিছু মানুষ জান্নাতে যাবে আর কিছু মানুষ জাহান্নামে যাবে।।আমরা যেই জিনিসটাকে সবচেয়ে ভয় করি,যেইটার কথা সুনলে আমাদের কাদতে ইচ্ছে করে সেই ভয়ানক জিনিসটার নাম হলো জাহান্নাম।

জাহান্নাম এর ৭০০০০ শিকল,আর প্রতিটা শিকল ধরে থাকবে ৭০০০০ ফেরেশতা কিন্তু তারপরও জাহান্নাম এত ক্ষুব্ধ থাকবে,তাকে সামলাতে হিমশিম খাবে।
জাহান্নাম হবে ৭ টা,
১) ছায়ীর,২) লাজা,৩) ছাক্কার,৪) জাহীম,৫) জাহান্নামু,৬) হাবিয়া,৭) হোতামা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ {সূরা নাবা: ২১-২২}।
জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেব, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ [সূরা হিজির: ৪৩-৪৪]
জাহান্নামের বাসিন্দা হবে খারাপ মানুষ, জীন আর পাথর।। আল্লাহ জাহান্নামে প্রহরি নিযুক্ত করেছেন,তাদের নিয়ে আল্লাহ বলেন,
", ‘হে মু’মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন তা পালনে। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই পালন করে’ {সূরা আত-তাহরীম: ৬}।
তাদের কোন দয়া, মায়া মমতা থাকবে না,কারন তারা শুধু আল্লাহর হুকুম এ পালন করবে।

আল্লাহ জাহান্নামি দের বিশাল দেহ দান করবেন কারন তারা যেন শাস্তিটা আরো প্রখরভাবে ভোগ করতে পারে।তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা।
রাসূলুল্লাহ (ছা.) একদা একটি বড় পাথর খন্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা।এই গভিরতা জাহান্নাম এর।
একহাদিস এ নবি (সাঃ) বলেন, হাশরের ময়দানে আল্লাহ আদম(আঃ) কে বলবেন বাছাই কর তোমার সন্তানদের ১০০০ এর মধ্যে থেকে একজন,আর বাকি ৯৯৯ জন যাবে জাহান্নামে।দুনিয়ার এত মানুষ,এত জীন এত পাথর তার পরও জাহান্নাম ভরবে না।।আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলবেন: ‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ {সূরা ক্বাফ: ৩০}।
তখন আল্লাহ তার পা জাহান্নামে দিবেন,তখন জাহান্নাম বলবে,আপনার কসম আমার আর কিছু চাই না।।

সেইখানে খারাপ মানুষদের জন্য শুধু শাস্তি আর শাস্তি।
আল্লাহ বলেন,তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত ফল ব্যতীত, যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করবে না’ {সূরা গাশিয়া: ৬-৭}।
জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারিত যাক্কুম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যাক্কূম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, গলিত তামার মত তাদের উদরে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত’ {সূরা দুখান: ৪৩-৪৬}।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ হতে এবং উহা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে, পরে তোমরা পান করবে উহার উপর গরম পানি, আর পান করবে পিপাষিত উটের ন্যায়। ক্বিয়ামতের দিন ইহাই হবে তাদের আপ্যায়ন {সূরা ওয়াকিয়াহ: ৫১-৫৬}।
যাক্কুম বৃক্ষ খাওয়ার সময় তা গলায় আটকে যাবে,নিচেও নামবে না ওপরেও যাবে না।

তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, ইহা নিকৃষ্ট পানীয় ও অগ্নি কত নিকৃষ্ট আশ্রয়’ {সূরা কাহফ: ২৯}।
জাহান্নামিদের আগুন এর পোশাক পরিয়ে দিয়া হবে,
তিনি বলেছেন, ‘যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, আর তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি’ {সূরা হাজ্জ: ১৯}

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।আমরা যেন মুনাফিক না হই,কারন তারা সবচেয়ে কঠিন শাস্তি পাবে।।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করবই, যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ {সূরা নিসা: ৫৬}।
চিন্তা করতে পারেন,একজন এর চামড়া পুড়ে যখন ঝলসে যাবে তার জায়গায় নতুন চামড়া হবে।মানুষ কি সহ্য করতে পারবে??

তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘অগ্নি তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তথায় থাকবে বীভৎস চেহারায়’ {সূরা মু’মিনুন: ১০৪}।
তিনি আরো বলেন, ‘ইহা সীমালংঘনকারীদের জন্য। সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। আরও আছে এইরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি’ {সূরা ছাদ: ৫৭-৫৮}।
তারা অনেক ধোয়ার মধ্যে থাকবে,এইটা নিয়ে আল্লাহ বলেন,"আর বাম লোকের দল কত হতভাগ্য,তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া আর গরম পানিতে আর প্রচন্ড কালো ধোয়ায় যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়।
(সুরা ওয়াকিয়া-৪১-৪৪)

জাহান্নামের শাস্তি প্রতিনিয়ত বাড়ানো হবে,পরের দিনের শাস্তি হবে আগের দিনের চেয়ে বেশি।
আল্লাহ বলেন,"অত:পর তোমরা আস্বাদ গ্রহন করো,আমি তো তোমাদের শাস্তি শুধু বাড়িয়েই দিবো"
(সুরা নাবা-৩০)
তিনি আবার বলেন,"যখনই জাহান্নামের আগুন স্থিমিত হবে,আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বাড়িয়ে দিবো"।

যার কারনে কেও সেইখানে বিশ্রাম নিতে পারবে না।তাদের শাস্তি কমানোও হবে না।আল্লাহ বলেন,
"সুতরাং তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত ও হবে না।"
(সুরা বাকারাহ-৮৬)

আমরা অনেক আলোচনা করলাম,আসলে কোন মানুষকি জেনে শুনে জাহান্নামে যেতে চাইবে না??অবশ্যই না,,কিন্তু তারা যেনে শুনে খারাপ কাজও করে,অহংকারও করে, হিংসাও করে,নামাজ পড়ে না।।আসলে ভেবে দেখুন আপ্নারা কি জাহান্নাম থেকে বাচতে চান,নাকি জাহান্নাম এ যেতে চান।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।
আমিন।




আমি জীবন-মরন-জীবন পর্বে ৯ টা বিষয় আলোচনা করেছি।যার মধ্যে কবরের আযাব আর জাহান্নামের আযাব ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। আমাদের মাথায় ২ টা প্রশ্ন কাজ করে,
১.ইসলাম তো শান্তির ধর্ম তাহলে এইখানে এত শাস্তি কেন??
২.আমরা পাপ করি তো কিছু বছর কিন্তু আমাদের শাস্তি তো অনন্তকালের জন্য,কিন্তু কেন??

১।তার উত্তর হলো,আল্লাহ অনেক দয়ালু,অনেক করুনাময়,তিনি আমাদের বানিয়েছেন শুধু তারই ইবাদত করার জন্য।তিনি এত মহান,কিন্তু আমরা যখন তার কথার অবাধ্য হই,তখন তা কতটা খারাপ তা আমরা দুনিয়ার জীবনে বুঝতে পারি না,তার কথার অমান্য হওয়া যে জাহান্নাম বা কবর এর আযাব এর সমানই ভয়াবহ তা বুঝি না।তাই আমরা শুধু তার রহমত নিয়ে ভাবতে ভালোবাসি,কিন্তু তার ন্যায় বিচার এর কথা ভাবতে ভালোবাসি না।।
ধরুন একজন অনেক বড় পাপ করেছে,সবাই বলবে তার শাস্তি হওয়া উচির,কিন্তু সে দুনিয়ায় শাস্তি পেল না,
তাহলে তাকে কি এমনি ছেড়ে দিয়া হবে।
না যারা দুনিয়ায় খারাপ ভাবে যাবে তাদের পরকাল এ শাস্তি দিয়া হবে কারন তারা তাদের রবের কথার অমান্য হওয়ার মত খারাপ কাজ করেছে।
আল্লাহ আমাদের পবিত্র বানি পাঠিয়েছেন,আর আমরা সেইখান থেকে দেখতে পাই যে আল্লাহ আমাদের কি আদেশ করেছেন,কি নিষেধ করেছেন?

দেখুন দুনিয়ার জীবনেই কেও খারাপ কাজ করলে তাদের শাস্তি দিয়া হয়।কিন্তু আল্লাহ তো সব বিচারকদের বড় বিচারক,তিনি তাহলে অপরাধিদের কিভাবে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে?
আমরা যখন তার কথার অবাধ্য হয় তার পরিনতি কি হতে পারে তাও লিখে দিয়েছেন তার পবিত্র বানিতে।তাই আমাদের সব পরিনতির কথা ভেবে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে।আল্লাহ বলেন কেও যদি তওবার মত তওবা করে আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করে দিবে আর আগের গুনাহর সমান সওয়াব দিবো,আল্লাহ বলেন,
"কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৭০
২.এখন আমরা ভাবি যে আমরা দুনিয়ায় তো মাত্র কয়েক বছর পাপ করি,কিন্তু এত শাস্তি কেন?
আসলে মানুষ স্বভাবগত ভাবেই এমন।যখন আল্লাহ তালা'হ তার ইবাদত করার জন্য কিছু বছর পাঠায় দুনিয়ায় তাও সে আল্লাহকে ভুলে যায় তার কথার অমান্য করে,কিন্তু যদি তাদের কে অনন্তকাল দুনিয়ায় রাখা হত তারা অনন্তকাল এ আল্লাহর কথা অমান্য করে যেত।তাই তাদেরকে অনন্তকালের শাস্তি দিয়া হবে।আল্লাহ হলেন আলীমুল হাকিম।।

আল্লাহ বলেন," তিনি তার কোন বান্দার ওপর জুলুম করেন না।(সুরা হা-মীম-৪৬)।
আল্লাহ হলেন সব চেয়ে ন্যায়বিচারক।যদি কোন জাহান্নামিদের বিন্দুমাত্র কম শাস্তি দিয়ার হতো তাহলে আল্লাহ তালাহ তা ই দিতেন।আমাদের সেই সব বিষয় এর উপর ভয় করা উচিত যা আমাদের সাথেও ঘটতে পারে,যদি ঘটে তাহলে আমাদের কি করা উচিত?

দুনিয়ায় কয় দিনের জন্য আসি আমরা,,আপনাদের বিবেক আছে,,বিবেককে জিজ্ঞেস করুন,আপনি কি ঠিক নাকি ভুল?
যদি ভুল হন তাহলে কি পরকাল এর শাস্তি সহ্য করতে পারবেন,যদি না পারেন তাহলে আপনার কি করা উচিত??
জীবনটাকে নিয়া জুয়া খেলবেন না,কারন তা খুব দামি।




কোন মন্তব্য নেই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.